ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে আসল বিজয়ী চীন?

চলতি মে মাসের শুরুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চারদিনের হামলা, পাল্টা হামলা ও সামরিক উত্তেজনা যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শেষ হয়েছে। দুই দেশই নিজেদের বিজয়ী দাবি করেছে।
তবে সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংঘাত থেকে চীনের প্রতিরক্ষা শিল্প অপ্রত্যাশিতভাবে লাভবান হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গত ২২ এপ্রিল ভারতশাসিত জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এরপর ৭ মে ভারত “অপারেশন সিন্দুর” নামে পাকিস্তানে ও পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মিরে বিমান হামলা চালায়।
ভারত দাবি করে, হামলায় লস্কর-ই-তৈয়বা ও জইশ-ই-মুহাম্মদ-এর ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে এবং কমপক্ষে ১০০ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে। এরপর দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমানের আক্রমণ চলতে থাকে।
ভারত এই সংঘাতে ফরাসি ও রুশ নির্মিত ফাইটার জেট ব্যবহার করে; অন্যদিকে পাকিস্তান চীনের সহায়তায় তৈরি করা জেএফ-১৭ থান্ডার ও জে-১০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে। যদিও দুই দেশই দাবি করে, তাদের বিমান সীমান্ত অতিক্রম করেনি—তারা দূর থেকে মিসাইল ছুঁড়েছে।
সংঘাত শুরুর পর পাকিস্তান জানায়, পাকিস্তান বিমান বাহিনীর জে-১০ যুদ্ধবিমান ভারতীয় বিমান বাহিনীর রাফাল ফাইটার জেটসহ ছয়টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। যদিও ভারত সরকার এই দাবির কোনও সরাসরি জবাব দেয়নি। নয়াদিল্লি কেবল বলেছে, ক্ষয়ক্ষতি যুদ্ধের অংশ।
ভারতের এয়ার মার্শাল এ.কে. ভরতি বলেছেন, “যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি হতেই পারে। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে এবং সব পাইলট নিরাপদে ফিরে এসেছেন”। এছাড়া কিছু সংবাদমাধ্যম ভারতের পাঞ্জাব ও কাশ্মির অঞ্চলে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর দিলেও ভারত সরকার এ বিষয়ে একেবারেই নিশ্চুপ।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, পাকিস্তান সম্ভবত জে-১০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতের যুদ্ধবিমানের ওপর আকাশ থেকে আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এতে চীনের অস্ত্রশিল্প একটি বাস্তব যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নিজেদের কার্যকারিতা প্রমাণের সুযোগ পেয়েছে, যা এর আগে হয়নি।
মূলত পাকিস্তান চীনের অস্ত্রের ওপর নির্ভর করে যে সফলতা পেয়েছে, তা চীনের প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য এক বড় সুযোগ বলে অনেকে মনে করছেন।
চীনা সেনাবাহিনীর সাবেক কর্নেল ঝোউ বো বিবিসিকে বলেন, “এই সংঘর্ষ চীনের অস্ত্রশিল্পের জন্য একপ্রকার বিজ্ঞাপন হয়ে গেছে। চীন এতদিন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নিজের প্রযুক্তির কার্যকারিতা প্রমাণের সুযোগ পায়নি। এবার দেখা গেল চীনের কিছু সিস্টেম বিশ্বের যেকোনও অস্ত্রের সঙ্গে টক্কর দিতে সক্ষম।”
পাকিস্তান ও ভারতের এই সংঘাতের পর চীনের অভিক চেংদু এয়ারক্রাফট কোম্পানির শেয়ারের দাম ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এখনই চীনের প্রযুক্তিকে সেরা বলে বিবেচনা করা যাবে না।
আরও পড়ুন
লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক ওয়াল্টার ল্যাডউইগ বলেন, চীনের যুদ্ধবিমান ভারতের রাফালকে সত্যিই পরাস্ত করেছে কিনা, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।
চীন এ নিয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনও মন্তব্য করেনি, তবে চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি উঠেছে যে জে-১০ যুদ্ধবিমান পশ্চিমা প্রযুক্তি ব্যবহৃত রাফাল বিমানকে নামিয়ে দিয়েছে—এ নিয়ে সেখানে উল্লাসও চলছে। অন্যদিকে ভারত নিজেও বিস্তারিত কিছুই জানায়নি, ফলে আন্তর্জাতিক প্রচারেও ভারত পিছিয়ে গেছে।
ভারোনার ইন্টারন্যাশনাল টিম ফর দ্য স্টাডি অব সিকিউরিটির চীন বিশেষজ্ঞ কার্লোত্তা রিনাউডো বলেন, “প্রকৃত সত্যের চেয়ে এখন মানুষের ‘ধারণা’ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, এই সংঘাতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে চীনই।”
চীনের জন্য পাকিস্তান কেবল কৌশলগত নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। ‘চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর’ প্রকল্পে চীন ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। মূলত ৫ হাজার কোটি ডলারের চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরই এই সম্পর্কের ভিত্তি।
পাকিস্তানি নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইমতিয়াজ গুল বলেন, “এই সংঘাতে চীনের সমর্থন ভারতের পরিকল্পনাকে চমকে দিয়েছে। ভারত এতো ঘনিষ্ঠ সামরিক সহযোগিতা আশা করেনি। আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে পাকিস্তান-চীন সহযোগিতার গভীরতা তারা (ভারত) আঁচ করতে পারেনি।”
চীন সাধারণত মিয়ানমার ও পাকিস্তানের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে অস্ত্র বিক্রি করে। আগের সময়ে চীনা অস্ত্রের মান ও কারিগরি ত্রুটি নিয়ে সমালোচনা ছিল—মিয়ানমার ও নাইজেরিয়ায় জেএফ-১৭ ও এফ-৭ বিমানের সমস্যা তার উদাহরণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংঘাতে চীনের অস্ত্র ব্যবহারের পারফরম্যান্স পশ্চিমা দেশগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। এতে বিশ্ব অস্ত্র বাজারে বড় প্রভাব পড়বে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ, আর তালিকায় চীন রয়েছে চতুর্থ স্থানে।
অবশ্য পাকিস্তানের হাতে ভারতের যুদ্ধবিমান হারানোর ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৯ সালে ভারতের এক মিগ-২১ যুদ্ধবিমান পাকিস্তান সীমান্তে গুলি করে নামানো হয় এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হাতে ভারতীয় পাইলট বন্দি হন।
এদিকে চলমান সংঘাতের শেষে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলোর চাপেই মূলত পাকিস্তান ও ভারত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংঘাতের এই পর্বটি ভারতের জন্য এক সতর্ক সংকেত। কারণ চীন ইতোমধ্যেই জে-২০ স্টেলথ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে, যা রাডারে ধরা পড়ে না।
আরও পড়ুন
যদিও এই যুদ্ধবিমানগুলো এখনও পাকিস্তানকে দেয়নি বেইজিং।
অন্যদিকে ভারত ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ রয়েছে এবং এ নিয়ে ১৯৬২ সালের যুদ্ধে চীনের কাছে পরাজয়ের শিকার হয়েছিল ভারত। আর সর্বশেষ ২০২০ সালে সীমান্তে উখয় দেশের সৈন্যদের মধ্যে লাদাখে সংঘর্ষ হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত এখন জানে তাকে দ্রুত দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অস্ত্র ক্রয়েও গতি আনতে হবে। আর এই মুহূর্তে চীনের প্রতিরক্ষা শিল্প আন্তর্জাতিক আলোচনায় এগিয়ে আছে, বিশেষ করে তাদের তৈরি জে-১০ যুদ্ধবিমানের সাফল্যের কারণে।
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী: ডোনাল্ড ট্রাম্প ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ফেক

‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী: ডোনাল্ড ট্রাম্প’ শিরোনামে একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটির মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প শেখ হাসিনাকে নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য করেছেন।
ভিডিওতে ট্রাম্পের কণ্ঠে শোনা যায়-১৫ মে শেখ হাসিনার সঙ্গে বাংলাদেশে সফরে আসছি আমি। চিন্তার কোনো কারণ নেই। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই বাংলাদেশে ফিরছেন।
সোমবার (১৯ মে) রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি। বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তার কণ্ঠ নকল করে তৈরি একটি ভিডিওর মাধ্যমে এই দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করা হয়। এতে দেখা যায়, ট্রাম্পের ঠোঁটের নড়াচড়া ও বক্তব্যের মধ্যে অসঙ্গতি রয়েছে।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ট্রাম্পের একই স্থান ও একই পোশাকে একাধিক বক্তব্যের ভিডিও (১, ২) পাওয়া যায়। তবে আলোচিত বক্তব্যটি কোথাও পাওয়া যায়নি। এমনকি, তার এ ধরনের বক্তব্য লিখিত আকারেও দেশীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি।
ভিডিওতে দাবি করা হয়, ট্রাম্প ১৫ মে বাংলাদেশ সফরে আসবেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বাংলাদেশ সফর করলে, তা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত হতো। তবে এই প্রতিবেদন লেখার সময় (১৯ মে) পর্যন্ত ট্রাম্পের বাংলাদেশ সফর নিয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে ভিডিওটির অডিও অংশ ডিপফেক শনাক্তকরণ টুল ‘Sensity’-এর মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথিত বক্তব্যটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা ৭৪.৭ শতাংশ।
এছাড়া, ডিপফেক শনাক্তকরণ টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’-এর ‘Lip-synced Deepfake Detection’ মডেল অনুসারে, ভিডিওটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৪ শতাংশ।
সুতরাং এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কণ্ঠ নকল করে তৈরি একটি ভিডিওকে শেখ হাসিনা সম্পর্কে ট্রাম্পের মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে যা মিথ্যা।
একসঙ্গে চীন-পাকিস্তান-আফগানিস্তান, লক্ষ্য কি ভারত?

ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর পাকিস্তান এখন চীনের দিকে ঝুঁকছে। পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার সোমবার চীন সফরে যাচ্ছেন।
এই সফরে আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সঙ্গে তার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হবে।
এ ছাড়া চীন সফরের সময় মঙ্গলবার ইসহাক দার আফগান নেতাদের সঙ্গেও ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এই বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে—ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পর নিরাপত্তা পরিস্থিতি, আঞ্চলিক বাণিজ্য এবং সহযোগিতা।
চীন আগেই পাকিস্তানের ভূখণ্ড ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। অপারেশন সিঁদুরের সময় চীন পাকিস্তানকে ‘আয়রন-ক্ল্যাড বন্ধু’ বলেও উল্লেখ করে। সেই সময় দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়মিত যোগাযোগ রাখে এবং উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানায়।
এদিকে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার পাকিস্তানের দাবি নাকচ করে বলেছে, ভারত আফগান ভূখণ্ডে কোনো হামলা চালায়নি। বরং পেহেলগাম হামলার নিন্দা জানিয়ে অপরাধীদের বিচারের মুখে আনতে বলেছে।
পাক-চীন সম্পর্কের এই ঘনিষ্ঠতা দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের জন্য নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে—বিশেষত যখন তিনটি দেশই ভারতের সীমান্তবর্তী।
টাইমস অব ইন্ডিয়া, জিও নিউজ
যা বলছে জিটিআরআই
স্থলবন্দর দিয়ে কেন বাংলাদেশি পণ্যে নিষেধাজ্ঞা দিলো ভারত

বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে পণ্য আমদানিতে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত।
শনিবার (১৭ মে) দেশটি জানায়, বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কিছু পণ্য আর স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ কয়েকটি রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না।
এ নিষেধাজ্ঞা মূলত পোশাকসহ কয়েকটি জনপ্রিয় পণ্যের ওপর কার্যকর হবে, যা ভারতীয় আমদানিকারকদের এখন বাধ্যতামূলকভাবে সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে বাধ্য করবে।
ভারতের এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রায় ৭৭০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঝুঁকিতে পড়বে বলে মনে করছে গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই)। এ পরিমাণ বাংলাদেশের ভারতের সঙ্গে মোট রপ্তানির প্রায় ৪২ শতাংশ।
রোববার (১৮ মে) ভারতীয় প্রভাবশালী দৈনিক দ্য ইকোনমিক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনটিতে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়- আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরামের কোনো শুল্ক পয়েন্টে- পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা এবং ফুলবাড়ি শুল্ক পয়েন্ট দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কার্বনেটেড পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার, তুলার বর্জ্য, প্লাস্টিকের পণ্য (পণ্য তৈরির জন্য নির্দিষ্ট উপকরণ ব্যতীত) এবং কাঠের আসবাবপত্র আমদানি করা যাবে না।
জিটিআরআই বলছে, ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্ত কেবল অর্থনৈতিক নয়, এতে কূটনৈতিক বার্তাও নিহিত। সংস্থাটির ভাষ্যমতে, বাংলাদেশ সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যার পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবেই ভারত এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সম্প্রতি চীন সফরে গিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে ‘সমুদ্রপথ থেকে বিচ্ছিন্ন’ বলে অভিহিত করেন। সফরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ২.১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি হয়। বিষয়গুলো ভারতের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থে প্রভাব ফেলেছে বলে জিটিআরআই মনে করছে।
এএনআই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের শেষ দিক থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ গত এক বছরে ভারতীয় সুতা, চাল, কাগজ, মাছ, গুঁড়া দুধ এবং তামাকজাত পণ্যের আমদানিতে একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
আরও পড়ুন
তাছাড়া বাংলাদেশ তাদের ভূখণ্ড দিয়ে ভারতের পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে টনপ্রতি ১.৮ টাকা করে ট্রানজিট ফি আরোপ করেছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মতে, এসব পদক্ষেপে ভারতের রপ্তানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং এটি ‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করছে’।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে ভারতে। এতদিন এসব পণ্য মূলত স্থলবন্দর দিয়ে যেত। কিন্তু ভারতের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে কেবল কলকাতা ও নাভা শেভা (মহারাষ্ট্র) বন্দরের মাধ্যমে এসব পোশাক আমদানি করতে পারবে ভারতীয় ক্রেতারা।
জিটিআরআই বলছে, এতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে সময় ও খরচ উভয়ই বাড়বে, ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। সংস্থাটি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, ভারতের এই পদক্ষেপ সরাসরি বাংলাদেশি সুতা আমদানিতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার জবাব।
বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে নতুন উত্তেজনার ইঙ্গিত স্পষ্ট। দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক বাধা সৃষ্টির অভিযোগ করছে। ফলে ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে আরও জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
ভারতের জন্য আকাশপথে নিষেধাজ্ঞা বাড়াল পাকিস্তান

ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আরও এক মাসের জন্য বাড়াতে যাচ্ছে পাকিস্তান।
রোববার (১৮ মে) দ্য নিউজের বরাতে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী সপ্তাহ থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ, রোববার (১৮ মে) দ্য নিউজ-এর বরাতে।
প্রসঙ্গত, ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে গত মাসে এক বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ পর্যটকের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
এরই প্রেক্ষিতে ভারত ২৩ এপ্রিল একতরফাভাবে পাকিস্তানের জন্য তার আকাশসীমা এক মাসের জন্য বন্ধ করে দেয়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায়, ২৪ এপ্রিল থেকে পাকিস্তানও ভারতের জন্য তার আকাশপথ বন্ধ করে দেয়, যা ২৩ মে পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরও এক মাস বাড়ানো হবে। তবে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইসিএও) নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দেশ একটানা এক মাসের বেশি সময় আকাশসীমা বন্ধ রাখতে পারে না। তাই বর্তমান মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা একটি নোটিশ টু এয়ার মেন (নোটাম) জারি করবে।
দ্য নিউজকে এক উচ্চপদস্থ সূত্র জানিয়েছে, যে পরিস্থিতির কারণে পাকিস্তান এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল, তাতে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। তাই যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানো হবে।
আরও পড়ুন
এদিকে, পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) বৈঠকে ২৪ এপ্রিল ভারতের ওপর আকাশপথে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রতিদিন পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০টি ভারতীয় বিমান ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকার দিকে যাতায়াত করে। এসব বিমানের রুট সাধারণত দিল্লি, মুম্বাই, অমৃতসর ও আহমেদাবাদ থেকে শুরু হয়। আকাশপথে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের বিমান চলাচলে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
মন্তব্য