বৃহত্তর ইসরায়েল : আদৌ সম্ভব নাকি শুধুই হুমকি?

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আবারও ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ ধারণা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছেন। ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত তার বই ‘এ প্লেস আন্ডার দ্য সান’-এ তিনি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব অস্বীকার করে ভূমধ্যসাগর থেকে জর্ডান নদী পর্যন্ত ভূখণ্ডকে ইহুদিদের ভূমি বলে উল্লেখ করেছিলেন।
সম্প্রতি আই২৪ নিউজে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তিনি ‘ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক মিশনে’ আছেন এবং বৃহত্তর ইসরায়েলের স্বপ্নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই মন্তব্যে আরব লীগ, ওআইসি, জিসিসিসহ ৩১টি আরব ও ইসলামী দেশ প্রতিবাদ জানায়।
‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ ধারণার সূত্র অনেক পুরোনো। ১৮৯৭ সালের বাসেল কংগ্রেস থেকে শুরু করে ১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণা এবং ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ পর্যন্ত নানা সময়ে এই স্বপ্ন আলোচনায় এসেছে। ধর্মীয় বর্ণনায় নাইল থেকে ইউফ্রেটিস পর্যন্ত ভূখণ্ডকেই প্রতিশ্রুত ভূমি বলা হয়।
এমনকি পুরোনো মুদ্রায়ও ইসরায়েলের সীমানা বিস্তৃতভাবে আঁকা ছিল—যেখানে কুয়েত, ইরাক, মিসর ও সৌদি আরব পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত।
ইতিহাসবিদরা বলছেন, ইসরায়েলের পতাকার নীল দাগ কিংবা পুরোনো মুদ্রাতেও এর প্রতীক পাওয়া যায়। ১৯৭০ সালের পর লিকুদ পার্টির উত্থানে এই প্রতীকী ধারণা বসতি সম্প্রসারণ এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে অস্বীকারের মাধ্যমে নীতিতে রূপ নেয়।
তবে অনেক গবেষকের মতে, বৃহত্তর ইসরায়েল বাস্তবে সম্ভব নয়। কারণ এতে লাখ লাখ আরব জনগণ যুক্ত হবে, যা ইসরায়েলের জন্য জনসংখ্যাগতভাবে বড় চ্যালেঞ্জ।
ইসরায়েলি-আমেরিকান লেখক মিকো পেলেড বলেন, ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ আসলে রাজনৈতিক স্লোগান। তার মতে, আসল হুমকি হলো গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযান ও পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা।
তথ্যসূত্র : শাফাক নিউজ, আলজাজিরা
ইসরায়েলের তেল শোধনাগারে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, নিহত ৩

ইরানের একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বাজান তেল শোধনাগারে আঘাত হানে। এতে তিনজন নিহত হয়। গত ১৭ জুন এ ঘটনা ঘটে।
যদিও সোমবার (১৮ আগস্ট) বার্তাসংস্থা মেহের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ খবর প্রকাশ হয়।
ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম হিব্রু ডেইলির বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৭ জুন ভোরের আগে বাজান তেল শোধনাগারে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত হানে। এতে ভেতরের একটি কক্ষে অবস্থানরত তিনজন ধ্বংসস্তূপ ও আগুনের মধ্যে আটকা পড়ে প্রাণ হারান।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ হামলায় ইসরায়েলের জ্বালানি স্থাপনা ও আলোকসজ্জা ব্যবস্থায় ব্যাপক ক্ষতি হয়।
বাজান কর্তৃপক্ষ এক ঘোষণায় জানায়, তাদের সব স্থাপনা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং আগামী কয়েক মাসে ধীরে ধীরে উৎপাদনে ফিরবে তারা।
কোম্পানিটি ধারণা করেছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দখলদার ইসরায়েল গত ১৩ জুন থেকে টানা ১২ দিন ইরানের সামরিক, পারমাণবিক ও আবাসিক এলাকায় বিমান হামলা চালিয়ে আগ্রাসী যুদ্ধ শুরু করে। এরপর ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের নাতাঞ্জ, ফোর্ডো ও ইসফাহানে অবস্থিত তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়।
ইসরায়েলের ওই আগ্রাসনের জবাবে ইরানি সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিক পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) অ্যারোস্পেস ফোর্স ট্রু প্রমিজ-৩ অভিযানের অংশ হিসেবে ইসরায়েলের দখলকৃত ভূখণ্ডজুড়ে ২২ দফা পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। যাতে ইসরায়েলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ডেকে আনে।
এছাড়া, মার্কিন হামলার জবাবে ইরানি সশস্ত্র বাহিনী কাতারের আল উদেইদ এয়ারবেসে (যা পশ্চিম এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি) একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
এর পরদিনই যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র, যা ২৪ জুন থেকে কার্যকর হয় এবং সংঘর্ষ থেমে যায়।
ভারতে পাচার হওয়া বাংলাদেশি তরুণী উদ্ধার, ৩ পাচারকারী গ্রেফতার

ভারতের হায়দরাবাদে পাচার হওয়া এক বাংলাদেশি তরুণী উদ্ধার হয়েছে। এছাড়া তার সাহসী পদক্ষেপে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের তিন সদস্য। গত ৮ আগস্ট বান্দলাগুদা থানায় ওই তরুণীর অভিযোগ দায়েরের পর এ ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশি ওই তরুণী জনিয়েছেন, ছয় মাস আগে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাকে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়। প্রথমে সীমান্ত পেরিয়ে নৌকায় কলকাতায় আনা হয়, পরে ট্রেনে তুলে পাঠানো হয় হায়দরাবাদে। সেখানে ভয়ভীতি দেখিয়ে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়।
তিনি জানান, তার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে হাজেরা বেগম, শাহনাজ ফাতিমা ও সমীর নামের তিনজনকে গ্রেফতার করে। এছাড়া মেহদিপট্টনম এলাকার একটি ভাড়া বাড়ি থেকে আরও তিন তরুণীকে উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, পাচারকারীরা ভুক্তভোগীদের কাছে বৈধ কাগজপত্র নেই—এই অজুহাতে তাদের ভয় দেখাত। সুযোগ বুঝে পালিয়ে আসা বাংলাদেশি তরুণী পুলিশের কাছে আশ্রয় নিয়ে চক্রটির আসল চেহারা সামনে আনেন। বর্তমানে উদ্ধারকৃত সকলকেই রেসকিউ হোমে রাখা হয়েছে।
এ ঘটনায় রূপা ও সরোয়ার নামে পাচারচক্রের আরও দুই সদস্য পলাতক রয়েছে। তাদের ধরতে তল্লাশি চলছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
এ বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, এই চক্রের শিকড় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে। দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের চাকরির প্রলোভন দিয়ে টেনে আনা এবং পরে জোরপূর্বক যৌন ব্যবসায় ঠেলে দেওয়া—এটাই তাদের নকশা।
জেলেনস্কি চাইলেই রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ হবে: ট্রাম্প

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট যদি চান, তাহলে রাশিয়ার সঙ্গে যু্দ্ধ শেষ করতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (১৭ আগস্ট) ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের আগে তিনি এমন মন্তব্য করেন। খবর এনডিটিভির।
এছাড়া ট্রাম্প ২০১৪ সালে ওবামা প্রশাসনের অধীনে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করার কথাও উল্লেখ করেছেন, এবং উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা (ন্যাটো) -এ ইউক্রেনের যোগ দেওয়ার বিষয়টিও উড়িয়ে দিয়েছেন।
জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, ‘ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি চাইলে, তাৎক্ষণিকভাবে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করতে পারেন, অথবা তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারেন।’
তিনি লেখেন, ‘ওবামাকে ক্রিমিয়া ফেরত দেওয়া হবে না (১২ বছর আগে, কোনো গুলি ছাড়াই!), এবং ইউক্রেনেররও ন্যাটোতে যোগ দেওয়া হবে ন। কিছু জিনিস কখনও বদলায় না!!!’
অন্য একটি পোস্টে, ট্রাম্প বলেছেন, এটি ‘হোয়াইট হাউসে একটি বড় দিন’ হতে যাচ্ছেন কারণ ইউরোপীয় এবং ন্যাটো নেতারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জেলেনস্কির বৈঠকে যোগ দেবেন।’
তিনি লেখেন, ‘আগামীকাল হোয়াইট হাউসে একটা বড় দিন। একসঙ্গে এত ইউরোপীয় নেতা কখনও আসেনি। তাদের আতিথ্য দিতে পেরে আমি সম্মানিত।’
নাঈম কাসেম
ইসরাইলের বিরুদ্ধে কারবালার যুদ্ধ করবে হিজবুল্লাহ

লেবাননের শিয়া সশস্ত্র গ্রুপ হিজবুল্লাহর প্রধান নাঈম কাসেম স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তারা অস্ত্র ত্যাগ করবে না। প্রয়োজনে কারবালার মতো যুদ্ধেও নামতে প্রস্তুত তারা।
আরবাইনের সমাবেশে কাসেম বলেন, ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পথেই আমরা মুক্তির সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিটি ক্রান্তিকালে মানুষকে বেছে নিতে হয়-হুসাইনের পক্ষে নাকি ইয়াজিদের পক্ষে থাকবে। শেখ রাগেব হারব, সাইয়্যেদ আব্বাস আল-মুসাভি থেকে শুরু করে হাসান নাসরুল্লাহ সবাই ইমাম খোমেনী ও খামেনীর পথেই হেঁটেছেন। আমরা ফিলিস্তিনের পক্ষে, আর ইসরাইল-মার্কিন জালিমদের বিরুদ্ধে। আজকের এই লড়াই কারবালারই ধারাবাহিকতা।
২০০৬ সালের যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে কাসেম বলেন, ওই বিজয় ছিল ঐশী মদদে পাওয়া একটি আশীর্বাদ। সংখ্যায় আমরা কম ছিলাম, কিন্তু আল্লাহর সাহায্যে শত্রুকে পর্যুদস্ত করেছিলাম। ১৭ বছর ধরে সেই বিজয় ইসরাইলকে ভীত রেখেছে। তিনি দাবি করেন, ইরানের সমর্থন হিজবুল্লাহর পাশে থাকবে, আর প্রতিরোধের পতাকা উড্ডীন থাকবে।
লেবাননের রাজনীতিকে লক্ষ্য করে কাসেম বলেন, হিজবুল্লাহ ছাড়া এই দেশের সার্বভৌমত্ব অসম্পূর্ণ। যারা ইসরাইলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়েনি, তাদের জবাবদিহি করতে হবে। সরকার যদি ইসরাইল-মার্কিন প্ররোচনায় হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যায়, তা হবে দেশকে সংকটে ঠেলে দেওয়া।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইসরাইলের আগ্রাসন চললে আমরা অস্ত্র রাখব না। হয় লেবানন ঐক্যবদ্ধ থাকবে, নয়তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে-যার দায় সরকারকেই নিতে হবে।
মন্তব্য