অন্তর্বর্তী সরকারের মূল উদ্দেশ্য জানালেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা

দেশের রাজনীতির মাঠে থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে নানা সন্দেহ ও প্রশ্নের মুখে বিষয়টি খোলাসা করেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে।দুটি উদ্দেশ্য কী- সেটিও তুলে ধরেছেন উপদেষ্টা।
রোববার জাতীয় অর্থনেতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন রেখে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। কিন্তু আমি মনে করি আমাদের উদ্দেশ্য দুটি। এক হলো- একটি সুশাসিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে একটা ভালো নির্বাচন দেওয়া এবং দুই হলো- সুশাসন নিশ্চিত করতে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করা। আমরা সেগুলো করছি। তাহলে আমাদের কাছে কেন এত দাবি?
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, বিভিন্ন গোষ্ঠী ও শত শত সংগঠন তাদের বঞ্চনা দূর করতে আমাদের কাছে আন্দোলন করছে। এত বছরের বঞ্চনা আমরা এই অল্প সময়ে কিভাবে দূর করব? এসব চাপের কারণে তো আমরা সংস্কার নিয়ে ভাবতে ও সুস্থভাবে চিন্তা করতে পারছি না। সবাইতো বলে গণতান্ত্রিক সরকার অনেক বেশি সংবেদনশীল। তাহলে সেই সরকার আসলে তখনতো দাবিগুলো পূরণ করতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন বলেন, আগামী অর্থবছরে এডিপি যাতে শুরু থেকেই বাস্তবায়ন করা যায়, সেটি নিয়ে এনইসিতে আলোচনা হয়েছে। সেই প্রচেষ্টা থাকবে।
ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের স্বার্থে ভারত ও বাংলাদেশের ব্যবসা চলমান থাকবে : বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের স্বার্থে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার ব্যবসা চলমান থাকবে। ভারতের পদক্ষেপের বিষয়ে আমরা এখনও অফিসিয়ালি কিছু জানি না। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানার পর ব্যবস্থা নিতে পারবো। যদি সমস্যা দেখা দেয় বা তৈরি হয় তাহলে উভয়পক্ষ আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করবো।
উপদেষ্টা আজ রোববার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া ও নিউজ থেকে আমরা জেনেছি তারা স্থলবন্দর বিশেষ করে আখাউড়া, ডাউকিস্থ বন্দরসহ সীমান্তবর্তী কয়েকটি অঞ্চলের বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জনই আমাদের বড় লক্ষ্য। এটা দু’দেশের জন্য লাভজনক বিষয়। আমরা মনে করি ভারত নিজেও একটা টেক্সটাইল বা বস্ত্র শিল্পে সমৃদ্ধ দেশ। এরপরও যখন আমাদের দেশ থেকে এসব পণ্য রফতানি হয় সেটা আমাদের সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করেই হয়।
তিনি আরো বলেন, ট্রান্সশিপমেন্টের প্রভাব আমাদের নেই। আমরা নিজেদের সক্ষমতা ব্যবহার করে নিজস্বভাবেই এ সমস্যার সমাধান করেছি।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আমরা যেহেতু ভৌগোলিকভাবে কানেক্টেড একটা দেশ, আমাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা, পরিবহণ ব্যয়সহ অন্যান্য বিষয়গুলো নির্দিষ্ট। এক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন সময় আমাদের কৃষিপণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করি, ভারতও করে। এটা বাণিজ্য ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়া এবং আমরা সে বিষয়ে কাজ করছি। সেখানে যদি সমস্যা দেখা দেয় বা তৈরি হয় তাহলে উভয়পক্ষ আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করবো।
উপদেষ্টা বলেন, আমি উদার বাণিজ্যে বিশ্বাসী। আমার কাছে বাণিজ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আমার দেশের ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাণিজ্য উদারীকরণ ও বাণিজ্য ইনক্লুশন ছাড়া আর কোনো রাস্তা আমি দেখি না। বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়ে তিনি আরো বলেন, আমাদের বৈচিত্র্যকরণ ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা বাণিজ্য বৃদ্ধিতে কাজ করবো।
ভারত যাচ্ছেন জয়, দেখা করবেন হাসিনা ও আ.লীগ নেতাদের সঙ্গে!

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের মধ্যে শিগগিরই সাক্ষাৎ হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে ভারতের গণমাধ্যম নিউজ ১৮ জানিয়েছে, শিগগির ভারত সফরে যাচ্ছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর এটিই হবে মা-ছেলের প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ। এই সফরে মায়ের সঙ্গে নয়াদিল্লিতে সাক্ষাৎ ছাড়াও কলকাতা যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে তার।
নিউজ ১৮ জানিয়েছে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিয়েছেন জয়। সূত্র জানায়, তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট বাতিল করে দেওয়ার পর তিনি আমেরিকার নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন।
আওয়ামী লীগের নির্বাসিত নেতাদের মধ্যে জয়ের এই সম্ভাব্য সফর নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তার ভারত সফরের প্রেক্ষাপট এমন এক সময়, যখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
গত ১২ মে নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করে, যা দলটিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের সব পথ বন্ধ করে দেয়।
এর আগে, ১০ মে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনসমূহের সব অনলাইন ও অফলাইন কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলের বিচার ও এর নেতাদের বিরুদ্ধে বিশেষ সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের কোনো ধরনের প্রচার, মিছিল, সভা, সেমিনার, গণমাধ্যমে প্রকাশনা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। প্রজ্ঞাপনটি সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
একজন সাবেক আওয়ামী লীগ মন্ত্রী নিউজ ১৮-কে বলেন, ‘আমরা আশা করছি, জয় শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং নির্বাসিত নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। সরকার যেভাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে, তা সম্পূর্ণ অনৈতিক। এটি আগামী নির্বাচনে দলটিকে প্রতিযোগিতার বাইরে রাখতে নেওয়া কৌশলের অংশ।’
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে দেশত্যাগ করেন এবং তখন থেকে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তাকে সামনাসামনি দেখেননি। এতদিন দলীয় কর্মীদের সঙ্গে সম্প্রতি পর্যন্ত ভিডিও কনফারেন্স ও ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছিলেন শেখ হাসিনা। তবে সরকারের সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার ফলে আওয়ামী লীগের সব ধরনের কর্মকাণ্ড এখন স্থবির হয়ে পড়েছে।
‘ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক’ স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধান উপদেষ্টার

ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তরুণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে ‘ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক’ স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
এজন্যে তিনি ‘ মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি’ আইন করার কথা বলেছেন।
আজ শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) নতুন ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই ব্যাংক প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর মতো হবে না। ব্যাংক চলবে বিশ্বাস ও আস্থার ওপর ভিত্তি করে। যেখানে ঋণ নিতে জামানত লাগবে না। এর পাশাপাশি এই ব্যাংকের বড় উদ্দেশ্য হবে সামাজিক ব্যবসাকে ছড়িয়ে দেওয়া।
তিনি বলেন, মানুষ মাত্রই উদ্যোক্তা। আমরা ব্যাংকের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হওয়ার সরঞ্জাম তাঁর হাতে তুলে দেবো। বিনিয়োগের টাকা পেলে মানুষ বিশেষ করে তরুণরা নিজের বুদ্ধি দিয়ে ব্যবসা চালু করতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন
ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস আরো বলেন, ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণকারীরা কেউ টাকা মেরে চলে যায়নি। অথচ প্রচলিত ধারার অনেক ব্যাংক হাওয়া হয়ে গেছে। ব্যাংকের টাকা নিয়ে অনেকে উধাও হয়েছে। তাই আমাদের এখন প্রকৃত ব্যাংকের দিকে নজর দিতে হবে।
তিনি বলেন, সেটাই প্রকৃত ব্যাংক যার ওপর মানুষ বিশ্বাস রাখে,আস্থা রাখে যেমন- ‘ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক’।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি গঠনের ইতিহাস তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, এমআরএ কেবল বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণের জন্য নয় বরং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের জন্যও ভালো কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. এম আনিসুজ্জামান চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ভারতে পালানো সব আ.লীগ নেতাদের দেশে ফিরতে নির্দেশ দিলেন শেখ হাসিনা

গণহত্যা, দমন-পীড়ন এবং অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে ভারতে পালিয়ে থাকা এসব নেতাদের মধ্যে শুরু হয়েছে দেশটি ছাড়ার হিড়িক। পুশব্যাক ও গ্রেফতারের আশঙ্কায় ভারতের অভ্যন্তরে থাকা অবৈধ বিদেশিদের দ্রুত দেশত্যাগের নির্দেশনা জারি করা হয়েছে, যা আগস্ট মাস থেকে আরও জোরালোভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।
এই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারের আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন
এদিকে, ৫০ জনেরও বেশি নেতা ইউরোপ এবং আমেরিকার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন এবং বাকিরাও সেসব দেশে পালানোর জন্য তৎপর হয়ে উঠেছেন। তবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়া সব নেতাকে দেশে ফিরে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। তার স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, আগামী দুই মাসের মধ্যে যারা ফিরে আসবেন না, তাদেরকে আটক করে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে এবং আইনের আওতায় আনা হবে।
সরকার এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে চতুর্মুখী চাপ সৃষ্টি করে এদেরকে দেশে এনে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
মন্তব্য