ভারতের জন্য আকাশপথে নিষেধাজ্ঞা বাড়াল পাকিস্তান

ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আরও এক মাসের জন্য বাড়াতে যাচ্ছে পাকিস্তান।
রোববার (১৮ মে) দ্য নিউজের বরাতে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী সপ্তাহ থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ, রোববার (১৮ মে) দ্য নিউজ-এর বরাতে।
প্রসঙ্গত, ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে গত মাসে এক বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ পর্যটকের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
এরই প্রেক্ষিতে ভারত ২৩ এপ্রিল একতরফাভাবে পাকিস্তানের জন্য তার আকাশসীমা এক মাসের জন্য বন্ধ করে দেয়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায়, ২৪ এপ্রিল থেকে পাকিস্তানও ভারতের জন্য তার আকাশপথ বন্ধ করে দেয়, যা ২৩ মে পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরও এক মাস বাড়ানো হবে। তবে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইসিএও) নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দেশ একটানা এক মাসের বেশি সময় আকাশসীমা বন্ধ রাখতে পারে না। তাই বর্তমান মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা একটি নোটিশ টু এয়ার মেন (নোটাম) জারি করবে।
দ্য নিউজকে এক উচ্চপদস্থ সূত্র জানিয়েছে, যে পরিস্থিতির কারণে পাকিস্তান এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল, তাতে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। তাই যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানো হবে।
আরও পড়ুন
এদিকে, পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) বৈঠকে ২৪ এপ্রিল ভারতের ওপর আকাশপথে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রতিদিন পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০টি ভারতীয় বিমান ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকার দিকে যাতায়াত করে। এসব বিমানের রুট সাধারণত দিল্লি, মুম্বাই, অমৃতসর ও আহমেদাবাদ থেকে শুরু হয়। আকাশপথে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের বিমান চলাচলে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
ভারতের মহাকাশ অভিযান ব্যর্থ, মহাকাশেই ধ্বংস রকেট

মহাকাশে ইওএস-০৯ কৃত্রিম উপগ্রহ (স্যাটেলাইট) পাঠানোর জন্য ইসরোর রকেট রওনা দিয়েছিল।
কিন্তু মাঝপথে গিয়ে রকেট থেকে ওই কৃত্রিম উপগ্রহটিকে মহাকাশে নামানো যায়নি।
যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে অভিযান মাঝপথে বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন ভারতের এই মহাকাশ সংস্থার কর্মকর্তারা। এদিকে মিশনের ব্যর্থতার পর মহাকাশেই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে রকেটটিকে।
ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআইয়ের বরাত দিয়ে রোববার (১৮ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, রোববার স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ৫৯ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে ইওএস-০৯ নিয়ে রওনা দেয় পিএসএলভি-সি৬১ মহাকাশযান। উৎক্ষেপণ সফল হয়েছিল।
কিন্তু মিশনের তৃতীয় ধাপে গিয়ে যান্ত্রিক গোলযোগ ধরা পড়ে। ফলে তা বাতিল করে দিতে বাধ্য হয় কর্মকর্তারা।
এদিকে ইসরোর পক্ষ থেকে এই অভিযানের উৎক্ষেপণের সময় থেকে সমগ্র মিশনটি সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
অভিযান ব্যর্থ হয়েছে বলে সেখানেই স্বীকার করে নেন সংস্থার প্রধান ভি নারায়ণান। পরে ইসরো সোশ্যাল মিডিয়ায় বিবৃতি দিয়ে জানায়, “আজ ১০১তম মিশন শুরু করা হয়েছিল। পিএসএলভি-সি৬১ দ্বিতীয় ধাপ পর্যন্ত স্বাভাবিক ছিল।
কিন্তু তৃতীয় ধাপে একটি বিশেষ পর্যবেক্ষণের কারণে এই মিশন শেষ করা গেল না।”
সংবাদমাধ্যম বলছে, ইসরোর ইওএস-০৯ কৃত্রিম উপগ্রহটির ওজন ১ হাজার ৬৯৬ কেজি।
৫২৪ কিলোমিটারের কক্ষপথে (সান-সিংক্রোনাস পোলার অরবিট) এই কৃত্রিম উপগ্রহটিকে নামানোর কথা ছিল।
কিন্তু অভিযানের তৃতীয় ধাপে যে মোটরটি ব্যবহার করা হয়, ২০৩ সেকেন্ডের মাথায় সেটিতে যান্ত্রিক গোলযোগ ধরা পড়ে।
২০১৭ সাল থেকে পিএসএলভি রকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন অভিযানের উৎক্ষেপণ করে আসছে ইসরো। এখনও পর্যন্ত এই রকেট ৬৩টি উৎক্ষেপণে ব্যবহার করা হয়েছে।
তার মধ্যে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে তিনটি মিশন। কী কারণে এই গোলযোগ ঘটল, তা খতিয়ে দেখছেন ইসরোর ইঞ্জিনিয়ারেরা।
ইতোমধ্যে একটি ব্যর্থতা বিশ্লেষণ কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
এদিকে মিশনের ব্যর্থতার পর মহাকাশেই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে রকেটটিকে। সেটির ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীতেই এসে পড়বে।
তবে তা থেকে যাতে কোনও বিপদ না-ঘটে, ইসরো তা নিশ্চিত করছে বলেও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
গাজায় নির্বিচারে হত্যা: ইসরায়েলের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করলো স্পেন
ইসরায়েলকে ‘গণহত্যাকারী রাষ্ট্র’ অভিহিত করে দখলদার দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে স্পেন।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, “আমি একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, ইসরায়েল একটি গণহত্যাকারী রাষ্ট্র। এর সঙ্গে আমরা আর বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখছি না। (ইসরায়েলের সঙ্গে) কোনও বাণিজ্য হবে না।”
বুধবার রাজধানী মাদ্রিদে স্পেনের পার্লামেন্টে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে কাতালান পার্লামেন্ট সদস্য গ্যাব্রিয়েল রুফিয়ানের সমালোচনার জবাবে এই তথ্য জানান সানচেজ।
গাজা যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে আগে থেকেই ইসরায়েলের বিরোধিতা করে আসছিলেন তিনি। তবে এটিই তার সবচেয়ে কঠোর পদক্ষেপ ও সরাসরি বক্তব্য।
স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য স্পেনের পররাষ্ট্রনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে বিভাজনের প্রেক্ষাপটে এটি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
‘আপনাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে, কিন্তু পাকিস্তানিরা আসলেই মেধাবী’

পাকিস্তানে অনেকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখেছেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে খুব একটা বাণিজ্য করে না, অথচ তাদের দারুণ সম্ভাবনা আছে।
ট্রাম্প বলেছেন, পাকিস্তানিরা ব্রিলিয়ান্ট (মেধাবী) এবং অসাধারণ সব পণ্য তৈরি করে। তিনি আরও বলেন, আমি সেখানে অনেকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখেছি— যা আপনারা বিশ্বাসই করবেন না।
‘আপনাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে, কিন্তু পাকিস্তানিরা আসলেই মেধাবী’
ট্রাম্প বলেন, তারা ব্রিলিয়ান্ট মানুষ। তারা অসাধারণ সব জিনিস তৈরি করে। কিন্তু আমরা তাদের সঙ্গে খুব কম বাণিজ্য করি।
আপনাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে, কিন্তু পাকিস্তানিরা আসলেই মেধাবী। আমি যুদ্ধ থামিয়েছি, যা পারমাণবিক যুদ্ধ পর্যন্ত গড়াতে পারত। তারা খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। এখন সবাই খুশি।
পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিজের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে দারুণ আলোচনা করেছি। জানেন তো, এটা দু’পক্ষের ব্যাপার। ভারতের সঙ্গে আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, আর পাকিস্তানের সঙ্গেও আমি বাণিজ্য নিয়ে কথা বলেছি। তারা খুব আগ্রহী।
ট্রাম্প জানান, তিনি তার টিমকে নির্দেশ দিয়েছেন পাকিস্তানের সঙ্গে দ্রুত বাণিজ্য শুরু করতে।
দিল্লি থেকে ৪০ রোহিঙ্গাকে ধরে সাগরে 'ছেড়ে দিলো' ভারত

রাজধানী দিল্লি থেকে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ৪০ জনকে ধরে নিয়ে তাদের বঙ্গোপসাগরের পাশের আন্দামান সাগরে নিয়ে ফেলে দিয়েছে ভারত। জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস এমন ভয়াবহ তথ্য জানিয়েছে।
তারা বলেছে, ভারত সরকার সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া জোরদার করেছে। এর অংশ হিসেবে ভারতীয় নৌবাহিনী ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সাগরে ফেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোহিঙ্গারা বিশ্বের অন্যতম নিপীড়িত জনগোষ্ঠী। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর জাতিগত নিধন থেকে বাঁচতে দশ লাখেরও বেশি মানুষ পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর মধ্যে ২২ হাজারের বেশি মানুষ ভারতে জাতিসংঘের শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পান।
তবে ভারত সরকার রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। দেশটির সরকার দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে আসছে এবং তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ এনেছে। আইনগতভাবে ভারতে কেউ শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে পারেন না। তাই সব রোহিঙ্গাকে দেশটি অবৈধ হিসেবে বিবেচনা করে।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে নিষ্ঠুরতা অবলম্বন করেছে।
এরমধ্যে গত সপ্তাহের একটি ঘটনায় জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গত ৬ মে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে পুলিশ বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে আটক করে। এরমধ্যে ৪০ জনকে চোখ বেঁধে প্রায় ১ হাজার ৫০০ মাইল দূরের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে তাদের ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি জাহাজে তোলা হয়। জাহাজটি আন্দামান সাগরের কাছে মিয়ানমারের তানিনথারি অঞ্চলের দিকে যাত্রা করে।
ওই জাহাজে থাকা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, তানিনথারির কাছে পৌঁছানোর পর তাদের লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হয় এবং সাগরে ঝাঁপ দিতে বাধ্য করা হয়। ওই সময় তাদের মিয়ানমারের একটি দ্বীপে সাঁতরে চলে যেতে নির্দেশ দেয় ভারতীয় সেনারা।
ভারতের মানবাধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (পিইউসিএল) জানিয়েছে, যাদের পানিতে ফেলা হয়েছিল তাদের মধ্যে কিশোর, বয়স্ক এবং ক্যানসার রোগীও ছিলেন।
তবে ভাগ্য ভালো থাকায় ওই ৪০ রোহিঙ্গার সবাই জীবিত অবস্থায় তীরে পৌঁছাতে সক্ষম হন। তাদের কয়েকজন জানিয়েছেন, ভারতীয় নৌ সেনারা তাদের মারধর ও অন্যান্য নির্যাতন করেছে।
মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ বলেছেন, “নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাগরে ফেলে দেওয়ার ঘটনা অত্যান্ত ভয়াক। আমি এই ঘটনার বিষয়ে আরও তথ্য ও সাক্ষ্য সংগ্রহ করছি এবং ভারত সরকারকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানোর আহ্বান জানাচ্ছি।”
ভারত গত সপ্তাহে বাংলাদেশেও ৭৮ জনকে পুশ ইন করে। যাদের গুজরাট থেকে ধরে এনে সুন্দরবনে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে গিয়েছিল। ১০ মে এসব মানুষকে উদ্ধার করে বাংলাদেশ। তারা জানিয়েছেন, তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। এমনকি তাদের না খাইয়ে রাখা হয়েছিল।
সূত্র: দ্য মেরিটাইম এক্সিকিউটিভ
মন্তব্য