পাকিস্তান দ্বারা
৩টি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের খবর প্রচারের পর সরিয়ে নিল ভারতীয় গণমাধ্যম

পাকিস্তান ভূখণ্ডে বুধবার রাত ১টার পর ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে অভিযান শুরু করে ভারত।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, অভিযানের অংশ হিসেবে ভারতের বিমান হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়েছে। এই হামলার সময় পাল্টা জবাব দেয় পাকিস্তানও।
দেশটির দাবি ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে তাদের সেনাবাহিনী। এরমধ্যে রয়েছে ফ্রান্সের তৈরি ৩টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান এবং রাশিয়ার তৈরি ২টি এসইউ-৩০ ও মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান।
তবে ভারতের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া না গেলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাতে একটি খবর প্রচার করে ভারতীয় গণমাধ্যম ‘দ্য হিন্দু’।
এতে বলা হয়, ‘বুধবার (৭ মে) জম্মু ও কাশ্মীরের আখনুর, রামবান এবং পাম্পোর এলাকায় কমপক্ষে তিনটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে বলে একজন সরকারি কর্মকর্তা দ্য হিন্দুকে জানিয়েছেন।
কর্মকর্তারা এখনও এই দুর্ঘটনার সঠিক পরিস্থিতি প্রকাশ করতে পারেননি।’
কিন্তু এর কিছুক্ষণের মধ্যেই খবরটি সরিয়ে নেয় ভারতের অন্যতম পরিচিত এই সংবাদমাধ্যমটি।
এর অনলাইন লিংকে গিয়ে সংবাদটির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ভারতীয় অন্য কোনো গণমাধ্যমও এনিয়ে কোনো খবর প্রচার করেনি।
তবে রয়টার্স বলছে, ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে আজ বুধবার তিনটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। দেশটির স্থানীয় সরকারের চারটি সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশটির বিভিন্ন স্থানে ২৪টি হামলা চালিয়েছে ভারত। প্রাথমিক তথ্য অনুসারে এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে দুইজন বেসামরিক নাগরিক।
এই হামলার বিপরীতে পাল্টা প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়েছে ইসলামাবাদ।
আরও পড়ুন
ভারতের পাকিস্তান হামলা
এবার এক লাইনের বার্তা দিলেন রাহুল গান্ধী

পাকিস্তানে ভারতীয় বাহিনীর হামলার ঘটনার পর এ নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে ভারতের প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ একটি এক লাইনের বার্তা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য গর্বিত। জয় হিন্দ!’
ভারতের রাজ্যসভার বিরোধীদলীয় নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গেও বলেছেন, তার দল ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ‘অত্যন্ত গর্বিত’। খবর আল জাজিরা’র।
এক্সে দেয়া পোস্টে তিনি লেখেন, আমরা তাদের (সশস্ত্র বাহিনী) দৃঢ় সংকল্প এবং সাহসকে সাধুবাদ জানাই। পহেলগাম হামলার দিন থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস স্পষ্টভাবে সীমান্তবর্তী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যেকোনো সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সশস্ত্র বাহিনী এবং সরকারের সাথে দাঁড়িয়েছে।
খাড়গে আরও লেখেন, ‘জাতীয় ঐক্য ও সংহতি এখন সময়ের দাবি এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর পাশে আছে। আমাদের নেতারা অতীতে পথ দেখিয়েছেন এবং জাতীয় স্বার্থ আমাদের কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।’
আরও পড়ুন
এদিকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দেশের সশস্ত্র বাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, তিনি তাদের জন্য গর্বিত। এক্সে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘পহেলগামে আমাদের নিরীহ ভাইদের নৃশংস হত্যার’ প্রতিক্রিয়া হলো ‘অপারেশন সিন্দুর’। তিনি আরও লেখেন, মোদি সরকার ভারত এবং তার জনগণের ওপর যেকোনো আক্রমণের উপযুক্ত জবাব দিতে বদ্ধপরিকর। ভারত সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এর আগে হামলার কয়েক ঘণ্টা পর বিশ্ববাসীর উদ্দেশে এক লাইনের বার্তা দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া ওই বার্তায় জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘বিশ্বকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা দেখাতে হবে।’
ভারতকে ‘জায়গামতো’ জবাব দিতে পারি, জাতিসংঘকে বলল পাকিস্তান

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে ভারতের হামলা সম্পর্কে জানিয়েছে।
ইসলামাবাদ বলছে, ভারতের সরাসরি হামলা যে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে— সেই সম্পর্কে তারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদ অর্থাৎ আত্মরক্ষার অধিকার অনুযায়ী, পাকিস্তান ভারতের হামলার জবাব দেওয়ার অধিকার রাখে, এবং তা উপযুক্ত সময়ে এবং উপযুক্ত স্থানে দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। হামলায় নিহত বেড়ে আটজনে দাঁড়িয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৩৫ জন।
আরও পড়ুন
ভারত সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, দেশটির সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছে।
পাকিস্তানের সেনাদের গুলিতে ভারতের কাশ্মিরে নিহত ৭

কাশ্মির সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে ভারত-শাসিত কাশ্মিরে অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩০ জনেরও বেশি ভারতীয়।
কাশ্মির উপত্যকার পুঞ্চ জেলায় হতাহতের এই ঘটনা ঘটে। বুধবার (৭ মে) এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ভারত-শাসিত কাশ্মিরের পুঞ্চ জেলার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, পুঞ্চ জেলায় সীমান্তবর্তী অঞ্চলে গোলাগুলিতে কমপক্ষে সাতজন নিহত এবং প্রায় ৩২ জন আহত হয়েছেন।
পুঞ্চ জেলাটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কার্যত সীমান্ত নিয়ন্ত্রণরেখার (এলওসি) কাছে অবস্থিত। পুঞ্চের সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট আজহার মজিদ বলেছেন, “এখন গোলাগুলি বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি”।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র এর আগে এই অঞ্চলে তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন।
আরও পড়ুন
এদিকে ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে একাধিক হামলা চালানোর পর পাকিস্তান পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে বলে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মিডিয়া উইং আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন।
তিনি উল্লেখ করেছেন, সমস্ত ভারতীয় বিমান তাদের আকাশসীমায় গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে।
পাকিস্তানের এই প্রধান সামরিক মুখপাত্রের মতে, কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর বর্তমানে তীব্র গুলি বিনিময় চলছে। তিনি আরও নিশ্চিত করেছেন, পাকিস্তান বিমান বাহিনীর (পিএএফ) সমস্ত বিমান নিরাপদ রয়েছে।
এদিকে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা সূত্র জিও নিউজকে জানিয়েছে, পাকিস্তানের হামলায় ভূপাতিত ভারতীয় বিমানগুলোর মধ্যে তিনটি রাফাল ফাইটার জেট, একটি মিগ-২৯ এবং একটি এসইউ-৩০ যুদ্ধবিমান রয়েছে।
পাকিস্তানে হামলার যে ব্যাখ্যা দিলো ভারত

পাকিস্তানে বিমান হামলা চালানোর পক্ষে শক্ত যুক্তি তুলে ধরেছে ভারত। কাশ্মীরে বন্দুক হামলার ঘটনায় দুই দেশের চলমান উত্তেজনার এক পর্যায়ে মঙ্গলবার (৬ মে) গভীর রাতে ‘অপারেশন সিঁন্দুর’ নামে পাকিস্তানে অভিযান চালিয়েছে ভারত। খবর হিন্দুস্তান টাইমস
বুধবার (৭ মে) এ হামলার পর কথা বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের অবকাঠামোতে ভারতের হামলা ঠেকাতে পাকিস্তান ব্যর্থ হয়েছে। ২২ এপ্রিল পেহেলগামে হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহতের ঘটনায় এ হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একটি রেসিট্যান্স ফ্রন্ট পেহেলগামে হামলার দায় স্বীকার করেছে। এই সংগঠনটির সঙ্গে পাকিস্তানে নিষিদ্ধ ঘোষিত গোষ্ঠী লঙ্কর-ই-তৈয়েবার সম্পর্ক রয়েছে। এর মাধ্যমেই বোঝা যায় কাশ্মীরে হামলায় পাকিস্তানের যোগসূত্র রয়েছে।
মিশ্রি বলেন, ‘বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য ও বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ সত্ত্বেও পাকিস্তান তাদের ভূখণ্ড থেকে পরিচালিত সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলোর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পাকিস্তান বিশ্বের কাছে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে একটি পরিচিতি তৈরি করেছে।’
আরও পড়ুন
এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারত ২০২৪ সালের মে এবং নভেম্বর মাসে জাতিসংঘের ১২৬৭ নিষেধাজ্ঞা কমিটির মনিটরিং টিমকে ওই রেসিট্যান্স ফ্রন্টের সম্পর্কে তথ্য দিয়েছিল এবং বলা হয়েছিল এটি পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ভারত মনিটরিং টিমকে জানিয়েছিল যে লস্কর ও জইশ-ই-মোহাম্মদ, দ্য রেসিট্যান্স ফ্রন্টের মতো ছোট সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে কাজ করছে। পরতীতে ওই বছরের ২৫ এপ্রিল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রেস বিবৃতিতে টিআরএফ’র কার্যক্রম বন্ধে পাকিস্তানকে চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানায়।
মিশ্রি আরও বলেন, পেহেলগামে হামলা পর তদন্তে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা উঠে এসেছে। কারণ এই গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে পাকিস্তান যোগাযোগ রক্ষা করেছিল। পরবর্তীতে রেসিট্যান্ট ফ্রন্টের দায় স্বীকার এবং লস্কর-ই-তৈয়বার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টগুলোতে অনেক বিষয় স্পষ্ট হয়।
মিশ্রি উল্লেখ করেন, জম্মু ও কাশ্মীরসহ ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দেওয়ার উদ্দেশ্যে পেহেলগামে হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই গোষ্ঠীগুলো আরও হামলার পরিকল্পনা করছে। এজন্য তাদের থামাতে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে।
ভারত দাবি করেছে, তারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মোহাম্মদ এবং হিজবুল্লাহ মুজাহিদীন গোষ্ঠীর ওপর অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে।
মন্তব্য