গাইবান্ধা জেলা পরিষদের এডিপি প্রকল্পে পলাশবাড়ীতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

গাইবান্ধা জেলা পরিষদের এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) প্রকল্প বাস্তবায়নে পলাশবাড়ী উপজেলায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান ও ভুয়া প্রকল্পের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে গাইবান্ধা জেলা পরিষদের আওতায় পলাশবাড়ী উপজেলায় প্রায় ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৫টি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় দরপত্রের মাধ্যমে, ১৮ লাখ টাকার ৬টি প্রকল্প কোটেশনের মাধ্যমে এবং ৪৫ লাখ টাকার ২৬টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, বিশেষ করে কোটেশন ও প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোতে অনিয়মের মাত্রা বেশি। বেশিরভাগ প্রকল্পই হয়েছে দায়সারাভাবে। একাধিক প্রকল্প কমিটির সভাপতিরা জানিয়েছেন, তারা জানেনই না তাদের নামে কোনো প্রকল্প হয়েছে। এমনকি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেখিয়েও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন নীতিমালার ৪.১৬ ধারা অনুযায়ী, বাস্তবায়িত প্রতিটি প্রকল্প এলাকায় প্রকল্পের নাম, অর্থবছর, ব্যয় এবং অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের নামসহ একটি ফলক স্থাপন বাধ্যতামূলক। কিন্তু অধিকাংশ এলাকায় ফলক বা সাইনবোর্ড না থাকায় সাধারণ মানুষ বুঝতেই পারছে না কোনটি সরকারি প্রকল্প, কাদের অর্থায়নে হচ্ছে, কে বাস্তবায়ন করছে এবং প্রকল্পের প্রকৃতি কী?
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী একাধিক গ্রামবাসী জানান, সাইনবোর্ড না থাকায় “আমরা বুঝতেই পারছি না, এটা সরকারি কাজ নাকি ব্যক্তিগত।”
এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রকল্প তালিকার ৩৮ নম্বর প্রকল্প “পলাশবাড়ী উপজেলার ভাতগ্রাম ইউপির পাকুরিয়া বাজার সংলগ্ন জামে মসজিদ নির্মাণ” নামের প্রকল্পটির বাস্তবে অস্তিত্বই নেই। পলাশবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, “এই নামে আমাদের উপজেলায় কোনো স্থান বা মসজিদ নেই। প্রকল্প তালিকায় এমন নাম থাকার প্রশ্নই ওঠে না।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রকল্প সভাপতি জানান, জেলা পরিষদের প্রকল্প পেতে হলে অগ্রিম ‘পার্সেন্টেজ’ দিতে হয়। বরাদ্দ যাই হোক, প্রকল্পে লাভ থাকে—কাজ তেমন না করলেও চলে।
স্থানীয় নাগরিক স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক মোশফিকুর রহমান মিল্টন বলেন, “প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।”
জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ভাই, এখন কাজ বন্ধ আছে। জেলা পরিষদে আসেন, সব কথা বলা যাবে। প্রয়োজনে জেলা প্রশাসকের কাছেও নিয়ে যাব।”
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। প্রকল্পে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সচেতন মহলের দাবি, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য এবং প্রকল্প কমিটির সভাপতিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ উচ্চপর্যায়ের তদন্ত জরুরি।
আশরাফুজ্জামান সরকার/
নোয়াখালীতে ছাত্রদল নেতার ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ

নোয়াখালীর সদরের কালাদরাপ ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি মিজানুর রহমানের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (৫ মে) বেলা ১১টার দিকে উপজেরার কালাদরাপ ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন হাজী আমিন উল্যাহ বাজারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। কালাদরাপ ইউনিয়ন বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বান্যারে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
কালাদরাপ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি নাজমুল হোসেন মাজেদের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন, কালাদরাপ ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সহ-সভপতি মো.ইব্রাহিম, সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক আবদুজ জাহের, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম মেম্বার, ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল, যুগ্ম আহ্বায়ক মো.রাশেদ, ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান মামুন, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাহাব উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মো.ইয়াছিন, সদর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক করিম উদ্দিন চৌধুরী বাবু, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি সোহরাব হোসেন, সহসভাপতি আজগর হোসেন সুমন, সহসভাপতি মো.রায়হান, সাধারণ সম্পাদক জাফর হোসেন, আন্ডারচর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, চরমটুয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের আহবায়ক রাসেল মাহমুদ প্রমূখ।
সভায় বক্তারা এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানান। একই সাথে এই সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ২ মে দুপুরের দিকে উপজেলার কালাদরাপ ইউনিয়নের পশ্চিম শুল্যাকিয়া গ্রামে এডিপির প্রকল্পের ১১১ মিটার এইচবিবি সলিং সড়ক নির্মাণে দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। সেখানে ওই এলাকার আবুল খায়ের, রিয়াজ, মেহরাজ, বেলাল, আজাদসহ আরো কয়েকজন অতর্কিতভাবে ছাত্রদল নেতা মিজানুর রহমানের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে হামলাকারীরা তাকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয়।
এসএসসি পরীক্ষার্থী রাজন হত্যা: ইউপি সদস্যসহ জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবিতে থানা ঘেরাও

নরসিংদীর রায়পুরায় এসএসসি পরীক্ষার্থী রাজন শিকদার হত্যা মামলার প্রধান আসামি ইউপি মেম্বার আশরাফুর রহমানসহ জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে থানা প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেছে নিহতের সহপাঠী, শিক্ষক ও পরিবারের সদস্যরা।
রবিবার (৪ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে রায়পুরা থানা প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচী পালন করেন তারা।
বক্তারা বলেন, রাজন শিকদার ছিলেন একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। চলতি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল সে। কিন্তু তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্রে করে পাড়াতলী ইউপি মেম্বারের নেতৃত্বে তার লোকজন রাজনকে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। ঘটনার পর ১৬ জনকে আসামি করে মামলা করা হলেও একজনকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এ সময় প্রধান আসামি ইউপি মেম্বারসহ জড়িতদের দ্রæত গ্রেপ্তার দাবি এবং কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।
বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন- সায়দাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান, সহকারী শিক্ষক শাম্মী আখতার, নিহত রাজন শিকদারে ভাই রাসেল মিয়া, আল আমিন চৌধুরীসহ সায়দাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।
জানা যায়, গত ২৭ এপ্রিল এসএসসি পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরেন রাজন শিকদার। বিকেলে সহপাঠীদের সঙ্গে আলীনগর বাজার মোড়ে কেরাম খেলছিলেন তিনি। এ সময় একই ইউনিয়নের মধ্যনগরের জাহাঙ্গীর ও তার লোকজনের সঙ্গে ঝগড়া হয় বাঁশগাড়ী এলাকার এক অটোরিকশা চালকের। ঝগড়া থামাতে এগিয়ে আসেন রাজনসহ আশপাশের লোকজন। পরিস্থিতি শান্ত হলে অটোরিকশা চালককে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। কিন্তু জাহাঙ্গীর বিষয়টি সহজভাবে নেয়নি। সন্ধ্যায় তার আত্মীয় পাড়াতলী ইউপি মেম্বার আশরাফুর রহমানের নেতৃত্বে দলবল নিয়ে আলীনগর বাজারে একটি দোকানে হামলা চালায়। সেখানে রাজনকে বাঁশ দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। হামলায় গুরুতর আহত রাজনকে প্রথমে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দিয়ে পরে ঢাকা মেডিক্যালে নেওয়া হয়। সেখানে ২ এপ্রিল আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় গতকাল শনিবার ইউপি মেম্বার আশরাফুর রহমানসহ ১৬ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা ফজলু মিয়া।
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আদিল মাহমুদ জানান, নিহতের সহপাঠীরা থানা প্রাঙ্গণে এসে রাজন হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে। তাদের সাথে আমার আলাপ হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে। দ্রæত সময়ের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হবে।
সাদ্দাম উদ্দিন রাজ/
একাই ১৯০ পদে ফটিকছড়ির ইউএনও

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে দুই পৌরসভা ও ছয় ইউনিয়ন পরিষদসহ প্রায় ১৯০টি পদের দায়িত্বে একাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
জানা গেছে, উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুল-মাদরাসা মিলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ৯২টি। তার মধ্যে কয়েকটি উচ্চ বিদ্যালয়ে অ্যাডহক কমিটি থাকলেও অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠানে এখনো সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ইউএনও। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতার কাগজে স্বাক্ষর করতে হয় ইউএনওকে।
এ ছাড়া উপজেলা শিক্ষা কমিটির স
ভাপতি হিসেবে তাকে চারজনের অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে ২২৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বও সামলাতে হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার প র উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের সরিয়ে দেওয়া হয়। বিভিন্ন দপ্তরের স্থায়ী কমিটির ৯টিতে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আর আটটিতে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান সভাপতির দায়িত্ব পালন করতেন।উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কয়েকটি কমিটিতে উপদেষ্টা এবং ৮-১০টি কমিটির সভাপ
তির দায়িত্বে থাকেন। তারা না থাকায় উপজেলা পরিষদ প্রশাসক হিসাবে সব কমিটির দায়িত্ব এখন ইউএনওর কাঁধে। একই ভাবে পৌর মেয়র-কাউন্সিলরদের অপসারণ করায় ফটিকছড়ি ও নাজিরহাট পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্বও পালন কর ছেন ইউএনও।উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫ আগস্ট পরবর্তী ছয় ইউপি চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় সেসব ইউনিয়নের প্রশাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
এছাড়া জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠানসহ নানা জনের লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ শোনা এবং সেগুলোর সমাধানও অনেক ক্ষেত্রে তাকেই
করতে হচ্ছে।
জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা কমিটি থেকে শুরু করে শিক্ষা, কৃষি উন্নয়ন, প্রতিবন্ধী ভাতা, হাটবাজার ব্যবস্থাপনা, বয়স্ক-বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত ভাতা, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি, মাতৃত্ব ভাতা, চোরাচালান প্রতিরোধ, এনজিও সমন্বয়, টেন্ডার, টিআর-কাবিখা, বিভিন্ন দিবস উদযাপনসহ উপজেলা পর্যায়ে সরকারি দপ্তরগুলোর বিভিন্ন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ইউএনও। বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন ফাইল-পত্রে স্বাক্ষর করা ছাড়াও নানা সামাজিক ও মানবিক কাজে দিন-রাত ছুটে চলেছেন।
নানুপুর আবু সোবাহান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান বলেন, একজন ইউএনও উপজেলার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা। বর্তমানে উপজেলা পর্যায়ের স্কুল-মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তিনি। এজন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আমাদের তার কাছেই যেতে হয়। গেলেই দেখি তিনি নানান কাজে অনেক ব্যস্ত থাকেন। এরপরও তিনি আমাদের কথা শুনেন এবং সুন্দর সমাধানও দেন।
লেলাং ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানে ইউএনও স্যারের দায়িত্ব কয়েকগুণ বেড়েছে। যা সামলানো খুবই কষ্টসাধ্য। তবে তিনি খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, অন্তর্বতী সরকার দায়িত্বে আসার পর থেকেই ইউএনও’র দায়িত্ব দিন দিন বেড়েই চলছে। এতে আমাদেরও কাজের চাপ বেড়েছে। বর্তমানে আমাদের রাত-বিরাতেও অফিশিয়াল অনেক কাজ করতে হচ্ছে। অনেক সময় কাজের চাপে সময়মতো খাওয়ারও সুযোগ হয় না।
ইউএনও মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর আগের চেয়ে দায়িত্ব অনেক বেড়েছে। তবে এটিকে আমি চাপ বা বোঝা মনে না করে জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।
চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে খুলনার সেই বির্তকিত নেতা রব্বানী অব্যাহতি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়রা উপজেলার আহ্বায়ক গোলাম রব্বানীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি ও সংগঠনের সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে উথাপিত বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে সংগঠনটির খুলনা জেলা কমিটি তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে কেন স্থায়ী বহিস্কার করা হবে না এ বিষয়ে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা প্রদান করতে নির্দেশনা দিয়েছেন।
সোমবার সংগঠনটির খুলনা জেলার দপ্তর সেল সদস্য শিহাব সাদনাম রাতুল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কয়রা উপজেলার আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী প্রসঙ্গে বিভিন্ন অভিযোগ উঠে এসেছে। এজন্য তাকে খুলনা জেলা কমিটির সভাপতি তাসনিম আহমেদ ও সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পির নির্দেশক্রমে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সংগঠনের সকল দায়িত্ব ও কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া তাকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না সে বিষয়ে আগামী সাত দিনের মধ্যে জেলা কমিটির কাছে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, গোলাম রব্বানী খুলনার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েকবছর পূর্বে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে কয়রায় ইলেকট্রিক পণ্যের ব্যবসা পরিচালনা করেন। এর আগে কিছুদিন একটি বেসরকারি পলিটেকনিকে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর হিসেবে শিক্ষকতা করেন। তবে এখনও পড়াশুনা করছেন বলে তিনি দাবি করেন। ৫ আগষ্টের দিন বিকাল থেকে কয়রার ছাত্রসমাজের সাথে তাকে দেখা যায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোশাররফ হোসেন রাতুলকে কেন্দ্র করে কয়রায় ছাত্র সমন্বয়কদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। রাতুলের সাথে গোলাম রব্বানী সহ-সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেন। আওয়ামী সরকার পতনের পর কয়রার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে তারা প্রশংসা কুঁড়ালেও কিছুদিনের মধ্যে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় দুর্নাম ছড়িয়ে পড়ে। একটি মাদ্রাসার শিক্ষক আঃ রউফকে তাদের সাথে সার্বক্ষণিক থাকতে দেখা যায়। একসাথে কাজ করার কিছুদিনের মধ্যে গোলাম রব্বানী ও আঃ রউফের কার্যক্রম নিয়ে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে রাতুল ও তার অনুসারিদের সাথে তাদের বিরোধ দেখা দেয়। কোথাও আন্দোলনে অংশ না নিয়েও গোলাম রব্বানী কয়রায় একক আধিপত্য বিস্তারের জন্য আহ্বায়ক পদ পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। আর রাতুল নিজেকে সমস্ত কার্যক্রম থেকে গুটিয়ে নিয়ে পড়াশুনায় মনোনিবেশ করেন। গোলাম রব্বানী এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার সহযোগীতায় পুলিশ-প্রশাসনসহ সর্বক্ষেত্রে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন। তাকে গেল ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে দাঁড়িয়ে অভিবাদন গ্রহণ করতেও দেখা গেছে। যে ছবি তার ফেসবুক প্রোফাইলের কভার ফটো হিসেবে ব্যবহার করে রেখেছেন। ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠান থেকে প্রভাব খাটিয়ে কাজ আদায় করার অভিযোগও রয়েছে। জামায়াত ও বিএনপির কতিপয় নেতা-কর্মীর সাথে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। তাদের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে থাকেন।
একপর্যায়ে কমিটি গঠনের জন্য জেলা কমিটি কর্তৃক সাত সদস্য বিশিষ্ট উপ-কমিটি গঠিত হলেও তাদের সুপারিশ আমলে না নিয়ে গোলাম রব্বানীকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়রার আহ্বায়ক করা হয়। ওই সময় অভিযোগ ওঠে এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার সুপারিশে এমনটি হয়। আহ্বায়ক বনে গিয়ে গোলাম রব্বানী আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। পুলিশ-প্রশাসনকে ম্যানেজ করে একের পর এক অপকর্ম করতে থাকেন। নৌকা প্রতিকের জনপ্রতিনিধিসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের থেকে বিভিন্ন কৌশলে চাঁদা আদায় করতে থাকেন। তার বিপক্ষে গেলেই বিভিন্নভাবে হয়রানী করেন, এমনকি মামলায় নাম যুক্ত করে দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। কাওয়ালী সন্ধ্যা ও এনসিপির কেন্দ্রিয় কমিটির নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা বলে ইফতার মাহফিল আয়োজনের নামে ব্যাপক চাঁদাবাজি করেন। চাঁদাবাজি বিষয়ে কয়েকটি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাকে বহিস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্ররা। নিজ সংগঠনের অধিকাংশ নেতা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। প্রতিবেদন করায় সাংবাদিকদের দমন করতে বিভিন্ন কুটকৌশল করতে থাকেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভাষায় গালিসহ হুমকি দিয়ে স্ট্যাটাস দেয়। হঠাৎ ২০১৩ সালের জামায়াতের মিছিলে পুলিশের হামলার একটি ঘটনায় কয়রা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি তারিক লিটুসহ ৫ জন সাংবাদিক,৮ জন আইনজীবী,৩ জন শিক্ষকসহ শতাধিক নিরীহ ব্যক্তির নামে হত্যা মামলা করা হয়। ওই মামলার বাদী নিহত জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী সবিরন আসামিদের চেনেন না বলে জানান।
তিনি আরও জানান, মামলার মূলহোতা গোলাম রব্বানি। তিনি শুধু কাগজে স্বাক্ষর করেছেন, তাকে আসামিদের তালিকা পড়তেও দেইনি। এ বিষয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিপক্ষ দমন ও চাঁদাবাজির সুবিধার্থে বাদীকে ফুঁসলিয়ে গোলাম রব্বানী ও তার সহযোগীরা মিলে নিরীহদের যুক্ত করে মামলা করেন বলে স্থানীয়দের দাবি। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, মানবাধিকার সংগঠনসহ সাধারণ জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও নিন্দার ঝড় ওঠে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মহরম হাসান মাহিম জানান, কয়রা উপজেলার মানুষের দীর্ঘদিনের অভিযোগ ও অসন্তোষের প্রেক্ষিতে সংগঠন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংগঠনের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে তাকে সাময়িকভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। যথাযথ কারণ দর্শাতে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কোন অন্যায়কারীর সাথে আমাদের আপোষ নেই।
মন্তব্য