বাংলাদেশে নারী কৃষকদের ক্ষমতায়নে কৃষি সম্প্রসারণ সেবার সম্ভাবনা ও ক্ষেত্র

বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারী কৃষকদের অবদান অপরিসীম। বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল কাটা, সবজি উৎপাদন থেকে পশুপালন—সবখানেই নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। তবুও প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ, বাজার সংযোগ ও আর্থিক সহায়তায় নারীরা এখনও পিছিয়ে আছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষি সম্প্রসারণ সেবা নারীদের ক্ষমতায়ন এবং কৃষি খাতের উন্নয়নে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে।
নারী কৃষকদের বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, কৃষি খাতে প্রায় ৪৩ শতাংশ শ্রমশক্তি নারী। তবে এদের একটি বড় অংশ অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজ করে এবং তাদের অবদান প্রায়ই অর্থনৈতিক মূল্যে পরিমাপ হয় না।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষক রাবেয়া বেগম জানান,
“আমরা মাঠে ধান লাগাই, ঘরে বীজ সংরক্ষণ করি, কিন্তু নতুন জাতের ধান বা সবজি চাষের পদ্ধতি নিয়ে প্রশিক্ষণ খুব একটা পাই না।”
কৃষি সম্প্রসারণ সেবার ভূমিকা
কৃষি সম্প্রসারণ সেবার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কৃষকদের কাছে নতুন প্রযুক্তি, চাষাবাদের আধুনিক কৌশল এবং বাজার সংক্রান্ত তথ্য পৌঁছে দেওয়া। নারীদের জন্য এই সেবার বিশেষ উপযোগিতা হলো—
• প্রযুক্তি স্থানান্তর – নারীরা যাতে সহজে ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রপাতি ও আধুনিক পদ্ধতি শিখতে পারেন।
• ফসল ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ – বীজ নির্বাচন, সার প্রয়োগ, সেচ ব্যবস্থাপনা ও রোগ-পোকার দমন শেখানো।
• বাজার সংযোগ – ফসল বিক্রির সময়, দাম নির্ধারণ ও বাজার প্রবেশাধিকার নিয়ে পরামর্শ।
• ঋণ ও সহায়তা প্রকল্প – সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কৃষি ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ তৈরি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন,
“নারী কৃষকদের জন্য আলাদা ফার্মার ফিল্ড স্কুল, প্রদর্শনী প্লট এবং ডিজিটাল পরামর্শ কেন্দ্র চালু করা গেলে তারা আরও আত্মনির্ভরশীল হবে।”
জরিপে যা উঠে এসেছে
বিষয় -শতাংশ (%)
নারী কৃষকেরা প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ পান -৩৫%
বাজার তথ্যের নিয়মিত অ্যাক্সেস আছে -২৫%
কৃষি সম্প্রসারণ সেবার সাথে যোগাযোগ রাখেন -৪০%
নারী কৃষক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে দক্ষ -১৮%
সম্ভাবনার ক্ষেত্র
1. ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারণ – মোবাইল অ্যাপ, এসএমএস ও অনলাইন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দূরবর্তী অঞ্চলের নারী কৃষকের কাছে সেবা পৌঁছানো।
2. গোষ্ঠীভিত্তিক কৃষি কার্যক্রম – সমবায় ও গ্রুপভিত্তিক চাষাবাদে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো।
3. অ্যাগ্রো-প্রসেসিং – ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও ব্র্যান্ডিং-এ নারীদের সম্পৃক্ত করা।
4. নারীবান্ধব কৃষি যন্ত্রপাতি – হালকা ও সহজ ব্যবহারযোগ্য যন্ত্র তৈরি ও সরবরাহ।
মাঠ পর্যায়ের সাফল্যের গল্প
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার নারী কৃষক হাসিনা আক্তার গত মৌসুমে কৃষি সম্প্রসারণ সেবা থেকে সবজি চাষের প্রশিক্ষণ নেন। নতুন কৌশল ব্যবহার করে তিনি জমির উৎপাদন দ্বিগুণ করতে সক্ষম হন।
“আগে শুধু পরিবারের জন্য সবজি ফলাতাম, এখন বাজারে বিক্রি করে মাসে ৭-৮ হাজার টাকা আয় করি।”
চ্যালেঞ্জ
• সামাজিক বিধিনিষেধ – অনেক পরিবার নারীদের মাঠে বা প্রশিক্ষণে পাঠাতে অনিচ্ছুক।
• ভূমি মালিকানার অভাব – জমির মালিকানা না থাকায় অনেক নারী কৃষি ঋণ পান না।
• তথ্যের সীমাবদ্ধতা – প্রযুক্তি বা বাজার সংক্রান্ত তথ্য সময়মতো হাতে পৌঁছায় না।
• পর্যাপ্ত নারী কৃষি কর্মকর্তা না থাকা – মাঠ পর্যায়ে নারী কৃষি কর্মকর্তার সংখ্যা কম হওয়ায় নারী কৃষকদের সেবা সীমিত।
বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ
1. নারীবান্ধব সম্প্রসারণ নীতি প্রণয়ন।
2. নারী কৃষকের জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ।
3. নারী প্রশিক্ষক ও কৃষি কর্মকর্তার সংখ্যা বৃদ্ধি।
4. বাজারে নারী কৃষকের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
পরিশেষে, নারী কৃষকদের ক্ষমতায়ন শুধু তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, বরং বাংলাদেশের সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কৃষি সম্প্রসারণ সেবা যদি পরিকল্পিতভাবে নারীবান্ধব করা যায়, তাহলে আগামী দিনে গ্রামীণ অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে এবং লাখো নারী কৃষক আত্মনির্ভরশীলতার পথে এগিয়ে যাবেন।
লেখক- বেগম জেরিনা রেশমা, পিএইচডি ফেলো, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
চ্যাটজিপিটির ডায়েট চার্ট মেনে হাসপাতালে রোগী!

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এইআই) উপর মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরতা কতটা বিপদ ডেকে আনতে পারে, তার ভয়াবহ দৃষ্টান্ত সম্প্রতি উঠে এসেছে। চ্যাটজিপিটি-এর দেওয়া ডায়েট চার্ট মেনে চলতে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এক ব্যক্তি। চিকিৎসকরা জানান, অতিরিক্ত পরিমাণে সোডিয়াম ব্রোমাইড গ্রহণ করার ফলে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হন তিনি।
এই ঘটনাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এসিপি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা এই ঘটনার তদন্ত করেন। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৬০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি খাবারের অতিরিক্ত লবণ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন এবং এর বিকল্প খুঁজতে গিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নেন।
চ্যাটজিপিটি তাকে ক্লোরাইডের নিরাপদ বিকল্প হিসেবে সোডিয়াম ব্রোমাইড গ্রহণের পরামর্শ দেয়। এআই-এর এই পরামর্শে ভরসা করে তিনি তিন মাস ধরে নিয়মিত সোডিয়াম ব্রোমাইড সেবন করতে থাকেন। কিন্তু চ্যাটজিপিটি তাকে এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে কোনো সতর্কবার্তা দেয়নি।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ওই ব্যক্তির মধ্যে কিছু অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা যায়। তিনি প্রচণ্ড তৃষ্ণার্ত থাকা সত্ত্বেও পানি পান করতে পারছিলেন না এবং তার হ্যালুসিনেশন হচ্ছিল। প্রথমে চিকিৎসকরা ধারণা করেন, মানসিক অসুস্থতার কারণে তার এমন হচ্ছে। পরে অ্যান্টি-সাইকোটিক ওষুধ ও ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইড দেওয়ার পর তার অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হয়। তখন তিনি পুরো ঘটনাটি খুলে বলেন।
চিকিৎসকরা জানান, ব্রোমাইড সাধারণত উদ্বেগ ও অনিদ্রার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হত। তবে এর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে কয়েক দশক আগেই ওষুধ হিসেবে এর ব্যবহার বাতিল করা হয়েছে। বর্তমানে কিছু প্রাণীর ওষুধ ও শিল্পজাত পণ্যে এর ব্যবহার সীমিত।
দীর্ঘ তিন সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পর ওই ব্যক্তি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। এই ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সকলকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
বাংলাদেশে উল্কাবৃষ্টি দেখার দারুণ সুযোগ আসছে

উল্কাবৃষ্টি দেখার দারুণ এক সুযোগ আসছে আমাদের দেশে! ১২ ও ১৩ আগস্ট বাংলাদেশের আকাশ থেকে দেখা যাবে এই অনিন্দ্য সুন্দর মহাজাগতিক ঘটনা—পার্সাইড উল্কাবৃষ্টি।
প্রতি বছর আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে এই উল্কাবৃষ্টি হয়ে থাকে, আর উত্তর গোলার্ধের দেশগুলো থেকে সহজেই তা দেখা যায়। এ বছরও ব্যতিক্রম নয়। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ১৩ আগস্ট ভোররাতে উল্কাবৃষ্টি সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যাবে।
চাঁদের আলো কিছুটা বাধা, তবুও দারুণ অভিজ্ঞতা হবে
গত বছর উল্কাবৃষ্টির সময় চাঁদ ছিল না, তাই অন্ধকার আকাশে উল্কাগুলো অনেক স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল। তবে এবার চাঁদের আলো থাকবে বলে উল্কাবৃষ্টি কিছুটা ম্লান লাগতে পারে। তবুও, পার্সাইড উল্কা এতটাই উজ্জ্বল যে তারা চাঁদের আলোয়ও চোখে পড়বে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আকাশ যদি মেঘমুক্ত থাকে, তাহলে আপনি প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১০০টি উল্কা দেখতে পারেন। এ এক চমৎকার অভিজ্ঞতা—আকাশে হুট করে জ্বলে উঠছে উজ্জ্বল আলোর রেখা, একটার পর একটা!
কোথা থেকে আসছে এই উল্কাগুলো?
এই উল্কাবৃষ্টির উৎস হচ্ছে পার্সিয়াস নক্ষত্রপুঞ্জ। এখান থেকেই ‘পার্সাইড’ নামটির উৎপত্তি। তবে বাস্তবে উল্কাগুলো আসে সুইফট-টাটল নামের একটি ধূমকেতু থেকে।
যখন পৃথিবী তার কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে এই ধূমকেতুর ফেলে যাওয়া ধূলিকণার পথে চলে আসে, তখন সেই ছোট ছোট কণা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে ঘর্ষণে জ্বলে ওঠে। আমাদের চোখে যেটা দেখা যায়, তা-ই শুটিং স্টার বা উল্কা!
কখন দেখবেন?
তারিখ: ১২ ও ১৩ আগস্ট
সর্বোত্তম সময়: ১৩ আগস্ট ভোর রাত, সম্ভব হলে ২টা থেকে ৪টার মধ্যে
যেখানে দেখবেন: শহরের আলো থেকে দূরে, খোলা আকাশের নিচে
শর্ত: পরিষ্কার আকাশ হলে সবচেয়ে ভালো দেখা যাবে
এ দৃশ্য উপভোগের টিপস:
- সম্ভব হলে আলো দূষণ কম এমন জায়গায় যান
- মোবাইল বা টর্চের আলো কম ব্যবহার করুন
- একটা চাদর বা চেয়ারে শুয়ে আরাম করে আকাশের দিকে তাকান
- ধৈর্য ধরে ১৫–২০ মিনিট অপেক্ষা করুন, চোখ অন্ধকারে অভ্যস্ত হলে বেশি উল্কা দেখতে পারবেন
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
হোয়াটসঅ্যাপের যেসব গোপন ফিচার জানেন না অনেকেই

জনপ্রিয় মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ। যা সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ব্যবহারকারীদের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ বিভিন্ন ফিচার যুক্ত করে নিয়মিত। যা ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা আরো ভালো করে। তবে মেটার মালিকানাধীন এই অ্যাপে এমন অনেক ফিচার রয়েছে যা এখনও জানেন না ব্যবহারকারীরা।
চলুন জেনে নেওয়া যাক সেরকমই ৩টি আকর্ষণীয় ফিচার
এক. হোয়াটসঅ্যাপ চালু কারো চ্যাটে গেলেই নিচের দিকে দেখা যায় বেশ কয়েকটি আইকন। তার মধ্যে থাকে ক্যামেরা, ডকুমেন্ট ও মাইক্রোফোন। ওই মাইক্রোফোনে ক্লিক করলে পাঠানো যায় ভয়েস মেসেজ। কিন্তু কিবোর্ডে থাকে আরো একটি মাইক্রোফোন। সেটির ব্যবহার জানেন? সেটিংসে গিয়ে ভাষা পরিবর্তন করে নিয়ে ওই মাইক্রোফোন ক্লিক করে আপনি যা বলবেই সেটাই ওই ভাষায় টাইপ হয়ে স্ক্রিনে আসবে। ফলে আপনাকে আর পরিশ্রম করে টাইপ করতে হবে না।
দুই. যেকোনো প্রয়োজনে হোয়াটসঅ্যাপের কিবোর্ডই হয়ে উঠতে পারে স্ক্যানার? আপনি কাউকে কোনো লেখা পাঠাতে চাইছেন। এতদিন ছবি খাতায় লেখার ছবি তুলে পাঠাতেন। আর সেকাজ করবেন না। মেসেজে ট্যাপ করলেই পাবেন অটোফিল অপশন। তাতে ক্লিক করলেই কিবোর্ডটি হয়ে যাবে স্ক্য়ানার। ছবি তুলে যে লেখা পাঠাচ্ছিলেন, সেটা স্ক্য়ান করে পাঠিয়ে দিন।
তিন. হোয়াটসঅ্যাপে রয়েছে মেসেজ ট্রান্সক্রিপ্ট অপশনও। এই ফিচার ব্যবহারে ভয়েস মেসেজ লিখিত আকারে দেখতে পাবেন। তাতে পথে ঘাটে মানুষের মাঝে থাকলে আর হেডফোন খুঁজে শুনতে হবে না। এটার জন্য প্রথমে যেতে হবে সেটিংসে। তারপর অন করতে হবে ভয়েস মেসেজ ট্রান্সক্রিপ্ট অপশন। এরপর পছন্দ করতে হবে ভাষা। যে কোনো ভয়েস মেসেজ লিখিত আকারে পেয়ে যাবেন স্ক্রিনে।
প্রয়োজনীয় তথ্য মনে রাখতে পারেন না? সমাধানের সহজ ৫ উপায়

আমাদের সবারই জীবনে এমন সময় আসে যখন আমরা অনেক কিছুই অনেক সময় মনে করতে পারি না। হয়তো এ ঘর থেকে অন্য ঘরে যেতে যেতেই ভুলে যাই কেন গিয়েছিলাম সেখানে। বা অনেকক্ষণ পড়ার পরেও পরীক্ষার সময় মাথা ফাঁকা হয়ে যায়। এমন হলে স্বাভাবিকভাবেই মাথায় বিভিন্ন চিন্তা আসা শুরু করে। ভুলে যাওয়ার রোগ ধরল নাকি তা নিয়েও ভাবনা আসে মনে। তবে চিন্তার কিছু নেই। আপনি একা নন। বরং, এটা খুবই স্বাভাবিক এবং সবার সঙ্গেই ঘটে কমবেশি।
বিভিন্ন গবেষণা বলছে, মানব মস্তিষ্ক এমনভাবে তৈরি হয়নি যেন আমরা প্রতিটি ছোটখাটো বিষয় মনে রাখতে পারি। আসলে, ভুলে যাওয়া একটা প্রাকৃতিক বিষয়, যা মস্তিষ্ককে বেশি কার্যকর রাখে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মস্তিষ্ক শুধু সেই তথ্য মনে রাখে যা আমাদের কাজে লাগে বা আমাদেরকে বাঁচতে সাহায্য করে। যেমন চেনা মুখ, বিপদ, রুটিন কাজ ইত্যাদি। মস্তিষ্ক মেনে চলে যে সবকিছু মনে রাখার দরকার নেই।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে- তাহলে আসলেই দরকারি তথ্য কীভাবে মনে রাখবেন? নিচে ৫টি কার্যকরী উপায় দেওয়া হলো, যা বিজ্ঞানভিত্তিক এবং সহজে প্রয়োগযোগ্য।
১. একবারে গিলতে যাবেন না, সময় নিয়ে শিখুন
জার্মান বিজ্ঞানী হারমান এববিংহাউস তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, নতুন কিছু শিখলে আমরা খুব দ্রুত তা ভুলে যাই। এর মূল কারণ আমরা সেটা বারবার সময় নিয়ে দেখি না।
পদ্ধতিটা কীভাবে কাজ করে: একই দিনে বারবার এক জিনিস পড়ার চেয়ে সপ্তাহে কয়েকদিনে ভাগ করে পড়লে সেই জিনিস বেশি মনে থাকে। যেমন- আজ পড়ুন, কাল আবার একটু দেখুন, তারপর ৩ দিন পর, তারপর ১ সপ্তাহ পর।
সহজ পরামর্শ: ছোট ছোট নোট বা কার্ড বানিয়ে সেগুলো বারবার দেখে নিন। এতে তথ্যটা দীর্ঘমেয়াদে মাথায় থাকবে।
২. যেটা শেখেন, সেটা নিজের সঙ্গে মিলিয়ে নিন
মস্তিষ্ক এমন তথ্য বেশি মনে রাখে, যেটা সে আগে থেকে কোনোভাবে চেনে বা যেটার সঙ্গে মানুষের অনুভূতির যোগ আছে।
কেন এটা কাজে দেয়: আমরা যে তথ্যের সঙ্গে আবেগ বা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা জড়াতে পারি, মস্তিষ্কের জন্য সেটা মনে রাখা অনেক সহজ হয়।
সহজ পরামর্শ: নতুন কিছু শিখলে সেটা নিজের জীবনের উদাহরণ দিয়ে ভাবুন বা কল্পনা করুন। যেমন ইতিহাস পড়লে ভাবুন আপনি সেই সময়ের মানুষ ছিলেন।
৩. ভালো ঘুম মানেই ভালো স্মৃতি
ঘুম শুধু বিশ্রামের জন্য না, এটা নতুন করে শেখা জিনিস মনে রাখার জন্যও জরুরি। গভীর ঘুমের সময়েই আমাদের মস্তিষ্ক শিখা তথ্যকে দীর্ঘমেয়াদে জমা করতে থাকে।
বিজ্ঞানের তথ্য: যেসব মানুষ দিনে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমায়, তারা স্মৃতির কাজে অনেক ভালো করে।
সহজ পরামর্শ: নতুন কিছু শেখার পর অন্তত এক রাত ভালো মত ঘুম দিন। এমনকি ৯০ মিনিট ঘুমও অনেক কাজে দেয় বলে জানিয়েছে বিভিন্ন গবেষণা।
৪. নিজেই নিজের পরীক্ষা নিন, শুধু পড়লেই হবে না
বারবার পড়লে মনে হচ্ছে শেখা হচ্ছে, আসলে তা না। তথ্য মনে রাখতে সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে নিজে নিজে সেটা মনে করার চেষ্টা করা।
কেন এটা কার্যকর: প্রশ্ন করে বা নিজে বলে বলে শেখা হলে মস্তিষ্ক বুঝতে পারে যে এটা দরকারি তথ্য। তখন সে সেটা জমা করে দ্রুত।
সহজ পরামর্শ: পড়া শেষ করার পর বই বন্ধ করে ভাবুন আপনি কী শিখলেন। মুখে বলুন বা নিজের ভাষায় লিখে ফেলুন। দেখবেন মস্তিষ্ক দ্রুত আপনাকে মনে রাখতে সাহায্য করছে।
৫। হাতে লিখলে স্মৃতি থাকে বেশি
কম্পিউটারে টাইপ করার সময় কাজ দ্রুত হয়, কিন্তু হাতে লেখার সময় মস্তিষ্ক বেশি সচল থাকে এবং শেখেও দ্রুত।
গবেষণার ফল: হাতে লেখা নোট টাইপ করা নোটের চেয়ে বেশি কার্যকর। এতে শুধু তথ্য নয়, তার মানে বুঝতেও সাহায্য হয় মস্তিষ্কের।
সহজ পরামর্শ: একটা খাতা রাখুন যেখানে নতুন শেখা জিনিসগুলো নিজের ভাষায় লিখবেন। চাইলে ছবি, মানচিত্র বা ডায়াগ্রামও আঁকতে পারেন নিজের সুবিধা মত।
মানব মস্তিষ্কের জন্য সবকিছু মনে রাখা সম্ভব না- এটাই বাস্তবতা। আমাদের মস্তিষ্ক কোন ক্যামেরা না। এটা একটা লাইব্রেরিয়ান। যা দরকার সেটাই রেখে দেয় সে। কিন্তু সঠিক উপায়ে চর্চা করলে আপনি মস্তিষ্ককে সাহায্য করতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস মনে রাখতে। মনে রাখবেন, সব কিছু মনে রাখতে হবে না- শুধু গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো মনে রাখাটাই যথেষ্ট।
তথ্যসূত্র: সিএনএন।
মন্তব্য