ডাকসুতে ৫৬৫ ফরম বিক্রি, হল সংসদে ১২২৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিনে ফরম সংগ্রহ করেছেন ৪৪২ জন। নির্বাচনে ফরম সংগ্রহের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৬৫ জনে। এছাড়া হলগুলোতে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন মোট ১২২৬ জন।
সোমবার (১৮ আগস্ট) বিকালে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের তৃতীয় তলায় অবস্থিত চিফ রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।
এর মধ্যে দিয়ে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম বিতরণ কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত মনোনয়ন সংগ্রহকারীদের ফরম জমা দেওয়ার শেষ দিন। এরপরেই জানা যাবে কোন পদে কতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
এর মধ্যে দিয়ে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম বিতরণ কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত মনোনয়ন সংগ্রহকারীদের ফরম জমা দেওয়ার শেষ দিন। এরপরেই জানা যাবে কোন পদে কতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ডাকসুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ শিক্ষার্থীরা মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। এখানে কেউ কোনো দলীয় পরিচয়ে মনোনয়ন নেননি। ভোট গ্রহণের আগের দিন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর নাম অপরাধীর তালিকায় পাওয়া গেলে তাকে প্রার্থিতা থেকে বাদ দেওয়ার সুযোগ আছে।
নিজ ক্যাম্পাসে পরিক্ষা আয়োজনের দাবিতে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি

রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে পরীক্ষা আয়োজনের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছে। একই সঙ্গে তারা আরও আট দফা দাবি জানিয়েছে।
সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুরে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসক অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াসের কাছে এ স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে হবে নিজ নিজ ক্যাম্পাসে এবং তা পরিচালনা করবে সাত কলেজের অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও খাতা মূল্যায়নের দায়িত্বও দিতে হবে সাত কলেজের শিক্ষকদের হাতে।
এ সময় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ফাহাদ বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সেখানে একজন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও রেজিস্ট্রারের থাকার কথা। কিন্তু নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ইউজিসি লোকবল নিয়োগের জন্য বাজেট দেওয়ার কথাও বলেছে, কিন্তু প্রশাসন ইচ্ছা করেই নিয়োগ দেয়নি।”
শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি হলো—
- ১. অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসকের অধীনে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ।
- ২. রেজিস্ট্রেশনের সব টাকা ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির তত্ত্বাবধানে জমা।
- ৩. নিজ নিজ ক্যাম্পাসে পরীক্ষা গ্রহণ।
- ৪. প্রশ্ন প্রস্তুতি ও খাতা মূল্যায়ন সাত কলেজের শিক্ষক দ্বারা সম্পন্ন।
- ৫. ৪০ কর্মদিবসের মধ্যে ফল প্রকাশ, নন-প্রমোটেড শিক্ষার্থীদের জন্য সম্পূরক পরীক্ষা ও সিজিপিএ শর্ত বাতিল।
- ৬. উপাচার্য নিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষের সব তথ্য হস্তান্তর।
- ৭. দাবিগুলো মেনে নিলেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সম্মতি।
- ৮. বিশ্ববিদ্যালয়সংক্রান্ত সব তথ্য ও নির্দেশনা কেবল অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে প্রকাশ।
- ৯. অধ্যাদেশ জারির পর সব শিক্ষার্থীর তথ্য নিজস্ব সার্ভারে স্থানান্তর ও নির্ধারিত ডিজাইনের আইডি কার্ড প্রদান।
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সাত কলেজের প্রশাসক অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, “আমার কর্তৃপক্ষ ইউজিসি। ইউজিসিকে জানালে তারা সরাসরি সিদ্ধান্ত নেবে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মের বাইরে যাবে না।”
পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে প্রশাসক আরও বলেন, “এরা যদি পরীক্ষা না দেয়, ৮ মাস পিছিয়ে যাবে। ফেব্রুয়ারির আগে কিছুই হবে না। অধ্যাদেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা নেওয়ার জায়গা নেই। আমি রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়ে পরীক্ষা দিতে বলেছি। ফি কমানোর যৌক্তিকতা থাকলে অবশ্যই কমবে।”
নিজ ক্যাম্পাসে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া কোথাও পরীক্ষার কেন্দ্র পরিবর্তন হয় না। যখন নিজ নিজ ক্যাম্পাসে পরীক্ষা নেওয়া হবে, তখন ছাত্র ও শিক্ষক প্রতিপক্ষ হয়ে যাবে। হঠাৎ করে সিস্টেম ভেঙে দিলে কেউ পরীক্ষা নিতে পারবে না।”
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চলতি বছরের ২৬ মার্চ রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে পৃথক করে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের ঘোষণা দেয় সরকার। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রস্তাবিত নাম নির্ধারণ করে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’।
কলেজগুলো হলো— ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
শামুকের ‘অজানা জগৎ’ উন্মোচনে রাবির গবেষণায় সাফল্য

‘প্রকৃতির মুক্তা’ খ্যাত বিলুপ্তির মুখে থাকা গেছো শামুকের (অ্যামফিড্রোমাস গ্লোবোনেভিল্লি) প্রজনন বিষয়ে বিশ্বে প্রথমবারের মতো এক অভিনব আচরণ শনাক্ত করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গবেষকরা। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রজাতিটি সম্পূর্ণরূপে গাছে বসবাস ও প্রজনন করে থাকে। বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে বিস্তৃত অ্যামফিড্রোমাস প্রজাতির শামুকের ক্ষেত্রে এটাই প্রথমবারের মতো ডিম পাড়ার প্রামাণ্য তথ্য হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে।
সম্প্রতি এই আবিষ্কারটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নাল ফোলিয়া মালাকোলজিকা (Folia Malacologica)-তে প্রকাশ পেয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার জীববৈচিত্র্য গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের বিভিন্ন জায়গায় ৫ দিনব্যাপী পরিচালিত মাঠ পর্যায়ের জরিপে এটি দেখা গেছে।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেন রাবির মলাস্কান রিসার্চ ল্যাবরেটরির প্রধান প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শাহরিয়ার শোভন এবং নেদারল্যান্ডস-এর ভ্রিজে ইউনিভার্সিটি (VU)-এর ড. তাকুমি সাইতো। দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন—মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা টি এস রূপময় তঞ্চঙ্গ্যা, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের দুজন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মো. রহিম বাদশা ও মো. জায়িদ হাসান।
গবেষণায় উঠে এসেছে, অ্যামফিড্রোমাস গ্লোবোনেভিল্লি নামক গেছো শামুকটি গাছের ছোট ছোট গহ্বরে ১০ থেকে ৫০টি করে গোলাপি-সাদা ডিম পাড়ে। একই সাথে, কিছু ডিম শামুকের খোলসে লেগে থাকতে দেখা গেছে এবং কিছু ডিম গহ্বরের বাইরেও দৃশ্যমান ছিল। এই অভিনব আচরণ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, শামুকটির পুরো জীবনচক্রই গাছেই সম্পন্ন হয়, যা আগে কোথাও নথিভুক্ত হয়নি।
এছাড়া শুধু আম গাছ নয়, কাঁঠালসহ অন্যান্য বৃক্ষেও এরা ডিম পাড়ে বলে গবেষকরা ধারণা করছেন। পূর্ববর্তী গবেষণায় যেখানে পাতার নিচে নেস্ট তৈরি করে ডিম পাড়ার তথ্য ছিল, এবার তা পরিবর্তন করে গাছের গহ্বরে ডিম পাড়ার আচরণ ধরা পড়েছে।
গবেষণায় সহযোগী প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মো. রহিম বাদশা (সোহান) জানান, ‘বাংলাদেশে ফিল্ড-ভিত্তিক গবেষণা এখনো সীমিত; বেশিরভাগ গবেষণা কেবল প্রকাশনা ও ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টরে কেন্দ্রীভূত। এই ধারা ভেঙে শাহরিয়ার শোভন স্যার জাপানি কোলাবরেটরের সহযোগিতায় বিরল প্রজাতির শামুক নিয়ে গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। ইতোমধ্যে পাঁচটি নতুন প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়েছে এবং একটি অনন্য আচরণগত পর্যবেক্ষণ প্রকাশিত হয়েছে। আরও গবেষণা ও প্রকাশনা প্রক্রিয়াধীন। তবে ফান্ডিংয়ের অভাবে এমন উদ্যোগ ব্যাহত হতে পারে। তাই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সরকারি ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যথাযথ অর্থায়ন অত্যন্ত জরুরি।’
এ বিষয়ে প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহরিয়ার শোভন বলেন, ‘বিশ্বে এ ধরনের শামুকের প্রজাতি অত্যন্ত বিরল। এটি খুবই চ্যালেঞ্জিংও বটে, অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকৃতির গহ্বরে বিপুলসংখ্যক ডিম একসঙ্গে রাখা। আমরা পাঁচজন গবেষক মিলে এই গবেষণাটি সম্পন্ন করেছি। গেছো শামুকের প্রজনন আচরণ সংক্রান্ত এই প্রামাণ্য তথ্য সংরক্ষণনীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি, দক্ষিণ এশিয়ার স্থলচর গ্যাস্ট্রোপডের আচরণগত বিবর্তন ও বাস্তুতাত্ত্বিক বৈচিত্র্য চিহ্নিত করতেও এটি সহায়ক হবে।’
প্রসঙ্গত, প্রফেসর শোভনের নেতৃত্বাধীন মলাস্কান রিসার্চ ল্যাবরেটরি ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে গেছো শামুকের পাঁচটি নতুন প্রজাতি শনাক্ত করেছে এবং বিশ্বের প্রথম সফল কৃত্রিম প্রজনন গবেষণাও সম্পন্ন করেছে, যা এই বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর সংরক্ষণে যুগান্তকারী অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ববি শিক্ষার্থীদের চোখে জুলাই বিপ্লবের এক বছর: প্রত্যাশা ও বাস্তবতা

২০২৪ সালের জুলাই মাস, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়। কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন দ্রুতই ফ্যাসিবাদবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জমা হওয়া ক্ষোভ, হতাশা আর বঞ্চনা রূপ নেয় অপ্রতিরোধ্য প্রতিরোধের। এক বছর পর, আজ ২০২৫ সালের আগস্টে দাঁড়িয়ে সেই আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফিরে তাকাচ্ছেন—কতটা বদলেছে বাস্তবতা, কতটা পূরণ হয়েছে তাঁদের স্বপ্ন?
'আমরা শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে পারিনি'
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সুজয় শুভ এই আন্দোলনকে দেখছেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি জাতির চিরায়ত সংগ্রামের অংশ হিসেবে। তাঁর ভাষায়, "১৯৭১ সালে পাকিস্তানি নিপীড়ন, এরশাদের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে যেমন লড়াই হয়েছে, তেমনি ফ্যাসিস্ট হাসিনার সতেরো বছরের নিপীড়নের বিরুদ্ধেও এই আন্দোলন।" তিনি জুলাই অভ্যুত্থানকে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, "এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের সমস্ত প্রত্যাশা পূরণ হবে, এমনটা না। দুঃখজনক বিষয় হলো, আমরা শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণের কাজটি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে পারিনি।" তিনি বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথে একাগ্রতার অভাব নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
'যে স্বপ্ন নিয়ে রাজপথে নেমেছিলাম, তার বাস্তবায়ন দেখতে চাই'
আন্দোলনের সম্মুখ সারির যোদ্ধা সাজ্জাদ হোসেনের মূল লক্ষ্য ছিল একটি দুর্নীতিমুক্ত ও সুশাসিত দেশ গড়া। তিনি বলেন, "আমরা বিশ্বাস করেছিলাম, আমাদের আত্মত্যাগ একটি নতুন ভোরের সূচনা করবে।" কিন্তু এক বছর পরেও দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখতে না পেয়ে তিনি হতাশ। সাজ্জাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে আজও সেই পুরনো জীর্ণতা বিদ্যমান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতার অভাব, প্রশাসনে দীর্ঘসূত্রিতা এবং দুর্নীতির অভিযোগ তাঁকে হতাশ করে। তিনি সরকারের কাছে জোর দাবি জানান, জুলাই আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে শিক্ষা খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হোক। তাঁর প্রত্যাশা, "আমরা দেখতে চাই, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে এসেছে, যেখানে মেধা ও যোগ্যতাই একমাত্র মাপকাঠি।"
'এটি ছিল দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের ফলে জমা হওয়া গণ-বিস্ফোরণ'
আন্দোলনের আরেক সংগঠক এবং জুলাইয়ে আহত মোকাব্বেল শেখ বলেন, "সফল জুলাই অভ্যুত্থান কোনো পরিকল্পিত বিপ্লব নয়। এটি দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের ফলে জমা হওয়া একটি গণ-বিস্ফোরণ।" তাঁর প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশে একটি কাঠামোগত স্থায়ী পরিবর্তন আসবে, যা স্বাধীনতার পর কখনোই আসেনি। তবে তিনি বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আশানুরূপ পরিবর্তন দেখতে পাননি। অব্যবস্থাপনা, বৈষম্য আর দুর্নীতি এখনো অনেকাংশে রয়ে গেছে। মোকাব্বেল আশা করেন, জুলাইয়ের মাধ্যমে যে বিপ্লবের সূত্রপাত হয়েছে, তা একদিন এদেশের মানুষের চূড়ান্ত মুক্তির মাধ্যমে শহীদদের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ তৈরি করবে।
'আমার শরীরে ৫১টি স্প্লিন্টার লেগেছিল'
জুলাই বিপ্লবে গুলিবিদ্ধ হাসনাত আবুল আলা এই আন্দোলনকে "স্বাধিকার ফিরে পাওয়ার আপসহীন সংগ্রাম" হিসেবে বর্ণনা করেন। ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের তীব্র ক্ষোভের প্রকাশ ছিল এই বিপ্লব। তিনি স্মরণ করেন ১৬ জুলাইয়ের সেই বিভীষিকাময় দিন, যখন আবু সাঈদ, শান্ত, ওয়াসিমসহ ছয়জন শহীদ হন। ৪ আগস্ট বরিশাল হাতেম আলী কলেজের সামনে পুলিশের স্প্লিন্টার হামলায় তাঁর মাথায়, বুকে, হাতে ও চোখে মোট ৫১টি স্প্লিন্টার লাগে। সেই যন্ত্রণা ও ত্যাগের পর ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়।
হাসনাতের মতে, এত আত্মত্যাগের পরেও জুলাই বিপ্লবের এক বছর পেরিয়ে গেলেও জুলাই ঘোষণা ও সনদ মেলেনি। গণহত্যার দায়ে জড়িতদের বিচার কার্যক্রমও দৃশ্যমান নয়। জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসন ও চিকিৎসা ব্যবস্থার অনিশ্চয়তা তাঁকে ব্যথিত করে। তিনি বলেন, "এখনো নির্বিচারে মানুষ খুন হয়, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি মানুষকে অতিষ্ঠ করে রাখছে।" অসংখ্য অসংগতির মাঝেও তিনি একটি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রত্যাশা করেন, যেখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকবে এবং শহীদদের চেতনা রক্ষিত হবে।
জুলাই আন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই ভাবনাগুলো স্পষ্ট করে যে, এটি কেবল একটি কোটা সংস্কারের আন্দোলন ছিল না, ছিল একটি জাতির অধিকার ও আত্মমর্যাদার পুনর্জাগরণ। সব দাবি হয়তো এখনও পূরণ হয়নি, কিন্তু যা জন্ম নিয়েছে তা হলো প্রতিরোধের এক নতুন ভাষা। ভবিষ্যৎ হয়তো আরও কঠিন, কিন্তু এই আন্দোলন যে স্বপ্ন আর প্রেরণার জন্ম দিয়েছে, তা সহজে থামার নয়।
চবির স্বাস্থ্যসেবা ‘নামমাত্র’, ২টি অ্যাম্বুলেন্সে চলে ২৯ হাজার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষার্থী এবং তিন হাজার শিক্ষক-কর্মকর্তার স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্ব রয়েছে মাত্র দুটি অ্যাম্বুলেন্সের ওপর। ক্যাম্পাসে জরুরি চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দুটি অ্যাম্বুলেন্স সচল অবস্থায় রয়েছে এবং সেগুলো দিয়ে সার্বক্ষণিক সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে ক্যাম্পাসের পরিধি এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় এই সংখ্যাটি অত্যন্ত অপ্রতুল হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পেতে অনেক সময়ই ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।
নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব বলেন, “গুরুতর অসুস্থ হয় কেউ যখন অ্যাম্বুলেন্সের জন্য কল দেয় তখন সেখান থেকে বলা হয় একটি শহরে আছে এবং আরেকটি ডাক্তার আনতে চলে গেছে। এসব হয়রানিমূলক পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে অতি দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা বাড়াতে হবে।"
মোহাম্মদ আল আমিন নামে এক শিক্ষার্থী তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন,"সকাল ৬টার দিকে পেটব্যথায় অসুস্থ রুমমেটকে মেডিকেলে নিতে অ্যাম্বুলেন্সে কল দেই। জানানো হয়, দুটি অ্যাম্বুলেন্সই শহরে। বাধ্য হয়ে রুমমেটকে হেঁটে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত নিয়ে যাই, সেখান থেকে রিকশায় করে মেডিকেলে পৌঁছাই ৬:২৫ মিনিটে।"
এ এফ রহমান হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র দুটি অ্যাম্বুলেন্স, তাও সব সময় পাওয়া যায় না। কল দিলেই বলে এম্বুলেন্স দুটোই শহরে আছে। কিছুদিন আগে আমার হলে একজন আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাকে দ্রুত মেডিকেল নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স কল দেওয়া হয়। এই এম্বুলেন্স আসতে দেরি করায় পরবর্তীতে আমরা তাকে মোটরসাইকেলে করে মেডিকেল নিয়ে যেতে বাধ্য হই।"
নাট্যকলা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বলেন," প্রথমত অ্যাম্বুলেন্স হচ্ছে অপর্যাপ্ত, তার উপর অ্যাম্বুলেন্স এর ভেতরের যে অবস্থা সেখানে অসুস্থ রোগী আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে"।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, হঠাৎ দুর্ঘটনা, সাপের কামড় কিংবা অসুস্থতার সময় অনেকেই মেডিকেলে পৌঁছাতেই দেরি করেন। অনেক সময় রিক্সা বা মোটরসাইকেলে করে রোগীকে নিয়ে যাওয়া লাগে। তাও আবার সব সময় পাওয়া যায় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. আবু তৈয়ব বলেন, দুটি অ্যাম্বুলেন্স সচল রয়েছে। তবে শিক্ষার্থীসংখ্যা বিবেচনায় আরও একটি অ্যাম্বুলেন্স জরুরি। আমরা সে অনুযায়ী প্রশাসনকে প্রস্তাব দিয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য(প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, " আমাদের মেডিকেল সেন্টারের মৌলিক সমস্যা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সের সমস্যা। এটি আমাদের দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই সমস্যা আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমরা এখনও এই সমস্যাটির সমাধান করতে পারিনি। আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের টাকা ছাড় হবে এবং একটি অ্যাম্বুলেন্স কিনতে পারবো। আমাদের সাথে যেসব ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম রয়েছে আমরা তাদেরকেও অ্যাম্বুলেন্সের জন্য চিঠি দিয়েছি এবং অনুরোধ করেছি। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের এই সমস্যাটির সমাধান করার জন্য।
দেশের অন্যতম বৃহৎ এই আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য এই সংখ্যা একেবারেই অপ্রতুল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাসেবা আরও আধুনিক ও দ্রুতগামী করতে মেডিকেল সেন্টারকে সম্প্রসারণ এবং অ্যাম্বুলেন্স সেবাকে শক্তিশালী করার দাবি জানাচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মন্তব্য