ড. ইউনূস বিদায় নিতে পারবেন না, বিদায় দেওয়া হবে: মাসুদ কামাল

‘ড. ইউনূস এমন শান্তি সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন যেখানে মার খেয়েও চুপ করে থাকতে হয়। আওয়ামী লীগ আমলে আমরা শুনতাম যে বিএনপি নোতকর্মীরা ঘরে থাকতে পারতো না। নদীর চরে গিয়ে থাকতো, জঙ্গলে থাকতো, এগুলো ঘটেছে বাংলাদেশে। আওয়ামী লীগ ঘটিয়েছে, যে কারণে আমরা তাদের স্বৈরাচার বলেছি, ফ্যাসিবাদী বলেছি, তাদের দেশ থেকে তাড়িয়েছি। এখন উনি (ড. ইউনূস) যেসব আচরণ শুরু করছেন তাতে ওনাকেও বিদায় দেওয়া হবে, উনি বিদায় নিতে পারবেন না।’
সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল।
মাসুদ কামাল বলেন, ড. ইউনূস শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন, কিন্তু ওনার আমলে কি শান্তি বেড়েছে দেশে? রাস্তা দিয়ে হাঁটবেন, কেউ যদি আপনাকে স্বৈরাচারের দোসর বলে পেটায়, একটা পুলিশও আপনাকে বাঁচাতে আসবে না। এই বাস্তবতার নাম কি শান্তি?
তিনি বলেন, ড. ইউনূসের কিন্তু বোঝা উচিৎ তিনি এখানে কী করছেন। তার সামনে সুযোগ ছিল নিজেকে আরো উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার। যদি তিনি সবার সঙ্গে মিলেমিশে তিনি কাজগুলো করতেন। কিন্তু তিনি সেটা করছেন না।
ড. ইউনূস সবাইকে নিয়ে কাজ না করার কারণ কী এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ কামাল বলেন, তিনি রাজনীতি বোঝেন না। ২৫ আগস্টে তার দেওয়া বক্তব্যে তিনি অনেক কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন— আমরা অন্য জগতের মানুষ। তিনি 'আমরা' বলেছেন, মানে তারা (উপদেষ্টা) সবাই। একটা ইন্টারভিউতে তিনি বলেছেন, আমি এগুলা বুঝি না। তখন তাকে প্রশ্ন করা হয়— অন্যরা ভুল করলে তাদের কিছু বলেন না? উত্তরে তিনি বলেন— তাদের কী বলব, আমি নিজেই ভুল করি, আমি নিজেই তো বুঝি না। অনুরোধে ঢেকি গেলা যায় না, ড. ইউনূস অনুরোধে ঢেকি গিলছেন। উনি আবার সেটা বলেন যে এইটা আমি জানি না।
সেই সময়ে ড. ইউনূসের বিকল্প ছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ কামাল বলেন, সেটা তো ড. ইউনূসের দেখার ব্যাপার না। এমন বিকল্প নেই সেই কথা শেখ হাসিনাও বলতো। তার কিছু চামচা ছিল; আপনার-আমার বন্ধু ছিলো যারা গিয়ে বলতো— আপা আপনি তো অমর। আপনি মরে গেলে দেশের কী হবে? তো এখন উনি নাই, তাতে কি দেশের কোনো সমস্যা হয়েছে? পৃথিবীতে অপরিহার্য কোনো ব্যক্তি নাই। আর এই বিষয়টা যারা মানতে না পারে তাদের আচার-আচরণে স্বৈরাচারী মনোভাব আছে।
টেলিফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে
সাংবাদিককে হুমকি কাদেরের, বললেন দেশে ফিরলে ‘তখন আপনাদের দেখা যাবে না’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ৫ আগস্ট তিনি বাথরুমে আত্মগোপনে ছিলেন এবং ছাত্রদের সহায়তায় প্রাণে বেঁচে যান। ইউটিউব চ্যানেল ‘নাগরিক টিভি’র এডিটর ইন চিফ নাজমুস সাকিবকে টেলিফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানান।
সাক্ষাৎকারে এক পর্যায়ে প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতা।
এর আগে ভারতীয় গণমাধ্যমকে এক সাক্ষাৎকার দেন ওবায়দুল কাদের। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর এই প্রথম কোনো গণমাধ্যমে কথা বলেন কাদের।
ওই গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের নানা বিষয় ধরে ওবায়দুল কাদেরের কাছে প্রশ্ন রাখেন নাজমুস সাকিব।
ইন্ডিয়ান গণমাধ্যমে আপনার (কাদের) একটা ইন্টারভিউ দেখলাম, খুব ভাইরাল হলো। ওটা নিয়ে একটু জানতে চাচ্ছিলাম। বলা হচ্ছে, ৫ই আগস্ট বাথরুমে আপনাকে নাকি পালিয়ে থাকতে হয়েছিল। তারপর ছাত্রদের সহায়তায় আপনি প্রাণে বেঁচে যান-এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘এছাড়া কি উপায় ছিল?’
আপনি কি তাহলে বলতে চান যে, ছাত্ররাই আপনাকে রক্ষা করেছে? তখন কাদের বলেন, ‘হ্যাঁ এটাও তো ঠিক।’
কিন্তু অনেকে বলছেন, ওই সময় মানুষের মনে যে ক্ষোভ ছিল আওয়ামী লীগের প্রতি বা আপনাদের প্রতি। সে সময় ছাত্ররা আপনাকে রক্ষা করবে অনেকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না-এমন প্রশ্নের জবাবে সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ওরা (ছাত্ররা) বলছিলো, আপনার প্রতি রাগ ছিল। কিন্তু আপনার সামনে এসে আমাদের রাগ পানি হয়ে গেছে।’
এরপর তো আপনি তিন মাস দেশেই ছিলেন? জবাবে কাদের বলেন, ‘হ্যাঁ ছিলাম।’
দেশ থেকে তাহলে গেলেন কীভাবে, ওখানে কারা আপনাকে সহযোগিতা করলো, এটা কি বলা যাবে?
পাল্টা প্রশ্ন রেখে কাদের বলেন, ‘এটা কি বলা যায়? তিন মাস পরে বাড়িতে বাড়িতে যেভাবে তল্লাশি, বাড়িতে বাড়িতে অভিযান, আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে তল্লাশি..., তখন শরীরটাও একটু সমস্যায় পড়ছিল। অনেকগুলো ওষুধ খেতে হয়। আমি ভাবলাম অ্যারেস্ট হলে তো আমাকে ওষুধ খাওয়ানোর লোক নেই। অনেককিছু চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম ওখানে আর থাকবো না, এই আর কি।’
এই তিন মাস যে আপনি থাকলেন, এই সময়ে তো আপনি বুঝতে পেরেছেন, আওয়ামী লীগকে নিয়ে মানুষের ক্ষোভ, এই ক্ষোভটা আপনি কি মনে করেন না যে যুক্তিযুক্ত ছিল, কারণ সাড়ে ১৫ পনেরো বছর যা করলেন?
জবাবে কাদের বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছরে পদ্মা সেতুও তো আমরা করেছি। মেট্রোরেল তো আমরা করেছি। ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়েও তো আমরা করেছি।’
২০১৮ সালে রাতের ভোট, ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন করলেন। এই যে জনগণের ভোটের অধিকারটা যে কেড়ে নিয়েছিলেন। আপনি কি মনে করেন না যে এটা আপনাদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল?
উত্তরে কাদের বলেন, ‘এগুলো আলোচনার অপেক্ষা রাখে! সেগুলো চর্চা করার বিষয় আছে। আমাদেরও একটা দৃষ্টিকোণ আছে। আজকে পৃথিবীর দেশে দেশে গণতন্ত্রের স্বরূপ সব জায়গায় একরকম নয়। আমাদের দেশে অপজিশনের যে চেহারা, সেখানে আমাদেরকে একটা ইলেকশন লিগ্যালি করতে হয়। সেটি আমরা করেছি। কিন্তু উন্নয়ন তো দেশের মানুষ যা চায়.... আজকে অপিনিয়ন পোল নেন, বেশিরভাগ লোক চায় শেখ হাসিনা আবার আসুক এবং শেখ হাসিনাকে আবার চাই। এ কথা আজ মানুষের মুখে মুখে। ইলেকশনটা হলে বুঝবেন।’
কিন্তু পাবলিক পারসেপশন হচ্ছে আপনি দেখেছেন, শেখ হাসিনা যদি সত্যিই ওই সিচুয়েশন থাকতো তাহলে দেশে থাকতেন। উনাকেতো দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। এটা কি তার রাজনীতির জন্য একটা লজ্জাজনক অধ্যায় না?
জবাবে কাদের বলেন, ‘নো, আমি এটা মনে করি না। তখন তার বেঁচে থাকার প্রয়োজন ছিল। কারণ তাদের সেদিন প্ল্যানই ছিল তাকে কিল করবে।’
আচ্ছা বেগম খালেদা জিয়াও তো মারাত্মক শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু কই, উনি তো কম্প্রোমাইজ করেননি। উনি তো আপস করেননি। দেশেই থেকেছেন। তাকে চিকিৎসা করতে দেননি। কম্প্রোমাইজ করলে তাকে বিদেশে যেতে দিতেন। তিনি তো তা করেননি। কিন্তু আপনাদের নেত্রী তো কম্প্রোমাইজ করে ভারতে চলে গেলেন! জবাবে কাদের বলেন, ‘না, কম্প্রোমাইজ করে যাননি। তাকে (শেখ হাসিনা) বাঁচার দরকার ছিল। সে জন্য চলে আসছেন।’
কিন্তু আপনার কি মনে হয় না, আপনারা ওই সময়টাতে যখন শাসনভারে ছিলেন এমন সবকিছু...
কাদের বলেন, ‘এখন বাংলাদেশে আপনারা অপিনিয়ন পোল নেন, মানুষ কাকে সমর্থন করে। আমি সে কথায় যাচ্ছি বারবার।’
আপনি (কাদের) যেহেতু আওয়ামী লীগ করেন, আপনি ভাববেন বা বিশ্বাস করেন...
কাদের বলেন, ‘আমি সে কথা ভাববো কেন। দেশের পাবলিক অপিনিয়ন কী এটা আপনি জানেন না?, এখন আপনি একটা দলের সমর্থক হলে তো জানবেন না। এটাই স্বাভাবিক। আপনি তো বায়াসড! হোয়েন ইউ আর এ বায়াসড অ্যাজ এ জার্নালিস্ট। আপনি ঢালাও অভিযোগ করছেন।’
সাংবাদিক বলতে কারা বায়াসড ছিল না? এই নাঈমুল ইসলাম খানের মতো লোকরা, শেখ হাসিনার প্রেস কনফারেন্সে গিয়ে ভালো ভালো কথা বলতো। উত্তরে কাদের রাগান্বিতভাবে বলেন, ‘তাদের কথা বাদ। আপনি নিজেই তো বায়াসড। আমি সবার কথা তো বলছি না।’
আপনি (কাদের) নিজেও তো সাংবাদিকতা করেছেন, ‘আপনি জানেন সাংবাদিকদের কাজ হচ্ছে প্রশ্ন করা। আমি ওই প্রশ্নটাই আপনাকে করছি। জবাবে কাদের বলেন, প্রশ্ন করে লাভ নেই। প্রশ্ন করে যেটা নেবেন সেটা লিখতে পারবেন না। কারণ আমি আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারি। সেটা আপনি প্রচার করতে পারবেন না।’
আপনাদের এখনো কি কোনো অনুশোচনা বা আত্মোপলব্ধি হয়েছে, মানে আপনারা যা করেছিলেন সেগুলো সঠিক ছিল না। সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের আত্মোপলব্ধি, আমাদের আত্ম-সমালোচনা থাকতে পারে এবং সেটা নিয়ে আমরা চর্চা করবো। যখন আমরা দেশে ফিরবো। সেখানে আলোচনা করে যদি ভুল হয়ে থাকে, তাহলে ভুল স্বীকার করবো। সেটা দেশে, বিদেশে বসে নয়।’
কিন্তু দেশে যাওয়ার মতো বাস্তবতা আপনাদের কি হবে আদৌ হবে? কারণ আপনাদের নেতাকর্মীরা তো সবাই পলাতক, বেশিরভাগই, কাউকে তো আমরা দেখতে পাচ্ছি না-এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দি সান রাইজেস এ... বাট ডিনাই... বিফোর। এই ইংরেজিটার বাংলা একটু আপনি ভাবেন। এই ধরনের অবস্থা থেকে উই ক্যান গেট আউট অব দিস...। এখন আমরা যে অবস্থায় আছি। উই ক্যান গেট আউট অব দ্য গ্যাটার। আমি সেটাই মনে করি।’
কিন্তু এই গ্যাটারে আপনারা পড়লেন কেন? কাদের বলেন, ‘আমি আপনাকে বলছি, মানুষ এখন কেন মনে করছেন-এমন আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছে, সেই ‘জঙ্গি’ উত্থানে। তারাও কেন এখন মনে করছে, তারা ভুল করেছে।’
তাই যদি হয়, মানুষ যদি আপনাদের পক্ষে থাকে তাহলে দেশে আসছেন না কেন? জবাবে কাদের বলেন, ‘সময় হলে দেখবেন।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে রাগান্বিতভাবে কাদের বলেন, ‘আপনার এই চেহারাটা, বক্তব্যটা কোথায় যাবে? যদি আমরা ফিরে যাই। তখন তো আপনাকে খুঁজেও পাওয়া যাবে না। মানে কি আপনি কি আবার ওই প্রতিহিংসার রাজনীতি করবেন? যারা সমালোচনা করছেন?’
জবাবে কাদের বলেন, ‘হয়তো রিসেন্ট একটা রাজনৈতিক ক্যারেক্টার আছে সেটার প্রকাশ ঘটাচ্ছেন।’ নাজমুস সাকিব বলেন, ‘না আমি সাংবাদিক হিসেবে আপনাকে জাস্ট প্রশ্ন করছি।’
কাদের তখন বলেন, ‘ইউ আর নট আ জার্নালিস্ট, ইউ আর বায়াসড। পার্শিয়াল জার্নালিস্ট।’ নাজমুস সাকিব বলেন, ‘বায়াসড কে নয়। নাইমুল ইসলাম খানের মতো লোকেরা?’
কাদের বলেন, ‘জার্নালিজমের একটা নিউট্রালিটি থাকে। এইটা আপনার নাই। আপনিতো এটা করতেছেন একটা পক্ষ হইয়া। ইউনূসের লোকেরা যেভাবে বলে, ফান্ডামেন্টালিস্টরা আজকে যেভাবে আমাদের বিরুদ্ধে বলে, আপনি তাদের সেই চিন্তা চেতনার প্রতিধ্বনি করছেন। আমার সঙ্গে এ ধরনের কথা বলে লাভ কী! আর আমাদের দল নিষিদ্ধ। এখন আপনিতো এটা প্রকাশ করতে পারবেন না। দরকার কি আমার ইন্টারভিউ...।
আরও পড়ুন
তবু জানতে চাই আপনার কী মনে হচ্ছে না জনগণের কাছে আপনার…।- উত্তরে কাদের বলেন, ‘জানার দরকার নাই। আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু টক টু ইউ। আপনার প্রশ্নের মধ্যে তো আপনার পার্শিয়ালিটির প্রকাশ ঘটাচ্ছেন। আপনি একটা পলিটিক্যাল ক্যাম্পের সাথে জড়িত। সেটার প্রকাশ ঘটাচ্ছেন। প্রশ্ন এভাবে করে না। একজন নিউট্রাল জার্নালিস্টের প্রশ্ন এইরকম হয় না।’
নাজমুস সাকিব বলেন, ‘শেষ প্রশ্ন আপনাকে করতে চাই। তাহলে আপনারা কি কখনই জনগণের কাছে আপনাদের অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চাইবেন না?’
উত্তরে কাদের বলেন, ‘আমি সে কথার জবাব দিয়েছি। শুনতে পাননি? আমরা যাই করবো দেশে গিয়ে করবো।’
ঠিক আছে আমরাও আপনাদের দেশে আসার অপেক্ষায় থাকলাম। আপনি ভালো থাকবেন। কাদের জবাবে বলেন, ‘তখন আর আপনাদের দেখা যাবে না।’
নাজমুস সাকিব বলেন, ‘ও আচ্ছা আপনারা প্রতিহিংসার রাজনীতি করবেন। দেশে আসলে আমাদের একবারে শেষ করে ...।’
কাদের বলেন, ‘না আমরাতো করবো না। আপনি নিজেই পালাবেন। আপনি একটা জার্নালিস্ট, আপনি নিজেইতো...।’
নাজমুস সাকিব বলেন, ‘আপনাকে কঠিন প্রশ্ন করার অপরাধে আমাকে দেশ ছাড়তে হবে, মানে ওই আগের বাংলাদেশটাই আপনারা...।
কাদের বলেন, ‘কঠিন প্রশ্ন না, শত্রুতামূলক প্রশ্ন, কঠিন প্রশ্ন না!’ নাজমুস সাকিব বলেন, ‘আপনার আমার প্রশ্নকে শত্রুতামূলক মনে করছেন, কিন্তু আমি আসলে সাংবাদিক হিসেবেই আপনাকে প্রশ্নগুলো করলাম।’ এরপর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
জনগণের কাছে সেবা পৌঁছে দিতে
‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’ এর যাত্রা শুরু: আসিফ মাহমুদ

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, সরকারি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে যাত্রা শুরু করল ‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার ভেরিফাইড ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ‘সরকারি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এবং দালালমুক্ত, সহজলভ্য ও ভোগান্তিমুক্ত নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে যাত্রা শুরু করল ‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’।
বিশেষ দিকনির্দেশনা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘সব মন্ত্রণালয়ের সেবাকে এই প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা। প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী সেবা কেন্দ্র গঠনের নির্দেশ। উদ্যোক্তারা স্থান ভাড়া, রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবেন। সেবা মান বজায় না রাখলে লাইসেন্স বাতিল হতে পারে।’
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘প্রকল্পটি বাংলাদেশের নাগরিক সেবা ব্যবস্থায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে যা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, স্থানীয় উদ্যোক্তা উন্নয়ন, এবং ডিজিটাল সরকারব্যবস্থার বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন
সচিবালয় ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা, সোয়াট ও বিজিবি মোতায়েন

সরকারি কর্মচারী অধ্যাদেশ ঘিরে আন্দোলনের মধ্যে আজ মঙ্গলবার সচিবালয় ঘিরে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের সঙ্গে মোতায়েন রয়েছে সোয়াট ও বিজিবির সদস্যরা।
সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারী ছাড়া আর অন্য কাউকে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি সাংবাদিকদেরও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
এদিন সকাল থেকেই সচিবালয়ের সামনে সোয়াট, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া অন্য কারো প্রবেশের অনুমতি মিলছে না।
এর আগে, সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সচিবালয়ে মঙ্গলবার সব ধরনের দর্শনার্থীর প্রবেশ বন্ধ থাকবে। এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, অনিবার্য কারণবশত মঙ্গলবার সচিবালয়ে সব ধরনের দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ থাকবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনুরোধ করা হলো।
দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কাজে সম্পৃক্ত হবে না সেনাবাহিনী

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কাজে সম্পৃক্ত হবে না বলে জানিয়েছে সেনা সদর। করিডর একটি ‘স্পর্শকাতর’ বিষয় বলে উল্লেখ করেছে তারা।
সোমবার (২৬ মে) দুপুরে সেনানিবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্স ডিরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলার অবস্থা আগের তুলনায় স্থিতিশীল অবস্থায় আছে বা কিছুটা ভালো অবস্থায় আছে। আমরা দিনরাত নিরলসভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন শুধু সেনাবাহিনীর একার দায়িত্ব নয়, এখানে অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও দায়িত্ব রয়েছে। সকলে মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করলে আইনশৃঙ্খলার অবস্থা অচিরেই আরও উন্নত হবে বলে আমরা আশা করছি।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তে করিডর নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, এখানে নিরাপত্তার বিষয় জড়িত। এই করিডর নিয়ে সেনাবাহিনী কী ভাবছে– জানতে চাইলে মিলিটারি অপারেশন্স ডিরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ বলেন, করিডর একটি স্পর্শকাতর বিষয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কাজে সম্পৃক্ত হবে না।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে আরাকান আর্মি বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে, এ বিষয়টি সেনাবাহিনী কীভাবে দেখছে এবং কী পদক্ষেপ নিচ্ছে– এমন প্রশ্নের জবাবে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আরাকান আর্মির সঙ্গে আমাদের সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই। গণমাধ্যমে আসা এসব খবরের সঠিকতা ও বস্তুনিষ্ঠতা যথেষ্ট বিবেচনার দাবি রাখে।
অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাবাহিনী প্রধান নির্বাচন, করিডর, বন্দর ও স্টারলিংক নিয়ে কথা বলেন জানা গেছে বিভিন্ন মাধ্যমে। এই পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনের বিষয়ে সেনাবাহিনীর কোনো অবস্থান আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী প্রধান যেকোনো সময় বা সময়ে সময়ে অফিসার, জেসিও ও সৈনিকদের সঙ্গে কথা বলে থাকেন, দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। এটি তারই একটি ধারাবাহিকতা মাত্র। অফিসার্স অ্যাড্রেসে আমরা কোনো সাংবাদিককে ডাকিনি, সেনাবাহিনী প্রধান জাতির উদ্দেশে কোনো ভাষণও দেননি অথবা আইএসপিআরও সরকারিভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি। সুতরাং গণমাধ্যমে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে যা প্রকাশ করা হয়েছে এর সঠিকতা ও বস্তুনিষ্ঠতা যথেষ্ট বিবেচনার দাবি রাখে।
করিডর, বন্দর ও স্টারলিংক নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা হচ্ছে, এসব বিষয় দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। এ বিষয়ে সেনাবাহিনী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে– জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো বিষয়ে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না।
দেখা গেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী বৈঠক করেছে। বিষয়টি সেনাবাহিনী কীভাবে দেখছে– জানতে চাইলে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এই দলটি আত্মস্বীকৃত একটি সন্ত্রাসী দল, যারা সংঘাতপূর্ণ কাজ করে থাকে। সুতরাং তাদেরকে নির্বাচনে যুক্ত করা সমুচিত নয় বলে আমরা মনে করি।
নির্বাচন, করিডর নিয়ে সেনাবাহিনী ও সরকারের মুখোমুখি কোনো অবস্থান আছে কি না– জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়গুলো নিয়ে মুখোমুখি কোনো অবস্থান দেখছি না। আমাদের মধ্যে যথেষ্ট সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ রয়েছে এবং আমরা একত্রে একসঙ্গে দেশের জন্য দেশের স্বার্থে জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে যদি কোনো হুমকি আসে সেক্ষেত্রে সেনাবাহিনী কী করবে– জানতে চাইলে মিলিটারি অপারেশন্স ডিরেক্টরেটের এ কর্নেল স্টাফ বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব বা নিরাপত্তা রক্ষার জন্য আমরা সর্বদা একত্রে এবং একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করে আসছি। ভবিষ্যতেও সেনাবাহিনী দেশের জন্য দেশের নিরাপত্তার জন্য দেশের মানুষের সঙ্গে কাজ করে যাবে।
মন্তব্য