সহকারী জজ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, নেবে ১০০

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস। প্রতিষ্ঠানটি এবারও সহকারী জজ নিয়োগ দেবে। আগ্রহীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
প্রতিষ্ঠানের নাম: বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস
পদের নাম: সহকারী জজ
পদের সংখ্যা: ১০০
আবেদন যোগ্যতা: কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে আইনে ৪ বছর মেয়াদি স্নাতক (সম্মান)/বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ৩ বছর মেয়াদি স্নাতকসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি।
আবেদন ফি: ১২০০ টাকা।
বয়সসীমা: ১ জানুয়ারি, ২০২২ সর্বোচ্চ বয়স ৩২ বছর
আবেদন যেভাবে: অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদন করতে এখানে ক্লিক করুন।
আবেদনের শেষ তারিখ: ১৪ জুন, ২০২২ পর্যন্ত
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি হাতাহাতির পর ভোট গণনায় সভাপতি–সম্পাদক দুটোই আ. লীগপন্থী

এক মাসের বেশি আটকে থাকা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হয়েছে। আজ বুধবার বিকেলে সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট গণনা নিয়ে সমিতি ভবনের সম্মেলন কক্ষের সামনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল ও হাতাহাতি হয়। তাতে সভাপতির সঙ্গে সম্পাদক পদেও আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন।
আইনজীবী মো. অজি উল্লাহর নেতৃত্বাধীন নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত নতুন উপকমিটি বিকেল চারটা থেকে ভোট গণনা শুরু করে। রাত ১০টার দিকে ফল ঘোষণা করা হয়।
ফলাফলে সভাপতি ও সম্পাদকসহ সাতটি পদে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা। আর দুটি সহসম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষসহ অপর সাতটি পদে জয়ী হয়েছেন বিএনপি-সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থীরা।
ফলাফল অনুসারে, সভাপতি পদে সাদা প্যানেলের মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ৩ হাজার ২৪৪ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নীল প্যানেলের মো. বদরুদ্দোজা পেয়েছেন ২ হাজার ৪৭৯ ভোট। আর সম্পাদক পদে সাদা প্যানেলের আবদুন নূর ২ হাজার ৮৯১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নীল প্যানেলের মো. রুহুল কুদ্দুস পেয়েছেন ২ হাজার ৮৪৬ ভোট।
সাদা প্যানেল থেকে সহসভাপতি দুটি পদে মো. শহীদুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হোসেন এবং সদস্যপদে ফাতেমা বেগম, শাহাদাত হোসেন ও সুব্রত কুমার কুন্ডু জয়ী হয়েছেন। নীল প্যানেল থেকে সহসম্পাদকের দুটি পদে মাহফুজ বিন ইউসুফ ও মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান, কোষাধ্যক্ষ পদে মো. কামাল হোসেন এবং চারটি সদস্যপদে মাহদীন চৌধুরী, গোলাম আক্তার জাকির, মঞ্জুরুল
গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সমিতির নির্বাচনে (২০২২-২৩) ভোট গ্রহণ হয়। ১৭ মার্চ ভোট গণনায় সভাপতি পদে সাদা প্যানেলের মোমতাজ উদ্দিন ফকির এগিয়ে থাকলেও সম্পাদক পদে নীল প্যানেলের রুহুল কুদ্দুস এগিয়ে ছিলেন। একপর্যায়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে সাদা প্যানেল থেকে সম্পাদক প্রার্থী আবদুন নূর পুনরায় ভোট গণনা চেয়ে আবেদন করেন। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে হইচই-হট্টগোল হয়। একপর্যায়ে নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মসিউজ্জামান সমিতির কমিটির কাছে পদত্যাগপত্র দেন। এতে ভোটের ফলাফল ঘোষণা আটকে যায়।
যেভাবে ফল ঘোষণা গতকাল মঙ্গলবার আইনজীবী মো. অজি উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, ১২ এপ্রিল সমিতির কার্যকরী কমিটির মেয়াদের শেষ এক সভায় তাঁকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি নির্বাচন উপকমিটি করা হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় ২৭ এপ্রিল বেলা ৩টায় নির্বাচন–পরবর্তী বাকি কাজ শেষ করা হবে।
তবে আজ দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী সমিতির সম্পাদক (নীল প্যানেল থেকে সম্পাদক পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী) হিসেবে মো. রুহুল কুদ্দুস দাবি করেন, ১২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সভার কোনো আইনি ভিত্তি নেই। কাজেই ওই সভায় গৃহীত যেকোনো সিদ্ধান্ত অবৈধ।
প্রত্যক্ষদর্শী বেশ কয়েকজন আইনজীবী বলেন, আগের ঘোষণা অনুসারে আজ বেলা সোয়া তিনটার দিকে মো. অজি উল্লাহর নেতৃত্বে নির্বাচন পরিচালনা–সংক্রান্ত নতুন উপকমিটি সমিতির তিনতলায় অবস্থিত সম্মেলনকক্ষে ঢুকতে গেলে হইচই ও হট্টগোল শুরু হয়। আগে থেকে সমিতির সম্মেলনকক্ষের অন্য পাশে অবস্থান নিয়ে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা এই উপকমিটি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের ভাষ্যমতে, অজি উল্লাহর নেতৃত্বে আইনজীবীরা ভোট গণনার জন্য সম্মেলনকক্ষে ঢুকতে গেলে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা এতে আপত্তি জানান ও বাধা হয়ে দাঁড়ান। সম্মেলনকক্ষে নির্বাচনের ব্যালটসহ অন্যান্য জিনিস রয়েছে। ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির মধ্যে তালা ভেঙে সম্মেলনকক্ষে প্রবেশ করেন তাঁরা। পরে বিএনপি সমর্থকেরা কক্ষের কাচ ভাংচুর করেন। বিকেল চারটার দিকে ভোট গণনা শুরু করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি। এরপর সমিতি ভবনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
১৪তম জুডিশিয়ারির মৌখিক পরীক্ষা একটি গোছানো প্রস্তুতি স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে

২০ মার্চ শুরু হতে যাচ্ছে ১৪তম জুডিশিয়ারির মৌখিক পরীক্ষা। এটি চলবে প্রায় এক মাসব্যাপী। ১০০টি পদের বিপরীতে ৬৩৭ জন লিখিত উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থী মৌখিক দেবেন। অন্যান্য প্রথম শ্রেণির চাকরির ভাইভার সঙ্গে জুডিশিয়ারির ভাইভার পার্থক্য হচ্ছে ফলাফলের ক্ষেত্রে এখানে কোনো ওয়েটিং লিস্ট কিংবা আলাদা ক্যাডার, নন-ক্যাডার লিস্ট হয় না। যতজন নিয়োগ পাবেন, ঠিক ততজনেরই ফল প্রকাশ করা হয়। একটি গোছানো ভাইভা প্রস্তুতি ও চমৎকার উপস্থাপন আপনার বিচারক হওয়ার লালিত স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
ভাইভার বিজ্ঞপ্তিতে যেসব কাগজপত্র দাখিলের কথা বলা আছে, পরীক্ষার দিনের অন্তত এক সপ্তাহ আগেই সেগুলো ঠিকঠাকভাবে গুছিয়ে রাখা উচিত। ভাইভা বোর্ডের অনুমতি নিয়ে ধীরস্থিরভাবে ভাইভা কক্ষে প্রবেশ করতে হবে। লিখিত ও ভাইভার নম্বর মিলিয়েই ফলাফল প্রকাশিত হয়। লিখিত পরীক্ষায় পাস করে আসা অবশ্যই আপনার যোগ্যতার পরিচয় বহন করে। তাই ঠান্ডা মাথায় প্রতিটি প্রশ্ন শুনে ও বুঝে উত্তর করতে হবে। একেবারে নিশ্চিত না হয়ে কিংবা আন্দাজে কোনো প্রশ্নের উত্তর করতে যাওয়া অনুচিত। প্রশ্নের উত্তর না পারলে বিনয়ের সঙ্গে ‘দুঃখিত’ বলাটাই শ্রেয়।
ভাইভা পরীক্ষার নির্ধারিত কোনো সিলেবাস নেই। প্রশ্নকর্তা যেকোনো প্রশ্নই আপনাকে করতে পারেন। তবে অধিকাংশ প্রশ্নই হবে আইনবিষয়ক। এ ক্ষেত্রে প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসে থাকা সব কটি আইনের ওপর সম্যক দক্ষতা থাকা বাঞ্ছনীয়। বিভিন্ন আইন কিংবা ধারার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক, ধারাগুলোর বাস্তবিক জীবনে ব্যবহার, ভিন্ন ভিন্ন আইন অনুসারে মামলার ধাপগুলো সম্পর্কে প্রশ্ন হতে পারে। সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ এবং মামলা, বিভিন্ন ইস্যুতে সাম্প্রতিক সাড়া জাগানো উচ্চ আদালতের রায়, সাম্প্রতিক সময়ে প্রণীত নতুন আইন কিংবা সংশোধনীগুলোর ওপর ভালো দখল থাকাটা জরুরি। ভাইভা প্রার্থীদের মধ্যে যাঁরা বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে জড়িত আছেন, তাঁরা নিজ নিজ পেশা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন। এই ধরুন, আপনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হন, তাহলে যে বিষয়ে পড়িয়ে থাকেন, সেটি নিয়ে প্রশ্ন করা হতে পারে। ভাইভা বোর্ড বিভিন্ন ছোট ঘটনা বর্ণনা করে আইনি সমস্যার সমাধান চাইতে পারেন আপনার কাছ থেকে। আপনার উত্তর শুনেই ভাইভা বোর্ড আপনার বিচারিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে ধারণা পাবেন। পূর্ববর্তী প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নোত্তরগুলোর ওপর দখল রাখা জরুরি।
নিজ নাম, জেলা, জেলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি-স্থাপনা-ইতিহাস, নিজ বিশ্ববিদ্যালয়, হল ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা নিয়ে যাবেন। প্রশ্নকর্তা যে ভাষায় প্রশ্ন করবেন, সে ভাষাতেই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। আইনের বাইরে জাতীয় ইতিহাস, দেশভাগ থেকে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্য, সমসাময়িক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিক্রমা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন হতে পারে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।
আপনি কেন বিচারক হতে চান কিংবা বিচার করতে গিয়ে আপনি সহানুভূতিশীল হবেন না কঠোর হবেন—এ ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে কোনো গৎবাঁধা মুখস্থ উত্তর না দিয়ে নিজের মতো করে মতামত দেওয়াটাই উচিত হবে। ভাইভা বোর্ডের লক্ষ্য থাকবে, আপনার মধ্যে বিচারক হওয়ার মতো চারিত্রিক ও মানসিক দৃঢ়তা আছে কি না, তা যাচাই করা। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা কিংবা ভীতি না রেখে নিজের স্বাভাবিক আচরণ বজায় রেখে উত্তর করতে পারলেই সাফল্য আশা করা যায়। আপনার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু বজায় রাখুন, বাকিটা সৃষ্টিকর্তা ও ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল।
আমার ভাইভা অভিজ্ঞতা যেমন ছিল
ভাইভা বোর্ড-১
সময়: ২০-২৫ মিনিট
কক্ষে ঢুকে ঠিকঠাক বসে মাইক্রোফোন অন করে সালাম দিলাম। নাম, গ্রামের বাড়ি ইত্যাদি খুঁটিনাটি বিষয়ে প্রশ্নের পর চেয়ারম্যান স্যার আইনের প্রশ্ন শুরু করলেন একটা ফ্যাক্ট বর্ণনা করে।
চেয়ারম্যান: ধরুন, আপনার গ্রামের বাড়িতে ময়মনসিংহ থেকে একজন লোক কাজ করতে এলেন। কিছুদিন পর স্থানীয় কয়েক ছেলের ছুরিকাঘাতে তাঁর মৃত্যু হলো। যারা খুন করেছে, তারা নিজেরাই থানায় এফআইআর করল অন্য চার-পাঁচজনকে আসামি করে। ঘটনার এক মাস পর ভুক্তভোগীর বাবা আপনার গ্রামে এসে প্রকৃত অপরাধীদের আসামি করে এফআইআর করতে চেয়ে ব্যর্থ হলো। ভদ্রলোক ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে কি অভিযোগ করতে পারবেন? আর এফআইআরের তদন্ত চলাকালে কমপ্লেইন্ট করলে কোন মামলা আগে চলবে, এটা নিয়ে সিআরপিসিতে কোথায় বলা আছে?
আমি: স্যার, পারবেন অভিযোগ করতে। সেকশন ২০৫ডিতে বলা আছে।
চেয়ারম্যান: রিট কয় প্রকার? সংবিধানে কি রিটের প্রকারভেদ ডিরেক্টলি করা আছে?
আমি: না স্যার, তবে ১০২ (২) অনুচ্ছেদে ৫ ধরনের রিটের আলোচনা আছে নাম উল্লেখ না করে।
চেয়ারম্যান: বলেন তো ৫টি রিটের উল্লেখ কোন অনুচ্ছেদে কীভাবে আছে।
আমি: ১০২ অনুচ্ছেদ ব্যাখ্যা করলাম।
বোর্ড মেম্বার ২: ক্রিমিনাল মামলার ট্রায়াল শেষ করার তো ফিক্সড সময় বলা আছে, সিভিল মামলার ক্ষেত্রে ফিক্সড করা আছে?
আমি: স্যার, ফিক্সড করা নেই।
মেম্বার ২: আছে, অর্ডার ১৮-তে বলা আছে।
আমি: সরি স্যার, আমার এ ব্যাপারে জানা ছিল না।
চেয়ারম্যান: নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সম্প্রতি সংশোধনীগুলো বলুন।
আমি: বিস্তারিত বললাম।
মেম্বার ২: ইভ টিজিং মামলা কোন আইনে করা হবে?
আমি: স্যার, পেনাল কোডেও বিধান আছে। তবে এখন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা হয়।
চেয়ারম্যান: ধর্ষণসহ খুনের মামলায় নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ধর্ষণের প্রমাণ পেলেন না, তবে খুনের প্রমাণ পেলেন। এখন কি খুনের জন্য আলাদা মামলা করা লাগবে নতুন করে পেনাল কোড অনুসারে নাকি ট্রাইব্যুনালই বিচার করতে পারবে?
আমি: স্যার, নতুন মামলা করা লাগবে না, ট্রাইব্যুনালই পারবে।
চেয়ারম্যান: কোথায় বলা আছে? কোনো কেস রেফারেন্স দিতে পারবেন?
আমি: স্যার, সেকশন ২৭, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন। কিছু কেস পড়েছিলাম এ ব্যাপারে, এখন মনে পড়ছে না।
চেয়ারম্যান: আচ্ছা মুসতানসীর সাহেব, একজন বিচারকের কী কী গুণ থাকা উচিত বলে মনে করেন?
আমি: পরিশ্রম, সততা, সমাজসচেতনতা, সিমপ্যাথেটিক থাকা।
চেয়ারম্যান: এর মধ্যে কোন গুণটি আপনার নেই?
আমি: স্যার, আমি তুলনামূলক কম পরিশ্রমী।
চেয়ারম্যান: (হাসতে হাসতে) আপনার নিজের বলা গুণই আপনার মধ্যে নেই, আপনাকে কি নিয়োগ দেওয়া ঠিক হবে?
আমি: স্যার, আসলে কোনো কাজের টার্গেট থাকলে নিজস্ব একটা প্ল্যানিংয়ে কাজটা করে ফেলি, তাই কম পরিশ্রমে কাজ হয়ে যায়।
চেয়ারম্যান: আচ্ছা বলেন, জাজ হওয়াই লাগবে—এ চিন্তা কবে এসেছে? কারণ কী?
আমি: নিজস্ব উত্তর দিয়েছিলাম।
মেম্বার: আপনি এবার আসতে পারেন, ধন্যবাদ আপনাকে।
আগামী ২০ দিনের মধ্যে তথ্য দিতে পুলিশকে নির্দেশ

তথ্য অধিকার আইনে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে চাওয়া তথ্য আগামী ২০ দিনের মধ্যে আবেদনকারীকে সরবরাহের আদেশ দিয়েছে তথ্য কমিশন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাসংক্রান্ত পরিসংখ্যান চেয়ে বাংলাদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের বিষয়ে আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয় তথ্য কমিশন।
দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মোট কত মামলা, কত আসামি এবং কতজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, তা জানতে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে আবেদন করেছিলেন মানবাধিকারকর্মী সাদ হাম্মাদি। এসব তথ্য প্রকাশ পেলে আইনের প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত এবং জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে—এমন কারণ দেখিয়ে তথ্য দেয়নি পুলিশ।
পুলিশের কাছ থেকে তথ্য না পেয়ে আবেদনকারী সাদ হাম্মাদি অভিযোগ দায়ের করেন তথ্য কমিশনে। গত ১১ জানুয়ারি এই অভিযোগের শুনানি করে কমিশন। দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে ২ ফেব্রুয়ারি আদেশের দিন ধার্য করে কমিশন। তবে ২ ফেব্রুয়ারি আদেশ দেওয়া হয়নি। সেদিন আবেদনকারীকে মেইলে জানানো হয়, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে আদেশের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। ২২ ফেব্রুয়ারি আদেশের তারিখ দেওয়া হয়।
২২ ফেব্রুয়ারির শুনানিতে তথ্য কমিশন আবেদনকারীর পরিচয় ও নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে পুলিশকে লিখিত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিতে বলেন। পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে কমিশন জানায়, ৮ মার্চ আদেশ দেওয়া হবে।
আজ কমিশনের অনলাইন কার্যক্রমে প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ বলেন, ‘অভিযোগকারী ও অপর পক্ষের বক্তব্য একাধিকবার শুনেছি। অভিযোগকারীর পরিচয় জানতে চেয়ে পুলিশের কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছিল, সেটাও পাওয়া গেছে। দুই পক্ষের বক্তব্য পর্যালোচনা করে কমিশন মনে করছে, অভিযোগকারী যেসব তথ্য চেয়েছেন, সেগুলো তথ্য অধিকার আইনে প্রদানযোগ্য।’
মরতুজা আহমদ আরও বলেন, পুলিশ কর্তৃপক্ষকে যথানিয়মে আগামী ২০ দিনের মধ্যে আবেদনকারীর চাওয়া তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হলো।
কমিশনের অনলাইন কার্যক্রমে হাম্মাদি নিজে এবং বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষে আইনজীবী তাইফুল সিরাজ অংশ নেন।
আদেশের বিষয়ে সাদ হাম্মাদি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যদিও আমার তথ্য আবেদনের পর নয় মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে, আমি সন্তুষ্ট যে তথ্য কমিশন আমার অধিকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। শুনানির শুরু থেকেই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী যে রাষ্ট্রবিরোধিতার তকমা বা সন্দেহ আমার বিপক্ষে উপস্থাপন করেছেন শুধু তথ্য চাওয়ার জন্য, তাতে যেকোনো ব্যক্তি হয়রানি বোধ করবেন।’
সাদ হাম্মাদি আরও বলেন, তথ্য কমিশনের এই রায় জনগণ ও গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করতে একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে এবং সেই সঙ্গে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকেও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে একটি পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, পুলিশ কর্তৃপক্ষ এই তথ্য দিতে আর কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না।
পুলিশের পক্ষে অংশ নেওয়া আইনজীবী তাইফুল সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, কমিশন আবেদনকারীর চাওয়া তথ্য সরবরাহ করতে পুলিশ সদর দপ্তরকে আদেশ দিয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লেখক, গবেষক ও মানবাধিকারকর্মী সাদ হাম্মাদি ২০২১ সালের ৭ জুন পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের পর থেকে এই আইনে প্রতিবছর দায়ের করা মামলার সংখ্যা, অভিযুক্ত ও গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সংখ্যা তিনি জানতে চান। তথ্য না পাওয়ায় তিনি গত ১৮ জুলাই পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর আপিল আবেদন করেন। নির্ধারিত সময়ে আপিল আবেদনের জবাব না পাওয়ায় সাদ হাম্মাদি গত ১০ আগস্ট তথ্য কমিশনে অভিযোগ করেন।
সাদ হাম্মাদির তথ্য চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে তাঁকে একটি চিঠি দেয় পুলিশ। চিঠিতে বলা হয়, তথ্য অধিকার আইনের ধারা ৭-এর চ, ছ এবং ড উপধারা অনুযায়ী আবেদনকারীর তথ্য প্রকাশ করার মতো নয়। এসব তথ্য প্রকাশ পেলে আইনের প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, অপরাধ বৃদ্ধি পেতে পারে, জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, বিচারাধীন মামলার সুষ্ঠু বিচারকার্য ব্যাহত হতে পারে, কোনো অপরাধের তদন্তপ্রক্রিয়া এবং অপরাধীর গ্রেপ্তার ও শাস্তিকে প্রভাবিত করতে পারে।
বাংলাদেশের নাগরিক সাদ হাম্মাদি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক অফিসে (শ্রীলঙ্কা) কর্মরত।
বাংলার ব্যবহার বাড়ছে উচ্চ আদালতে

দেশে নিম্ন আদালতে বেশির ভাগ রায় ও আদেশ দেওয়া হয় বাংলায়। এখন উচ্চ আদালতেও দিন দিন বাংলায় রায় ও আদেশ দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। অথচ এক দশক আগেও উচ্চ আদালতে বাংলায় দেওয়া রায় ও আদেশের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা।
১৯৮৭ সালে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন প্রবর্তন করা হয়। আইনটি পাস হওয়ার পর থেকেই সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের সব দাপ্তরিক আদেশ ও নির্দেশনা বাংলাতে হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত উচ্চ আদালতের কটি আদেশ ও রায় বাংলায় দেওয়া হয়েছে, সুনির্দিষ্টভাবে সে তথ্য জানা যায়নি।
বাংলা ভাষা প্রচলন আইনের (১)ধারা বলছে, ‘এই আইন প্রবর্তনের পর দেশের সর্বত্র, তথা সরকারি অফিস-আদালত, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া অন্যান্য সব ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন-আদালতের সওয়াল-জবাব এবং অন্যান্য আইনানুগ কার্যাবলি অবশ্যই বাংলায় লিখতে হবে।’
আইনজীবী ও বিচারালয়-সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রয়াত বিচারপতি এ আর এম আমীরুল ইসলাম চৌধুরী নব্বইয়ের দশকের শুরুতে হাইকোর্টে বাংলায় আদেশ দেওয়া শুরু করেন। এরপর সাবেক বিচারপতিদের মধ্যে কাজী এবাদুল হক, হামিদুল হক, আবদুল কুদ্দুছ, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী বেশ কয়েকটি রায় বাংলায় দেন।
এখন উচ্চ আদালতে রায় ও আদেশ বাংলায় দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে বলে জানান আইনজীবী ও বিচারালয়-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারপতি নিয়মিত বাংলায় রায় ও আদেশ দিয়ে থাকেন। একজন বিচারপতি কয়েক বছর ধরে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বাংলায় রায় ও আদেশ দেন। এ ছাড়া ১০ থেকে ১৪ জন বিচারপতি বিভিন্ন সময়ে বাংলায় রায় ও আদেশ দিয়েছেন। গত বছর আপিল বিভাগ এক মামলায় বাংলায় রায় দেন।
এ প্রসঙ্গে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলায় রায় ও আদেশ লেখার ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে একধরনের হীনম্মন্যতা কাজ করে। তবে ধীরে ধীরে মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে। এখন অনেকেই বাংলায় রায় ও আদেশ দিচ্ছেন।’
ভবিষ্যতে সবাই বাংলায় রায় ও আদেশ দেবেন আশা প্রকাশ করে এ বি এম খায়রুল হক বলেন, ‘এ আশা থেকেই বিচারপতি থাকাকালে ২০০৭ সাল থেকে বাংলায় রায় দেওয়া শুরু করি। সদিচ্ছা থাকলে অধস্তন আদালতের মতো উচ্চ আদালতেও বাংলায় রায়-আদেশ লেখা সম্ভব।’
বাধা কাটাতে ‘আইন-শব্দকোষ’ বাংলায় রায় ও আদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে ইংরেজি শব্দের বাংলা পরিভাষার অপ্রতুলতা বড় অন্তরায় বলে মনে করেন আইন ও বিচারালয়-সংশ্লিষ্ট অনেকে। এ বাধা কাটাতে ইংরেজি সাড়ে চার হাজার শব্দের নতুন বাংলা পরিভাষাসহ প্রায় সাড়ে ১০ হাজার শব্দ নিয়ে আইনি পরিভাষার মৌলিক গ্রন্থ ‘আইন-শব্দকোষ’ এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করেছে আইন কমিশন।
আইন-শব্দকোষ ২০০৬ সালে বাংলা ভাষায় প্রথম প্রকাশিত হয়। সাবেক প্রধান বিচারপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রয়াত মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এবং প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সম্পাদনায় প্রথম সংস্করণে ছয় হাজার পরিভাষা ছিল।
গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসাধারণের জন্য বিচারকদের রায় বাংলায় লেখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি ইংরেজিতে লেখা বিচারের রায় আসামিরা কতটুকু বোঝেন, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া ইংরেজিতে রায় লেখার সঙ্গে বাংলায় সেটির অনুবাদ যেন হয়, সেদিকে লক্ষ রাখার আহ্বান জানান তিনি।
এ লক্ষ্যে আলাদাভাবে অনুবাদক নিয়োগ ও তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপর প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন। আইন কমিশনের বের করা ‘শব্দকোষ’ এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে বলেও তিনি অভিমত দেন।
রায় অনুবাদে ‘আমার ভাষা’ সাধারণ মানুষ এবং বিচারপ্রার্থীরা যাতে রায় বুঝতে ও জানতে পারেন, সে লক্ষ্যে ইংরেজিতে দেওয়া রায় বাংলায় অনুবাদ করতে সুপ্রিম কোর্টে গত বছর নতুন একটি সফটওয়্যার যুক্ত হয়। ‘আমার ভাষা’ নামের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সংবলিত এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে রায়গুলো বাংলায় অনুবাদ করা যায়।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন সফটওয়্যারটি আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টকে দিয়েছে। এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে ইংরেজি রায়ের ৭০ ভাগ সঠিক অনুবাদ হয়। বাকিটুকু নিজেদের ঠিক করে নিতে হয়।
ইতিমধ্যে, সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে বাংলায় অনুবাদ করা ১৩টি রায় প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে আপিল বিভাগের দেওয়া চারটি ও হাইকোর্ট বিভাগের ৯টি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য, দুই বিভাগের প্রায় ১০০টি রায় সফটওয়্যারের মাধ্যমে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। অর্থগত পর্যালোচনা শেষে তা প্রকাশ করা হবে।
‘আমার ভাষা’ সফটওয়্যার ব্যবহার করে বাংলায় অনুবাদ করা রায়গুলো শিগগিরই সাধারণ মানুষের জন্য সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান। তিনি বলেন, অনুবাদের কাজে পাঁচজন কর্মকর্তা নিয়োজিত। তাঁদের ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য