পাঁচ মেডিকেল কলেজে হচ্ছে বার্ন ইউনিট, ঋণ দিচ্ছে সৌদি উন্নয়ন তহবিল

বর্তমানে দেশে অগ্নি দুঘর্টনা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে পুড়ে যাওয়া রোগীর মৃত্যুও। এ অবস্থায় ৫টি নির্ধারিত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নতুন ভবনে স্থাপন করা হবে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট। প্রকল্পটি পুরোনো হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। বিশেষ করে করোনা মহামারির কারণে প্রকল্প অনুমোদনের আগেই শেষ হয়ে যায় সৌদি উন্নয়ন তহবিলের সঙ্গে ঋণ চুক্তির মেয়াদ। এ অবস্থায় নতুন করে নকশা পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এতে ব্যয় বাড়ছে ৩৬০ কোটি টাকা এবং মেয়াদ বাড়বে ৩ বছর। অর্থাৎ সাড়ে তিন বছরের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এখন সময় যাবে সাড়ে ৬ বছর। আগামী রোববার প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকতাে জানান, ‘৫টি নির্ধারিত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিলেট, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী এবং ফরিদপুর) বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপন’ প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা ছিল ৪৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ২০২ কোটি ১৬ লাখ এবং সৌদি ঋণের ২৫৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এখন প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে ৩৬০ কোটি ১০ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা, যা মোট অনুমোদিত ব্যয়ের ৭৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৪৬৪ কোটি ৭৪ লাখ এবং বৈদেশিক ঋণ ৩৫১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
তিনি আরও জানান, অনুমোদনের সময় প্রকল্পটির ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় কাজ শুরু না হওয়ায় এখন নতুন করে তিন বছর বাড়িয়ে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, পাঁচটি নির্বাচিত জেলা ও আশপাশের প্রায় ৬ কোটি মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে পোড়া এবং পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের মানসম্মত সেবা দিতেই এ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০১৭ সালের অক্টোবরে সৌদি উন্নয়ন ফান্ডের সঙ্গে সরকারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। ২০২২ সালে প্রশাসনিক অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। চুক্তি অনুযায়ী বৈদেশিক ঋণের শেষ তারিখ ছিল ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। ওই সময় করোনা মহামারির ধাক্কায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেরি হয়ে যায়। পাশাপাশি প্রকল্পটির মাধ্যমে রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল ও সিলেটে বিদ্যমান আইসিইউ ভবনের ওপরে সম্প্রসারণ করে চারতলা বিল্ডিং তৈরির কথা ছিল। এছাড়া ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওপি সেক্টর থেকে নির্মিত ১০ তলাবিশিষ্ট হাসপাতাল ভবনের ৬ষ্ঠ ও ৭ম তলা সংস্কার করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ছিল। রাজশাহীতে বিদ্যমান আইসিইউ ভবনের পাশে নির্মাণাধীন ১০ তলা ক্যানসার, কার্ডিয়াক ও নেফ্রোলজি হাসপাতালে ভিত্তিস্থাপনের সময় আইসিইউ ভবনে ফাটল দেখা দেয়। ফলে নতুন স্থানে একটি নতুন ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে সৌদি উন্নয়ন তহবিলের নির্দেশনায় ৫টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই নতুন স্থানে নতুন ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর কারণ হিসাবে বলা হয়, পোড়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য আইসিইউ, এইচডিইউ এবং ডেডিকেটেড অপারেশন থিয়েটারসহ সব সুযোগ-সুবিধা মিলে একটি বিশেষায়িত ইউনিট থাকা প্রয়োজন। এজন্য একটি পৃথক ইউনিট দরকার।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ ৬৫ হাজার মানুষের দেহের বিভিন্ন স্থানে পুড়ে যায় এবং ৫ হাজার ৬০০ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। জটিল পোড়া রোগীদের সঠিক চিকিৎসার জন্য যথাযথ সুবিধা এবং জনবলের অভাবে আক্রান্তদের দুর্ভোগ ও মৃত্যু বাড়ছে। ঢাকায় অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি পোড়ারোগ ও পুনর্গঠনমূলক সার্জারির জন্য একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল। যেটি দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। বার্ন ইউনিটের জন্য হাসপাতালগুলো নির্বাচনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ হাজার ৪১৮ জন পোড়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯৫৮ জন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ৫ হাজার ৪০৩ জন, রংপুর মেডিকেল কলেজে ২ হাজার ৮৮৮জন এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ৮ হাজার ৭০০ জন পোড়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। পাশাপাশি সার্জারি বিভাগের আরও বিপুল সংখ্যক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এজন্য আলাদা ভবন করা প্রয়োজন।
একনেকের জন্য তৈরি কার্যপত্রে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. কাউয়ুম আরা বেগম মতামত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিশেষায়িত বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট হলে ৬০ মিলিয়ন পোড়া রোগীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার কার্যকারিতা উন্নত হবে। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা কমবে। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার ওপর পোড়াজনিত রোগীর চাপ কমবে। এসব চিন্তা করে প্রকল্পের সংশোধিত প্রস্তাব একনেকে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
শিশুদের টাইফয়েডের টিকা দেবে সরকার, রেজিস্ট্রেশন করবেন যেভাবে

দেশব্যাপী আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে শিশুদের জন্য বিনামূল্যে টাইফয়েডের টিকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ১ আগস্ট থেকে এই টিকাদান কর্মসূচির জন্য অনলাইন নিবন্ধন শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় শিশুদের কীভাবে নিবন্ধন করতে হবে, তা নিয়ে একটি বিস্তারিত নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়েছে।
কারা এই টিকা পাবে?
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) আওতায় ৯ মাস থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত পাঁচ কোটি শিশু বিনামূল্যে এই টিকা পাবে। এই বয়সের সব শিশু-কিশোরকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে।
রেজিস্ট্রেশন করবেন যেভাবে
টিকা পেতে হলে প্রতিটি শিশুকে প্রথমে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। নিচে ধাপে ধাপে নিবন্ধন প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হলো—
https://vaxepi.gov.bd/registration/tcv - এ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে নির্ধারিত তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।
রেজিস্ট্রেশনের জন্য ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে প্রথমে জন্মতারিখ দিতে হবে। দিন, মাস ও বছরের ঘর পূরণ করতে হবে। এরপর প্রয়োজন হবে ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন সনদ। জন্ম নিবন্ধন সনদের নম্বর ইংরেজিতে লিখতে হবে। কারও জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকলেও বাবা-মায়ের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করেও নিবন্ধন করা যাবে।
এরপর নারী না পুরুষ ঘরটি পূরণ করতে হবে। তারপর একটি ক্যাপচা কোড পূরণের মাধ্যমে আবেদনকারীর সব তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে পরের ধাপে যাওয়া যাবে। পরের ধাপে গিয়ে আবেদনকারী মা-বাবার মোবাইল নম্বর, ই-মেইল, পাসপোর্ট নম্বর, বর্তমান ঠিকানার ঘর পূরণ করে ‘সাবমিট’ করতে হবে। ‘সাবমিট’ করার পর মোবাইল ফোনে আসা একটি ‘ওটিপি’ দেওয়ার মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষ হবে।
দ্বিতীয় ধাপে টাইফয়েড অথবা মেনিনজাইটিসের মধ্য থেকে একটি বাছাই করতে হবে। টাইফয়েড অংশে ক্লিক করলে দুটি অপশন আসবে- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত নবম শ্রেণি ও সমমান পর্যন্ত সব শিক্ষার্থী অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বহির্ভূত ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি সব শিশু।
এখান থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অপশনে গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম, পুরো ঠিকানা, কোন শ্রেণিতে অধ্যয়নরত তা পূরণ করতে হবে। এরপর সাবমিট করলে টিকাদান কেন্দ্রের তথ্য আসবে। যে স্কুলে শিক্ষার্থী টিকা নিতে চায়, সেটা সিলেক্ট করতে হবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বহির্ভূত অপশনে গেলেও নিকটস্থ টিকাদান কেন্দ্র বাছাই করে নিতে হবে। এরপর ‘সাবমিট’ করতে হবে। সাবমিট করার পর ভ্যাকসিন কার্ড আসবে। সেখানে ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করতে হবে। এ কার্ড নিয়ে নির্ধারিত দিনে টিকাদান কেন্দ্রে যেতে হবে।
কোথায় এবং কখন টিকা দেওয়া হবে?
নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে নির্বাচিত কেন্দ্রে গিয়ে টিকা গ্রহণ করতে হবে। এই টিকা কার্যক্রম শুরু হবে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে। এক ডোজের এই ইনজেকটেবল টিকাটি ৩ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দেবে।
এই কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং টাইফয়েডের মতো মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা করতে সরকার বদ্ধপরিকর। প্রতিটি অভিভাবককে তাদের শিশুদের সুরক্ষার জন্য দ্রুত নিবন্ধন সম্পন্ন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তরুণদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি উদ্বেগজনক: বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা

- দেশে মোট মৃত্যুর ৭১% অসংক্রামক রোগে, এর মধ্যে ১৯% অকাল মৃত্যু
- তরুণদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রাদুর্ভাব আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি
- প্রতিরোধে কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধ প্রদানের উদ্যোগ
- খাদ্যাভ্যাস, কায়িক পরিশ্রম ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পরিবর্তনের তাগিদ
খাদ্যাভ্যাসের অবনতি, কায়িক পরিশ্রমের অভাব, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও বায়ুদূষণসহ নানা কারণে দেশের তরুণদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য অসংক্রামক রোগের হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে তরুণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ও দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস-২০২৫ উপলক্ষে সোমবার (১২ আগস্ট) অ্যাডভোকেসি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজিত “উচ্চ রক্তচাপ ঝুঁকি ও বাংলাদেশের যুব সমাজ” শীর্ষক ওয়েবিনারে এ সতর্কতা দেওয়া হয়। গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) এর সহায়তায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সহ-আয়োজক ছিল বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্টস’ সোসাইটি, প্ল্যাটফরম ডক্টরস ফাউন্ডেশন, ইটস হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন, ইয়ুথ ক্লাব অফ বাংলাদেশ, কাশফুল ফাউন্ডেশন এবং গিভ বাংলাদেশ। এ বছরের প্রতিপাদ্য— “প্রযুক্তি নির্ভর যুব শক্তি, বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্বে অগ্রগতি”।
ওয়েবিনারে জানানো হয়, দেশে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশের জন্য দায়ী অসংক্রামক রোগ, যার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ অন্যতম। এর মধ্যে ১৯ শতাংশ মৃত্যু ঘটে অকাল বয়সে। বক্তারা বলেন, এখনই অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে গুরুত্ব না দিলে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এর প্রাদুর্ভাব মারাত্মক আকার নেবে, যা কর্মক্ষম জনশক্তি কমিয়ে দেশের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. গীতা রানী দেবী বলেন, উচ্চ রক্তচাপ মোকাবেলায় কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ওষুধ প্রদানের কার্যক্রম চলছে। তরুণদের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার পাশাপাশি তাদের এসব কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মারুফ হক খান বলেন, “তরুণদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচরণে পরিবর্তন অপরিহার্য।”
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, তরুণদের মধ্যেও এ প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচরণে পরিবর্তন এবং রক্তচাপ পরীক্ষার মাধ্যমে তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ কমানো সম্ভব।
ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের এবং সঞ্চালনা করেন কোঅর্ডিনেটর সাদিয়া গালিবা প্রভা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের যুব সংগঠন ও নানা পেশার মানুষ এতে অংশ নেন।
ঘরে ঘরে জ্বর, বাঁচতে যা করবেন

এখন পাড়ায় পাড়ায়, ঘরে-ঘরে জ্বর হচ্ছে। তবে, আবহাওয়া বদলের মামুলি জ্বর নয়, আড়ালে ডেঙ্গু, টাইফয়েড কিংবা ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপই বেশি। এই সময়টাই এমন, জীবাণুরা মাথাচাড়া দেয়। এই সময়টায় কী কী করণীয়, তা নিয়েই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বৃষ্টি শুরু হলো কী হলো না! গরম থেকে একটু স্বস্তি পেতে না পেতেই গা পুড়ছে জ্বরে। পাড়ায় পাড়ায়, ঘরে-ঘরে এখন একটাই অসুখ। ১০৩, কখনও আবার ১০৫ পর্যন্তও উঠছে তাপমাত্রা। বয়স্করাই শুধু নয়, শিশুদেরও জ্বর হচ্ছে। বাড়িতে কারও হলে তার থেকে ছোট-বড় সবারই জ্বর হচ্ছে। তাহলে কী করোনা?
আসলে প্রথমদিকে মৌসুম পরিবর্তনের জ্বর ভেবে অনেকেই তেমন পাত্তা দেয়নি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে, রোগীদের সংখ্যা খুব বেড়েছে। তিন থেকে চার রকমের জ্বর নিয়ে রোগীরা চিকিৎসকের কাছে ছুটছেন। জলবাহিত সংক্রমণ (টাইফয়েড, হেপাটাইটিস), মশাবাহিত সংক্রমণ (ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া), রেসপিরেটরি ইনফেকশন (ইনফ্লুয়েঞ্জা, কোভিড)। কার যে কী হচ্ছে সেটি প্রথমেই বোঝা মুশকিল। প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর, তারপর ধীরে ধীরে আরও সমস্যা প্রকাশ পাচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহে ১০-২০ শতাংশ বেড়েছে ডেঙ্গু-টাইফয়েড রোগীর সংখ্যা। প্রচুর হচ্ছে ইনফ্লুয়েঞ্জার জ্বর। জ্বর বা পেটের অল্পস্বল্প গন্ডগোল হচ্ছে, কারও আবার হঠাৎ করেই ধুম জ্বর আসছে। উঠতেই পারছে না, সঙ্গে সর্দি-তীব্র কাশি। থাকছে মাথার যন্ত্রণাও।
এই বছর বর্ষার শুরুতেই একেবারে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে ভাইরাস ও ব্যাকটিরিয়াল ফিভার। তাই এখন থেকেই সতর্ক হোন।
প্রথমে বুঝতে হবে জ্বরের কারণ। প্রথম দিকে লক্ষণ সবক্ষেত্রেই এক রকম, অর্থাৎ জ্বর আসবে। তবে কী করে বুঝবেন ডেঙ্গু না িকি ইনফ্লুয়েঞ্জা? কিংবা টাইফয়েড নয়তো! তফাত আছে কিছু ক্ষেত্রে।
টাইফয়েডের লক্ষণ
টাইফয়েডের ক্ষেত্রে প্রথমে হালকা জ্বর দিয়ে শুরু হয়, তারপর ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়ে। এক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে পেটের গন্ডগোল থাকবে। কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা ডায়েরিয়া হয়। বমি হতে পারে, তবে শুরুতেই হবে না। কয়েকদিন পর শুরু হবে।
টাইফয়েডে প্লেটলেট কাউন্ট খুব দ্রুত পড়ে না। প্লেটলেট দেওয়ার দরকারও পড়ে না। এই জ্বরে লিভারের কার্যক্ষমতা দুর্বল হয়। ক্ষুদ্রান্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই দীর্ঘদিন ভুগলে পেটে ব্যথা, পেটের মধ্যে রক্তপাত, মল কালো বর্ণের হয়ে যেতে পারে।
টাইফয়েডের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা দরকার। কারণ এটি ‘সালমোনেল্লা টাইফি’ ব্যাকটেরিয়া বাহিত অসুখ।
টাইফয়েড আইজিএম টেস্ট, ব্লাড কালচার ও ওয়াইডাল টেস্ট করে রোগ নির্ণয় করতে হবে।
ডেঙ্গুর লক্ষণ
ডেঙ্গু হলে প্রথমেই ধুম জ্বর আসে। তার সঙ্গে গা-হাত-পায়ে অসহ্য ব্যথা, মাথাব্যথা, গায়ে র্যাশ বেরনোর লক্ষণ প্রকাশ পাবে।
বমি হওয়ার প্রবণতা প্রকাশ পায়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গু রোগীদের টাইফয়েডে টেস্ট করলেও ফলস পজিটিভ রিপোর্ট আসার সম্ভাবনাও থাকে। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকির, প্লেটলেট কাউন্ট হঠাৎ করেই কমে যায়, শরীরের অভ্যন্তরীণ ব্লিডিং শুরু হয়। ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম হয়ে প্রাণসংশয়ও ডেকে আনতে পারে।
ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও লিভারের সমস্যাও হতে পারে। এই জ্বর প্রতিহত করতে ফ্লুইড বা পানীয় অতি জরুরি। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে প্রথম তিন থেকে পাঁচদিনের মধ্যে ডেঙ্গু এনএসওয়ান টেস্ট ও পাঁচদিন পরে ডেঙ্গু আইজিএম অ্যান্টিবডি টেস্ট করা দরকার।
ইনফ্লুয়েঞ্জা বা করোনা
জ্বর থাকবে সঙ্গে সর্দি-কাশি। অল্প শ্বাসকষ্টও হতে পারে। জ্বরের সঙ্গে অক্সিজেন লেভেল কমতে থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন আছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা বাড়িতে একজনের হলে তা থেকে অন্যদের হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। তাই এখন জ্বর হলে বাড়িতে বয়স্ক, অল্পবয়সিদের থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
শুধু জ্বর সঙ্গে সর্দি-কাশি বা শ্বাসকষ্ট না থাকলে ডেঙ্গু, টাইফয়েডের কথা মাথায় রাখতে হবে।
এই সময়টায় যা মানতে হবে
জ্বর হলে, সঙ্গে খেতে অসুবিধা, গায়ে র্যাশ, শ্বাসকষ্ট থাকলে সাবধান হতে হবে। খুব ক্লান্তি বা ঝিমুনিভাব প্রকাশ পেলে তা স্বাভাবিকভাবে নেবেন না। এই সময় দু-তিনদিন টানা ১০২-১০৪ বা তার বেশি তাপমাত্রায় জ্বর থাকলে ডেঙ্গু ও টাইফয়েডের টেস্ট করে দেখা অত্যন্ত জরুরি। তবে, অবশ্যই প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। তবে, স্টেরয়েড একেবারেই নয়। এই সময় ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপটাও বেড়েছে। তাই জ্বরের সঙ্গে সর্দি-কাশি থাকলে সাবধান হোন। শিশু বা কোমর্বিডিটি আছে এমন রোগীদের কারও জ্বর হলে তার কাছাকাছি না যাওয়াই ভালো। প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করুন।
এই সময় জলবাহিত রোগ বেড়েছে। তাই মিনারেল ওয়াটার খান, প্রয়োজনে ফোটানো পানি পান করলে ভালো।
কাটা ফল, শাকসবজি, স্যালাড এড়িয়ে চলুন। যেকোনও জিনিস খাওয়ার আগে খুব ভালো করে ধুয়ে বা রান্না করে সিদ্ধ খাবার খেলেই ভালো।
মশার কামড় এড়াতে মশারি টাঙিয়ে শোয়া কিংবা মসকুইটো রিপেলেন্ট কয়েল, ক্রিমের ব্যবহার জরুরি। বাড়ির আশপাশে কোথাও পানি জমতে দেখলে আগে পরিষ্কার করুন, ডেঙ্গুর প্রকোপ এতেই বেশি।
ডেঙ্গুর মশা সকাল ও সন্ধ্যাবেলায় বেশি কামড়ায়। এই সময়টা গা-হাত-পা ঢাকা জামাকাপড় পরাই ভালো। নিজে নিজে চিকিৎসা না করে জ্বরের কারণ খুঁজে বের করে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলুন।
সবশেষে একটা কথাই বলব, জ্বর অসুখ নয়, অসুখের লক্ষণ। আড়ালে কারণটা উদ্ধার করাই আসল ব্যাপার। তাই দেরি করবেন না।
উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত
ঢাকায় পৌঁছেছেন সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় বাংলাদেশি চিকিৎসকদের সহায়তা করতে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. চোং সি জ্যাক ঢাকায় এসেছেন।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দিবাগত রাতে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। বিমানবন্দরে তাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা গ্রহণ করেন।
মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশি মেডিকেল টিমকে সহায়তা ও পরামর্শ দেওয়ার উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. চোং সি জ্যাক বাংলাদেশে এসেছেন। তার এই আগমন চিকিৎসা সহায়তার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
জানা গেছে, বুধবার (২৩ জুলাই) আরও তিনজন বিশিষ্ট প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফরে আসছেন। তারা হলেন—সিং হেলথের সিনিয়র ডিরেক্টর বিজয়া রাও, পুন লাই কুয়ান ও লিম ইউ হান জোভান।
এর আগে, গতকাল প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান জানান, রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে রাতে সিঙ্গাপুর থেকে একটি চিকিৎসক টিম আসবে।
তিনি বলেন, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’র সঙ্গে এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) আছে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, হাসপাতাল থেকে তাদের কেস রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। তাদের একজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও দুজন নার্স আজ রাতে এসে পৌঁছাবেন। আমরা আশা করি, তারা আগামীকাল থেকেই এই (চিকিৎসক) টিমে জয়েন করতে পারবে।
এদিকে আইএসপিআর মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হালনাগাদ তালিকায় ২৭ জন নিহতের কথা বলা হয়, যাদের মধ্যে ২৩ জন শিশু। রাতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩২-এ পৌঁছায়।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম সাংবাদিকদের জানান, নিহতদের মধ্যে অনেকের পরিচয় শনাক্ত করা হয়নি। ২০টি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, ৬টি রাখা হয়েছে সিএমএইচের মর্গে। নিহত বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের মরদেহ রাজশাহীতে দাফন করা হয়েছে।
আইএসপিআরের তালিকা অনুযায়ী এ ঘটনায় মোট আহত হয়েছেন ১৬৫ জন। তাদের মধ্যে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ৮, বার্ন ইনস্টিটিউটে ৪৬, ঢাকা মেডিকেলে ৩, সিএমএইচে ২৮, লুবনা জেনারেল হাসপাতালে ১৩, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ৬০, উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১, ইউনাইটেড হাসপাতালে ২ এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৩ জন চিকিৎসাধীন।
মন্তব্য