ঘরে ঘরে জ্বর, বাঁচতে যা করবেন

এখন পাড়ায় পাড়ায়, ঘরে-ঘরে জ্বর হচ্ছে। তবে, আবহাওয়া বদলের মামুলি জ্বর নয়, আড়ালে ডেঙ্গু, টাইফয়েড কিংবা ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপই বেশি। এই সময়টাই এমন, জীবাণুরা মাথাচাড়া দেয়। এই সময়টায় কী কী করণীয়, তা নিয়েই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বৃষ্টি শুরু হলো কী হলো না! গরম থেকে একটু স্বস্তি পেতে না পেতেই গা পুড়ছে জ্বরে। পাড়ায় পাড়ায়, ঘরে-ঘরে এখন একটাই অসুখ। ১০৩, কখনও আবার ১০৫ পর্যন্তও উঠছে তাপমাত্রা। বয়স্করাই শুধু নয়, শিশুদেরও জ্বর হচ্ছে। বাড়িতে কারও হলে তার থেকে ছোট-বড় সবারই জ্বর হচ্ছে। তাহলে কী করোনা?
আসলে প্রথমদিকে মৌসুম পরিবর্তনের জ্বর ভেবে অনেকেই তেমন পাত্তা দেয়নি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে, রোগীদের সংখ্যা খুব বেড়েছে। তিন থেকে চার রকমের জ্বর নিয়ে রোগীরা চিকিৎসকের কাছে ছুটছেন। জলবাহিত সংক্রমণ (টাইফয়েড, হেপাটাইটিস), মশাবাহিত সংক্রমণ (ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া), রেসপিরেটরি ইনফেকশন (ইনফ্লুয়েঞ্জা, কোভিড)। কার যে কী হচ্ছে সেটি প্রথমেই বোঝা মুশকিল। প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর, তারপর ধীরে ধীরে আরও সমস্যা প্রকাশ পাচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহে ১০-২০ শতাংশ বেড়েছে ডেঙ্গু-টাইফয়েড রোগীর সংখ্যা। প্রচুর হচ্ছে ইনফ্লুয়েঞ্জার জ্বর। জ্বর বা পেটের অল্পস্বল্প গন্ডগোল হচ্ছে, কারও আবার হঠাৎ করেই ধুম জ্বর আসছে। উঠতেই পারছে না, সঙ্গে সর্দি-তীব্র কাশি। থাকছে মাথার যন্ত্রণাও।
এই বছর বর্ষার শুরুতেই একেবারে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে ভাইরাস ও ব্যাকটিরিয়াল ফিভার। তাই এখন থেকেই সতর্ক হোন।
প্রথমে বুঝতে হবে জ্বরের কারণ। প্রথম দিকে লক্ষণ সবক্ষেত্রেই এক রকম, অর্থাৎ জ্বর আসবে। তবে কী করে বুঝবেন ডেঙ্গু না িকি ইনফ্লুয়েঞ্জা? কিংবা টাইফয়েড নয়তো! তফাত আছে কিছু ক্ষেত্রে।
টাইফয়েডের লক্ষণ
টাইফয়েডের ক্ষেত্রে প্রথমে হালকা জ্বর দিয়ে শুরু হয়, তারপর ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়ে। এক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে পেটের গন্ডগোল থাকবে। কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা ডায়েরিয়া হয়। বমি হতে পারে, তবে শুরুতেই হবে না। কয়েকদিন পর শুরু হবে।
টাইফয়েডে প্লেটলেট কাউন্ট খুব দ্রুত পড়ে না। প্লেটলেট দেওয়ার দরকারও পড়ে না। এই জ্বরে লিভারের কার্যক্ষমতা দুর্বল হয়। ক্ষুদ্রান্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই দীর্ঘদিন ভুগলে পেটে ব্যথা, পেটের মধ্যে রক্তপাত, মল কালো বর্ণের হয়ে যেতে পারে।
টাইফয়েডের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা দরকার। কারণ এটি ‘সালমোনেল্লা টাইফি’ ব্যাকটেরিয়া বাহিত অসুখ।
টাইফয়েড আইজিএম টেস্ট, ব্লাড কালচার ও ওয়াইডাল টেস্ট করে রোগ নির্ণয় করতে হবে।
ডেঙ্গুর লক্ষণ
ডেঙ্গু হলে প্রথমেই ধুম জ্বর আসে। তার সঙ্গে গা-হাত-পায়ে অসহ্য ব্যথা, মাথাব্যথা, গায়ে র্যাশ বেরনোর লক্ষণ প্রকাশ পাবে।
বমি হওয়ার প্রবণতা প্রকাশ পায়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গু রোগীদের টাইফয়েডে টেস্ট করলেও ফলস পজিটিভ রিপোর্ট আসার সম্ভাবনাও থাকে। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকির, প্লেটলেট কাউন্ট হঠাৎ করেই কমে যায়, শরীরের অভ্যন্তরীণ ব্লিডিং শুরু হয়। ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম হয়ে প্রাণসংশয়ও ডেকে আনতে পারে।
ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও লিভারের সমস্যাও হতে পারে। এই জ্বর প্রতিহত করতে ফ্লুইড বা পানীয় অতি জরুরি। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে প্রথম তিন থেকে পাঁচদিনের মধ্যে ডেঙ্গু এনএসওয়ান টেস্ট ও পাঁচদিন পরে ডেঙ্গু আইজিএম অ্যান্টিবডি টেস্ট করা দরকার।
ইনফ্লুয়েঞ্জা বা করোনা
জ্বর থাকবে সঙ্গে সর্দি-কাশি। অল্প শ্বাসকষ্টও হতে পারে। জ্বরের সঙ্গে অক্সিজেন লেভেল কমতে থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন আছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা বাড়িতে একজনের হলে তা থেকে অন্যদের হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। তাই এখন জ্বর হলে বাড়িতে বয়স্ক, অল্পবয়সিদের থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
শুধু জ্বর সঙ্গে সর্দি-কাশি বা শ্বাসকষ্ট না থাকলে ডেঙ্গু, টাইফয়েডের কথা মাথায় রাখতে হবে।
এই সময়টায় যা মানতে হবে
জ্বর হলে, সঙ্গে খেতে অসুবিধা, গায়ে র্যাশ, শ্বাসকষ্ট থাকলে সাবধান হতে হবে। খুব ক্লান্তি বা ঝিমুনিভাব প্রকাশ পেলে তা স্বাভাবিকভাবে নেবেন না। এই সময় দু-তিনদিন টানা ১০২-১০৪ বা তার বেশি তাপমাত্রায় জ্বর থাকলে ডেঙ্গু ও টাইফয়েডের টেস্ট করে দেখা অত্যন্ত জরুরি। তবে, অবশ্যই প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। তবে, স্টেরয়েড একেবারেই নয়। এই সময় ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপটাও বেড়েছে। তাই জ্বরের সঙ্গে সর্দি-কাশি থাকলে সাবধান হোন। শিশু বা কোমর্বিডিটি আছে এমন রোগীদের কারও জ্বর হলে তার কাছাকাছি না যাওয়াই ভালো। প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করুন।
এই সময় জলবাহিত রোগ বেড়েছে। তাই মিনারেল ওয়াটার খান, প্রয়োজনে ফোটানো পানি পান করলে ভালো।
কাটা ফল, শাকসবজি, স্যালাড এড়িয়ে চলুন। যেকোনও জিনিস খাওয়ার আগে খুব ভালো করে ধুয়ে বা রান্না করে সিদ্ধ খাবার খেলেই ভালো।
মশার কামড় এড়াতে মশারি টাঙিয়ে শোয়া কিংবা মসকুইটো রিপেলেন্ট কয়েল, ক্রিমের ব্যবহার জরুরি। বাড়ির আশপাশে কোথাও পানি জমতে দেখলে আগে পরিষ্কার করুন, ডেঙ্গুর প্রকোপ এতেই বেশি।
ডেঙ্গুর মশা সকাল ও সন্ধ্যাবেলায় বেশি কামড়ায়। এই সময়টা গা-হাত-পা ঢাকা জামাকাপড় পরাই ভালো। নিজে নিজে চিকিৎসা না করে জ্বরের কারণ খুঁজে বের করে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলুন।
সবশেষে একটা কথাই বলব, জ্বর অসুখ নয়, অসুখের লক্ষণ। আড়ালে কারণটা উদ্ধার করাই আসল ব্যাপার। তাই দেরি করবেন না।
উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত
ঢাকায় পৌঁছেছেন সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় বাংলাদেশি চিকিৎসকদের সহায়তা করতে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. চোং সি জ্যাক ঢাকায় এসেছেন।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দিবাগত রাতে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। বিমানবন্দরে তাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা গ্রহণ করেন।
মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশি মেডিকেল টিমকে সহায়তা ও পরামর্শ দেওয়ার উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. চোং সি জ্যাক বাংলাদেশে এসেছেন। তার এই আগমন চিকিৎসা সহায়তার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
জানা গেছে, বুধবার (২৩ জুলাই) আরও তিনজন বিশিষ্ট প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফরে আসছেন। তারা হলেন—সিং হেলথের সিনিয়র ডিরেক্টর বিজয়া রাও, পুন লাই কুয়ান ও লিম ইউ হান জোভান।
এর আগে, গতকাল প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান জানান, রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে রাতে সিঙ্গাপুর থেকে একটি চিকিৎসক টিম আসবে।
তিনি বলেন, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’র সঙ্গে এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) আছে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, হাসপাতাল থেকে তাদের কেস রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। তাদের একজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও দুজন নার্স আজ রাতে এসে পৌঁছাবেন। আমরা আশা করি, তারা আগামীকাল থেকেই এই (চিকিৎসক) টিমে জয়েন করতে পারবে।
এদিকে আইএসপিআর মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হালনাগাদ তালিকায় ২৭ জন নিহতের কথা বলা হয়, যাদের মধ্যে ২৩ জন শিশু। রাতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩২-এ পৌঁছায়।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম সাংবাদিকদের জানান, নিহতদের মধ্যে অনেকের পরিচয় শনাক্ত করা হয়নি। ২০টি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, ৬টি রাখা হয়েছে সিএমএইচের মর্গে। নিহত বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের মরদেহ রাজশাহীতে দাফন করা হয়েছে।
আইএসপিআরের তালিকা অনুযায়ী এ ঘটনায় মোট আহত হয়েছেন ১৬৫ জন। তাদের মধ্যে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ৮, বার্ন ইনস্টিটিউটে ৪৬, ঢাকা মেডিকেলে ৩, সিএমএইচে ২৮, লুবনা জেনারেল হাসপাতালে ১৩, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ৬০, উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১, ইউনাইটেড হাসপাতালে ২ এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৩ জন চিকিৎসাধীন।
যে অনুশীলনই হতে পারে শারীরিক যন্ত্রণা ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তির পথ

অনিয়মের কারণে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে লম্বা হচ্ছে প্রেসক্রিপশনে লেখা ওষুধের তালিকা। অল্প বয়সেই নানা রকম রোগে ভুগছেন বিভিন্ন অনিয়মের কারণে। আর তাই ফিট থাকতে নিয়ম করে শরীরচর্চা করুন। আর এক দাওয়াইতেই গায়েব হতে পারে হাজার রোগ।
তবে কাজের ব্যস্ততা আর সংসারের দায়িত্ব সামলে জিমে যাওয়ার সময় হয়তো আপনি পান না। কিন্তু ইচ্ছে থাকলে বাড়িতেই আধাঘণ্টা সময় বের করে যোগাসন কিংবা ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। কেবল রোগা হতেই নয়, নানা রকম রোগবালাই দূরে রাখতেও নিয়ম করে যোগাসন করা প্রয়োজন।
তাই শরীর চাঙ্গা রাখতে নিয়ম মেনে যোগাসন করলে তবেই মিলবে ফল। মুশকিল আসান করার পদ্ধতির জেনে নিন। আজকের ব্যায়াম কাষ্ঠ তক্ষণাসন।
কাঠুরেরা যেভাবে কাঠ কাটেন, সেই ভঙ্গিতে কাষ্ঠ তক্ষণাসন আসনটি করা হয়। আর সেই সময় কাঠুরেরা কাঠ কাটার সময় তাদের জমে থাকা রাগ, দুঃখ, ভয় ও অবদমিত ইচ্ছা উজাড় করে দেন। এ অভ্যাসে এই গতিশীল অনুশীলন প্রতিদিনের জীবনে শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
মনে মনে ভাবুন, আপনি দুই হাত দিয়ে একটি ভারি কুঠার শক্ত করে ধরে আছেন। এটিই হলো আসন শুরুর প্রথম ভঙ্গি। আর ম্যাটের ওপর সোজা হয়ে দাঁড়ান। এরপর দুই পায়ের মধ্যে ফাঁক রাখুন। ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে নিতে দুই হাতে ভারি কুঠার ধরে তোলার ভঙ্গি করুন। এরপর ধীরে ধীরে মাথার ওপর দিয়ে পেছনের দিকে কাল্পনিক কুঠার তুলুন। মেরুদণ্ড সামান্য পেছনে হেলান। এবার শ্বাস ছেড়ে মুখ দিয়ে ‘হা’ শব্দ করে পায়ের মাঝখানে রাখা কাল্পনিক ভারি কাঠ কাটার ভঙ্গিতে দ্রুত নামান মুঠো করা হাত। এরপর হাঁটু সামান্য ভাঁজ হবে। কিন্তু লক্ষ রাখবেন, পা যেন মাটি থেকে ওপরে উঠে না যায়। এভাবে সম্পূর্ণ করুন।
আবার শুরুর ভঙ্গিতে গিয়ে দুই হাত ওপরে তুলে কাঠ কাটার ভঙ্গি করুন। এই ভাবে ৫–৭ রাউন্ড অভ্যাস করতে হবে। প্রতিবার দ্রুত শ্বাস ছাড়তে হবে এবং মুখ দিয়ে জোরে ‘হা’ শব্দ করতে হবে। এর ফলে আপনার মানসিক চাপ দূর হবে।
নিয়মিত কাষ্ঠ তক্ষণাসন অভ্যাস করলে আপনার কোমর ও নিতম্বের পেশিতে রক্ত চলাচল বাড়ে। এর ফলে এই অংশের পেশি উজ্জীবিত হয় এবং টান টান থাকে। এ আসনটির আরও একটি বিশেষ কার্যকারিতা আছে। আপনার কাঁধ ও পিঠের ওপরের দিকের পেশি সচরাচর খুব বেশি ব্যবহার না হওয়ায় সেখানে আড়ষ্ট ভাব চলে আসে। ব্যথা বাড়ে। এ আসনটি অভ্যাস করলে কাঁধ ও পিঠের ওপরের দিকের পেশির সঞ্চালন হয়। আবার শ্বাস ছাড়ার সময় মুখ দিয়ে ‘হা’ শব্দ করার নানা ভালো দিক আছে। এর ফলে মনের মধ্যে জমে থাকা রাগ, দুঃখ ও ভয় দূর হয়।
কিট অপচয়ের ভয়ে ‘পরীক্ষা বন্ধ’
ঢাকায় ভয়াবহ রূপ নিতে পারে চিকুনগুনিয়া

ঢাকার বাসাবোর গৃহবধূ জিনাত পারভিন গত ফেব্রুয়ারিতে হঠাৎ করে অস্থিসন্ধিতে ব্যথাসহ জ্বরে আক্রান্ত হন। চিকিৎসকের পরামর্শে ডেঙ্গু পরীক্ষা করান, ফলাফল নেগেটিভ আসে। এরপর চিকুনগুনিয়ার পরীক্ষা করাতে গিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। কমপক্ষে দশটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরেও চিকুনগুনিয়ার পরীক্ষা করাতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত তাকে বেসরকারি একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে রোগ নির্ণয় ছাড়াই চিকিৎসা নিতে হয়।
এমন অভিজ্ঞতা শুধু জিনাতের নয়। সঠিক রোগ নির্ণয়ের অভাবে বহু রোগী এখন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। কারণ, সরকারি হাসপাতালগুলোতে গত ৮ বছর ধরে চিকুনগুনিয়ার পরীক্ষা এক প্রকার বন্ধ।
বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআর,বি জানিয়েছে, চলতি জুন মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে রাজধানীতে জ্বর ও উপসর্গ নিয়ে পরীক্ষা করাতে আসা ১৭১ জন রোগীর মধ্যে ১৪০ জনের শরীরে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার প্রায় ৮২ শতাংশ। সংস্থাটি একে উচ্চ সংক্রমণের স্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে চিহ্নিত করে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ঢাকায় প্রথম বড় আকারে চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। আইসিডিডিআরের হিসাবে সে বছর অন্তত ১৩ হাজার রোগী শনাক্ত হলেও বাস্তবে সংখ্যাটি লাখ ছাড়িয়েছে বলে ধারণা গবেষকদের। এরপর একে ‘কম গুরুত্বের রোগ’ ঘোষণা করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে এর পরীক্ষার কিট সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দাবি করছেন মৃত্যু প্রায় নেই বলে কিট কেনার প্রয়োজনীয়তা আর দেখা দেয়নি
২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকায় চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
আইসিডিডিআর,বি, কিল ইউনিভার্সিটি (যুক্তরাজ্য) এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল এই জরিপে ৩৯৪ জন উপসর্গধারী রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে, যাদের মধ্যে ১৩৮ জনের (৩৫ শতাংশ) রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এই ১৩৮ জনের মধ্যে— ৯৮.৫ শতাংশ রোগী ঢাকার বাসিন্দা, যার মধ্যে ৫২ শতাংশ রোগী ঢাকা দক্ষিণে এবং ৪৬ শতাংশ ঢাকা উত্তরের। বাকি দুজন নারায়ণগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জের। আক্রান্ত এসব রোগীদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ পুরুষ ও ৩৫ শতাংশ নারী। এমনকি আক্রান্ত প্রায় ৮৩ শতাংশ রোগীর বয়স ৩০ বছরের বেশি।
জরিপে দেখা গেছে, চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ৯৬ শতাংশ ভুগেছেন জয়েন্ট পেইনে। এ ছাড়া, ২৯.৪ শতাংশ রোগী ক্লান্তিতে ভুগেছেন, ১৯ শতাংশ রোগীর অস্থিসন্ধি ফুলে গিয়েছে। এমনকি আক্রান্ত প্রায় ৮১ শতাংশ রোগীর ২৮ দিন পরও উপসর্গ বিদ্যমান ছিল বলে গবেষণায় বলা হয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, এই রোগের সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো— দীর্ঘমেয়াদী গিঁট ব্যথা, যা বহুদিন স্থায়ী হয় এবং কর্মক্ষমতা হ্রাস করে।
জরিপের তথ্য বলছে, চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের গড়ে একজন রোগী ১০ দশমিক ৫ কর্মদিবস হারাচ্ছেন, যার ফলে প্রতিজনের অর্থনৈতিক ক্ষতি গড়ে ৭৩ দশমিক ৩ মার্কিন ডলার (প্রায় ৮ হাজার টাকা)।
গবেষকদের মতে, ঢাকায় বর্তমানে এডিস মশার বিস্তার ও আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশের কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি মারাত্মক হারে বাড়ছে।
এ প্রসঙ্গে গবেষণা কার্যক্রমের প্রধান সদস্য ও আইসিডিডিআর,বির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফ বলেন, এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে আমরা নিয়মিতভাবে পজিটিভ কেস পাচ্ছি। সামনের মাসগুলোতে, বিশেষ করে ডেঙ্গু মৌসুমে চিকুনগুনিয়াও বড় আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঈদে মানুষের দেশব্যাপী চলাচলের ফলে এটি সারা দেশে ছড়াতে পারে।
‘উপেক্ষিত’ ভাইরাস, জ্বরগুলো ফিরছে দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা নিয়ে
বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির (বিএমইউ) মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবেদ হোসেন খান জানান, দেশে দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত থাকা ভাইরাস জ্বরগুলো আবারও ফিরে এসেছে এবং এদের অনেকগুলো রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালের পর দেশে আবারও চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ১৯ অক্টোবর ২০২৪ থেকে ২২ এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত সময়কালে দেশে মোট ৫২০ জন সন্দেহভাজন রোগীর মধ্যে ১৬১ জনের দেহে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। যদিও এই ভাইরাসে মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে কম, তবে রোগ পরবর্তী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো— বিশেষ করে গিঁটে তীব্র ব্যথা, ত্বকে র্যাশ, দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতা— রোগীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় দীর্ঘমেয়াদে গভীর প্রভাব ফেলছে। তাই এটি কেবল সাধারণ ভাইরাস জ্বর হিসেবে বিবেচনা করে অবহেলা করা বিপজ্জনক।
ডা. আবেদ আরও বলেন, ডেঙ্গুও একইভাবে আবারও বড় হুমকির রূপ নিচ্ছে। প্রতিবছরের মতো এবারও বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ব্যাপকহারে বাড়ছে। আগের বছরগুলোতে মূলত ঢাকা শহরে ডেঙ্গু বেশি দেখা গেলেও বর্তমানে তা ছড়িয়ে পড়েছে বরিশাল, বরগুনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। চলতি মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার ৮৭৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যার মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল জেলাতেই ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এবার তিনটি ভিন্ন সেরোটাইপ (DEN-1, DEN-2, DEN-3) দ্বারা সংক্রমণ হচ্ছে বলে জানা গেছে, যা রোগীদের জটিলতায় ফেলছে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া— উভয়েরই মূল বাহক এডিস মশা। অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলাবদ্ধতা এবং মশা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী উদ্যোগের অভাব— এই রোগগুলোর বিস্তারের প্রধান কারণ। শুধুমাত্র চিকিৎসায় এই সমস্যা সমাধান হবে না। প্রয়োজন যথাযথ নগর পরিকল্পনা, পরিচ্ছন্নতা এবং প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বিতভাবে জনসচেতনতা বৃদ্ধি।
বন্দুক আছে গুলি নেই, মশা মারার কীটনাশক ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো এডিস মশাবাহিত ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঢাকায় ব্যবহৃত কীটনাশক (ইনসেকটিসাইড) কতটা কার্যকর— তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম ছারোয়ার বলেন, আপনার হাতে যদি বন্দুক থাকে, কিন্তু গুলি হয় খেলনার, তাহলে সেই গুলিতে কি আপনি শত্রু মারতে পারবেন?
ঢাকা পোস্টকে ডা. ছারোয়ার বলেন, সিটি করপোরেশনগুলো ইনসেকটিসাইড ছিটালেও সেটি কতটুকু কার্যকর, সেখানে অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট (সক্রিয় উপাদান) সঠিক মাত্রায় আছে কি না— তা নিয়ে এখনো কোনো বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ নেই। অথচ এটাই হচ্ছে ভাইরাসবাহিত রোগ দমন ব্যবস্থার মেরুদণ্ড। একটি সিটি কর্পোরেশনের কর্মীদের আমি জিজ্ঞেস করেছি, তারা ইনসেকটিসাইড কোথায় ছিটায়। তারা বলছে, বাড়ির পাশে জমে থাকা পানিতে। প্রশ্ন হলো সেই পানিতে প্রাপ্তবয়স্ক (এডাল্ট) মশা থাকে নাকি কেবল লার্ভা থাকে? কারণ, লার্ভা ধ্বংসের জন্য ‘লার্ভিসাইড’ দরকার, আর এডাল্ট মশা নিয়ন্ত্রণে ‘এডাল্টিসাইড’। অথচ আমরা জানিই না কোন পর্যায়ে কী প্রয়োগ করা হচ্ছে।
ওষুধের মান নয়, এর প্রয়োগ পদ্ধতিও সমান গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ডা. ছারোয়ার বলেন, যে দূরত্ব থেকে ইনসেকটিসাইড ছিটানো উচিত, সে মানদণ্ডও আমরা অনুসরণ করছি না। ভুল দূরত্ব ও কোণে স্প্রে করলে কার্যকারিতা শূন্যে গিয়ে ঠেকে। এই অবস্থায় পুরো প্রক্রিয়াই অর্থহীন হয়ে যায়।
বাহকভিত্তিক কৌশলের অভাব উল্লেখ করে ডা. ছারোয়ার আরও বলেন, বর্তমানে এডিস মশার দুই প্রজাতি— এডিস ইজিপ্টাই ও এডিস অ্যালবোপিকটাস বাংলাদেশে বিস্তৃত। এদের মধ্যে একটি ছায়াযুক্ত আবাসস্থলে বেশি থাকে, অপরটি খোলা জায়গায়। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা— তিনটি ভাইরাসই এই মশা দ্বারা সংক্রমিত হলেও বাহকের আচরণ আলাদা হওয়ায় প্রতিরোধ কৌশলও আলাদা হওয়া প্রয়োজন।
মৃত্যু না হলেও দীর্ঘস্থায়ী যন্ত্রণা রেখে যায় চিকুনগুনিয়া
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে কম হলেও রোগীর শারীরিক ও সামাজিক জীবনে দীর্ঘমেয়াদি ভোগান্তি তৈরি করে। এই ভাইরাসজনিত সংক্রমণে হঠাৎ করে জ্বর ওঠে, তারপর গিঁটে অসহনীয় ব্যথা দেখা দেয়, যা অনেক সময় মাসের পর মাস থেকে যায়। অনেক রোগীই স্বাভাবিক চলাফেরা ও কর্মক্ষমতা হারান। এমনকি হালকা কাজ করতেও সমস্যায় পড়েন।
তিনি আরও বলেন, চিকুনগুনিয়ার এখন পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। তাই চিকিৎসা বলতে মূলত লক্ষণ-উপসর্গের ওপরই নির্ভর করতে হয়। ব্যথানাশক ওষুধ, বিশ্রাম, পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ ও শরীরের পরিচর্যার মাধ্যমে চিকিৎসা করতে হয়। কিন্তু এই লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসার জন্য আগে রোগ নির্ভুলভাবে শনাক্ত করতে হয়। রোগ শনাক্ত না হওয়ায় ভুল চিকিৎসার ঝুঁকি তৈরি হয়, রোগী আরও বিপদে পড়ে।
তার মতে, চিকুনগুনিয়াকে ‘হালকা’ ভাইরাস জ্বর হিসেবে ধরে নেওয়া এক ধরনের ঝুঁকি। কারণ, এর প্রভাব ডেঙ্গুর মতো তীব্র না হলেও দীর্ঘমেয়াদে একজন মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত করে দিতে পারে এটি।
চিকুনগুনিয়া পরীক্ষায় ঘাটতির প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্যাখ্যা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চিকুনগুনিয়ার জন্য এখন সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিয়মিত পরীক্ষা হচ্ছে না। তবে আইইডিডিআর ও রেফারেন্স ল্যাবরেটরিতে এই পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। যেসব রোগীকে সন্দেহভাজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী স্যাম্পল পাঠিয়ে পরীক্ষা করা হয়।
তিনি বলেন, চিকুনগুনিয়ায় সাধারণত ক্লিনিক্যাল ডায়াগনোসিস বেশি কার্যকর। সব রোগীর ক্ষেত্রে আলাদা করে রক্ত পরীক্ষা করার দরকার পড়ে না। যদি সবকিছুই টেস্টের ওপর নির্ভর করে, তাহলে তো চিকিৎসকদের ভূমিকা থাকছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কনসালটেন্টরা রোগীর উপসর্গ দেখে রোগ নির্ণয় করতে পারেন।
কেন পরীক্ষা বন্ধ বা সীমিত, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে ডা. মঈনুল বলেন, বাংলাদেশের কোনো হাসপাতালেই সব ধরনের টেস্ট থাকে না। এটা নির্ভর করে রোগীর চাহিদা বা প্রয়োজনের ওপর। ধরুন, আমি যদি এক হাজার কিট কিনি, আর সেই পরিমাণ রোগী না আসে, তাহলে সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। কোভিডের সময় এ রকম অনেক কিট শেষ পর্যন্ত নষ্ট হয়েছে। তখন আবার অভিযোগ ওঠে অপচয়ের।
তিনি আরও বলেন, চিকুনগুনিয়া আর ডেঙ্গু অনেকটাই কাছাকাছি, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাও প্রায় একই। তাই সবাইকে পরীক্ষা করতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই। আমরা রোগপ্রবণ এলাকাগুলো থেকে সন্দেহভাজন নমুনা সংগ্রহ করে নির্ভরযোগ্য ল্যাবগুলোতে পাঠাই।
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ঢামেক, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। ছাত্র-ছাত্রীদের রোববার (২২ জুন) দুপুর ১২টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে পেশাগত ও এমবিবিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী এবং বিদেশি শিক্ষার্থীরা এই নির্দেশনার আওতামুক্ত থাকবেন।
শনিবার (২১ জুন) অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ অনুষ্ঠিত ঢাকা মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলেজের চলমান অচলাবস্থা নিরসনের লক্ষ্যে আগামীকাল থেকে কলেজের এমবিবিএস ছাত্র-ছাত্রীদের একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো। ছাত্র-ছাত্রীদের আগামীকাল দুপুর ১২টার মধ্যে হোস্টেল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হলো।
উল্লেখ্য, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের আবাসিক ও একাডেমিক ভবনের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার প্রতিবাদে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান ও মিলন চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।
তাদের প্রধান দাবির মধ্যে ছিল—
• পরিত্যক্ত ঘোষণা করা ছাত্রাবাসের বিকল্প ব্যবস্থা।
• নতুন ছাত্রাবাস ও একাডেমিক ভবনের বাজেট পাস।
• শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, দাবিগুলো মানা না হলে তারা নিজেরাই একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেবেন। তবে তার আগেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে কলেজ বন্ধের ঘোষণা এলো।
মন্তব্য