রাবি প্রশাসনের অসহযোগিতায় বিলম্ব হচ্ছে সাবেক ভিসির দুদকের দুর্নীতির তদন্ত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সোবহান তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির ফলে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ১৩৮জন শিক্ষক-কর্মচারীকে নিয়োগ দেন তিনি। এছাড়াও বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত থাকায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তদন্তের স্বার্থে সোবহানের বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একাধিকবার চিঠি দিয়েও সহযোগিতা পাননি দুদক। ফলে সোবহানের দুর্নীতি বিষয়ক তদন্তের কাজ বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, বারবার তথ্য চেয়েও সহযোগিতা না পাওয়ায় দুদকের ধারায় রাজশাহীর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের নামে যেকোনো সময় মামলা হতে পারে। দুদকের ১৯ এর ৩ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে তথ্য চেয়ে সহযোগিতা না পেলে তার নামে মামলা করতে পারবে দুদক।
এদিকে সোবহানের দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক মো. সাইদুজ্জামানকে দলনেতা করে আফনান জান্নাত কেয়া ও মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করেছে দুদক।
দুদকের সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, আব্দুস সোবহানের দুর্নীতির তথ্য ও রেকর্ডপত্র সরবরাহের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কয়েক দফায় প্রেরণ করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে অনুসন্ধানের কাজ বিঘ্নিত ও বিলম্বিত হচ্ছে।
এইদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আব্দুস সোবহানের যেসব তথ্য চান দুদক:
১. প্রফেসর এজাজুল হক এর নেতৃত্বে গঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী'র "পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা (পিজিডি)"প্রকল্পের তিন কোটি টাকা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যায়িত ফটোকপি। উক্ত তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে গৃহীত ব্যবস্থা সমূহের বিস্তারিত বিবরণ ও রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
২. আব্দুস সোবহানের মেয়াদ শেষে ৩৪ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা ঘাটতি সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি। তাঁর কর্মকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের খাত ভিত্তিক আয় ও ব্যয়ের বিবরণী (অর্থ বছর ভিত্তিক)।
৩. সোবহানের মেয়ে সানজানা সোবহান, প্রভাষক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জামাতা এ টি এম সাহেদ পারভেজ এর এন আই ডি/স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি।
৪. মো. আব্দুস সোবহান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়ার পূর্বের এবং পরের কর্মকর্তা/কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালার সত্যায়িত ফটোকপি।
৫. সোবহানের এর ব্যক্তিগত নথির সত্যায়িত ফটোকপি।
৬. আব্দুস সোবহান এর সময়ে গৃহীত প্রকল্পের নাম, প্রাক্কলিত টাকার পরিমাণ, প্রাপ্ত টেন্ডারের সংখ্যা, টেন্ডার আহ্বানের পদ্ধতি, কার্যাদেশ প্রদ্দত্ত টাকার পরিমাণ, পরিশোধিত টাকার পরিমাণ,
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা,প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নাম, পদবী ও তাদের স্ব দায়িত্ব সকল ডকুমেন্ট এর ফটোকপি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, আমরা বেশ কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছি কিন্তু কোনো ধরনের তথ্য তাদের কাছ থেকে পাইনি। ফলে সোবহানের তদন্তের কাজ বিলম্ব হচ্ছে। আমরা আবারও দেখবো যদি তথ্য না পাই তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে দুদক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে দুদকের চিঠি এসেছে কিনা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফতেখারুল আলম মাসউদ বলেন, "দুদক কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়েছে আমার। তবে তারা যেসকল তথ্য চেয়েছেন তারমধ্যে কিছু তথ্য দিতে পেরেছি এবং অনেক তথ্যই আমাদের কাছে নেই যার ফলে আমরা সময় নিয়েছি।"
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, দুদকের একজন কর্মকর্তাকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আমার কাছে এসেছিলেন। দুদক যেসকল তথ্য আমাদের কাছে চাইবে সে সকল ধরনের তথ্য দেওয়ার জন্য আমি বলে দিয়েছিলাম। কিন্তু কেন দেয়নি সেই বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি এখনি খোঁজ নিচ্ছি কেন তাদেরকে তথ্য দেওয়া হয়নি?
আশার আলো দেখছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা

প্রস্তাবিত ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তত্ত্বাবধানে একটি সমন্বিত কাঠামোর অধীনে চলবে ঢাবি অধিভুক্ত থাকা সাতটি সরকারি কলেজের কার্যক্রম। সাময়িক এই ব্যবস্থায় সাত কলেজের প্রশাসকের দায়িত্ব পেতে পারেন ঢাকা কলেজের সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর এ কে এম ইলিয়াস।
তবে ইতোমধ্যে তাঁর চাকরির নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ায় যে জটিলতা তৈরী হয়েছিলো সেটা নিরসনে পুনরায় তাঁকে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ পদে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত উল্লেখ করে গতকাল রবিবার (১৮ই মে) বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এ নিয়োগের মাধ্যমে তিনি সাত কলেজের জন্য গঠিত হতে যাওয়া সমন্বিত কাঠামোর প্রশাসকের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে মোতাবেক অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রধান দপ্তর হতে পারে ঢাকা কলেজে। খুব দ্রুতই সমন্বিত প্রশাসন এবং প্রশাসক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারির আশাবাদ ব্যাক্ত করছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
দাবি মেনে নিয়ে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রেক্ষিতে আপাতত নতুন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। একইসঙ্গে ৫ দফা দাবির বাকি দাবিগুলোর বিষয়েও নজর রাখা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
গতকাল রবিবার (১৮ই মে) সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলনের প্রতিনিধি মোঃ নাঈম হাওলাদারের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাত কলেজ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের সময়ক্ষেপণের প্রতিবাদে গতকাল শনিবার একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এখান থেকে ৫ দফা দাবি উল্লেখসহ ঝুলে থাকা অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রজ্ঞাপনের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রত্যক্ষ করছি, সরকার আমাদের দাবির বিষয়টি আমলে নিয়েছে। ইতিমধ্যে অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস স্যারকে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে আমরা জেনেছি।
এতে আরও বলা হয়, আমরা জানতে পেরেছি, আগামীকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অধ্যাপক ইলিয়াস স্যারকে সাত কলেজের অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রশাসক করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। যেহেতু সরকার আমাদের দাবির বিষয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে, সেহেতু আমরা আগামীকাল সোমবার (১৯ মে, ২০২৫ খ্রি.) কোনো কর্মসূচি রাখছি না। আমরা সম্পূর্ণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখছি। পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবো। একইসঙ্গে আমরা আমাদের ৫ দফা দাবির বাকি দাবিগুলোর বিষয়েও নজর রাখবো। সরকারের ইতিবাচক মনোভাবের জন্য ধন্যবাদ।
গবেষণা উৎসবের ব্যানারে ৯টি বানান ভুল, বিতর্কে পবিপ্রবি গবেষণা উৎসব

পবিপ্রবি প্রতিনিধি: পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘গবেষণা উৎসব - ২০২৫’। ১৮ মে (রবিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম আয়োজন করা হয় গবেষণা উৎসব। তবে উৎসব ঘিরে প্রশংসার চেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে বানান ভুলের মহোৎসব।
‘পবিপ্রবি রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার’-এর উদ্যোগে আয়োজিত এই উৎসবের ব্যানারে একসঙ্গে নয়টি বানান ভুল ধরা পড়ে, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। শেষ পর্যন্ত ব্যানার সরিয়ে ফেলেই অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে হয় আয়োজকদের।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের। তবে রাষ্ট্রীয় ব্যস্ততার কারণে তিনি শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে পারেননি, যদিও অনলাইনে যুক্ত ছিলেন তিনি।
অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. মামুন-উর-রশিদ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মাসুমা হাবিব, পবিপ্রবির প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান এবং সিনিয়র প্রফেসর মো. হামিদুর রহমান।
অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার সময় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের কনফারেন্স কক্ষে ব্যানার টানানো হয়। এরপর একে একে চোখে পড়ে একাধিক বানান ভুল। ব্যানারে 'Livestock'-এর পরিবর্তে লেখা হয় 'Live stock', থিম "Research for Coastal Resilience"-এ 'Coastal' এর জায়গায় লেখা হয় 'Costal'। আয়োজক প্রতিষ্ঠানের নাম ‘Research and Training Center (RTC), PSTU’ লিখতে গিয়ে করা হয় ‘Orgnaize’ এবং ‘Traning’ এর মতো স্পষ্ট বানান ভুল।
সবচেয়ে গুরুতর ভুল ছিল সভাপতির পদবিতে। রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. মামুন-উর-রশিদ ছিলেন সভাপতির দায়িত্বে, কিন্তু ব্যানারে তাঁকে ‘প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, পবিপ্রবি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এমন ভুল দেখে কেউ কেউ ধারণা করে বসেন যে হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর পরিবর্তন করা হয়েছে! এসব গুরুতর ভুলের কারণে ব্যানার সরিয়ে ফেলেই অনুষ্ঠান চালিয়ে যেতে বাধ্য হন আয়োজকরা।
অতিথিদের উপহারস্বরূপ দেওয়া ব্যাগেও বানান ভুল চোখে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের নিচে ‘পটুয়াখালী’ বানানেও ভুল করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী বলেন, “একটি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা উৎসবে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সিনিয়র শিক্ষক উপস্থিত, সেখানে এমন ভুল থাকলে তা আমাদের শিক্ষার মান নিয়েই প্রশ্ন তোলে।”
ব্যানার ছাড়া অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. মামুন-উর-রশিদ বলেন, “ব্যানারটি গতকাল রাত ১১টায় তৈরি করা হয়েছিল। এরপর আর চেক করা হয়নি। অনুষ্ঠানের শুরুতে ভুলগুলো চোখে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে ব্যানার সরিয়ে নিই এবং ব্যানার ছাড়া অনুষ্ঠান সম্পন্ন করি।”
এতসব ভুলের দায় আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে তিনি স্বীকার করে বলেন, “ব্যানার ছাড়া অনুষ্ঠান আয়োজন করা যদি লজ্জাজনক হয়, তবে এর পুরো দায় আমারই। আমি চেষ্টা করেছি, হয়তো আমার অসাবধানতাই এর জন্য দায়ী।”
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
রাবি শিক্ষার্থীর গবেষণায় উঠে এলো জুলাই অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের শিশু হত্যা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী মো. সাব্বির শেখের গবেষণায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের শিশু হত্যাকাণ্ডের বিবরণ উঠে এসেছে। যেখানে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত মোট ৮৯ শিশুকে নৃশংসতায় প্রাণ দিতে হয়েছে। নিহত শিশু-কিশোরদের সবার বয়স ৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্য।
মো. সাব্বির শেখ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। ইরান ভিত্তিক আন্তর্জাতিক জার্নাল 'জার্নাল অফ ইনজুরি এন্ড ভায়োলেন্স রিসার্চ' এ "Violence and Trauma towards Children and Adolescents in the July Mass Uprising (2024) in Bangladesh: A Socio-demographic Analysis of 89 Deaths" শিরোনামে তার এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। এটি ইরানের কেরমানশাহ ইউনির্ভাসিটি অফ মেডিকেল সায়েন্সেস থেকে প্রকাশিত ওপেন-একসেস পিয়ার-রিভিউড মেডিকেল জার্নাল।
গবেষণার সূত্রে জানা গিয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সর্বমোট ৮৯ জন শিশু-কিশোরকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের বয়স সীমা ছিল ৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে এবং গড় বয়স ছিল ১৫.২ বছর। ১৮ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ৫৬ জন মারা যায় এবং আহত ৩৩ জন মারা যায় ৫ আগস্টের পরে। এর মধ্যে ৫৮ জন মারা যায় ঢাকায় এবং বাকি ৩১ জন মারা যায় ঢাকার বাইরের ১৬ টি জেলায়। ৮৯ জন শিশু-কিশোরের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় ৭৯ জন, পুড়ে মারা যায় ৯ জন এবং একজনের মৃত্যু হয় স্প্লিন্টারের আঘাতে। এর মধ্যে ৪২ জন ছাত্র এবং ২৯ জন শিশুশ্রমের সাথে জড়িত ছিল। এই বিশ্লেষণে দেখা গেছে প্রায় ৯০ শতাংশ শিশু-কিশোর গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে, যা সশস্ত্র সংঘাতের তৎপরতা নির্দেশ করে এবং ঢাকা ছিল সহিংসতার কেন্দ্রস্থল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাব্বির বলেন, 'আমরা ফ্যাসিবাদী হাসিনার সহিংস কর্মকাণ্ড, হত্যাকাণ্ড, এবং জুলাই অভ্যুত্থান ও এর অবদানকে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বাঁচিয়ে রাখতে চাই। আমাদের এই গবেষণা তারই সামান্য একটা প্রয়াস মাত্র। তাছাড়া হাসিনা সরকারের ফ্যাসিবাদি শাসনকালে সংগঠিত অত্যাচার, সহিংসতা এবং ট্রামাটিক ঘটনা নিয়ে গবেষণা কাজ চলছে।'
গবেষণা পত্রটির অন্য এক অথর 'বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন' এর ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেন "শুনতে অবাক লাগলেও, আমরাই প্রথম যারা জুলাই নিয়ে ফুল রিসার্চ পেপার পাবলিকেশন করেছে"। এছাড়া এই গবেষণার কো-রেসপন্ডিং অথর হিসেবে ছিলেন বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো এস এম ইয়াসির আরাফাত।
বিএসসি নার্সদের উপর ডিপ্লোমাধারী নার্সদের অতর্কিত হামলার প্রতিবাদে বেরোবিতে বিক্ষোভ

বিএসসি নার্সদের উপর নার্সিং-এ ডিপ্লোমাধারী সহিংস আক্রমণ ও শ্লীলতাহানির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আজ রবিবার (১৮ মে) বিকাল ৪ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে প্রকৌশল অধিকার আন্দোলন, বেরোবির উদ্যোগে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় শিক্ষার্থী বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের প্রতি বৈষম্য নিরসন ও তিন দফা পেশ করেন। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে,
১) ইঞ্জিনিয়ারিং ৯ম গ্রেড/সহকারী প্রকৌশলী সমমান পদ এ প্রবেশের জন্য সবাইকে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ন হতে হবে এবং বি এস সি ডিগ্রিধারী হতে হবে।কোটার মাধ্যমে কোন পদোন্নতি নয়,এমনকি অন্য কোন নামেও সমমান পদ তৈরী করেও পদোন্নতি দেয়া যাবে না।
২) টেকনিক্যাল ১০ম গ্রেড /সাব এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার /সমমান পদ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে মানে ডিপ্লোমা ও বি এস সি সবাই নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।
৩) বি এস সি ডিগ্রিধারী ছাড়া কেউ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিবেচিত হবে না।
এ সময় মাহফুজ বলেন, ডিপ্লোমাধারী নার্সরা প্রতিনিয়ত অযৌক্তিক দাবি নিয়ে সড়ক মহাসড়ক অবরোধ করছে। যার ফলে জনগণের মধ্যে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। ডিপ্লোমা নার্সরা যে ৬ টি দাবি দিয়েছে তা শুধু অযৌক্তিক দাবি নয় যোগ্যতার অবমূল্যায়নের দাবিও। তাদের এই অযৌক্তিক দাবিকে অনেক সংগঠন যৌক্তিক বলে দাবি করেছে। বর্তমান প্রশাসন এই অযৌক্তিক কর্মকাণ্ড কে শক্ত হাতে প্রতিহত না করে নতজানু করছে। ২৪ পরবর্তী সময় সাম্যের ও যোগ্যতা ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করার উদাত্ত আহ্বান জানাই। আমরা এই দেশে যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়ন চাই।
আর এক শিক্ষার্থী বলেন, যদি যোগ্যতার মূল্যায়ন না হয় তাহলে দেশ কোন দিকে যাবে? কোন দিকে আগাবে? আমরা বৈষম্য নিরসনে জীবন দিয়েছি তারপরও যদি যোগ্যতার অবমূল্যায়ন অব্যাহত থাকে, প্রকৃত মেধাবীরা মূল্যায়ন না পায় তাহলে তারা কোথায় যাবে? ফলে অনেক মেধাবী দেশের বাইরে চলে যায় অপরদিকে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে যোগ্য লোকের সংকট রয়ে যায়। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করতে বিদেশ থেকে লোক আনতে হয়। ডিপ্লোমা নার্সরা সড়ক মহাসড়ক অবরোধ করে মেধা শূন্য শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করছে। তারা মেধাবী হলে এ রকম অনৈতিক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হতো না। দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান এ রকম অযৌক্তিক আন্দোলন শক্ত হাতে প্রতিহত করুন।
উল্লেখ্য যে, গত ১৩ই মে রাজশাহীতে বিএসসি নার্সদের উপর ডিপ্লোমা নার্সদের সহিংস আক্রমণের প্রতিবাদে সারাদেশে প্রকৌশলী, কৃষিবিদ ও নার্সরা এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
মন্তব্য