ইরানের হামলার ভয়ে দেশ ছেড়েছেন নেতানিয়াহু

ইরানে ভয়াবহ হামলা করেছে ইসরাইল। এতে বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে তেহরান। এবার সেই ভয়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে একটি অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি গণমাধ্যম। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে গ্রিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খবর ইরনা নিউজের।
ইসরাইলের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম নেতানিয়াহুর বিমানের একটি ছবি প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যায়, দুটি যুদ্ধবিমান তার বিমানের সঙ্গে ছায়াসঙ্গীর মতো রয়েছে এবং সেটি ইসরাইল অধিকৃত অঞ্চল ছেড়ে অজ্ঞাত গন্তব্যে যাচ্ছে।
পরবর্তীতে চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, সেই বিমানটি গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে অবতরণ করেছে।

শুক্রবার ইসরাইল রাজধানী তেহরানসহ ইরানের একাধিক শহরে ব্যাপক সামরিক হামলা চালায়। এসব হামলায় ইরানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন- ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাকেরি, ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)-এর চিফ কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি, খাতাম আল-আনবিয়া সদর দফতরের কমান্ডার মেজর জেনারেল গোলামআলি রাশিদ।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইরানের সামরিক বাহিনী প্রতিশোধের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্র।
ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ‘লক্ষ্যভিত্তিক হত্যা’ ও আগ্রাসনের কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইলের হামলাকে ‘চমৎকার’ হিসেবে প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে এখনো একটা চুক্তির সুযোগ আছে, না হলে দেশের অস্তিত্বই শেষ হয়ে যাবে।
এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরাইলকে কঠোর সতর্কতা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইরানের ওপর হামলা চালিয়ে শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ও ছয়জন পারমাণবিক বিজ্ঞানী হত্যার ‘অপরাধের’ জবাবে ইসরাইলকে ‘কঠোর শাস্তি’ ভোগ করতে হবে।
দুইজন মার্কিন সরকারি কর্মকর্তা এপি নিউজকে জানিয়েছেন, ইরানের ওপর ইসরাইলের হামলার পর এবং তেহরানের সম্ভাব্য পাল্টা আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক সম্পদ, বিশেষ করে যুদ্ধজাহাজ স্থানান্তর করছে।
দুঃসময়ে ইরানের পাশে রাশিয়া, ইসরায়েলকে কড়া বার্তা

ইরানে হামলা অগ্রহণযোগ্য ও উসকানিমূলক- এ কথা জানিয়েছে রাশিয়া। মস্কো বলেছে, ইসরায়েলের এই হামলা বিনাদোষে হয়েছে এবং এটা জাতিসংঘের সনদ লঙ্ঘন করেছে। সে সাথে পশ্চিমা দেশগুলোকেও দোষারোপ করেছে যে, তারা ইরানে বিদ্বেষ ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। খবর রয়টার্স।
রাশিয়া বলেছে, ইরানে হামলা চালিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা ও উত্তেজনা আরও বাড়াচ্ছে ইসরায়েল। অপর দিকে, ইরানে পরমাণু কর্মসূচিতে স্বচ্ছতা ও সমাধানে ওয়াশিংটন ও মস্কো যে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে, তা ব্যাহত হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছে ক্রেমলিন।
এদিকে ইসরায়েল শুক্রবার (১৩ জুন) দাবি করেছে যে, তারা ইরানে পারমাণিবিক স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ও সামরিক কমান্ড কেন্দ্রগুলোতে হামলা চালিয়েছে- যা তাদের ভাষায়, ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে নিবৃত্ত রাখার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।
রাশিয়ার ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকব জানিয়েছেন যে, রাশিয়া এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও নিন্দা জানাচ্ছে। পুতিনও রাশিয়ার পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থার (এসভার) সাথে ঘন ঘন কথা বলছেন ও বাস্তব তথ্য সংগ্রহ করছেন।
আরও পড়ুন
রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগে ইরানে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম হ্রাস ও তা বেসামরিক পরমাণু জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার উদ্যোগও নিয়েছে, যা ওয়াশিংটন ও তেহরানে আস্থা সৃষ্টি করার সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, রাশিয়া ও ইরান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘনিষ্ঠ হয়েছে। জানুয়ারিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান ২০ বছর মেয়াদে কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। তবে মস্কো চাইছে না যে, মধ্যপ্রাচ্যে আরও বড় ধরনের যুদ্ধে জড়িত হোক এবং সেই চুক্তিতে পারস্পরিক আত্মরক্ষার অঙ্গীকারও অন্তর্ভুক্ত নেই।
প্রেসিডেন্ট পুতিনের উদ্যোগে প্রকাশিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিস্তারিত বিবৃতিতে ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলোর আচরণের নিন্দা জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের সনদ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে যে বলপ্রয়োগ হয়েছে- তা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। নির্দোষ মানুষ, শান্তির শহর ও পরমাণু স্থাপনায় হামলা মানবতা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ, বলেছে রাশিয়া।
মস্কো বিশ্বাস করে যে, ইরানে পরমাণু কর্মসূচিতে পশ্চিমা সন্দেহ ও আতঙ্ক নিরসন করার একমাত্র পথ হলো কূটনীতি ও আলোচনা। আমরা সবাইকে আত্মসংযম প্রদর্শন করার ও মধ্যপ্রাচ্যকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে এগোতে না দেওয়ার আহ্বান জানাই, বলেছে রাশিয়া।
একই সাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্মরণ করিয়েছে যে, রোববার (১৫ জুন) ওমানে ওয়াশিংটন ও ইরানে অপর পরমাণু আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৩ জুন) ভোররাতে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী তেহরানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ব্যাপক হামলা চালায়। ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এই অভিযানে ইরানের পরমাণু স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা এবং সামরিক কমান্ড কেন্দ্রগুলো লক্ষ্যবস্তু ছিল।
এদিকে, ইরানে ইসরায়েলি হামলার পর নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। শুক্রবার ভোরে তেহরানে হামলার ঘটনায় এরই মধ্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সৌদি আরব, তুরস্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
জানা গেছে, ইরানে পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসরায়েল বছরের পর বছর ধরে কাজ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ইরানে একটা ড্রোন ঘাঁটি তৈরি ও নির্ভুল অস্ত্র ব্যবস্থা ও কমান্ডো পাচার।
ইসরায়েলের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা টাইমস অফ ইসরায়েলকে বলেন, মোসাদ এজেন্টরা তেহরানের কাছে সেই ঘাঁটি স্থাপন করেছিলেন।
ড্রোনগুলো রাতারাতি সক্রিয় করা হয়, এর পর পরই ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ভূমিতে স্থাপন করা ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চারগুলোতে আঘাত হানে। এর ফলেই ইরান তাৎক্ষণিক পাল্টা হামলা চালাতে পারবে না এবং তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনেকটাই ধ্বংস হয়ে যায়।
ইরানে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৭৮ জন নিহত ও আহত হয়েছেন ৩২৯ জন। দেশটির রেভল্যুশনারি গার্ড পরিচালিত নিউজ এজেন্সি ফার্সের বরাতে তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাস্তবে হামলায় নিহত ও আহতের সংখ্যা আরও বেশি।
ইরান-ইসরাইল সংঘাত: কোন দেশ কার পক্ষে?

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ইসরাইলকে সমর্থন জানিয়েছে। রাশিয়া, লেবাননসহ বেশ কয়েকটি দেশ ইরানের পক্ষ নিয়েছে।
এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যে একের পর এক উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে এগুলো বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
ইরানের হামলায় ক্ষুব্ধ হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। ইরানকে ‘কঠিন পরিণতি’ ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে পেন্টাগন। তেহরানকে মোকাবিলায় তেল আবিবকে পূর্ণ সমর্থনের পাশাপাশি ইসরাইলের প্রতিরক্ষা নিশ্চিতে প্রত্যক্ষ সহায়তার কথা জানিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।
ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। একইসঙ্গে, তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের প্রশংসা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ।
তিনি বলেন,
ইরানের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আমরা উদ্বিগ্ন, যে কারণে নিন্দা জানাচ্ছি। এটা ভালো খবর যে, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে গঠিত ইসরাইলের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কারণে বেসামরকি নাগরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এছাড়া ইসরাইলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কঠোর সমালোচনা করেছে যুক্তরাজ্য, স্পেন, ইউরোপীয় কমিশনও।
এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াও ইসরাইলকে সমর্থন জানিয়ে ইরানের হামলার সমালোচনা করেছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ‘অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমানোর প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছেন জাপানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট শিগেরু ইশিবা।
এদিকে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের ‘প্রতিশোধমূলক’ হামলায় সমর্থন জানিয়েছে রাশিয়া। তেহরানের এ হামলা নেতানিয়াহু সরকারের ক্রমাগত অপরাধ ও ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার প্রতিক্রিয়া ছিল বলে উল্লেখ করেছে মস্কো। একইসঙ্গে, মধ্যপ্রাচ্যে বাইডেন প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে বলেও সমালোচনা করেছে রাশিয়া।
এছাড়াও, লেবানন, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসসহ বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী ও গাজাবাসী তেহরানকে সমর্থন জানিয়েছে। তবে, বরাবরের মতোই চুপ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বাকি মুসলিম দেশগুলো।
উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যে অনেকদিন ধরেই ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে সবর বিশ্ব রাজনীতি। তেহরান-মস্কো সত্যিই কি ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়াবে?- এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মঙ্গলবার রাতে ইসরাইলি ভুখণ্ড লক্ষ্য করে প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে ইরান। এ ঘটনা টনক নাড়িয়ে দিয়েছে বিশ্ব নেতাদের।
ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ও আইআরজিসির নতুন প্রধান নিযুক্ত

তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের সেনাবাহিনীর প্রধান হোসেইন বাকেরি এবং ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি। তাদের মৃত্যুর পর গুরুত্বপূর্ণ এসব পদে দুই র্শীষ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
এর মধ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর কমান্ডার মেজর জেনারেল আবদুর রহিম মুসাভিকে নতুন সেনাপ্রধান এবং আইআরজিসির স্থল বাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ পাকপুরকে আইআরজিসির নতুন কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ জুন) পৃথক ডিক্রিতে এই দুই কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে দেশটির দুই র্শীষ বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন আয়াতুল্লাহ খামেনি।
ডিক্রিতে ইসরায়েলের হামলায় নিহত মেজর জেনারেল বাকেরির ও মেজর জেনারেল সালামির প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং নতুন কমান্ডারের যোগ্যতা এবং মূল্যবান অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। এছাড়া ইসরায়েলের হামলার জবাব দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি এবং সক্ষমতা ক্রমাগত বৃদ্ধির জন্য নতুন কমান্ডারের জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে শুক্রবার ভোরের দিকে রাজধানী তেহরানসহ ইরানের বিভিন্ন এলাকায় সামরিক ও পারমাণবিক অবকাঠামোর ওপর হামলা চালায় দখলদার ইসরায়েল। এর মধ্যে তেহরানের বিভিন্ন আবাসিক ভবন লক্ষ্য করা হয়। এতে অনেক সাধারণ নাগরিক প্রাণ হারান এবং দেশটির উচ্চপর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তারা নিহত হন।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন- দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান হোসেইন বাকেরি, ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি, খাতামু আম্বিয়া সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টারের কমান্ডার মেজর জেনারেল গোলাম আলি রশিদ এবং দুই পারমাণবিক বিজ্ঞানী মোহাম্মাদ মাহদি তেহরাঞ্চি ও ফেরিদুন আব্বাসি উল্লেখযোগ্য।
এদিকে ইরানজুড়ে সামরিক ও পারমাণবিক অবকাঠামোর ওপর ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলার জবাবে ইসরায়েলের দিকে প্রায় ১০০টি ড্রোন ছুঁড়েছে তেহরান। তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করেছে, ইসরায়েলের দিকে ছোঁড়া সব ইরানি ড্রোন সফলভাবে ভূপাতিত করা হয়েছে।
সূত্র: তাসনিম নিউজ
যতদিন প্রয়োজন ততদিনই ইরানে হামলা অব্যাহত রাখব: নেতানিয়াহু

ইরানের রাজধানী তেহরান এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থিত পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। রাতভর চালানো এই হামলায় দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি ও রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান জেনারেল হোসেইন সালামিসহ আরও অনেকেই নিহত হয়েছেন।
তবে এই হামলা এখানেই শেষ নয়। যতদিন প্রয়োজন হবে, ততদিন ইসরায়েল আক্রমণ অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। শুক্রবার (১৩ জুন) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, “এই হামলা ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির কেন্দ্রে আঘাত হেনেছে।”
বিবিসি বলছে, রাজধানী তেহরান থেকে ২২৫ কিলোমিটার দক্ষিণের শহর নাতাঞ্জে হামলা চালানোর কথা জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। এটিকে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মূল এলাকা হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “ইরানি বোমা বানানোর সঙ্গে জড়িত” বিজ্ঞানীরা তাদের নিশানায় রয়েছেন। নেতানিয়াহুর ভাষায়, “যতদিন প্রয়োজন, ততদিন এ আক্রমণ অব্যাহত থাকবে।”
এদিকে ইরানে হামলার পরপরই নিজ দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছে ইসরায়েলি সরকার। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “খুব শিগগিরই ইসরায়েলের ওপর পাল্টা হামলা” চালাতে পারে ইরান।
এছাড়া ইরানের ওপর যখন হামলা চালানো হয় ইসরায়েলের মানুষ তখন ঘুমাচ্ছিলেন। জেরুজালেমে অবস্থানরত একজন বিবিসি সংবাদদাতা জানিয়েছেন, সাইরেনের বিকট শব্দে এবং মোবাইলে জরুরি সতর্কবার্তা পেয়ে তারা জেগে ওঠেন।
অন্যদিকে সিএনএন বলছে, শুক্রবার ভোরে ইরানে হামলা চালানোর পর সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক আক্রমণের আশঙ্কায় ইসরায়েল সরকার নাগরিকদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে এবং নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
আরও পড়ুন
ইসরায়েলের হোম ফ্রন্ট কমান্ডের প্রধান মেজর জেনারেল রাফি মিলো বলেন, “এই অভিযান চলাকালে আমরা দেশে ব্যাপক সতর্কতা সংকেত বা সাইরেন বাজতে দেখতে পারি। তাই প্রত্যেক নাগরিককে অনুরোধ করছি— নিজ নিজ অবস্থান থেকে দ্রুত ও যথাসম্ভব সুরক্ষিতভাবে আশ্রয় নিতে।”
তিনি আরও বলেন, “আপনার বাসাবাড়িতে বা যে স্থানে আছেন, সেখানে যদি সুরক্ষিত কক্ষ, বাংকার বা হোম ফ্রন্ট কমান্ড অনুমোদিত নিরাপদ স্থান থাকে, তাহলে সেগুলোতে আশ্রয় নিন। তা না হলে অন্তত ভবনের সিঁড়িঘরে বা ভেতরের কোনও কক্ষে অবস্থান করুন।”
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী ও সরকার আগেই মনে করছিল, ইরানের পাল্টা হামলা যে কোনও সময় শুরু হতে পারে। তাই নাগরিকদের জন্য আগে-ভাগেই এই নির্দেশনা জারি করা হয়।
মন্তব্য