পাকিস্তানে হামলার যে ব্যাখ্যা দিলো ভারত

পাকিস্তানে বিমান হামলা চালানোর পক্ষে শক্ত যুক্তি তুলে ধরেছে ভারত। কাশ্মীরে বন্দুক হামলার ঘটনায় দুই দেশের চলমান উত্তেজনার এক পর্যায়ে মঙ্গলবার (৬ মে) গভীর রাতে ‘অপারেশন সিঁন্দুর’ নামে পাকিস্তানে অভিযান চালিয়েছে ভারত। খবর হিন্দুস্তান টাইমস
বুধবার (৭ মে) এ হামলার পর কথা বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের অবকাঠামোতে ভারতের হামলা ঠেকাতে পাকিস্তান ব্যর্থ হয়েছে। ২২ এপ্রিল পেহেলগামে হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহতের ঘটনায় এ হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একটি রেসিট্যান্স ফ্রন্ট পেহেলগামে হামলার দায় স্বীকার করেছে। এই সংগঠনটির সঙ্গে পাকিস্তানে নিষিদ্ধ ঘোষিত গোষ্ঠী লঙ্কর-ই-তৈয়েবার সম্পর্ক রয়েছে। এর মাধ্যমেই বোঝা যায় কাশ্মীরে হামলায় পাকিস্তানের যোগসূত্র রয়েছে।
মিশ্রি বলেন, ‘বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য ও বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ সত্ত্বেও পাকিস্তান তাদের ভূখণ্ড থেকে পরিচালিত সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলোর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পাকিস্তান বিশ্বের কাছে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে একটি পরিচিতি তৈরি করেছে।’
আরও পড়ুন
এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারত ২০২৪ সালের মে এবং নভেম্বর মাসে জাতিসংঘের ১২৬৭ নিষেধাজ্ঞা কমিটির মনিটরিং টিমকে ওই রেসিট্যান্স ফ্রন্টের সম্পর্কে তথ্য দিয়েছিল এবং বলা হয়েছিল এটি পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ভারত মনিটরিং টিমকে জানিয়েছিল যে লস্কর ও জইশ-ই-মোহাম্মদ, দ্য রেসিট্যান্স ফ্রন্টের মতো ছোট সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে কাজ করছে। পরতীতে ওই বছরের ২৫ এপ্রিল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রেস বিবৃতিতে টিআরএফ’র কার্যক্রম বন্ধে পাকিস্তানকে চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানায়।
মিশ্রি আরও বলেন, পেহেলগামে হামলা পর তদন্তে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা উঠে এসেছে। কারণ এই গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে পাকিস্তান যোগাযোগ রক্ষা করেছিল। পরবর্তীতে রেসিট্যান্ট ফ্রন্টের দায় স্বীকার এবং লস্কর-ই-তৈয়বার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টগুলোতে অনেক বিষয় স্পষ্ট হয়।
মিশ্রি উল্লেখ করেন, জম্মু ও কাশ্মীরসহ ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দেওয়ার উদ্দেশ্যে পেহেলগামে হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই গোষ্ঠীগুলো আরও হামলার পরিকল্পনা করছে। এজন্য তাদের থামাতে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে।
ভারত দাবি করেছে, তারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মোহাম্মদ এবং হিজবুল্লাহ মুজাহিদীন গোষ্ঠীর ওপর অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে।
যুদ্ধ শুরু করেছে ভারত, শেষ করবে পাকিস্তান: জামায়াত

কাশ্মীরের পেহেলগাম হামলার জেরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত। মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে পাকিস্তানের ছয়টি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। এতে অন্তত ২৬ জন নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন। পাল্টা জবাবে রাতেই পাকিস্তানও হামলা চালায়।
এই উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির সিরাজ-উল-হক ভারতকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ শুরু করেছে ভারত, কিন্তু এর শেষ করবে পাকিস্তান।’ তিনি পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর তাৎক্ষণিক জবাবের প্রশংসা করে বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গোটা জাতি সেনাবাহিনীর পাশে রয়েছে।
সিরাজ-উল-হক বলেন, পাকিস্তান শান্তি চায়। তবে জাতীয় স্বার্থে কোনো আগ্রাসন বরদাশত করা হবে না। ভারতের উসকানিমূলক পদক্ষেপ তাদের নিজেদের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাতে ভারতের সেনাবাহিনী কোটলি, বাহাওয়ালপুর, বাগ, মুরিদকে এবং মুজাফফরাবাদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, এ হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। পাকিস্তান একে ‘কাপুরুষোচিত’ হামলা আখ্যা দিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানায়।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জানিয়েছেন, জবাবে পাকিস্তান অন্তত পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে রাফায়েল ও এসইউ-৩০ মডেলের যুদ্ধবিমান। পাশাপাশি পাকিস্তানি সেনারা সীমান্তবর্তী ভারতের একটি ব্রিগেড সদর দপ্তর এবং নিয়ন্ত্রণরেখার দুদনিয়াল সেক্টরে একটি তল্লাশি চৌকি ধ্বংস করেছে বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ।
এদিকে এই সামরিক উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ভারতের আচরণকে ‘লজ্জাজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন।
সূত্র: জিও নিউজ
পাক-ভারত সংঘাত
ভারতের পাশে ইসরায়েল, পাকিস্তানের পাশে তুরস্ক!

কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে ৯টি স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে ভারত। ভারতের এই সামরিক অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিন্দুর’। হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রকাশ্যে আসে ইসরায়েলের সমর্থন।
বুধবার (৭ মে) এক্স-এ (সাবেক টুইটার) বার্তায় ভারতে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রেউভেন আজার বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের জানা উচিত, তাদের জঘন্য অপরাধের জন্য কোনো নিরাপদ আশ্রয় নেই। ইসরায়েল ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে।’
মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত রাতে চালানো এই হামলার প্রেক্ষাপট তৈরি হয় প্রায় দুই সপ্তাহ আগে। কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত, যদিও ইসলামাবাদ তা সরাসরি অস্বীকার করেছে। এমনকি ভারতীয় রাজনীতিতেও এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিরোধী দল কংগ্রেসের দাবি, হামলার তিন দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল।
নিউজ১৮ জানিয়েছে, ভারতীয় সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যানুযায়ী সুনির্দিষ্টভাবে সন্ত্রাসী ঘাঁটি লক্ষ্য করেই এই হামলা চালানো হয়। পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনায় কোনো হামলা হয়নি বলেই দাবি নয়াদিল্লির।
ইসরায়েল ভারতের পাশে দাঁড়ালেও ভিন্ন সুরে কথা বলেছে তুরস্ক। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দারকে ফোন করে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এই হামলাকে ‘অপ্রস্তুত আগ্রাসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তুরস্ক এবং পাকিস্তানের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। দুই দেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখবে বলে জানানো হয়।
আরও পড়ুন
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে এই অভিযান ঘিরে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে চালানো ভারতের এই সামরিক অভিযান নিয়ে মহাসচিব গভীর উদ্বিগ্ন। তিনি উভয় দেশকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।’
এদিকে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা এইমাত্র এর খবর পেয়েছি। ভারত-পাকিস্তান বহু দশক ধরে লড়াই করছে। আশা করি পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত হবে।’
পাকিস্তানের পাঞ্জাবে জরুরি অবস্থা জারি, বন্ধ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

পাকিস্তানের জনবহুল প্রদেশ পাঞ্জাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এলো এমন ঘোষণা। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খবর রয়টার্সের।
বুধবার (৭ মে) পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ শরিফ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। এছাড়া হাসপাতালসহ জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ভারতের হামলার নিন্দা জানান মরিয়ম নওয়াজ শরিফ। তিনি বলেন, জনগণ পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত হয়তো এটা (হামলা) শুরু করেছে, কিন্তু আমরা এটা শেষ করব।
পাকিস্তান শান্তি চায় উল্লেখ করে মরিয়ম নওয়াজ শরিফ বলেন, আমরা শান্তি চাই, তবে সেটা সম্মানের সঙ্গে। যদি যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়, তবে পুরো দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি শক্তিতে পরিণত হবে।
পাঞ্জাবের এ মুখ্যমন্ত্রী জানান, সব চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের ছুটি বাতিল করা হচ্ছে এবং বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মীদের নিজ নিজ দায়িত্বে ফেরত আসতে বলা হচ্ছে।
আরও পড়ুন
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে হামলা নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সেনা মুখপাত্র লেফটেনান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী জানিয়েছেন, ভারত তার দেশের ছয়টি জায়গায় ২৪টি স্থাপনায় বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ভাওয়ালপুরের আহমেদপুর শারকিয়া, মুরদিক, শিয়ালকোট এবং শকরগড় ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মিরের কোটলি ও মুজফ্ফরাবাদে এইসব হামলা হয়েছে।
এদিকে, ভারত সরকার দাবি করেছে যে তারা পাকিস্তানের নয়টি জায়গায় হামলা চালিয়েছে এবং কোনও ক্ষেত্রেই পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনা তাদের লক্ষ্যবস্তু ছিল না।
এসব হামলায় অন্তত ৮ জন নিহত এবং ৩৫ জন আহত হয়েছেন। এর জবাবে রাতেই পাল্টা হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত ভারতের পাঁচটি আকাশযান, যার মধ্যে রয়েছে– তিনটি রাফাল, একটি এসইউ-৩০, একটি মিগ-২৯ এবং একটি হেরন ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে।’
পাক-ভারত যুদ্ধের পূর্বাভাস ৬ বছর আগেই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণায়

ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র—ভারত ও পাকিস্তান। রাতের আঁধারে একে অপরের সীমান্তে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে দেশ দু’টি। মঙ্গলবার (৫ মে) দিবাগত মধ্যরাতে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীর ও দেশটির মূল ভূখণ্ডের অন্তত নয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। এ হামলা পর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করা হয়েছে। দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জানান, ভূপাতিত করা যুদ্ধবিমানের মধ্যে তিনটি ফ্রান্সের তৈরি রাফাল, একটি রাশিয়ার তৈরি সু-৩০ ও অন্যটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান। সু-৩০ ও মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান সোভিয়েত আমলে তৈরি।
এবছর পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধার সম্ভাবনার কথা ২০১৯ সালে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা সংস্থা। সংবাদমাধ্যম বিবিসি গবেষণাটির খবর প্রকাশ করে। ওই খবরে ভারতের পার্লামেন্টে হামলা অথবা কাশ্মীরে হামলা মাধ্যমে দুদেশের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধ শুরু হতে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়। গবেষণা অনুসারে, যুদ্ধ শুরু হলে প্রথম ধাক্কায় সাড়ে ১২ কোটির বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে, পরে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে আরও বহু কোটি মানুষ অনাহারে প্রাণ হারাতে পারে।
‘পারমাণবিক বোমার ফলে আগুন লেগে যাবে, সেই আগুন থেকে যে পরিমাণ ধোঁয়া তৈরি হবে সেটা ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীতে। এই ধোঁয়ার কারণে আমাদের এই গ্রহে সূর্যের আলোও ঠিক মতো এসে পৌঁছাতে পারবে না। ফলে পৃথিবী অনেক ঠাণ্ডা আর অন্ধকারময় হয়ে পড়বে।’
সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা এবং গতরাতে পাল্টাপাল্টি বিমান হামলার পর বিষয়টি আবারো সামনে আসে। সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন নেটিজেনরা।
বিসিসি বাংলার প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো-
যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, কাশ্মীর বিরোধের জের ধরে ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিক যুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। গবেষকরা বলছেন, এর ফলে জলবায়ুর ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়বে তাতে অনাহারে মারা যাবে আরো বহু কোটি মানুষ। এরকম এক বিপর্যয়ের ধারণা দিতে গিয়ে বলা হচ্ছে, ২০২৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর এই দুটো দেশের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। আমেরিকার রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এসব আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
এই যুদ্ধ কীভাবে শুরু হবে তার কিছু সিনারিও বা কাল্পনিক দৃশ্যও গবেষকরা তৈরি করেছেন।
দৃশ্য-কল্প ১:
ভারতীয় পার্লামেন্টে বোমা হামলা চালাবে একজন সন্ত্রাসী। নিহত হবেন ভারতীয় নেতারা। জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের ভেতরে প্রবেশ করে আক্রমণ চালাবে। নিজেদের রক্ষার্থে পারমানবিক বোমা ব্যবহার করবে পাকিস্তান। এরপর ভারতও তাদের পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করবে। দুটো দেশই তখন তাদের কাছে যতো পরমাণু অস্ত্র আছে সেসব নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হবে।
দৃশ্য-কল্প ২:
কাশ্মীরে আক্রমণ করবে ভারত। তার পর শুরু হয়ে যাবে পারমাণবিক যুদ্ধ। তবে উভয় দেশে যদি বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন নেতারা ক্ষমতায় থাকেন তাহলে হয়তো এরকম কিছু হবে না, এবং একারণেই এখনও পর্যন্ত সেরকম কিছু হয়নি। কিন্তু এরকম আরো নানা রকমের কাল্পনিক দৃশ্য তৈরি করা যায় যার ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. অ্যালান রোবোক, যিনি এই গবেষণার সাথে যুক্ত ছিলেন, বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘ভারত ও পাকিস্তান তাদের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার বাড়িয়ে চলেছে। শুধু সংখ্যার বিচারেই নয়, এসব অস্ত্রের বিস্ফোরণের শক্তিও তারা ক্রমাগত বৃদ্ধি করছে। ফলে তাদের আশঙ্কা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেই এই যুদ্ধের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।’
যুদ্ধের এসব দৃশ্য-কল্প কিভাবে তৈরি করা হয়েছে? এসব কী নিছকই কিছু নাটক?
গবেষক অ্যালান রোবোক বলছেন, কিছু পেশাজীবীকে নিয়ে তারা ওয়ার্কশপ করেছেন যেখানে এসব সম্ভাব্য কারণের কথা উঠে এসেছে।
"ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়া কয়েকজন জেনারেলকে আলাদা আলাদা দুটো কক্ষে বসিয়ে দেওয়া হয়। এক পক্ষকে বলা হয় যেসব কারণে যুদ্ধ হতে পারে তার কিছু ধারণা দিতে। তার পর সেগুলো অন্য আরেকটি কক্ষে অপর গ্রুপের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় সেরকম কিছু হলে তারা কী করবেন? এরকম আলোচনার ভিত্তিতেই এসব সিনারিও তৈরি করা হয়েছে।"
তবে তিনি বলেন, "এগুলো কিছু দৃশ্য-কল্প। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়তো কিছু হয় না। নেতারা ঠাণ্ডা মাথায় সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখেন। কিন্তু কখনো কখনো পরিস্থিতি তো নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেতে পারে!"
কেন ২০২৫?
গবেষণা প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, ২০২৫ সালেই যুদ্ধে জড়াতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার চির-বৈরি দুটো দেশ: ভারত ও পাকিস্তান। যুদ্ধের এই সময় কীভাবে নির্ধারণ করা হলো? অধ্যাপক রোবোক বলছেন, ভবিষ্যৎ থেকে তারা শুধু একটি বছরকে বেছে নিয়েছেন। ‘এই যুদ্ধ যেকোনো সময়ে লাগতে পারে, হতে পারে আগামীকালও। ভবিষ্যতের ব্যাপারে কোন তথ্য থাকে না। কখন কী হবে সেটাও কেউ বলতে পারে না। সেকারণে আমরা কিছু দৃশ্য-কল্প ব্যবহার করেছি কী হতে পারে সেটা বোঝার জন্যে। সেই সম্ভাবনার কথা চিত্রিত করতে আমরা শুধু একটা সময়কে বেছে নিয়েছি।’
আসলেই কি ২০২৫ সালে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হতে পারে?
ভারতীয় সেনা বাহিনীর একজন সাবেক কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জি বলছেন, এই গবেষণা একেবারেই কাল্পনিক, যার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। ‘লোকেরা ভাবছেন দুটো দেশের আণবিক বোমা আছে, তাদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো নয়, তার মানে পাঁচ ছ'বছর পর তাদের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যাবে।’ তবে তিনি বলেন, ২০২৫ সালে না হলেও যেকোনো সময় এই দুটো দেশের মধ্যে যুদ্ধ হতে পারে।
১৯৯৮ সালে ভারত ও পাকিস্তান আণবিক বোমা পরীক্ষা চালিয়েছে। এর পরে গত ১১ বছর চলে গেছে। এর মধ্যে কারগিল যুদ্ধ হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেসময় এবং তার পর থেকে কখনোই আণবিক বোমা ব্যবহারের কথা উঠেনি। ‘কোন দেশ ইচ্ছে করে কিছু করতে চায় না। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত বিভিন্ন কারণে - যেমন ভয়ে, রাগে অনেক সময় অনেক কিছুই হয়ে যায়,’ বলেন দীপঙ্কর ব্যানার্জি।
এই গবেষণার সাথে একমত প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানে কায়দে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরমাণু বিজ্ঞানী ড. পারভেজ হুডভাই। তিনি বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধের সম্ভাবনা সবসময়ই আছে।
‘কোন পরিকল্পনা থেকে নয়, বরং দুর্ঘটনাবশতই এরকম যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। দুটো দেশের মধ্যে যদি অনন্তকাল ধরে উত্তেজনা বিরাজ করে, এবং তাদের কাছে পরমাণু অস্ত্র থাকে, তাহলে তো অনেক কিছুই ঘটতে পারে।’
উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘কাশ্মীরের পুলওয়ামার পর বালাকোটে যা হয়েছে, পাকিস্তান এর আরো কঠোর জবাব দিতে পারতো। তখন ভারতও কিছু একটা করতো। এরকম একের পর এক ঘটনায় উত্তেজনা এতোটাই ছড়িয়ে পড়তে পারতো যে পারমাণবিক যুদ্ধও শুরু হয়ে যেতে পারতো।’
‘শীতল যুদ্ধের সময় যা হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তানের বিরোধ তার চাইতেও খারাপ। আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে কয়েক হাজার মাইলের দূরত্ব কিন্তু ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্ত একই, যেখানে প্রায় প্রতিদিনই একে অপরকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়, ফলে উত্তেজনা শীতল যুদ্ধের চাইতেও বেশি।’
কারণ কাশ্মীর?
গবেষক অ্যালান রোবোক বলেন, ‘শুধু ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নয়, হতে পারে ভারত ও চীনের মধ্যেও। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে হওয়ারও অনেক কারণ আছে। তবে আমরা ভারত ও পাকিস্তানকে বেছে নিয়েছি, কারণ কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে এ-দুটো দেশের মধ্যে অব্যাহত বিরোধ চলছেই। সামরিক যুদ্ধে জড়ানোর অতীত ইতিহাসও তাদের রয়েছে।’
তবে পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানী মি. হুডভাই মনে করেন, অন্যান্য কারণ থাকলেও কাশ্মীরই হবে প্রধান কারণ।
‘কাশ্মীরের পরিস্থিতি যতোই শান্ত করা যাবে, পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকিও ততোটা কমে আসবে। দুর্ভাগ্যজনক হলো সেরকম কিছুই হচ্ছে না। এছাড়াও পরিবেশগত কিছু পরিবর্তনও পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে দিতে পারে।’
‘পাকিস্তানের বেশিরভাগ পানি আসে হিমালয় থেকে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমালয়ের সব হিমবাহ গলে উধাও হয়ে গেলে কাশ্মীর পাকিস্তানের জন্যে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে পানির উৎসের জন্যে। এনিয়ে যদি সমঝোতা না হয় তাহলে তো যুদ্ধের আশঙ্কাও বেড়ে যায়।’
সাবেক ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ব্যানার্জি বলছেন, সন্ত্রাসবাদের মতো আরো কিছু ইস্যুও যুদ্ধের কারণ হতে পারে। ‘২০০৮ সালে পাকিস্তান থেকে সন্ত্রাসীরা এসে মুম্বাই-এ আক্রমণ করেছিল। এরকম আক্রমণ আবারও হলে তখন পরিস্থিতি অন্য রকমের হয়ে যেতে পারে।’
‘পরমাণু অস্ত্র যখন আছে তখন পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কাও আছে। ইতোমধ্যেই এরকম একটি যুদ্ধ হয়ে গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমায় পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল, যা থেকে আমরা ভবিষ্যতেও এরকম যুদ্ধের আশঙ্কা করতে পারি।’ ভারতের সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জিও বলছেন, কোথায় পরমাণু যুদ্ধ শুরু হবে এটা কেউই বলতে পারে না।
তিনি মনে করেন, পানির কারণেও এই যুদ্ধ হতে পারে। "১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল তাতে দুটো দেশের কেউই খুশি নয়। যখন উভয়পক্ষ সমান সমান অখুশি হয় তখন মেনে নিতে হয় যে আমি যদি আরো বেশি খুশি হতে চাই তাহলে আমার প্রতিপক্ষ আরো বেশি অখুশি হবে। তখন যুদ্ধের সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।"
সুইডিশ একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের হিসেবে পাকিস্তানের ১৬০টি আর ভারতের আছে ১৫০টির মতো পারমাণবিক বোমা। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা বলছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান ৪০০ থেকে ৫০০ পারমাণবিক অস্ত্র মজুত করে ফেলবে।
ইসলামাবাদে কায়দে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরমাণু বিজ্ঞানী মি. হুডভাই বলছেন, এই দুটো দেশের মধ্যে পরমাণু অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বেড়েই চলেছে।
"যদিও এসব তথ্য অত্যন্ত গোপনীয় তারপরেও ধারণা করা হয় যে পাকিস্তানের কাছে হয়তো দশ/বিশটি বেশি বোমা আছে। ভারতের এখন পারমাণবিক ডুবোজাহাজও আছে। পাকিস্তানও এরকম ডুবোজাহাজ নির্মাণ করছে। ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এসব অস্ত্র নিক্ষেপের ক্ষমতা ও সংখ্যা দুটো দেশেরই বৃদ্ধি পাচ্ছে।"
অন্য কোথাও?
পারমাণবিক অস্ত্র আছে বিশ্বের মোট ন'টি দেশের। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র এই অস্ত্র তৈরি করে, তার পরে আজকের রাশিয়া। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীনেরও পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। কাকতালীয় হলেও এই পাঁচটি দেশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য।
এর বাইরে ভারত, পাকিস্তান, ইসরায়েল এবং উত্তর কোরিয়ারও পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করেছে।
রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যালান রোবোক বলছেন, পরমাণু শক্তিধর এসব দেশের যেকোনো দু'টোর মধ্যেই পরমাণু যুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আবার পরমাণু শক্তিধর একটি দেশ এমন আরেকটি দেশে আক্রমণ করতে পারে যাদের পরমাণু অস্ত্র নেই।"
‘পরমাণু অস্ত্র যখন আছে তখন পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কাও আছে। ইতোমধ্যেই এরকম একটি যুদ্ধ হয়ে গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমায় পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল, যা থেকে আমরা ভবিষ্যতেও এরকম যুদ্ধের আশঙ্কা করতে পারি।’ ভারতের সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জিও বলছেন, কোথায় পরমাণু যুদ্ধ শুরু হবে এটা কেউই বলতে পারে না।
‘চীনের পরমাণু অস্ত্র আছে, জাপানের নেই। কিন্তু তাদের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক নয়। তাদের মধ্যে অনেক রকমের উত্তেজনা আছে। আমেরিকা জাপানকে বলেছে, চীন যদি তোমাদের আণবিক অস্ত্র দিয়ে ভয় দেখাতে চায় তাহলে আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। তাদের মধ্যে সেরকম চুক্তিও আছে। তাই এই নয়টি দেশের বাইরেও পারমাণবিক যুদ্ধ হতে পারে।’
‘মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ছাড়া এখনও পর্যন্ত অন্য কোন দেশের আণবিক বোমা নেই। ইরানের আরো সময় লাগবে। তার পরেও আমেরিকা, রাশিয়া যদি এই লড়াই-এ মিশে যায় তাহলেও আণবিক বোমার ব্যবহার হতে পারে।’
যুদ্ধ হলে কী হবে?
গবেষক অ্যালান রোবোক বলছেন, এর আগেও বেশ কয়েকবার পারমাণবিক যুদ্ধ লেগে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। ‘ভবিষ্যতে কী হবে সেটা তো আমি বলতে পারবো না। আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান যে গত ৭৪ বছরে এই বোমা আর ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু পারমাণবিক অস্ত্রের অস্তিত্বের অর্থ হচ্ছে এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে। আমরা যদি এসব ব্যবহার না করি, এগুলো ব্যবহারের যদি যৌক্তিক কোন কারণ না থাকে, তাহলে এসব ধ্বংস করে ফেলা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে জাতিসংঘে পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধে একটি চুক্তি সই হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত ৩২টি দেশ এই চুক্তি অনুমোদন করেছে। ৫০টি দেশ অনুমোদন করলেই এটি কার্যকর হবে। তাই এখন বাকি বিশ্বের এগিয়ে আসা উচিত।’
গবেষকরা বলছেন, পারমাণবিক বোমা যেখানে পড়বে, শুধু সেখানকারই মানুষই নয়, পুরো বিশ্বের জন্যেই সেটা হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
জলবায়ু বিজ্ঞানী অ্যালান রোবোক বলছেন, ‘পারমাণবিক বোমার ফলে আগুন লেগে যাবে, সেই আগুন থেকে যে পরিমাণ ধোঁয়া তৈরি হবে সেটা ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীতে। এই ধোঁয়ার কারণে আমাদের এই গ্রহে সূর্যের আলোও ঠিক মতো এসে পৌঁছাতে পারবে না। ফলে পৃথিবী অনেক ঠাণ্ডা আর অন্ধকারময় হয়ে পড়বে।’
‘ধোঁয়া যখন পৃথিবীর আরো ওপরের আবহমণ্ডলে চলে যাবে তখন সেটা সূর্যের আলোতে উত্তপ্ত হয়ে আরো বেশি ছড়িয়ে পড়বে যা সেখানে স্থায়ী হবে কয়েক বছর। বৃষ্টিপাত কমে যাবে। তেজস্ক্রিয়তার ঘটনা ঘটবে। এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে খাদ্য উৎপাদনের ওপর। ফলে যুদ্ধের পরেও অনাহারে আরো বহু মানুষের মৃত্যু হবে।’
কিন্তু তার পরেও কি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ লাগতে পারে?
পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যাপারে ভারতের নীতি হচ্ছে তারা এই অস্ত্র আগে ব্যবহার করবে না। কিন্তু তারাও এখন এই নীতি পুনর্বিবেচনার কথা বলছে। পাকিস্তান সবসময় বলেছে, এরকম অঙ্গীকার করতে তারা রাজি নয়। ফলে দুটো দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, এর ফলে পারমাণবিক যুদ্ধ যে কখনোই ঘটবে না, তার কোন গ্যারান্টি নেই। [সূত্র: বিবিসি বাংলা]
আরও পড়ুন
মন্তব্য