পাক-ভারত যুদ্ধের পূর্বাভাস ৬ বছর আগেই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণায়

ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র—ভারত ও পাকিস্তান। রাতের আঁধারে একে অপরের সীমান্তে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে দেশ দু’টি। মঙ্গলবার (৫ মে) দিবাগত মধ্যরাতে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীর ও দেশটির মূল ভূখণ্ডের অন্তত নয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। এ হামলা পর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করা হয়েছে। দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জানান, ভূপাতিত করা যুদ্ধবিমানের মধ্যে তিনটি ফ্রান্সের তৈরি রাফাল, একটি রাশিয়ার তৈরি সু-৩০ ও অন্যটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান। সু-৩০ ও মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান সোভিয়েত আমলে তৈরি।
এবছর পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধার সম্ভাবনার কথা ২০১৯ সালে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা সংস্থা। সংবাদমাধ্যম বিবিসি গবেষণাটির খবর প্রকাশ করে। ওই খবরে ভারতের পার্লামেন্টে হামলা অথবা কাশ্মীরে হামলা মাধ্যমে দুদেশের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধ শুরু হতে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়। গবেষণা অনুসারে, যুদ্ধ শুরু হলে প্রথম ধাক্কায় সাড়ে ১২ কোটির বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে, পরে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে আরও বহু কোটি মানুষ অনাহারে প্রাণ হারাতে পারে।
‘পারমাণবিক বোমার ফলে আগুন লেগে যাবে, সেই আগুন থেকে যে পরিমাণ ধোঁয়া তৈরি হবে সেটা ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীতে। এই ধোঁয়ার কারণে আমাদের এই গ্রহে সূর্যের আলোও ঠিক মতো এসে পৌঁছাতে পারবে না। ফলে পৃথিবী অনেক ঠাণ্ডা আর অন্ধকারময় হয়ে পড়বে।’
সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা এবং গতরাতে পাল্টাপাল্টি বিমান হামলার পর বিষয়টি আবারো সামনে আসে। সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন নেটিজেনরা।
বিসিসি বাংলার প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো-
যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, কাশ্মীর বিরোধের জের ধরে ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিক যুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। গবেষকরা বলছেন, এর ফলে জলবায়ুর ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়বে তাতে অনাহারে মারা যাবে আরো বহু কোটি মানুষ। এরকম এক বিপর্যয়ের ধারণা দিতে গিয়ে বলা হচ্ছে, ২০২৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর এই দুটো দেশের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। আমেরিকার রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এসব আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
এই যুদ্ধ কীভাবে শুরু হবে তার কিছু সিনারিও বা কাল্পনিক দৃশ্যও গবেষকরা তৈরি করেছেন।
দৃশ্য-কল্প ১:
ভারতীয় পার্লামেন্টে বোমা হামলা চালাবে একজন সন্ত্রাসী। নিহত হবেন ভারতীয় নেতারা। জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের ভেতরে প্রবেশ করে আক্রমণ চালাবে। নিজেদের রক্ষার্থে পারমানবিক বোমা ব্যবহার করবে পাকিস্তান। এরপর ভারতও তাদের পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করবে। দুটো দেশই তখন তাদের কাছে যতো পরমাণু অস্ত্র আছে সেসব নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হবে।
দৃশ্য-কল্প ২:
কাশ্মীরে আক্রমণ করবে ভারত। তার পর শুরু হয়ে যাবে পারমাণবিক যুদ্ধ। তবে উভয় দেশে যদি বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন নেতারা ক্ষমতায় থাকেন তাহলে হয়তো এরকম কিছু হবে না, এবং একারণেই এখনও পর্যন্ত সেরকম কিছু হয়নি। কিন্তু এরকম আরো নানা রকমের কাল্পনিক দৃশ্য তৈরি করা যায় যার ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. অ্যালান রোবোক, যিনি এই গবেষণার সাথে যুক্ত ছিলেন, বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘ভারত ও পাকিস্তান তাদের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার বাড়িয়ে চলেছে। শুধু সংখ্যার বিচারেই নয়, এসব অস্ত্রের বিস্ফোরণের শক্তিও তারা ক্রমাগত বৃদ্ধি করছে। ফলে তাদের আশঙ্কা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেই এই যুদ্ধের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।’
যুদ্ধের এসব দৃশ্য-কল্প কিভাবে তৈরি করা হয়েছে? এসব কী নিছকই কিছু নাটক?
গবেষক অ্যালান রোবোক বলছেন, কিছু পেশাজীবীকে নিয়ে তারা ওয়ার্কশপ করেছেন যেখানে এসব সম্ভাব্য কারণের কথা উঠে এসেছে।
"ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়া কয়েকজন জেনারেলকে আলাদা আলাদা দুটো কক্ষে বসিয়ে দেওয়া হয়। এক পক্ষকে বলা হয় যেসব কারণে যুদ্ধ হতে পারে তার কিছু ধারণা দিতে। তার পর সেগুলো অন্য আরেকটি কক্ষে অপর গ্রুপের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় সেরকম কিছু হলে তারা কী করবেন? এরকম আলোচনার ভিত্তিতেই এসব সিনারিও তৈরি করা হয়েছে।"
তবে তিনি বলেন, "এগুলো কিছু দৃশ্য-কল্প। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়তো কিছু হয় না। নেতারা ঠাণ্ডা মাথায় সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখেন। কিন্তু কখনো কখনো পরিস্থিতি তো নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেতে পারে!"
কেন ২০২৫?
গবেষণা প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, ২০২৫ সালেই যুদ্ধে জড়াতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার চির-বৈরি দুটো দেশ: ভারত ও পাকিস্তান। যুদ্ধের এই সময় কীভাবে নির্ধারণ করা হলো? অধ্যাপক রোবোক বলছেন, ভবিষ্যৎ থেকে তারা শুধু একটি বছরকে বেছে নিয়েছেন। ‘এই যুদ্ধ যেকোনো সময়ে লাগতে পারে, হতে পারে আগামীকালও। ভবিষ্যতের ব্যাপারে কোন তথ্য থাকে না। কখন কী হবে সেটাও কেউ বলতে পারে না। সেকারণে আমরা কিছু দৃশ্য-কল্প ব্যবহার করেছি কী হতে পারে সেটা বোঝার জন্যে। সেই সম্ভাবনার কথা চিত্রিত করতে আমরা শুধু একটা সময়কে বেছে নিয়েছি।’
আসলেই কি ২০২৫ সালে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হতে পারে?
ভারতীয় সেনা বাহিনীর একজন সাবেক কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জি বলছেন, এই গবেষণা একেবারেই কাল্পনিক, যার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। ‘লোকেরা ভাবছেন দুটো দেশের আণবিক বোমা আছে, তাদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো নয়, তার মানে পাঁচ ছ'বছর পর তাদের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যাবে।’ তবে তিনি বলেন, ২০২৫ সালে না হলেও যেকোনো সময় এই দুটো দেশের মধ্যে যুদ্ধ হতে পারে।
১৯৯৮ সালে ভারত ও পাকিস্তান আণবিক বোমা পরীক্ষা চালিয়েছে। এর পরে গত ১১ বছর চলে গেছে। এর মধ্যে কারগিল যুদ্ধ হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেসময় এবং তার পর থেকে কখনোই আণবিক বোমা ব্যবহারের কথা উঠেনি। ‘কোন দেশ ইচ্ছে করে কিছু করতে চায় না। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত বিভিন্ন কারণে - যেমন ভয়ে, রাগে অনেক সময় অনেক কিছুই হয়ে যায়,’ বলেন দীপঙ্কর ব্যানার্জি।
এই গবেষণার সাথে একমত প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানে কায়দে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরমাণু বিজ্ঞানী ড. পারভেজ হুডভাই। তিনি বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধের সম্ভাবনা সবসময়ই আছে।
‘কোন পরিকল্পনা থেকে নয়, বরং দুর্ঘটনাবশতই এরকম যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। দুটো দেশের মধ্যে যদি অনন্তকাল ধরে উত্তেজনা বিরাজ করে, এবং তাদের কাছে পরমাণু অস্ত্র থাকে, তাহলে তো অনেক কিছুই ঘটতে পারে।’
উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘কাশ্মীরের পুলওয়ামার পর বালাকোটে যা হয়েছে, পাকিস্তান এর আরো কঠোর জবাব দিতে পারতো। তখন ভারতও কিছু একটা করতো। এরকম একের পর এক ঘটনায় উত্তেজনা এতোটাই ছড়িয়ে পড়তে পারতো যে পারমাণবিক যুদ্ধও শুরু হয়ে যেতে পারতো।’
‘শীতল যুদ্ধের সময় যা হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তানের বিরোধ তার চাইতেও খারাপ। আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে কয়েক হাজার মাইলের দূরত্ব কিন্তু ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্ত একই, যেখানে প্রায় প্রতিদিনই একে অপরকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়, ফলে উত্তেজনা শীতল যুদ্ধের চাইতেও বেশি।’
কারণ কাশ্মীর?
গবেষক অ্যালান রোবোক বলেন, ‘শুধু ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নয়, হতে পারে ভারত ও চীনের মধ্যেও। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে হওয়ারও অনেক কারণ আছে। তবে আমরা ভারত ও পাকিস্তানকে বেছে নিয়েছি, কারণ কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে এ-দুটো দেশের মধ্যে অব্যাহত বিরোধ চলছেই। সামরিক যুদ্ধে জড়ানোর অতীত ইতিহাসও তাদের রয়েছে।’
তবে পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানী মি. হুডভাই মনে করেন, অন্যান্য কারণ থাকলেও কাশ্মীরই হবে প্রধান কারণ।
‘কাশ্মীরের পরিস্থিতি যতোই শান্ত করা যাবে, পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকিও ততোটা কমে আসবে। দুর্ভাগ্যজনক হলো সেরকম কিছুই হচ্ছে না। এছাড়াও পরিবেশগত কিছু পরিবর্তনও পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে দিতে পারে।’
‘পাকিস্তানের বেশিরভাগ পানি আসে হিমালয় থেকে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমালয়ের সব হিমবাহ গলে উধাও হয়ে গেলে কাশ্মীর পাকিস্তানের জন্যে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে পানির উৎসের জন্যে। এনিয়ে যদি সমঝোতা না হয় তাহলে তো যুদ্ধের আশঙ্কাও বেড়ে যায়।’
সাবেক ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ব্যানার্জি বলছেন, সন্ত্রাসবাদের মতো আরো কিছু ইস্যুও যুদ্ধের কারণ হতে পারে। ‘২০০৮ সালে পাকিস্তান থেকে সন্ত্রাসীরা এসে মুম্বাই-এ আক্রমণ করেছিল। এরকম আক্রমণ আবারও হলে তখন পরিস্থিতি অন্য রকমের হয়ে যেতে পারে।’
‘পরমাণু অস্ত্র যখন আছে তখন পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কাও আছে। ইতোমধ্যেই এরকম একটি যুদ্ধ হয়ে গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমায় পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল, যা থেকে আমরা ভবিষ্যতেও এরকম যুদ্ধের আশঙ্কা করতে পারি।’ ভারতের সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জিও বলছেন, কোথায় পরমাণু যুদ্ধ শুরু হবে এটা কেউই বলতে পারে না।
তিনি মনে করেন, পানির কারণেও এই যুদ্ধ হতে পারে। "১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল তাতে দুটো দেশের কেউই খুশি নয়। যখন উভয়পক্ষ সমান সমান অখুশি হয় তখন মেনে নিতে হয় যে আমি যদি আরো বেশি খুশি হতে চাই তাহলে আমার প্রতিপক্ষ আরো বেশি অখুশি হবে। তখন যুদ্ধের সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।"
সুইডিশ একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের হিসেবে পাকিস্তানের ১৬০টি আর ভারতের আছে ১৫০টির মতো পারমাণবিক বোমা। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা বলছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান ৪০০ থেকে ৫০০ পারমাণবিক অস্ত্র মজুত করে ফেলবে।
ইসলামাবাদে কায়দে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরমাণু বিজ্ঞানী মি. হুডভাই বলছেন, এই দুটো দেশের মধ্যে পরমাণু অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বেড়েই চলেছে।
"যদিও এসব তথ্য অত্যন্ত গোপনীয় তারপরেও ধারণা করা হয় যে পাকিস্তানের কাছে হয়তো দশ/বিশটি বেশি বোমা আছে। ভারতের এখন পারমাণবিক ডুবোজাহাজও আছে। পাকিস্তানও এরকম ডুবোজাহাজ নির্মাণ করছে। ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এসব অস্ত্র নিক্ষেপের ক্ষমতা ও সংখ্যা দুটো দেশেরই বৃদ্ধি পাচ্ছে।"
অন্য কোথাও?
পারমাণবিক অস্ত্র আছে বিশ্বের মোট ন'টি দেশের। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র এই অস্ত্র তৈরি করে, তার পরে আজকের রাশিয়া। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীনেরও পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। কাকতালীয় হলেও এই পাঁচটি দেশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য।
এর বাইরে ভারত, পাকিস্তান, ইসরায়েল এবং উত্তর কোরিয়ারও পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করেছে।
রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যালান রোবোক বলছেন, পরমাণু শক্তিধর এসব দেশের যেকোনো দু'টোর মধ্যেই পরমাণু যুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আবার পরমাণু শক্তিধর একটি দেশ এমন আরেকটি দেশে আক্রমণ করতে পারে যাদের পরমাণু অস্ত্র নেই।"
‘পরমাণু অস্ত্র যখন আছে তখন পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কাও আছে। ইতোমধ্যেই এরকম একটি যুদ্ধ হয়ে গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমায় পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল, যা থেকে আমরা ভবিষ্যতেও এরকম যুদ্ধের আশঙ্কা করতে পারি।’ ভারতের সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জিও বলছেন, কোথায় পরমাণু যুদ্ধ শুরু হবে এটা কেউই বলতে পারে না।
‘চীনের পরমাণু অস্ত্র আছে, জাপানের নেই। কিন্তু তাদের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক নয়। তাদের মধ্যে অনেক রকমের উত্তেজনা আছে। আমেরিকা জাপানকে বলেছে, চীন যদি তোমাদের আণবিক অস্ত্র দিয়ে ভয় দেখাতে চায় তাহলে আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। তাদের মধ্যে সেরকম চুক্তিও আছে। তাই এই নয়টি দেশের বাইরেও পারমাণবিক যুদ্ধ হতে পারে।’
‘মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ছাড়া এখনও পর্যন্ত অন্য কোন দেশের আণবিক বোমা নেই। ইরানের আরো সময় লাগবে। তার পরেও আমেরিকা, রাশিয়া যদি এই লড়াই-এ মিশে যায় তাহলেও আণবিক বোমার ব্যবহার হতে পারে।’
যুদ্ধ হলে কী হবে?
গবেষক অ্যালান রোবোক বলছেন, এর আগেও বেশ কয়েকবার পারমাণবিক যুদ্ধ লেগে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। ‘ভবিষ্যতে কী হবে সেটা তো আমি বলতে পারবো না। আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান যে গত ৭৪ বছরে এই বোমা আর ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু পারমাণবিক অস্ত্রের অস্তিত্বের অর্থ হচ্ছে এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে। আমরা যদি এসব ব্যবহার না করি, এগুলো ব্যবহারের যদি যৌক্তিক কোন কারণ না থাকে, তাহলে এসব ধ্বংস করে ফেলা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে জাতিসংঘে পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধে একটি চুক্তি সই হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত ৩২টি দেশ এই চুক্তি অনুমোদন করেছে। ৫০টি দেশ অনুমোদন করলেই এটি কার্যকর হবে। তাই এখন বাকি বিশ্বের এগিয়ে আসা উচিত।’
গবেষকরা বলছেন, পারমাণবিক বোমা যেখানে পড়বে, শুধু সেখানকারই মানুষই নয়, পুরো বিশ্বের জন্যেই সেটা হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
জলবায়ু বিজ্ঞানী অ্যালান রোবোক বলছেন, ‘পারমাণবিক বোমার ফলে আগুন লেগে যাবে, সেই আগুন থেকে যে পরিমাণ ধোঁয়া তৈরি হবে সেটা ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীতে। এই ধোঁয়ার কারণে আমাদের এই গ্রহে সূর্যের আলোও ঠিক মতো এসে পৌঁছাতে পারবে না। ফলে পৃথিবী অনেক ঠাণ্ডা আর অন্ধকারময় হয়ে পড়বে।’
‘ধোঁয়া যখন পৃথিবীর আরো ওপরের আবহমণ্ডলে চলে যাবে তখন সেটা সূর্যের আলোতে উত্তপ্ত হয়ে আরো বেশি ছড়িয়ে পড়বে যা সেখানে স্থায়ী হবে কয়েক বছর। বৃষ্টিপাত কমে যাবে। তেজস্ক্রিয়তার ঘটনা ঘটবে। এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে খাদ্য উৎপাদনের ওপর। ফলে যুদ্ধের পরেও অনাহারে আরো বহু মানুষের মৃত্যু হবে।’
কিন্তু তার পরেও কি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ লাগতে পারে?
পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যাপারে ভারতের নীতি হচ্ছে তারা এই অস্ত্র আগে ব্যবহার করবে না। কিন্তু তারাও এখন এই নীতি পুনর্বিবেচনার কথা বলছে। পাকিস্তান সবসময় বলেছে, এরকম অঙ্গীকার করতে তারা রাজি নয়। ফলে দুটো দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, এর ফলে পারমাণবিক যুদ্ধ যে কখনোই ঘটবে না, তার কোন গ্যারান্টি নেই। [সূত্র: বিবিসি বাংলা]
আরও পড়ুন
সীমান্তে ‘সাদা পতাকা’ উড়িয়ে পালালো ভারতীয় সেনারা, দাবি পাকিস্তানের

কাশ্মীরের বিভাজনরেখা নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) একটি সামরিক চৌকিতে ‘সাদা পতাকা’ উত্তোলন করে পালিয়েছে ভারতীয় সেনারা—এমন দাবি করেছে পাকিস্তান। আত্মসমর্পণের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত এই সাদা পতাকা তোলার ঘটনা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
বুধবার (৭ মে) সকালে আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে জানায়, পাকিস্তান সরকার তাদের অফিসিয়াল এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে এ দাবি করেছে।
পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার নিজ এক্স অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘প্রথমে তারা (ভারত) তদন্তের প্রস্তাব থেকে পিছিয়ে যায়, এখন আবার সীমান্ত থেকে পালিয়েছে।’
তবে আল জাজিরা জানিয়েছে, পাকিস্তানের এই দাবি তারা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
এদিকে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর হামলার কয়েক ঘণ্টা পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বিশ্ববাসীর উদ্দেশে এক লাইনের একটি বার্তা দেন। এনডিটিভি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জয়শঙ্কর সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘বিশ্বকে সন্ত্রাসবাদের প্রতি জিরো টলারেন্স বা শূন্য সহনশীলতা দেখাতে হবে।’
গত মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত দুই দেশের সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে। ভারত জানিয়েছে, পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে তিনজন ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে পাকিস্তানের আইএসপিআর জানিয়েছে, ভারতীয় হামলায় অন্তত আটজন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়েছেন। পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে দুটি মসজিদসহ ৯টি স্থানে হামলার কথা স্বীকার করেছে ইসলামাবাদ।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান এই উত্তেজনা দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহলও দুই দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
পারমাণবিক অস্ত্রে এগিয়ে পাকিস্তান, সেনা-নৌ-বিমান বাহিনীতে কার কত অস্ত্রের মজুত?

ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র—ভারত ও পাকিস্তান। রাতের আঁধারে একে অপরের সীমান্তে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে দেশ দু’টি। এতে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানে আটজন এবং ভারতে সাতজন নিহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। মঙ্গলবার (৫ মে) দিবাগত মধ্যরাতে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীর ও দেশটির মূল ভূখণ্ডের অন্তত নয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত।
পাক-ভারত যুদ্ধে প্রশ্ন উঠেছে দুই দেশের সামর্থ্য নিয়ে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হওয়ার পর একাধিকবার যুদ্ধেও জড়িয়েছে ভারত-পাকিস্তান। ফলে ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে উভয় দেশ উল্লেখ করার মতো সামরিক শক্তিও বজায় রেখে চলেছে।
দুই দেশের মধ্যে যখনই সংঘাত-উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তখন সামরিকভাবেও উভয়ের সামরিক সক্ষমতার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। এই সক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে বিশ্লেষণমূলক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়াভিত্তিক ‘ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া’।
গত ২৫ এপ্রিল ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া তাদের ওয়েবসাইটে ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার সূচক (জিএফপি) ২০২৫’ প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, সামগ্রিক র্যাঙ্কিংয়ে ভারত বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ এবং পাকিস্তান বিশ্বে ১২তম।
সামরিক-বেসামরিক জনশক্তি
জনসংখ্যার দিক দিকে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয়। দেশটিতে ১৪০ কোটি মানুষের বসবাস। সক্রিয় সেনা ১৪ লাখ ৬০ হাজার (বিশ্বে দ্বিতীয়)। রিজার্ভ সেনা ১১ লাখ ৬০ হাজার (বিশ্বে সপ্তম)। আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য ২৫ লাখ ৩০ হাজার (বিশ্বে দ্বিতীয়)। মোট সামরিক (সক্রিয় ও রিজার্ভ সেনা এবং আধা সামরিক বাহিনী) জনবল ৫১ লাখ।
বিমানবাহিনী
ভারতের মোট বিমান ২ হাজার ২২৯টি। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ৫১৩ থেকে ৬০৬টি। আধুনিক বিমানের মধ্যে রয়েছে এসইউ–৩০এমকেআই, রাফায়েল, তেজস। তাদের রয়েছে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এস-৪০০। হেলিকপ্টার আছে অ্যাপাচি ও চিনুক। আরও আছে চারটি ‘এয়ারবর্ন আর্লি ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল (এইডব্লিউঅ্যান্ডসি)’ ব্যবস্থা।
অন্যদিকে পাকিস্তানের মোট বিমান ১ হাজার ৩৯৯ থেকে ১ হাজার ৪৩৪টি। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ৩২৮ থেকে ৩৮৭টি। আধুনিক বিমানের মধ্যে রয়েছে এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন, জেএফ-১৭ থান্ডার, মিরেজ থ্রি/ফাইভ। আছে ভারতের চেয়ে বেশি যুদ্ধে ব্যবহার উপযোগী হেলিকপ্টার (এএইচ-১এফ কোবরাসহ)। এইডব্লিউঅ্যান্ডসি আছে সাতটি, যা ভারতের চেয়ে বেশি।
নৌবাহিনী
ভারতের জাহাজ রয়েছে ২৯৪টি। বিমানবাহী রণতরি আছে ২টি। সাবমেরিন ১৮টি (পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন আইএনএস আরিহান্টসহ)। ডেস্ট্রয়ার ১৩টি। ফ্রিগেট ১৪টি। প্যাট্রোল নৌযান ১০৬টি। যুদ্ধে ব্যবহারের উপযোগী বিমান ৭৫টি (নৌবাহিনীর)। নৌবাহিনী সদস্যসংখ্যা ৬৭ হাজার ৭০০।
পাকিস্তানের জাহাজ ১২১টি। সাবমেরিন ৮টি। ফ্রিগেট ৯টি। প্যাট্রোল নৌযান ১৭টি। এ বাহিনীর যুদ্ধবিমান ৮টি। নৌবাহিনী সদস্যসংখ্যা ২৩ হাজার ৮০০।
প্রতিরক্ষা বাজেট
২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভারতের বাজেট ৭ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। যা জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ। এ ব্যয় পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
পাকিস্তানের বাজেট ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার (অর্থনৈতিক সংকটের কারণে শীর্ষ দেশের তালিকায় নেই)। এই ব্যয় জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট পাকিস্তানের ৬ থেকে ৮ গুণ। তবে বাজেট-সংকটে পাকিস্তান ভুগলেও চীনের সহায়তা নিয়ে এটিকে সামাল দিচ্ছে তারা। পাকিস্তানের সামরিক ব্যয়ের বড় অংশ ব্যয় হয় বৃহৎ সেনাবাহিনী ও পারমাণবিক অস্ত্রের সুরক্ষায়।
সাঁজোয়া যান
ভারতের ট্যাঙ্ক ৪ হাজার ৬১৪টি। সাঁজোয়া যান ১ লাখ ৫১ হাজার ২৪৮টি। কামান ৯ হাজার ৭১৯টি। বিশেষ বাহিনীর মধ্যে আছে প্যারা এসএফ, ঘাতক ফোর্স, এমএআরসিওএস।
পাকিস্তানের ট্যাংক ৩ হাজার ৭৪২টি। সাঁজোয়া যান ৫০ হাজার (আনুমানিক)। কামান ৪ হাজার ৪৭২টি (৩৭৫ স্বয়ংক্রিয় হাউইটজারসহ)। বিশেষ বাহিনীর মধ্যে আছে স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এসএসজি), এসএসজি নৌ ও স্পেশাল সার্ভিস উইং। এগুলো আকারে তুলনামূলক ছোট হলেও সমীহ করার মতো।
পারমাণবিক সক্ষমতা
ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০টি। অন্যদিকে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ১৪০ থেকে ১৫০। ফলে পারমাণবিক দিক থেকে পাকিস্তানের সক্ষমতা ভারতের চেয়ে বেশি।
কৌশলগত জোট
ভারতের কৌশলগত জোটে রয়েছে ইসরায়েল, রাশিয়া ও ফ্রান্স। এছাড়াও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সমর্থনও। অন্যদিকে পাকিস্তানের রয়েছে চীনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাৎ জিও নিউজে এক নিবন্ধ লেখেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তান ব্যয়বহুল যুদ্ধের সামর্থ্য রাখে না। তাই উত্তেজনা কমিয়ে কূটনীতিতে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ভারতের রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যম ও অন্যান্য মহল হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। অনেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার ডাক দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। প্রথমত, যুদ্ধ অত্যন্ত ব্যয়বহুল, আর ভারত ও পাকিস্তান—দুটি দেশই দরিদ্র, যারা এ ধরনের ব্যয়বহুল যুদ্ধ চালাতে অক্ষম।
দ্বিতীয়ত, যুদ্ধের ফলাফল অনিশ্চিত। যুদ্ধ শুরু করা সহজ, কিন্তু শেষ কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা বলা অসম্ভব। নেপোলিয়ন ও হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করেছিলেন দ্রুত জয়ের প্রত্যাশায়, কিন্তু তাদের পরিণাম সবাই জানে। তৃতীয়ত, ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ।
সুতরাং যুদ্ধের কথা বলা নিরেট অবিবেচকের কাজ। আমার মতে, ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর ভারতে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, সেটিই সবচেয়ে বিচক্ষণ পথ।
মধ্যরাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল ভারত, যুদ্ধ কী বাধল?

কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। এর মধ্যেই পাকিস্তানের অন্তত তিনটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত, এমনই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডন। অনেকে বলছে, পাকিস্তানে হামলার মধ্য দিয়ে দুই দেশের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।
ডনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুধবার রাতে পাকিস্তানের কোটলি, ভাওয়ালপুর এবং মুজাফ্ফরাবাদ এলাকায় ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। এই হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ আখ্যা দিয়ে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (ISPR) এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, ‘এটি পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত।’
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতের সশস্ত্র বাহিনী একটি সামরিক অভিযানের সূচনা করেছে যার নাম ‘অপারেশন সিন্দুর’। এই অভিযানের আওতায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধীকৃত কাশ্মীরের নয়টি স্থাপনায় একযোগে হামলা চালানো হয়েছে।
ভারত সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল শুধুমাত্র সন্ত্রাসী ঘাঁটি। পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনাগুলিকে ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি।
উল্লেখ্য, গত কয়েক দিনে দুই দেশের মধ্যে সাইবার যুদ্ধ, সীমান্ত সংঘর্ষ ও কূটনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যেই এমন সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।
আরও পড়ুন
ভারতে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে পাকিস্তান

পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মিরের বিভিন্ন জায়গায় বুধবার (৭ মে) মধ্যরাতে মিসাইল ছুড়েছে ভারত। এ হামলায় পাকিস্তানে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে। যারমধ্যে এক শিশুও রয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ১২ জন। ভারতের মিসাইল হামলার কিছুক্ষণ পরই পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক লেফটেনেন্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী।
তিনি জিও টিভিকে বলেছেন, “আকাশ ও স্থলে পাকিস্তানের জবাব চলছে।”
দেশটির সরকারি টিভি পিটিভি মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাতে জানিয়েছে, ভারতে পাল্টা হামলা চালানো হচ্ছে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সংবাদমাধ্যম এআরওয়াই নিউজকে জানিয়েছেন, ভারত বেসামরিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, “বেসামরিক এলাকায় হামলা চালানো হয়েছে। এ কাপুরুষরা (ভারতীয়রা) তাদের নিজেদের আকাশসীমা থেকে হামলা চালিয়েছে। তারা তাদের বাড়ি কখনো ছাড়েনি। তাদের বের হতে দিন। আমরা উপযুক্ত জবাব দেব।”
ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামের অভিযানে পাকিস্তানের ৯টি জায়গায় হামলা চালানো হয়েছে। তাদের দাবি, এই হামলায় সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্য করা হয়েছে; পাকিস্তানের সেনা সদস্যদের ওপর কোনো হামলা চালানো হয়নি।
বিবৃতিতে তারা বলেছে, “কিছুক্ষণ আগে, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনা করেছে। পাকিস্তান এবং পাকিস্তান অধিকৃত জম্মু-কাশ্মিরে সন্ত্রাসীদের অবকাঠামোতে আঘাত হানা হয়েছে। যেখান থেকে ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা ও পরিচালনা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৯টি জায়গায় আঘাত হানা হয়েছে।”
এ হামলায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কোনো অবকাঠামোতে আঘাত হানা হয়নি দাবি করেছে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী। তারা বলেছে, “এটি ছিল কেন্দ্রীভূত, পরিমাপিত”। এছাড়া উত্তেজনা যেন বৃদ্ধি না হয় সে বিষয়টিতেও নজর দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: দ্য ডন
মন্তব্য