পারমাণবিক অস্ত্রে এগিয়ে পাকিস্তান, সেনা-নৌ-বিমান বাহিনীতে কার কত অস্ত্রের মজুত?

ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র—ভারত ও পাকিস্তান। রাতের আঁধারে একে অপরের সীমান্তে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে দেশ দু’টি। এতে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানে আটজন এবং ভারতে সাতজন নিহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। মঙ্গলবার (৫ মে) দিবাগত মধ্যরাতে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীর ও দেশটির মূল ভূখণ্ডের অন্তত নয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত।
পাক-ভারত যুদ্ধে প্রশ্ন উঠেছে দুই দেশের সামর্থ্য নিয়ে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হওয়ার পর একাধিকবার যুদ্ধেও জড়িয়েছে ভারত-পাকিস্তান। ফলে ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে উভয় দেশ উল্লেখ করার মতো সামরিক শক্তিও বজায় রেখে চলেছে।
দুই দেশের মধ্যে যখনই সংঘাত-উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তখন সামরিকভাবেও উভয়ের সামরিক সক্ষমতার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। এই সক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে বিশ্লেষণমূলক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়াভিত্তিক ‘ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া’।
গত ২৫ এপ্রিল ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া তাদের ওয়েবসাইটে ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার সূচক (জিএফপি) ২০২৫’ প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, সামগ্রিক র্যাঙ্কিংয়ে ভারত বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ এবং পাকিস্তান বিশ্বে ১২তম।
সামরিক-বেসামরিক জনশক্তি
জনসংখ্যার দিক দিকে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয়। দেশটিতে ১৪০ কোটি মানুষের বসবাস। সক্রিয় সেনা ১৪ লাখ ৬০ হাজার (বিশ্বে দ্বিতীয়)। রিজার্ভ সেনা ১১ লাখ ৬০ হাজার (বিশ্বে সপ্তম)। আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য ২৫ লাখ ৩০ হাজার (বিশ্বে দ্বিতীয়)। মোট সামরিক (সক্রিয় ও রিজার্ভ সেনা এবং আধা সামরিক বাহিনী) জনবল ৫১ লাখ।
বিমানবাহিনী
ভারতের মোট বিমান ২ হাজার ২২৯টি। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ৫১৩ থেকে ৬০৬টি। আধুনিক বিমানের মধ্যে রয়েছে এসইউ–৩০এমকেআই, রাফায়েল, তেজস। তাদের রয়েছে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এস-৪০০। হেলিকপ্টার আছে অ্যাপাচি ও চিনুক। আরও আছে চারটি ‘এয়ারবর্ন আর্লি ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল (এইডব্লিউঅ্যান্ডসি)’ ব্যবস্থা।
অন্যদিকে পাকিস্তানের মোট বিমান ১ হাজার ৩৯৯ থেকে ১ হাজার ৪৩৪টি। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ৩২৮ থেকে ৩৮৭টি। আধুনিক বিমানের মধ্যে রয়েছে এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন, জেএফ-১৭ থান্ডার, মিরেজ থ্রি/ফাইভ। আছে ভারতের চেয়ে বেশি যুদ্ধে ব্যবহার উপযোগী হেলিকপ্টার (এএইচ-১এফ কোবরাসহ)। এইডব্লিউঅ্যান্ডসি আছে সাতটি, যা ভারতের চেয়ে বেশি।
নৌবাহিনী
ভারতের জাহাজ রয়েছে ২৯৪টি। বিমানবাহী রণতরি আছে ২টি। সাবমেরিন ১৮টি (পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন আইএনএস আরিহান্টসহ)। ডেস্ট্রয়ার ১৩টি। ফ্রিগেট ১৪টি। প্যাট্রোল নৌযান ১০৬টি। যুদ্ধে ব্যবহারের উপযোগী বিমান ৭৫টি (নৌবাহিনীর)। নৌবাহিনী সদস্যসংখ্যা ৬৭ হাজার ৭০০।
পাকিস্তানের জাহাজ ১২১টি। সাবমেরিন ৮টি। ফ্রিগেট ৯টি। প্যাট্রোল নৌযান ১৭টি। এ বাহিনীর যুদ্ধবিমান ৮টি। নৌবাহিনী সদস্যসংখ্যা ২৩ হাজার ৮০০।
প্রতিরক্ষা বাজেট
২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভারতের বাজেট ৭ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। যা জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ। এ ব্যয় পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
পাকিস্তানের বাজেট ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার (অর্থনৈতিক সংকটের কারণে শীর্ষ দেশের তালিকায় নেই)। এই ব্যয় জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট পাকিস্তানের ৬ থেকে ৮ গুণ। তবে বাজেট-সংকটে পাকিস্তান ভুগলেও চীনের সহায়তা নিয়ে এটিকে সামাল দিচ্ছে তারা। পাকিস্তানের সামরিক ব্যয়ের বড় অংশ ব্যয় হয় বৃহৎ সেনাবাহিনী ও পারমাণবিক অস্ত্রের সুরক্ষায়।
সাঁজোয়া যান
ভারতের ট্যাঙ্ক ৪ হাজার ৬১৪টি। সাঁজোয়া যান ১ লাখ ৫১ হাজার ২৪৮টি। কামান ৯ হাজার ৭১৯টি। বিশেষ বাহিনীর মধ্যে আছে প্যারা এসএফ, ঘাতক ফোর্স, এমএআরসিওএস।
পাকিস্তানের ট্যাংক ৩ হাজার ৭৪২টি। সাঁজোয়া যান ৫০ হাজার (আনুমানিক)। কামান ৪ হাজার ৪৭২টি (৩৭৫ স্বয়ংক্রিয় হাউইটজারসহ)। বিশেষ বাহিনীর মধ্যে আছে স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এসএসজি), এসএসজি নৌ ও স্পেশাল সার্ভিস উইং। এগুলো আকারে তুলনামূলক ছোট হলেও সমীহ করার মতো।
পারমাণবিক সক্ষমতা
ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০টি। অন্যদিকে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ১৪০ থেকে ১৫০। ফলে পারমাণবিক দিক থেকে পাকিস্তানের সক্ষমতা ভারতের চেয়ে বেশি।
কৌশলগত জোট
ভারতের কৌশলগত জোটে রয়েছে ইসরায়েল, রাশিয়া ও ফ্রান্স। এছাড়াও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সমর্থনও। অন্যদিকে পাকিস্তানের রয়েছে চীনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাৎ জিও নিউজে এক নিবন্ধ লেখেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তান ব্যয়বহুল যুদ্ধের সামর্থ্য রাখে না। তাই উত্তেজনা কমিয়ে কূটনীতিতে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ভারতের রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যম ও অন্যান্য মহল হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। অনেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার ডাক দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। প্রথমত, যুদ্ধ অত্যন্ত ব্যয়বহুল, আর ভারত ও পাকিস্তান—দুটি দেশই দরিদ্র, যারা এ ধরনের ব্যয়বহুল যুদ্ধ চালাতে অক্ষম।
দ্বিতীয়ত, যুদ্ধের ফলাফল অনিশ্চিত। যুদ্ধ শুরু করা সহজ, কিন্তু শেষ কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা বলা অসম্ভব। নেপোলিয়ন ও হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করেছিলেন দ্রুত জয়ের প্রত্যাশায়, কিন্তু তাদের পরিণাম সবাই জানে। তৃতীয়ত, ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ।
সুতরাং যুদ্ধের কথা বলা নিরেট অবিবেচকের কাজ। আমার মতে, ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর ভারতে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, সেটিই সবচেয়ে বিচক্ষণ পথ।
মধ্যরাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল ভারত, যুদ্ধ কী বাধল?

কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। এর মধ্যেই পাকিস্তানের অন্তত তিনটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত, এমনই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডন। অনেকে বলছে, পাকিস্তানে হামলার মধ্য দিয়ে দুই দেশের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।
ডনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুধবার রাতে পাকিস্তানের কোটলি, ভাওয়ালপুর এবং মুজাফ্ফরাবাদ এলাকায় ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। এই হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ আখ্যা দিয়ে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (ISPR) এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, ‘এটি পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত।’
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতের সশস্ত্র বাহিনী একটি সামরিক অভিযানের সূচনা করেছে যার নাম ‘অপারেশন সিন্দুর’। এই অভিযানের আওতায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধীকৃত কাশ্মীরের নয়টি স্থাপনায় একযোগে হামলা চালানো হয়েছে।
ভারত সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল শুধুমাত্র সন্ত্রাসী ঘাঁটি। পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনাগুলিকে ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি।
উল্লেখ্য, গত কয়েক দিনে দুই দেশের মধ্যে সাইবার যুদ্ধ, সীমান্ত সংঘর্ষ ও কূটনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যেই এমন সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।
আরও পড়ুন
ভারতে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে পাকিস্তান

পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মিরের বিভিন্ন জায়গায় বুধবার (৭ মে) মধ্যরাতে মিসাইল ছুড়েছে ভারত। এ হামলায় পাকিস্তানে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে। যারমধ্যে এক শিশুও রয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ১২ জন। ভারতের মিসাইল হামলার কিছুক্ষণ পরই পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক লেফটেনেন্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী।
তিনি জিও টিভিকে বলেছেন, “আকাশ ও স্থলে পাকিস্তানের জবাব চলছে।”
দেশটির সরকারি টিভি পিটিভি মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাতে জানিয়েছে, ভারতে পাল্টা হামলা চালানো হচ্ছে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সংবাদমাধ্যম এআরওয়াই নিউজকে জানিয়েছেন, ভারত বেসামরিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, “বেসামরিক এলাকায় হামলা চালানো হয়েছে। এ কাপুরুষরা (ভারতীয়রা) তাদের নিজেদের আকাশসীমা থেকে হামলা চালিয়েছে। তারা তাদের বাড়ি কখনো ছাড়েনি। তাদের বের হতে দিন। আমরা উপযুক্ত জবাব দেব।”
ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামের অভিযানে পাকিস্তানের ৯টি জায়গায় হামলা চালানো হয়েছে। তাদের দাবি, এই হামলায় সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্য করা হয়েছে; পাকিস্তানের সেনা সদস্যদের ওপর কোনো হামলা চালানো হয়নি।
বিবৃতিতে তারা বলেছে, “কিছুক্ষণ আগে, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনা করেছে। পাকিস্তান এবং পাকিস্তান অধিকৃত জম্মু-কাশ্মিরে সন্ত্রাসীদের অবকাঠামোতে আঘাত হানা হয়েছে। যেখান থেকে ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা ও পরিচালনা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৯টি জায়গায় আঘাত হানা হয়েছে।”
এ হামলায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কোনো অবকাঠামোতে আঘাত হানা হয়নি দাবি করেছে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী। তারা বলেছে, “এটি ছিল কেন্দ্রীভূত, পরিমাপিত”। এছাড়া উত্তেজনা যেন বৃদ্ধি না হয় সে বিষয়টিতেও নজর দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: দ্য ডন
ভারতের ৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিতের দাবি পাকিস্তানের

ভারতের মিসাইল হামলার জবাবে দেশটির পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের সঙ্গে বুধবার (৭ এপ্রিল) এ তথ্য জানান তিনি। এছাড়া কয়েকজন ভারতীয় সেনাকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে আটকের দাবিও করেছেন তিনি।
খাজা আসিফ জানিয়েছেন, যদি ভারত আগ্রাসী মনোভাব বাদ দেয় তাহলে তারা তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। কিন্তু ভারত যদি আগ্রাসী কিছু করে তাহলে তারা অবশ্যই জবাব দেবেন। খাজা আসিফ বলেন, “যদি এসব শত্রুতাপূর্ণ কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়, আমরা অবশ্যই ভারতের সঙ্গে কথা বলব। আমরা চাই না এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হোক। কিন্তু ভারত থেকে যদি শত্রুতাপূর্ণ কিছু আসে, তাহলে আমাদের জবাব দিতে হবে।”
যুদ্ধবিমানকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার পাশাপাশি ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিগেড সদরদপ্তরে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তানের একাধিক জায়গায় মিসাইল ছোড়ে ভারত। এর জবাবে তাৎক্ষণিকভাবে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা চালানো শুরু করে ইসলামাবাদ। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র সরকারি টিভি চ্যানেল পিটিভিকে জানিয়েছেন, ভারতীয় সেনাদের ব্রিগেড সদরদপ্তরে হামলা চালিয়ে এটি ধ্বংস করা হয়েছে।
এছাড়া সীমান্ত রেখার (এলওসি) দুদনিয়াল সেক্টরে মিসাইল ছুড়ে ভারতীয় সেনাদের একটি চৌকি ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। এসবের সঙ্গে একটি ড্রোনও ভূপাতিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটি।
প্রথমে তিনটি যুদ্ধবিমান ধ্বংসের কথা শোনা গেলেও দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী এখন পাঁচটি বিমান ভূপাতিতের কথা জানাচ্ছেন।
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে বন্দুকধারীরা হামলা চালিয়ে ২৬ জনকে হত্যা করে। এ ঘটনায় ভারত পাকিস্তানকে দোষারোপ করার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। যা মঙ্গলবার রাতে চূড়ান্তরূপ ধারণ করে।
কাশ্মীর হামলার কথা আগেই জানতেন মোদি, বোমা ফাটালেন কংগ্রেস সভাপতি

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলা হবে এই তথ্য আগে থেকেই জানতেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুধু তাই নয়, হামলার তিনদিন আগে তার কাশ্মীরে সফরের কথা থাকলেও— হামলা হবে এ তথ্য জেনে তিনি সে সফর বাতিল করেন। আজ মঙ্গলবার (৬ মে) ভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এমন চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন। খবর এনডিটিভির।
এক বিবৃতিতে খাড়গে বলেন, ২২ এপ্রিল পেহেলগাম হামলার তিন দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। ওই তথ্য পাওয়ার পরই প্রধানমন্ত্রী তাঁর নির্ধারিত কাশ্মীর সফর বাতিল করেন।
কংগ্রেসের সভাপতি বলেন, সরকার স্বীকার করেছে যে এটি একটি গোয়েন্দা ব্যর্থতা। তারা বলেছে যে বিষয়টি তারা মেটাবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আগে থেকে জানলেও উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেন নেওয়া হলো না? তিনি প্রশ্ন করেন, যেখানে প্রধানমন্ত্রী নিজেই জানতেন হামলা হবে সেখানে সেই হামলা কেনো ঠেকানো হল না?
খাড়গে আরও বলেন, আমি শুনেছি এবং সংবাদপত্রেও পড়েছি যে ১৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কাশ্মীর সফর বাতিল হয়। আমি জানতে পেরেছি, তার তিন দিন আগে তাকে গোয়েন্দা রিপোর্টে সতর্ক করা হয়েছিল। তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না?
উল্লেখ্য, ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পর্যটনস্থল পেহেলগামে হঠাৎ করেই সন্ত্রাসীরা গুলি চালায়। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের। আহত হন আরও অনেকে। গোটা দেশজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। এই ঘটনার জেরে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
ভারতের বিজেপি সরকার দাবি করে, স্থানীয় প্রশাসন পাহেলগামের বৈসারণ এলাকা হঠাৎ করেই খুলে দেয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে না জানিয়েই, যা সাধারণত জুনে অমরনাথ যাত্রার আগে বন্ধ রাখা হয়। পর্যটন এলাকাটি খুলে দেওয়ার কথা না জানার কারণেই সেখানে কোনো নিরাপত্তা বাহিনী ছিল না।
এদিকে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই- দাবি করেছে, সন্ত্রাসীরা প্রধানমন্ত্রী মোদির উপস্থিতিতে হামলা চালাতে চেয়েছিল। এই প্রেক্ষিতে পর্যটকদের, বিশেষ করে শ্রীনগরের শহরতলির হোটেলগুলিতে অবস্থানরত পর্যটকদের লক্ষ্যবস্তু করার সতর্কতা গোয়েন্দারা আগেই দিয়েছিলেন। তবে সরকার বলছে, আবহাওয়ার অবনতি — বিশেষ করে কাটরায় প্রবল ঝড়ো হাওয়ার পূর্বাভাসের কারণে ১৯ এপ্রিলের মোদির সফর স্থগিত করা হয়েছিল।
এই ঘটনার পর গোটা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং সরকারের ভূমিকা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। তার মধ্যেই বিরোধীদল কংগ্রেসের সভাপতি আজ দাবি করলেন যে, হামলার কথা মোদি আগেই জাসতেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত খাড়গের বক্তব্যের কোনও সরাসরি প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য