কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে বাকৃবির প্রশাসনিক ভবনে তালা, অবরুদ্ধ উপাচার্য

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কম্বাইন্ড ডিগ্রির (বিএসসি ইন ভেটেরিনারি সায়েন্স অ্যান্ড অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি) দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৬ আগস্ট) বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে তারা প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগান। এতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে টানা সাতদিন ধরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বাকৃবির পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। এবার তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরাও।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে বুধবার দুপুর সাড়ে ৩টায় পশুপালন অনুষদের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
এ সময় তারা স্লোগান দেন 'আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই', `দাবি একটাই, কম্বাইন্ড ডিগ্রি চাই', `এক পেশা, এক ডিগ্রি, এক দাবি', কম্বাইন্ড! কম্বাইন্ড!'
পশুপালন অনুষদের ৫০১ জন শিক্ষার্থী কম্বাইন্ড ডিগ্রির পক্ষে স্বাক্ষরসংবলিত একটি তালিকা উপাচার্যের কাছে জমা দেন। একই দাবিতে পৃথকভাবে মিছিল করেছে ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরাও। পরবর্তীতে দুই অনুষদের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে একত্রিত হয়ে একযোগে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে ভেটেরিনারি অনুষদের পক্ষ থেকে অনুষদের ডিন বরাবর লিখিত স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয়।
বিকেল ৪টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় উপাচার্য বলেন, “আমি এককভাবে সম্মিলিত ডিগ্রি চালুর সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এ বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নিরপেক্ষভাবে বিবেচনা করে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
তবে আলোচনায় আশানুরূপ অগ্রগতি না থাকায় বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনে তালা দেন। এসময় উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে একটি বৈঠক চলছিল। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শিক্ষার্থীরা তালা খুলে দেন।
আন্দোলনকারী এক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমাদের এই যৌক্তিক আন্দোলনের সাথে ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হয়েছেন। আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা এবং পেশাগত মর্যাদার স্বার্থেই আমরা এক হয়েছি। শিক্ষকরা আমাদের দাবি শুনেছেন, আগামীকাল আলোচনা হবে—সেখানে আশানুরূপ সিদ্ধান্ত না এলে আন্দোলন আরও বেগবান হবে।
এ বিষয়ে বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান সরকার বলেন, “পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীদের কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবির প্রেক্ষিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ফ্যাকাল্টি মিটিং অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আলোচনায় বসবেন এবং দাবিগুলো উপস্থাপন করা হবে। সবদিক বিবেচনায় রেখে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে বাকৃবিতে দিনব্যাপী কর্মসূচি পালিত

ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটি।
দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকাল ১০টায় প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন করিডোর থেকে বিজয় শোভাযাত্রার মাধ্যমে কর্মসূচির সূচনা হয়।
বিজয় র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের করিডোর প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড মো. শহীদুল হকের সভাপতিত্বে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড মো. রফিকুল ইসলাম সরদার, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড মো. আসাদুজ্জামান সরকার, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম, সহযোগী ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড মো. সাইফুল্লাহসহ প্রক্টরিয়াল টিমের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ ও দপ্তরের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ বিজয় শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
শোভাযাত্রা শেষে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া। তিনি বলেন, “আজ এদেশের সংগ্রামী জনতার বিজয়ের দিন। আমরা বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি সেই সকল শহীদদের, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে জীবন দিয়েছেন। আমরা তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।”
তিনি আরও বলেন, “১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী চেতনা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও দেশ গঠনের যে প্রয়াস ছিল, তা ১৯৭৫-এর পরে বাধাগ্রস্ত হয়। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আমরা আবার সেই জাতীয় চেতনার পুনর্জাগরণ দেখতে পাই। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, দমন-পীড়ন থেকে মুক্তির যে আকাঙ্ক্ষা জনগণের ভেতরে ছিল, তা বাস্তবায়িত হয় এই দিনে। এই দিন আমাদের কাছে শুধু একটি তারিখ নয়, বরং এটি প্রতিরোধ, সাহস ও গণতন্ত্রের বিজয়ের প্রতীক।
তিনি সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ফ্যাসিস্টরা যাতে আর কখনও এদেশের মাটিতে শিকড় গাড়তে না পারে, সেই শপথ আমরা আজ গ্রহণ করছি। ফ্যাসিস্টবিরোধী যেকোনো আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে।”
র্যালি শেষে বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনে শিশু-কিশোর কাউন্সিলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী। এতে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।
প্রতিযোগীদের চিত্রকর্মে ফুটে ওঠে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আলোচিত মুহূর্ত, শহীদদের আত্মত্যাগ এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ১৫ জনকে পুরস্কৃত করা হবে।
চিত্রাঙ্কন প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড জি এম মুজিবর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. শহীদুল হক ও শিশু-কিশোর কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক সামছুল আলম।
এরপর দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ ও সকল উপসনালয়ে শহীদদের আত্মার শান্তি ও মাগফেরাত, জাতীয় সংহতি ও অগ্রগতি কামনা করে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।
এছাড়াও সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সংঘের আয়োজনে গণঅভ্যুত্থান বিষয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠিত হবে। এরপর একে একে জুলাই আন্দোলনের উপর নির্মিত ডকুমেন্টারি ও ভিডিও প্রদর্শনী প্রতিযোগিতা এবং চিত্রাঙ্কন, ডিবেটিং ও ভিডিও প্রদর্শনী প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরনীর আয়োজন করা হয়েছে।
বাহা’কে লাল কার্ড দেখালো বাকৃবির শিক্ষার্থীরা

কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে টানা পাঁচদিন ধরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। ‘এক পেশায় দুই ডিগ্রি’ মানতে নারাজ শিক্ষার্থীরা এবার লাল কার্ড দেখিয়েছেন বাংলাদেশ অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অ্যাসোসিয়েশনকে (বাহা)।
রোববার (৩ আগস্ট) বিএসসি ইন ভেটেরিনারি সায়েন্স অ্যান্ড অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি ডিগ্রি প্রদানের দাবিতে পঞ্চম দিনের মতো আন্দোলন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে সকাল ১১টায় পশুপালন অনুষদের সামনে থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসন ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। সেখানে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীরা ‘এক দফা এক দাবি, কম্বাইন্ড কম্বাইন্ড’, ‘এক পেশায় দুই ডিগ্রি, মানি না মানি না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে।
এর আগে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পশুপালন অনুষদের ডিন কার্যালয় ও প্রধান দুটি ফটকে তালা লাগিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর দেড়টা পর্যন্তও এসব ফটক তালাবদ্ধ ছিল।
এদিকে আন্দোলনের বিপরীতে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অ্যাসোসিয়েশন (বাহা) ও পশুপালন অনুষদের এক যৌথ বিবৃতিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের "বিপথগামী" বলে উল্লেখ করা হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা আজকের মিছিলে ‘তুমি কে আমি কে? বিপথগামী বিপথগামী’, ‘কে বলেছে কে বলেছে, বাহা বাহা’ ইত্যাদি স্লোগান দেন এবং লাল কার্ড প্রদর্শন করে বাহাকে প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন।
আন্দোলনকারী এক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করছি। এর আগে আমরা ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। বর্তমানে উপাচার্য ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন, তার কাছেও আবার স্মারকলিপি প্রদান করা হবে এবং দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এদিকে পশুপালন অনুষদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরাও। তবে তারা ক্লাস ও পরীক্ষা চলমান রেখে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা পৃথকভাবে একই দাবি জানিয়ে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ভেটেরিনারি অনুষদ ছাত্র সমিতির সহ-সভাপতি মো. মোরসালীন বলেন, ‘আমরা ভেটেরিনারি অনুষদ থেকে আগে থেকেই কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবি জানিয়ে আসছি। পশুপালন অনুষদ এখন সেই দাবিতে আন্দোলন করছে। তাই তাদের সঙ্গে আমরা সংহতি প্রকাশ করেছি। আমরা শিগগিরই উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করব।’
খুবিতে ডিপ্লোমাধারীদের জন্য স্বতন্ত্র কৃষি অনুষদ খোলার ঘোষণায় বাকৃবি শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে কৃষি ডিপ্লোমাধারীদের জন্য স্বতন্ত্র কৃষি অনুষদ খোলার ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ও গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২ আগস্ট) এক লিখিত বিবৃতিতে তারা এই উদ্বেগের কথা জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, খুবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানান, দেশের প্রতি বছর স্নাতক পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক প্রায় ১৫ হাজার কৃষি ডিপ্লোমাধারীর জন্য পাইকগাছায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে পৃথক কৃষি অনুষদ স্থাপন করা হবে। সেখানে বিএসসি কৃষি ও অন্যান্য সার্টিফিকেট কোর্স চালু করে ‘বহুমুখী শিক্ষা কেন্দ্র’ গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।তিনি আরো বলেন, 'খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে যারা পড়াশোনা করছেন তারা ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ভর্তি হন কিন্তু পাইকগাছা ক্যাম্পাসে ডিপ্লোমা পাস করা শিক্ষার্থীরা ভর্তি হবেন, তবে তাদের ডিগ্রীর মান প্রায়ই একই রকম হবে।'
এই বক্তব্যকে ‘বিভ্রান্তিকর’ ও ‘শিক্ষাব্যবস্থার গুণগত মানের পরিপন্থী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বাকৃবিসহ দেশের অন্যান্য ৮টি পাবলিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ ধরনের সিদ্ধান্ত দেশের কৃষিশিক্ষা ও উচ্চশিক্ষার মান, মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, দেশের পাবলিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে হলে একজন শিক্ষার্থীকে উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফলাফলের পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। অন্যদিকে, কৃষি ডিপ্লোমা প্রোগ্রামের শিক্ষাগত কাঠামো ভিন্নতর এবং তুলনামূলকভাবে প্রয়োগিক শিক্ষাভিত্তিক।
এই পার্থক্যের প্রেক্ষাপটে কৃষি ডিপ্লোমাধারীদের সমমর্যাদার বিএসসি কৃষি ডিগ্রি প্রদান করা হলে তা হবে উচ্চশিক্ষার মানকে হেয় করা এবং বিদ্যমান গুণগত মানসম্পন্ন ডিগ্রির প্রতি অবিচার হবে। এতে ভবিষ্যতে কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে অবস্থান এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও বিভ্রান্তি ও অস্পষ্টতা তৈরি হবে।
বাকৃবির শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং কৃষিশিক্ষা কাঠামোতে নীতিগত কোনো পরিবর্তনের আগে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনার অনুরোধ জানান।
বাকৃবিতে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপিত হবে আগামী ১ জুন

‘আসুন দুগ্ধশিল্প এবং দুধের প্রভাব উদযাপন করি’ প্রতিপাদ্যে আগামী ১ জুন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ১৩তম বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপিত হবে। দেশে ডেয়রি শিল্পের বিকাশ এবং দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রত্যেক বছর এই দিবসটি পালিত হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে ১ জুন বাকৃবিতে প্রায় ২ হাজার ৫শ জন শিশুকে দুধ পান করানো, বর্নাঢ্য র্যালি, সচেতনতামূলক সেমিনার এবং ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং সভার আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগ।
এছাড়াও আগামীকাল শনিবার (৩১ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন করিডোরে শিশু কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, হোম কিচেন ডেয়রি রেসিপি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্ব দুগ্ধ দিবস ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও বাকৃবির ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম। শুক্রবার (৩০ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের ডিন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ওই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ড আশিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে দেশে বছরে প্রায় ১৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন দুধ উৎপাদিত হয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন ২৫০ মিলি লিটার দুধ প্রয়োজন। সেখানে আমাদের প্রাপ্যতা মাত্র ২৩৫ মিলি লিটার। দেশে বছরে প্রায় ১৫ দশমিক ৮৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন দুধের প্রয়োজন হয়। পরিসংখ্যান বলছে, এখনও দেশে তরল দুধের ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি স্থায়ীভাবে পূরণ করতে হলে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।
দুধের উৎপাদন প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে অধ্যাপক আশিকুর রহমান জানান, প্রতি বছর দেশে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য আমদানি করতে হয়। দুধের উৎপাদন ঘাটতির পেছনে নানা ধরনের সমস্যা জড়িত রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ভালো জাতের দুধেল গাভীর অভাব, গো-খাদ্যের স্বল্পতা ও উচ্চ মূল্য এবং দুধ বাজারজাতকরণের জটিলতা। গত কয়েক বছর ধরে দেশে দুধের উৎপাদন বাড়লেও দুধ পানের আগ্রহ তেমন বাড়েনি। ফলে প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও দুধ কিনতে আগ্রহী হচ্ছে না। তাই দুধের উৎপাদন বাড়াতে হলে দুধ পানের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। এছাড়াও, দুধ পানের উপকারিতা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে এবং ডেইরি উন্নয়ন বোর্ডকে পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করতে হবে।
তিনি আরও জানান, দুধ প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ খাবার। খাদ্যের সব পুষ্টি উপাদান দুধে বিদ্যমান থাকায় এটিকে সুষম খাদ্যও বলা হয়। দুধে থাকা ল্যাকটোজ শিশুদের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুকোষের বর্ধনে সহায়তা করে। জন্মের সময় মানব শিশুরা মস্তিষ্কের প্রায় ৮০ শতাংশ গঠন সম্পন্ন করে আসে। বাকি ২০ শতাংশ পরবর্তী ১৫-১৬ বছরে ধীরে ধীরে গঠিত হয়। তাই শৈশবে মস্তিষ্কের বিকাশে দুধের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, যে জাতি যত বেশি দুধ পান করে, সে জাতি তত বেশি মেধাবী হয়ে ওঠে।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস-২০২৫ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ, সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম, পশু পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক ড. খান মো সাইফুল ইসলাম, পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের ড. সুবাস চন্দ্র দাস, ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড এ কে এম মাসুমসহ ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন ।
বাকৃবিতে দুধ উৎপাদনের সীমাবদ্ধতা বিষয়ে অধ্যাপক ড মো হারুন অর রশীদ জানান, বাকৃবির ডেইরি খামারে প্রত্যেক দিন ৫শ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। যা শিক্ষার্থী ও শিক্ষেকের সংখ্যা বিবেচনয় চাহিদার তুলনায় নগণ্য। বাকৃবির নিজস্ব ডেইরি খামারের অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে বর্তমানে প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার শিক্ষার্থীর দুধের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ডেয়রি খামারের দুধ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ২ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করা প্রয়োজন। এই পরিমান অর্থ বরাদ্দ করা হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর দুধের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। তবে বাজেট মাত্র ৮৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। কোন শিক্ষার্থী যদি খামারে গিয়ে দুধ চায় তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় না কমপক্ষে ১ থেকে ২ লিটার করে দুধ দেওয়া হয়।
দিবসটি উদযাপনে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড (মিল্কভিটা), আকিজ ডেয়রি লিমিটেড, ঢাকা আইসক্রিম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, নাবিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, নিউজিল্যান্ড ডেয়রি প্রোডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, আরলা ফুডস বাংলাদেশ লিমিটেড, আড়ং ডেয়রি, নেসলে বাংলাদেশ, প্রাণ ডেয়রি, ঈগলু আইসক্রিমসহ আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)র উদ্যোগে সর্বপ্রথম ২০০১ সালে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশেও এই দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে।
মন্তব্য