The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

জাবির গ্র্যাজুয়েটদের উচ্ছ্বাস যেন বাঁধভাঙা জোয়ার

উচ্চ মাধ্যমিকের পর কয়েক বছর আগে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন এই শিক্ষার্থীরা । আজ সবাই গ্র্যাজুয়েট। তাদের বিদায় জানাতেই আয়োজন করা হয়েছে স্বপ্নের সমাবর্তন উৎসবের । মাথায় হ্যাট আর গায়ে কালো গাউন জড়িয়ে চলছে গ্র্যাজুয়েটদের সমাবর্তন উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা । গ্র্যাজুয়েটদের পদচারণায় ক্যাম্পাস জুড়ে সাজসাজ রব। এ যেন উৎসবের আমেজ। আর এ অর্জনের আনন্দে উচ্ছ্বসিত প্রায় ষোল হাজার গ্র্যাজুয়েট।

আনুষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনের শেষ লগ্নটুকু নিজের মুঠোফোনে ধরে রাখার চেষ্টা সব গ্র্যাজুয়েটদের। স্বপ্নের সেই সমাবর্তনকে আরেকটু স্মৃতিময় করে রাখতে দূরদূরান্ত থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ক্যাম্পাসে এসেছেন গ্র্যাজুয়েটরা। কেউবা আবার তার প্রেয়সি ও আদরের সন্তানকে সঙ্গে এনেছেন ঐতিহাসিক মুহূর্তটাকে আরো রঙিন করতে। প্রিয় বাবা-মা, সন্তানকে গাউন, টুপি পড়িয়ে ছবি তুলছেন অনেকে। কেউবা উপরে টুপি ছুড়ে নিজেকে করছেন ফ্রেমবন্দি ।

কালো গাউনপরা গ্র্যাজুয়েটরা দলে দলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ক্যাম্পাসের প্রতিটি চত্বরে চত্বরে । দেখা হচ্ছে নবীন-প্রবীন সকলের সঙ্গে। বন্ধুত্বের টানে সাড়া দিতেই পুরনো ক্লাসরুম, পুরনো হলের বারান্দা, চিরচেনা প্রিয় ক্যাম্পাসে পা রেখেছেন সাবেকরা । আনন্দ-উৎসব, আড্ডায় মেতে উঠছেন গ্র্যাজুয়েটরা। পুরনো দিনের বন্ধু-বান্ধব, সিনিয়র-জুনিয়রদের সঙ্গে খোশগল্পে মেতে উঠছেন তারা।

তারা হরেকরকম পোজে ছবি তুলছেন । উড়ন্ত গ্র্যাজুয়েট, রিকশাওয়ালা গ্র্যাজুয়েট, ভূত গ্র্যাজুয়েট, শ্রমিক গ্র্যাজুয়েট,গাছধরা গ্র্যাজুয়েট, কাপল গ্র্যাজুয়েট, বিবাহিত গ্র্যাজুয়েটসহ বিভিন্ন পোজে ছবি তুলছেন তারা । সমাবর্তন উৎসবে রাষ্ট্রপতি ও গ্র্যাজুয়েটদের বরণ করতে পুরো ক্যাম্পাস সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে । বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ দিন এটি। শেষ দিনটি একদিকে যেমন আনন্দের ঠিক তেমনি বেদনার। ছেড়ে যেতে হবে প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ।
স্কুল আর কলেজ পেরিয়ে উচ্চ শিক্ষার সোপানে পা রাখা শিক্ষার্থীদের আত্ম প্রতিষ্ঠা অর্জনের পরম ঠিকানা হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনা । অধ্যয়ন আর জ্ঞান আহরণ শেষে সমাপ্তি ঘটে মধুর এই জীবনের। বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতায় সনদ প্রাপ্তির এই আয়োজনই হলো সমাবর্তন।

সমাবর্তন প্রতিটি গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষ্ঠান বটে । জীবনের অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন একজন শিক্ষার্থী। এজন্য বিদায়ের মুহূর্তটাকে একটু আনন্দময় করতেই আয়োজন করা হয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানের ।

সমাবর্তনকে ঘিরে গ্র্যাজুয়েটদের উচ্ছ্বাস যেন বাঁধভাঙা । আজ শনিবার সমাবর্তনের দিনক্ষণ হলেও আগে থেকেই কালো গাউন,ক্যাপ,টাই সংগ্রহ করে আনন্দে মেতেছেন গ্র্যাজুয়েটরা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন থেকে শেষ পর্যন্ত ক্যাম্পাসের আনাচে কানাচে যত স্মৃতি রয়েছে তা রোমন্থন করছেন বিদায়ী শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের সবখানেই যেন তাদের সরব উপস্থিতি।

এই সমাবর্তনের মধ্যে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে কর্মজীবনের পথে পা বাড়াবে গ্র্যাজুয়েটরা। আর এই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জিত জ্ঞানকে ধারন করে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করার প্রত্যয় তাদের ।

একদল গ্র্যাজুয়েট উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে জানান, সমাবর্তন ব্যাপারটা সত্যি আমাদের জন্য অনেক গর্বের এবং অনেক আনন্দের । বেশ মজার সময় পার করছি। জীবনের এই পর্যায়ে এসে মা-বাবা, শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এতো দিনের অর্জনটা শুধু আমাদের একার না, আমাদের সবার বাবা-মায়ের অর্জন। সেটা ভেবে একদিকে যেমন ভালো লাগছে তেমনি আবার খারাপও লাগছে যে, শেষ হয়ে গেল ছাত্র জীবন।

ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে সমার্বতনের প্যান্ডেল , অভ্যন্তরীন বিভিন্ন সড়ক যেন গ্র্যাজুয়েটদের দখলে। এদিকে বসন্তের বিভিন্ন ধরনের ফুল শোভা পাচ্ছে গাছে গাছে । মূল ফটক থেকে শহীদ মিনার, প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবনগুলো, আবাসিক হলগুলোতে যেন সাবেক বর্তমান শিক্ষার্থীদের এক মিলনায়তনে পরিণত হয়েছে ।

আজ শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ষষ্ঠ সমাবর্তনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় চ্যান্সেলর জনাব মো. আবদুল হামিদ সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন । জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো.নূরুল আলম সমাবর্তনে বক্তব্য রাখেন । সমাবর্তনে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। সমাবর্তনে প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন এবং ১৬ জন কৃতি শিক্ষার্থীকে গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়।

সমাবর্তনে একদিকে আছে স্বপ্ন জয়ের আনন্দ অন্যদিকে বাজছে প্রিয় বিদ্যাপিঠ থেকে বিদায়ের সুর। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মধুর স্মৃতি অমলিন থাকবে সারাজীবন। জীবনের প্রতি বাঁকে হয়ে থাকবে সুখস্মৃতি । এমনটাই প্রত্যাশা বিদায়ী শিক্ষার্থীদের।

লেখক: ইমন ইসলাম, জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.