করোনায় সাত মাস পিছিয়ে আছি: ঢাবি ভিসি

করোনাভাইরাসের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাত মাসের মত সময় পিছিয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। শনিবার (০১ জানুয়ারি) একটি জাতীয় দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাবি উপাচার্য বলেন, করোনা পুরোবিশ্বকে পালটে দিয়েছে। শিক্ষাঙ্গনও নানাভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। আমাদের দেশও তার বাইরে নয়। আমরাও নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছি।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে, বিশেষ করে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আমরা একটু হিসাব করে দেখলাম, আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যৌথ সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, এই পরিস্থিতি কিভাবে উত্তরণ ঘটানো যায়, কার্যক্রম সক্রিয় রাখা যায়।
এর আগে, গত ১ অক্টোবর থেকে ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। পরে করোনার ছুটি শেষে গত বছরের অক্টোবর ১৭ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়েরও ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়।
অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, খুব আনন্দের সঙ্গে লক্ষ করেছি, বাধা বিপত্তি, অনেক প্রতিকূলতা, অনেক অনভিজ্ঞতা ও অনেক ঘাটতি থাকার পরও প্রতিটি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর হঠাৎ প্রস্তুতি ছাড়াই সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সেই বিষয়গুলো ঠেস দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
এদিকে, করোনায় শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ‘লস রিকভারি প্লান’ তৈরি করেছে ঢাবি। উপাচার্য বলেন, করোনা মহামারীর কারণে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) অর্জনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে সময় সাশ্রয়ী কর্মসূচি হিসেবে ‘লস রিকভারি প্লান’ (Loss Recovery Plan) প্রণয়ন করেছে।
করোনায় বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সাত মাসের মতো একটা ঘাটতি আছে। কোথাও কোয়ালিটির সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করা লাগেনি। এটা সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গির একটা বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নানা প্রতিকূলতার মাধ্যমেও এটা করতে পেরেছে। আমাদের লস রিকোভারি প্রজেক্ট আছে।
উপাচার্য আরও বলেন, অনলাইনে অনেকগুলো কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে। সীমাবদ্ধতার মধ্যেও শিক্ষার্থীরা যে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে, এটা বিশাল একটা অর্জন। এই শুভ অর্জন সামনের দিক শক্তিশালী করবে। আশা করছি করোনায় শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা পুষিয়ে যাবে এব দ্রুত ঘাটতিগুলো কেটে যাবে।
চলতি মাসে ৪৩তম বিসিএসের ফল

৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। চলতি মাসের যেকোন সময় এ প্রকাশিত হতে পারে। এ বিসিএস প্রিলির পরীক্ষায় প্রায় তিন লাখ ২১ হাজার ৫৭২ জন প্রার্থী অংশ নিয়েছেন।
পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, ৪৩তম বিসিএসের মাধ্যমে সরকার বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৮১৪ জনকে নিয়োগ দেবে। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ হবে ৩০০ জন। পুলিশের এএসপি পদে নিয়োগ হবে ১০০ জন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ দেয়া হবে ২৫ জনকে।
শিক্ষায় সবচেয়ে বেশি ৮৪৩ ক্যাডার নিয়োগ দেয়া হবে। এ ছাড়া অডিটে ৩৫, ট্যাক্সে ১৯, কাস্টমসে ১৪, সমবায়ে ২০, ডেন্টাল সার্জন পদে ৭৫ ও অন্যান্য ক্যাডারে নিয়োগ দেয়া হবে ৩৮৩ জনকে।
ফল প্রকাশের বিষয়ে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নূর আহম্মদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ৪৩তম প্রিলিমিনারির ফল চলতি মাসেই প্রকাশ করা হবে। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
এর আগে, গত বছরের ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় এই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। আটটি বিভাগীয় শহরের ৩৬৯ কেন্দ্রে একযোগে এ পরীক্ষা হয়। এতে এ পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেন ৪ লাখ ৪২ হাজার ৮৩২ জন চাকরিপ্রার্থী, যা বিসিএসের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আবেদনের রেকর্ড।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর ৪৩তম সাধারণ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দেয় পিএসসি। ৩০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় আবেদন প্রক্রিয়া। শুরুতে আবেদনের শেষ সময় এ বছরের ৩১ জানুয়ারি করা হলেও পরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সুপারিশে সময় বাড়িয়ে ৩১ মার্চ পর্যন্ত করা হয়েছিল।
পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই শিক্ষক নিয়োগের দাবি

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই চূড়ান্ত সুপারিশপত্র দেয়ার দাবি তুলেছেন প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকরা। তারা বলছেন, তিন মাস শেষ হতে চললেও এখনো সব জেলায় ভেরিফিকেশন কার্যক্রম শুরুই করা যায়নি। এই অবস্থায় দ্রুত নিয়োগের দাবি তুলেছেন তারা।
প্রার্থীরা বলছেন, প্রথম ও দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে এক মাসের মধ্যে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হলেও তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে টালবাহানা করা হচ্ছে। প্রিলি, লিখিত ও ভাইভায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ না পাওয়ায় হতাশা ও অনিশ্চয়তায় দিন পার করছেন তারা। সব ধাপে উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ না পাওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন প্রার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্ত এক প্রার্থী জানান, ২০২১ সালের মার্চে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। নতুন বছর শুরু হলেও এখনো যোগদান করতে পারিনি। নতুন চাকরি পাওয়ার খুশিতে পুরোনো চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছি। এই অবস্থায় পরিবার নিয়ে খুব অসহায় অবস্থায় দিন পার করছি।
আরেক প্রার্থী জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এনটিআরসিএ চাইলে ভেরিফিকেশন চলমান রেখেও সুপারিশপত্র দিতে পারে। তবে সেটি তারা করছে না। কবে সবার ভেরিফিকেশন শেষ হবে আর কবে যোগদান করতে পারবো সেই অনিশ্চয়তা কাটছে না।
এদিকে ভেরিফিকেশন ছাড়াই যোগদান অথবা ভেরিফিকেশন চলমান রেখে যোগদানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন প্রার্থীদের দ্রুত চূড়ান্ত সুপারিশপত্র আমরাও দিতে চাই। তবে মন্ত্রণালয়ের লিখিত নির্দেশনা ছাড়া এটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনটিআরসিএর এক কর্মকর্তিা জানান, তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ভেরিফিকেশন ছাড়া যোগদান করানো যায় কিনা সে বিষয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। অনেকেই এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। আবার অনেকে বলেছেন, যাদের ভেরিফিকেশন শেষ হয়েছে তাদের সুপারিশপত্র দিয়ে দেয়ার। তবে বিষয়টি কার্যকর করতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রয়োজন। মন্ত্রণালয় চাইলে প্রার্থীদের দ্রুত যোগদান সম্ভব। না হলে ভেরিফিকেশন শেষ হলেই সুপারিশপত্র দেয়া হবে।
তথ্যমতে, সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ৫৪ হাজার ৩০৪ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধনের এই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ১৯ এপ্রিল। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা হয় ২০১৯ সালের জুলাইয়ে। এরপর মৌখিক পরীক্ষা হয় ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয় গত বছরের ১৫ জানুয়ারি।
২০২১ সালের ৩০ মার্চ ৫৪ হাজার শূন্যপদের বিপরীতে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তবে বিভিন্ন নিবন্ধনের রিটকারীদের জন্য ২ হাজার ২০০টি পদ সংরক্ষণ করে বাকি পদগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়। আবেদন না পাওয়ায় এবং মহিলা কোটায় যোগ্য প্রার্থী না থাকায় ১৫ হাজার ৩২৫টি পদ ফাঁকা রেখে ৩৮ হাজার ২৮৬ পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। তবে ৬ হাজার ৩ জন প্রার্থী পুলিশ ভেরিফিকেশনের ফরম পূরণ করে না পাঠানোয় ৩২ হাজার ২৮৩ জনের পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হচ্ছে। এই কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা।
৩ কোটি বইয়ের ঘাটতি নিয়ে নতুন বছর শুরু

নতুন বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই দেয়ার উৎসব শুর হচ্ছে। তবে সাড়ে ৩ কোটি মুদ্রণ বাকি রেখেই আজ শিশুদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক স্তরে ৪ কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৫ কোটি বই বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের জন্য ২৪ কোটি ৭১ লাখ ৫৫ হাজার ২০২টি। আর প্রাথমিক স্তরে বিতরণ করা হবে প্রায় ১০ কোটি বই।
সূত্র জানায়, প্রায় ২০০টি ছাপাখানার মাধ্যমে বই ছাপানোর কাজ চলছে। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত প্রাথমিকে ৯ কোটি ২৭ লাখ ৬২ হাজার ২৩২ এবং মাধ্যমিকে ২১ কোটি ৯২ লাখ ২০ হাজার ৫৫৫টি সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। এই হিসাবে প্রাথমিকে ৭০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪২ এবং মাধ্যমিকে ২ কোটি ৭৯ লাখ ৪২ হাজার ৭০১টি সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনসিটিবি সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আইন অনুযায়ী, মুদ্রণকারীরা মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত বই সরবরাহের সময় পান। কিন্তু সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসাবে তারা এবার বেশ সহযোগিতা করেছে। তাদের সহযোগিতায় বাকি কাজটুকুও লক্ষ্যমতো শেষ হবে বলে আশা করছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যে পরিমাণ বই ছাপানোর কথা বলা হয়েছে মাঠ পর্যায়ে তত বই পৌঁছায়নি। এক কোটি বই এখনো ট্রাকে পথে আছে। বই ছাপায় বেহাল দশার কারণেই করোনার দোহাই দিয়ে এবার ১৩ দিন ধরে বই বিতরণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। মূলত বই মুদ্রণ শেষ করতে এবার গোটা জানুয়ারি মাস লেগে যেতে পারে। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীরা সব বই একসঙ্গে নাও পেতে পারে।
এদিকে মাঠ পর্যায়ে বই বিতরণে দায়িত্বে রয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এ ব্যাপারে সংস্থাটির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, যদি সব বই না যায় তাহলে ধাপে ধাপে দেওয়া হবে। এটা বড় কোনো সমস্যা নয়। কেননা, জানুয়ারিতে ক্লাস কম হয়। ।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সাল থেকে দেশে প্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বই দিয়ে আসছে সরকার।২০২২ শিক্ষাবর্ষে এবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের জন্য মোট ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০ কপি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। এরমধ্যে প্রাথমিক স্তরের মোট বই ছাপা হচ্ছে ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭৪ কপি। আর মাধ্যমিক স্তরের জন্য মোট ২৪ কোটি ৭১ লাখ ৫৫ হাজার ২০২ কপি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে
মন্তব্য