বাসন মাজা তরুণটি ৬০০ কোটি রুপির মালিক হলেন যেভাবে

জীবনের তাগিদে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান যখন তখন তার বয়স ২২। টিকে থাকতে শুরুতে রেস্তরায় রাসন মেজেছেন। ভ্যানচালিয়ে মথার ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার করেছেন। একদা বাসন মাজা সেই তরুণ আজ যুক্তরাজ্যে ৬০০ কোটি রুপি সম্পদের মালিক।
পঞ্জাবের বাসিন্দা এই তরুনের নাম তেজিন্দর সিং শেখন। পাঞ্জবের লুধিয়ানা কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক শেষে ২০০২ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। যুক্তরাজ্যে তেজিন্দর রিয়েল এস্টেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম রেডস্কাই হোমস গ্রুপ। এই প্রতিষ্ঠান লন্ডনের আশপাশে ফ্ল্যাট নির্মাণ করে। পরে সেগুলো ভাড়া দেয়।
খুব ছোট থাকতে তেজিন্দর তার বাবাকে হারান। দুই একর জমি চাষাবাদে মন দেন তাঁর মা। তেজিন্দর শস্যখেত ও গবাদিপশু লালন-পালনে মাকে সাহায্য করতেন।
তেজিন্দর যখন খুব ছোট, তখন তাঁর বাবা মারা যান। বাবার রেখে যাওয়া দুই একর জমি চাষাবাদে মন দেন তাঁর মা। তেজিন্দর শস্যখেত ও গবাদিপশু লালন-পালনে মাকে সাহায্য করতেন। সকালে মার সঙ্গে কাজ করার পর স্কুলে যেতেন।
১৯৯৭ সালে তিনি কলেজের গণ্ডি পার করেন। তেজিন্দরের ইচ্ছা ছিল সেনাবাহিনীতে চাকরি করার। কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষায় পাস করতে না পারায় দেশ ছাড়েন তিনি। চলে যান হংকংয়ে। কিন্তু সেখানেও কোনো চাকরি না পাওয়ায় দেশে ফিরে আসেন। এ অবস্থায় বোনদের বিয়ের সময় আসে। বিয়ের খরচের জন্য জমি বিক্রি করতে বাধ্য হতে হয় তাঁকে। সেই অর্থে ২০০০–২০০১ সালে তাঁর দুই বোনের বিয়ে হয়। এরপর ২০০২ সালে তিনি যুক্তরাজ্য চলে যান।
যুক্তরাজ্যে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় তেজিন্দরকে। শুরুতে তাঁর কাজ ছিল মাটি কাটা, বেতন ৪০ পাউন্ড। কিন্তু একটি অ্যাপার্টমেন্টে সপ্তাহে ছয় হাজার রুপি ভাড়ায় তাঁকে থাকতে হতো। এ কারণে তিনি বাড়তি কাজ হিসেবে বাসন মাজার কাজ খুঁজে নিয়েছিলেন।
একটি ব্যাংক থেকে তিন লাখ রুপি ঋণ নিয়ে একটি ডেলিভারি ভ্যান কিনেছিলেন। সেই ভ্যান নিজেই চালিয়ে পানীয় ডেলিভারির শুরু করেন তিনি। এভাবেই শুরু হয় তাঁর মদের ব্যবসা। রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরুর আগে তেজিন্দর মদের ব্যবসা করেছেন। এই ব্যবসা সফল হলেও তিনি কখনো মদ্যপান করেননি। পরে এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিক্রি করে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
২০০৫ সালে আবারও ঋণ নিয়ে একটি বাড়ি কেনেন তেজিন্দর। তিনি আগের বাসায় তাঁর সঙ্গে থাকা সঙ্গীদের নিজের বাড়িতে ভাড়া দিয়ে থাকার প্রস্তাব দেন। সেই অর্থ দিয়ে ধীরে ধীরে তিনি বাড়ি কেনার জন্য ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করেন। ২০১৫ সালে মদের ব্যবসা বিক্রি করে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করেন।
সম্প্রতি তেজিন্দর ২০২ কোটি রুপির একটি নতুন প্রকল্প চালু করেছেন। পাঞ্জাবে তাঁর নিজ গ্রামের নামে ওই ভবনটির নাম দিয়েছেন ‘বারুনদি কোর্ট’।
২০০৭ সালে সুখবীর কউর শেখনের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন। তাঁদের দুই ছেলেসন্তান। তেজিন্দরের ব্যবসার ৫০ শতাংশের অংশীদার তাঁর স্ত্রী সুখবীর। বারুনদিতে বর্তমানে তাঁর একটি খামারবাড়ি আছে।
ঢাবির ফার্মেসি অনুষদের ১২ শিক্ষার্থী ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেলেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০১৮, ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালের বি.ফার্ম, প্রফেশনাল পরীক্ষায় অসাধারণ ফল অর্জন করায় ঢাবির ফার্মেসি অনুষদভুক্ত বিভিন্ন বিভাগের ১২জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) ঢাবির নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সেনেট ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে এই অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
এছাড়া, অনুষ্ঠানে ফার্মেসি অনুষদের কয়েকজন কৃতী শিক্ষার্থীকে বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল সোসাইটি স্বর্ণপদক, কথাশিল্পী সরদার জয়েন উদ্দীন পদক ও বদরুন্নেছা গফুর মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ড বৃত্তি দেওয়া হয়।
ডিনস অ্যাওয়ার্ড পাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন- ফারিয়া তাসনিম, মোকাদ্দাস ফ্লোরা অনন্ত, ফয়সাল আবদুল্লাহ ইমন, নাজিফা তাবাচ্ছুম, মো. সাব্বির হোসেন, সায়মন শাহরিয়ার, রাশমিয়া নার্গিস রিদা, কাজী মিলেনুর রহমান প্রত্যয়, আসেফ রাজ, আহাদ চৌধুরী, সাদিয়া তাসনিম মিনা ও নুসরাত জাহান শাওন।
প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা রকিবুল এখন মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

দিনের বেলা হইহুল্লোড়, বন্ধুদের সাথে কাদাপানিতে খেলাধুলা করেই বেড়ে উঠেছেন। রাতে কেরোসিনের কুপি জ্বালিয়ে করেছেন ক্লাসের পড়া। গ্রামে তখনো বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। এই ছিলো এস এম রকিবুল হাসানের রুটিন। আশপাশে পড়ালেখায় কারো আগ্রহ না থাকলেও খেলার মাঠের সাথে খেলার সাথিও জটে যেত অনায়াসেই।
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার রায়পুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হয়েছে রকিবুলের ছেলেবেলার পড়াশোনা। নামী কোনও স্কুল ছিল না। শিক্ষকের সংখ্যাও হাতে গোনা। সেই রকিবুল এখন যুক্তরাষ্ট্রের মার্সার ইউনিভার্সিটির ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
নতুন ওষুধের মাধ্যমে কীভাবে রক্তনালির ত্রুটি সংশোধন করা যায় এবং উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ঠেকানো যায়, সেই বিষয়ে বিস্তর গবেষণা করছেন তিনি। গত বছর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ থেকে পেয়েছেন ৪ লাখ ২৫ হাজার মার্কিন ডলার বা ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকার অনুদান। এছাড়া আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন থেকে বিশেষ ফেলোশিপ পেয়েছেন।
মাধ্যমিকে ছয় বিষয়ে লেটার মার্কস পেয়ে ১৯৯৯ সালে পাস করেন রায়পুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ শেষ করেন। ভর্তি পরীক্ষায় টিকে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসি বিভাগে।
জাবির ফার্মাসি বিভাগ থেকে স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় ও স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসে বিপণন নির্বাহী হিসেবে কর্মজীবন শুরু। ৯ মাস পর শিক্ষা ও গবেষণার সঙ্গে যুক্ত থাকতে প্রথমে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং পরে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামে শিক্ষাবৃত্তিসহ ভর্তির সুযোগ পান।
বাংলাদেশের বহু মানুষ হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের কারণে মারা যায়, এ নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলেন রকিবুল। ২০১৬ সালে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন তাঁকে গবেষণার জন্য অনুদান দেয়।
বাবা শিক্ষক বলেই শিক্ষকতার সুযোগই খুঁজছিলেন রকিবুল। সে সুযোগ হয় ২০১৮ সালে, জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের মার্সার ইউনিভার্সিটির ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেস বিভাগে যোগ দেন তিনি। গবেষণার জন্য নিজস্ব ল্যাব স্থাপন করেন। মাস্টার্স ও পিএইচডির শিক্ষার্থীদের গবেষণা তত্ত্বাবধান করছেন। পাশাপাশি ডক্টর অব ফার্মাসির শিক্ষার্থীদের পড়ান।
রকিবুলের প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের সংখ্যা ৫২। তাঁর প্রতিবেদনকে সাইটেশন করা হয়েছে দেড় হাজারের বেশি প্রবন্ধে। রকিবুল বলেন, সব সফলতার জন্য আমার বাবার কাছে কৃতজ্ঞ।
শত প্রতিকূলতায় ঘুরে দাঁড়ানো পারভীন চান্স পেলেন মেডিকেলে

টিআরসি রিপোর্টঃ পার্বত্যাঞ্চলের দূর্গম জনপথ লংগদু। সেখানেই বেড়ে উঠা এক অদম্য শিক্ষার্থীর নাম পারভীন আক্তার। এই দূর্গম অঞ্চল থেকে পারভিনই প্রথম মেয়ে যে সরকারি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।
মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নওগাঁ মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছে পারভীন আক্তার। সারাদেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় ১০৪৮৩তম স্থান অর্জন করেন।
রাঙামাটির লংগদু উপজেলার ভাসান্যাদম ইউনিয়নের চাইল্যাতলী এলাকার মো. সাহেব আলীর ছোট মেয়ে পারভীন আক্তার। আট ভাই-বোনের মধ্যে পারভীন সবার ছোট বোন। তার পরে ছোট এক ভাই রয়েছে। অর্থাভাবে পারভীনের বড় তিন বোনের পড়ালেখা বেশিদুর এগোয়নি। তার সংসার জীবনে ব্যস্ত। পারভীনের পরবর্তী বড় তিনবোনের একজন রাঙামাটি সরকারি কলেজে মাস্টার্স করছেন, অন্য দুইজন অনার্স পড়ছেন। ছোট ভাই শহরের একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছেন।
এলাকায় ছোট্ট টিনের ঘর ছাড়া তাদের আর তেমন কিছু নেই। তবুও মনকে কখনো ছোট করেনি, শত বাঁধাবিপত্তি, আর্থিক অনটন ও গ্রাম্য কুসংস্কার ডিঙিয়ে আপন ঠিকানায় ছুটে চলেছেন তিনি।
পারভীনের বাবা মো. সাহেব আলী জানান, সামন্য ব্যাটালিয়েন চাকরি করে সংসার ও সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালানো কষ্টসাধ্য। তবুও সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেষ্টা করছেন। নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও আমার ছোট মেয়ে সরকারি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে এটাই আমাদের বড় পাওয়া।
স্কুল শিক্ষক আল মামুন ইবনে মিজান বলেন, পারভীন খুবই মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। সে নিজের মেধা ও প্রজ্ঞায় মেডিকেলে পড়ার চান্স পেয়েছে। সে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীর মধ্যে শান্তশিষ্ট ও শিক্ষকদের অনুগত ছাত্রী ছিলেন।
তিনি আরো বলেন, পারভীন এই দূর্গম অঞ্চল থেকে প্রথম মেয়ে যে সরকারি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। আশা করি ওর এই দৃষ্টান্ত অনুকরণ করে সামনে আরও অনেকে ভালো অবস্থান করে নিবে। পারভীন রাবেতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেছে। সে মেডিকেলে পরীক্ষা দিয়ে মেধার অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
পারভীন আক্তার বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। এই ইচ্ছা শক্তিই আমাকে এ সফলতা এনে দিয়েছে। শিক্ষা জীবন জুড়েই বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে লেখাপড়া চালিয়েছি। নিজ প্রচেষ্টায় সব বাঁধা জয় করে এখন মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছি।
কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন করে নিজ অঞ্চলে গরীব দুঃখি মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চান তিনি।
মেডিকেলে তৃতীয় তাবিয়া: চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চান

এবারের মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ৮৮ নম্বর পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন তাযকিয়া তাবিয়া রিফাত। তিনি রাজধানীর ভিকারুননেসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী। জিপিএ সহ তার মোট প্রাপ্ত নম্বর ২৮৮।
ভর্তি পরীক্ষায় পুরো দেশের মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করার পর অনুভুতি প্রকাশে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে এত ভালো ফলাফল করতে পেরেছি। আমার স্বপ্ন, আমি চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করবো। আমি সর্বদা গরীব অসহায়দের পাশে থাকতে চাই। একজন চিকিৎসকের এটাই স্বপ্ন হওয়া উচিৎ।
এর আগে রোববার (১২ মার্চ) দুপুর দুইটায় সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় এবার পাস করেছেন ৪৯ হাজার ১৯৪ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থী ২৮ হাজার ৩৮১ জন এবং ছেলে শিক্ষার্থী ২০ হাজার ৮১৩ জন।
মন্তব্য