ঘুষ লেনদেনের মামলায় মিজানুর ও বাছিরের কারাদণ্ড

ঘুষ লেনদেনের মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বরখাস্ত হওয়া পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে পৃথক দুটি ধারায় মোট আট বছরের কারাদণ্ড ও ৮০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বরখাস্ত হওয়া পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে একটি ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।
আজ বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় দেন। রায় ঘোষণার আগে আসামি বাছির ও মিজানকে আদালতে হাজির করা হয়।
১০ ফেব্রুয়ারি এ মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়। আর আজ রায় ঘোষণা করা হলো।
দুদকের মামলা থেকে বাঁচিয়ে দিতে তৎকালীন ডিআইজি মিজানুরের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয় বাছিরের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুজনের বিরুদ্ধেই মামলা করেন দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা।
তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি মিজানুর ও বাছিরের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক।
অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে একই বছরের ১৮ মার্চ দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
২০২০ সালের ১৯ আগস্ট মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বাছির কমিশনের দায়িত্ব পালনকালে অসৎ উদ্দেশ্যে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। তিনি মিজানুরকে অবৈধ সুযোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাঁর কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন। তিনি ঘুষের ওই টাকার অবস্থান গোপন করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ করেছেন।
মামলার শুনানিতে বাদী শেখ ফানাফিল্যা আদালতে বলেছিলেন, সরেজমিন অনুসন্ধানকালে দেখা যায়, মিজানুর ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি একটি বাজারের ব্যাগে করে ২৫ লাখ টাকা বাছিরকে দেওয়ার জন্য রমনা পার্কে মিলিত হন। আলোচনা শেষে রমনা পার্ক থেকে মিজানুরের গাড়িতে ওঠেন বাছির। পরে গাড়িটি যখন শাজাহানপুরে থামে, তখন মিজানুর ২৫ লাখ টাকা বাছিরের হাতে তুলে দেন। একইভাবে ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রমনা পার্কে মিজানুরের সঙ্গে দেখা করেন বাছির। তারপর মিজানুরের গাড়িতে উঠে শান্তিনগরে আসেন বাছির। তখন মিজানুরের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেন বাছির।
শেখ ফানাফিল্যা আদালতে আরও বলেছিলেন, মিজানুরের কাছে একটি গাড়িও দাবি করেন বাছির। গাড়ি দাবি করার বিষয়টি লিখিতভাবে দুদকের কাছে স্বীকার করেন বাছির। মিজানুর ও বাছির বেআইনিভাবে অন্যের নামে দুটি সিম ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে খুদে বার্তা আদান-প্রদান করতেন। তাঁদের মধ্যে খুদেবার্তা আদান-প্রদানের বিষয়টি ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন (এনটিএমসি) মনিটরিং সেন্টারের ফরেনসিক কল রেকর্ডিংয়ে প্রমাণিত হয়।
অগ্রণী ব্যাংক এমডির অর্থপাচারের অভিযোগ তদন্তে দুদক

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ ও অবৈধ সুবিধা নিয়ে ঋণ, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দুমন কমিশন (দুদক)। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগ খতিয়ে দেখবে সংস্থাটি। এ জন্য শামস-উল ইসলাম ও তার স্ত্রী নাসরিন হাসান চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়।
ব্যাংকগুলোতে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, শামস-উল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ ও অবৈধ সুবিধা নিয়ে ঋণ দেওয়াসহ নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতপূর্বক মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচার ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার ও তার স্ত্রী বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসাব থাকলে জানাতে হবে। চলমান, সুপ্ত বা ইতিপূর্বে কোনো হিসাব বন্ধ হয়ে থাকলে সে তথ্য দিতে হবে। ব্যাংকগুলোতে পাঠানো চিঠিতে শামস উল-ইসলাম ও তার স্ত্রীর ঠিকানা হিসেবে রাজধানীর উত্তরার ১ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর রোডের একটি বাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
দুদকের অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য শামস-উল ইসলামের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শামস-উল ইসলাম ১৯৮৪ সালে অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। ব্যাংকটির বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৮ সালে মহাব্যবস্থাপক হিসেবে পদোন্নতি পান। পরবর্তীতে ডিএমডি হন। এর পর প্রথমে তাকে আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে তিন বছরের জন্য অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। ২০১৯ সালে মেয়াদ শেষে আরও তিন বছরের জন্য তাকে এমডি করা হয়। চলতি বছরের আগস্টে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
‘গুম আতঙ্কে’ দুদক কর্মকর্তা শরিফ

পটুয়াখালীর দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে থেকে চাকরিচ্যুত উপ-সহকারী পরিচালক শরিফ উদ্দিন যে কোনো সময় গুম হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পটুয়াখালী দুদক কার্যালয়ের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে তিনি এ আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। মানববন্ধনে পটুয়াখালীর দুদক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আরিফ হোসেন, সহকারী পরিদর্শক কৃষ্ণপদ বিশ্বাস, উপ-সহকারী পরিদর্শক সিকদার মুহম্মদ নুরুন্নবী, উচ্চমান সহকারী মো. নুর হোসেন গাজীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
গত বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুদক কর্মচারী চাকরি বিধিমালা ২০০৮ এর ৫৪(২) বিধি অনুযায়ী মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন।
চাকরিচ্যুত উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরিফ উদ্দিন বলেন, সাত বছরের চাকরি জীবনের বেশির ভাগ চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার এলাকায় চাকরি করেছি। তখন অনেক বড় বড় ব্যক্তিদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করেছি। বিশেষ করে চট্টগ্রামে জমি অধিগ্রহণে অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ১৫৫ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দিয়েছি। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়ে ২০ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দিয়েছি। চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম নিয়ে কাজ করেছি। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার একটি প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে কাজ করতে গিয়ে পেট্রোবাংলার ডাইরেক্টর (প্লানিং) আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিয়েছি।
তিনি বলেন, এ কারণে ৩০ জানুয়ারি (আইয়ুব খান) আমার বাসায় এসে আমাকে এক সপ্তাহের মধ্যে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার হুমকি দেন। এ ঘটনা আমি অধিদপ্তরকে অবহিত করেছিলাম। তবে এক সপ্তাহ নয় তার একটু বেশি সময় লেগেছে। ১৬ দিনের মাথায় আমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো।
তার দাবি, বুধবার দুদক কর্মচারী চাকরি বিধিমালা ২০০৮ এর ৫৪(২) বিধি অনুযায়ী দুদক চেয়ারম্যান মো. মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ আমাকে চাকরি থেকে অপসারণ করেন। এর আগে আমাকে কোন ধরনের কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়নি। এখন আমি অজ্ঞাত স্থানে আছি, যেকোনো সময় গুম হয়ে যেতে পারি’।
৮০ জন নারীকে পাচার করেছে চক্রটি

গার্মেন্টস ও বেসরকারি কোম্পানিতে ভালো বেতনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে নারী পাচারে জড়িত একটি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গত আড়াই বছরে এই চক্রের সদস্যরা দুবাই, সৌদি আরব ও ওমানে ৮০ জন নারীকে পাচার করেছেন বলে দাবি র্যাবের।
গতকাল রোববার রাতে উত্তরার বিমানবন্দর এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় পাসপোর্টসহ উদ্ধার করা হয় তিন নারীকে। তাঁদের গতকাল রাতেই দুবাই পাঠানো হচ্ছিল বলে জানিয়েছে র্যাব।
আজ সোমবার সংবাদ সম্মেলনে র্যাব–১–এর অধিনায়ক আবদুল্লাহ আল মোমেন বলেন, দুবাইয়ে বসে মহিউদ্দিন ও শিল্পী নামের দুজন চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁদের হয়ে দেশে কাজ করতেন গ্রেপ্তার আজিজুল হক, মোছলেম উদ্দিন ও কাউছার। তিনি বলেন, ঢাকার আশপাশের এলাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করেন, এমন মেয়েদের ভালো বেতনের চাকরির কথা বলে বিদেশে পাচার করা হয়।
র্যাব জানায়, বিদেশে যেতে টাকা লাগে। সেখানে উল্টো নারীদের ২০ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে এবং নিজ খরচে ভিসা ও পাসপোর্টের ব্যবস্থা করেন চক্রের সদস্যরা। বিমানবন্দর এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া তিন নারী আবদুল্লাহপুর ও টঙ্গী এলাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। চক্রের সদস্যরা ওই তিন নারীর পাসপোর্ট তৈরি করে নিজেদের কাছে রেখেছিলেন। গতকাল তাঁদের বিদেশযাত্রার কয়েক ঘণ্টা আগে বিমানবন্দর এলাকায় ডেকে আনা হয়েছিল। পাসপোর্ট ও ভিসা বুঝিয়ে দেওয়ার আগে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গাড়ি ছাড়ার আগে টার্মিনালে চালকদের ডোপ টেস্ট

মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো ঠেকাতে টার্মিনালগুলোতেও চালকদের ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
রোববার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহণ সেক্টরে শৃঙ্খলা জোরদারকরণ এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য টাস্কফোর্সের সভায় মন্ত্রী একথা জানান।
সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকারি সব জায়গায় ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছি, প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা আছে। চালকদেরও আমরা ডোপ টেস্টের আওতায় নিয়ে আসছি। বিআরটিএ যখন লাইসেন্স দিচ্ছে তখনো ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে। শুধু লাইসেন্সের সময়ই নয়, আমরা টার্মিনালগুলোতে পর্যায়ক্রমে ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করব। গাড়ি যখন তারা চালাবে, এর আগেই টেস্ট করে চালাবে এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত আমরা নিতে যাচ্ছি এবং সে অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে।
বিআরটিতে গত ৩০ জানুয়ারি থেকে লাইসেন্স নেওয়ার জন্য চালকদের ডোপ টেস্ট করতে হচ্ছে।
সড়ক আইনে চালক এবং সুপারভাইজারকে গাড়ির মালিকদের পক্ষ থেকে নিয়োগপত্র দেওয়ার কথা বলা হলেও তা করা হয়নি জানিয়ে দুই মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
সড়ক আইনে চালক ও সুপারভাইজারকে মালিকদের নিয়োগপত্র দেওয়ার কথা রয়েছে জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমরা বারবার বলার পরেও এটা দেওয়া হচ্ছিল না। আগামী দুই মাসের মধ্যে মালিক এবং শ্রমিক যারা আছেন, তারা বসে কখন কীভাবে শুরু করবেন- এটা ঠিক করবেন। এটা বাধ্যতামূলক, আমরা দুই মাস পরে রাস্তায় সেটা চেক করব। নিয়োগপত্র ছাড়া কোনো ড্রাইভার গাড়িতে উঠতে পারবে না।
মন্তব্য