আ.লীগকে নিষিদ্ধ না করলে রাজপথে আবারও রক্ত ঝরবে : এনসিপি নেতা

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মেজর (অব.) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেছেন, বর্তমান সরকার ও বিচার বিভাগে যারা আছেন তাদের সবাইকে আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, বর্তমানে আওয়ামী লীগের বিচারের অত্যন্ত ধীরগতি দেখতে পাচ্ছি। ৮ মাস পরেও এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোনো স্পষ্ট বিচার আমাদের চোখে পড়েনি। এই বিচারব্যবস্থাকে দ্রুততর করার জন্য যত ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন আমি বিশ্বাস করি আপনারা নেবেন।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে শ্রীপুর পৌর এলাকার মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর নিচে জাতীয় নাগরিক পার্টির আয়োজনে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের আগে এক বিক্ষোভ মিছিল মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, কেন্দ্রীয় সংগঠক আব্দুল্লাহ আল মুহিম, শ্রীপুর উপজেলা এনসিপির নেতা আবু রায়হান মিসবাহ্ প্রমুখ।
আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, কিছু দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক নেতা এখনো আওয়ামী লীগকে পুনবার্সন করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা তাদের স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, মাওনার মাটিতে আবার রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। কীভাবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হয় সেই ব্যবস্থা জনগণই গ্রহণ করবে। কিন্তু সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গিয়ে যদি কোনো মানুষ রক্তাক্ত হয় তাহলে সেই দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
কেন্দ্রীয় সংগঠক আব্দুল্লাহ আল মুহিম বলেন, এই মাওনায় শহীদদের রক্ত এখনো লেগে আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ এখনো নিষিদ্ধ হয়নি। এই আওয়ামী লীগ আমাদের হাজারো মানুষের রক্ত ঝরিয়েছে, তাদেরকে অবশ্যই বাংলার মাটিতে নিষিদ্ধ করতে হবে। এই রাজপথে রক্ত লেগে আছে, এই রাজপথেই শহীদ হয়েছে আমাদের ভাইয়েরা। যতক্ষণ না পর্যন্ত সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা হবে, আমরা রাজপথে সক্রিয় থাকব। প্রত্যেক ভাইয়ের রক্তের বদলা নিতে হবে। শহীদ ভাইদের কাছে আমরা প্রত্যেকেই দায়বদ্ধ। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাসহ যারা জড়িত ছিল প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনতে হবে। আজকের সমাবেশ থেকে ঘোষণা করতে চাই আমরা কিন্তু বসে পড়িনি, আমরা কিন্তু হেরে যাইনি। এনসিপি যতদিন আছে, ২৪ এর পক্ষে যারা শহীদ তাদের পক্ষে কথা চলবে। হয় আওয়ামী লীগ থাকবে, না হয় এনসিপি থাকবে। দুইটা একসঙ্গে চলতে পারে না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করলে বাংলার মানুষ আবারও রাজপথে নামবে।
এর আগে জাতীয় নাগরিক পার্টির আয়োজনে একটি বিক্ষোভ মিছিল মাওনা চৌরাস্তায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে।
‘ইলিয়াস কাঞ্চন আমাদের দলের নাম চুরি করেছেন, তাকে শায়েস্তা করা হবে

‘গড়বো মোরা ইনসাফের দেশ’ স্লোগান নিয়ে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ আজ শুক্রবার আত্মপ্রকাশ করেছে। এর আগেই ইলিয়াস কাঞ্চন ঘোষণা দিয়েছিলেন আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন দলেন নাম। দলের নাম নিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চনের তীব্র সমালোচনা করেন জনতার অধিকার পার্টির (পিআরপি) চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, তার রাজনৈতিক দলের নাম ইলিয়াস কাঞ্চন চুরি করেছেন এবং তাকে শায়েস্তা করা হবে।
তরিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘ইলিয়াস কাঞ্চন আমাদের দলের নাম চুরি করেছেন। জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্য এটি সম্পূর্ণ অবৈধ। আমি তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নাম পরিবর্তন করতে বলেছি, না হলে আদালতের শরণাপন্ন হব এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) জনতার অধিকার পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
পিআরপি চেয়ারম্যান বলেন, গত ১৭ বছরে আপনার কোনো খোঁজখবর ছিল না। চলচ্চিত্র সমিতিতে জায়গা না পেয়ে এখন রাজনীতির মাঠে আসলে একটু সম্মান পাবেন, বঙ্গভবনে যেতে পারবেন। আর এখন কেনো নামতে হলো? সুসময় এসে আপনি এখন দল বানাবেন, সামনে পার্লামেন্টে যাবেন, বঙ্গভবনে যাবেন? পিঠের চামড়াও থাকবে না, পায়ের আঙুলও থাকবে না।
তরিকুল ইসলাম ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, ইলিয়াস কাঞ্চনের গঠিত রাজনৈতিক দলের নাম ‘জনতার অধিকার’ শব্দের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে।
তিনি বলেন, ‘ইলিয়াস কাঞ্চনের দলের নাম আমাদের দলের সঙ্গে প্রায় অভিন্ন, যা জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। এ কারণে আমি ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা দিয়ে নাম পরিবর্তনের আহ্বান জানাচ্ছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নাম পরিবর্তন না করা হলে আমি আদালতের দ্বারস্থ হব এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর
৮ মাসে দেশে দুই ডজন নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনা সরকার। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে অতিবাহিত হয়েছে আট মাস। আর এই আট মাসেই নতুন ২৬টি রাজনৈতিক দলের উত্থান হয়েছে। এসব দলের উদ্দেশ্য কী? খবর বিবিসি বাংলার।
নিউক্লিয়াস পার্টি, জনপ্রিয় পার্টি, জাগ্রত পার্টি, আমজনতার দল, আ-আম জনতা পার্টি… গত আট মাসে এমন অন্তত ২৬টি নাম যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে।
গত বছরের পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকে এসব রাজনৈতিক দল বা প্ল্যাটফর্ম আত্মপ্রকাশ করেছে।
অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের দল এনসিপি ছাড়াও গত আটমাসে গণমাধ্যমে আসা রাজনৈতিক দল ও প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা দুই ডজনেরও বেশি।
এরইমধ্যে নতুন দল আনার ঘোষণা দিয়েছেন চিত্রনায়ক ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে নিয়ে কাজ করা ইলিয়াস কাঞ্চন।
আজ ২৫শে এপ্রিল 'জনতার পার্টি বাংলাদেশ' নামের দলটি ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
তবে এত কম সময়ে এতগুলো দলের আত্মপ্রকাশ নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দল গঠনের এই প্রবণতা নতুন কিছু নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে এমন নতুন নতুন দল গঠন করতে দেখা গেছে।
আর নির্বাচনকেই এর প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন তারা। বলছেন, নির্বাচনের সময় এগোলে ‘ব্যাঙের ছাতার মতো এমন অনেক দল গজিয়ে ওঠে’।
তবে নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশকে আপাতদৃষ্টিতে গণতান্ত্রিক চর্চার সাথে যুক্ত করা হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেকক্ষেত্রেই তা স্বার্থ ও ক্ষমতাচর্চার একটি রূপ বলেই মত বিশ্লেষকদের।
একইসঙ্গে ভোটের সময় জোট-রাজনীতিও এই প্রবণতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রভাব রাখে বলেও মনে করেন অনেকে।
‘ওনারা রাজনৈতিক লেবেল থাকলে ছেড়ে দেবে’
গত ১৭ই এপ্রিল আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি, যার প্রধান ডেসটিনির মোহাম্মদ রফিকুল আমীন। অর্থ পাচার ও ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশনের মামলায় ১২ বছর কারাভোগের পর গত ১৫ই জানুয়ারি জেল থেকে বের হওয়ার তিন মাসের মাথায় নতুন এই দল নিয়ে হাজির হন তিনি।
কিন্তু ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত মি. আমীনের হঠাৎ রাজনীতিতে নাম লেখানোর কারণ কী?
প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, রাজনৈতিক পরিচয় না থাকার কারণে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর অন্য অনেকে জেল থেকে ছাড়া পেলেও তিনি তা পাননি।
‘যেদিন হাসিনা পালিয়ে গেল, পাঁচ তারিখ, ছয় তারিখ, সাত তারিখ, আট তারিখ, নয় তারিখ – এই কয়দিনে ঢাকা জেল খালি হয়ে গেছে। মানুষকে দিনরাত ছেড়ে দিছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এত লোকের জামিন কীভাবে হলো? বলে, না জামিন হয়নিতো। এদের রাজনৈতিক বিবেচনায় ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে’, বলেন মি. আমীন।
‘আমি তখন সুপার সাহেবের (জেল সুপার) কাছে দৌড়ায় গেলাম। আমিতো এত বছর আটকে আছি, আমাকে ছাড়েন। বললো, আপনিতো কোনো রাজনৈতিক দল করেন না। আপনি যদি অন্তত হরাকাতুল জিহাদও করতেন বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমও করতেন তাও আপনাকে আমি ছেড়ে দিতাম। মানে ওনারা রাজনৈতিক লেবেল থাকলে ছেড়ে দেবে’, বলেন তিনি।
মি. আমীন জানান, এই রাজনৈতিক মঞ্চকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে তিনি তার ‘জুলুমের কথা তখন যে প্রশাসক থাকবে, যে রাষ্ট্রশাসন করবে তার কাছে" পৌঁছাবেন।
মাসে গড়ে তিনটি করে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন
শেখ হাসিনার শাসনের পতনের পর অর্থাৎ ২০২৪ সালের অগাস্ট থেকে ২০২৫'র ২৪শে এপ্রিল পর্যন্ত গত আটমাসে অন্তত ২২টি রাজনৈতিক দল ও ও চারটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আত্মপ্রকাশের খবর এসেছে গণমাধ্যমে।
যার মধ্যে গত বছর ১১টি আর চলতি বছরের প্রথম চার মাসে আরও ১১টি দল গঠিত হয়েছে। সেই হিসেবে প্রতি মাসে গড়ে তিনটি করে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হয়েছে।
আত্মপ্রকাশ করা দলগুলোর মধ্যে আছে, নিউক্লিয়াস পার্টি অব বাংলাদেশ (এনপিবি), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি, ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি, সমতা পার্টি, বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি (বিপিপি), সার্বভৌমত্ব আন্দোলন, বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ মুক্তির ডাক ৭১, বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ, দেশ জনতা পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক শক্তি, বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএসডিপি), বাংলাদেশ জন-অধিকার পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি, জনতার বাংলাদেশ পার্টি, জনতার দল, গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি ও আ-আম জনতা পার্টি (বিএজেপি)।
রাজনীতিতে আসা নতুন দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব নিয়ে আলোচনায় রয়েছে এনসিপি। দলটি এখনও নিবন্ধন পায়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি নামক যে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম থেকে দলটি তৈরি হয়েছে, সেগুলোও বর্তমানে সচল আছে।
রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে নতুন ছাত্র সংগঠন 'বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ' তৈরি হয়েছে। এছাড়াও এনসিপি'র গঠন থেকে বেরিয়ে আসা শিবিরের সাবেক নেতাদের নতুন সংগঠন 'ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ' এরও এই মাসের মধ্যেই আত্মপ্রকাশের কথা রয়েছে।
‘এগুলো দল আমরা ভ্যানগাড়িয়ালারাও বানাইতে পারি’
প্রায় নিয়মিতই নতুন নতুন এসব দল আর প্ল্যাটফর্ম গঠনের খবর শোনা গেলেও, এগুলো সম্পর্কে সাধারণ মানুষ কতটা জানে?
এনিয়ে ঢাকার রাস্তায় কথা হয় ভ্যানচালক মোঃ হারুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মনে করেন ১০ জনেও দল করন যায়। যার যার মতো খালি দল বানাইতাছে আর করতাছে। এগিলির কোনো ইস্টিমেট আছে? এগিলা দল আমরা ভ্যান গাড়িয়ালারাও বানাইতে পারি’।
‘স্টুডেন্টদের সংগঠন বাদে ওইভাবে কোনো কিছু দেখা হয়নি’, বলেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী আসমা উল হুসনা সুপ্তি।
নতুন দলগুলোর নাম শোনা হয়েছে কিনা প্রশ্নের জবাবে চাকুরীজীবী সালমা আক্তার বলেন, ‘আমি আমজনতা বলে বাংলাদেশের সবাইকেই বুঝি। কিন্তু এটা আবার দল? জানি না’।
চা বিক্রেতা জোছনা জানান, প্রায়ই সেখানে মিছিল দেখলেও কারা তা করছে সে বিষয়ে তার কিছু জানা নেই।
বাংলাদেশে বর্তমানে ৫০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল থাকলেও এগুলোর বেশিরভাগের নামই কেউ জানে না। তার ওপর অভ্যুত্থানের পর হিড়িক লেগেছে নতুন দল গঠনের।
মূলত ভোটের সময় জোট-রাজনীতির সঙ্গে এই প্রবণতার সংযোগ রয়েছে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে নির্বাচন এগিয়ে এলে এই ধরনের দল গঠনের তোড়জোড় দেখা যায়।
এনিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এর আগেও আমরা দেখেছি যখন নির্বাচনের গন্ধ এসে নাকে লাগে, তখন হঠাৎ করেই এমন অনেক দল গজিয়ে ওঠে ব্যাঙের ছাতার মতো’।
এ ধরনের দল তৈরির প্রবণতা দেখা গিয়েছিল এরশাদের আমলেও।
‘এরশাদের আমলে বড় দলগুলো এরশাদের সঙ্গে নির্বাচনে সহযোগিতা করেনি বা করতে চায়নি, তখন এরশাদ দেখাতে চেয়েছিল যে দেশে প্রচুর রাজনৈতিক দল আছে। সুতরাং তারা নির্বাচনে এলেতো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে’, বলেন তিনি।
সেসময় ১২০টার বেশি দল গঠন হয়েছিল বলে জানান মি. আহমদ। পরবর্তী সময়ে ৯০টা দল নিয়ে জোট করার নজির আছে উল্লেখ করে ‘এরা জাস্ট সংখ্যা’ বলে মন্তব্য করেন এই বিশ্লেষক।
একইসঙ্গে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যেও এসব দল তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এনিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘এখন একটা বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গেছে সবার মধ্যে যে রাজনীতি করলে খুব দ্রুত লাভবান হওয়া যায়। রাজনীতি করলে খুব দ্রুত টাকাপয়সা কামানো যায়, আর ব্যক্তিগত প্রভাব খাটানো যায়- এটা ভেতরের উদ্দেশ্য আর কি’।
এর বাইরে এসব দলের রাজনীতিতে কতটুকু আদর্শ থাকে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘মূল যেটা সেটা হচ্ছে এটার পেছনে একটা রাজনৈতিক অর্থনীতির বিষয় জড়িত আছে।’
তবে বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস বলছে, অনেক দল এলেও তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই দিনশেষে রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে।
নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ
ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’

চিত্রনায়ক ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সংগঠক ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করেছে নতুন রাজনৈতিক দল 'জনতা পার্টি বাংলাদেশ'। দলটির মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বেলা ১১টায় রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে দলটির নাম ও নেতৃত্ব ঘোষণা করা হয়। 'গড়বো মোরা ইনসাফের বাংলাদেশ'— এই স্লোগানকে সামনে রেখে পথচলা শুরু করেছে নতুন দলটি।
দলের মুখপাত্র হিসেবে রয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন। এছাড়া দলে সাংবাদিক, আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ও প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা যুক্ত হয়েছেন।
দলের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন অনুষ্ঠানে বলেন, আমাদের দলের নেতৃত্বে রয়েছে একঝাঁক অভিজ্ঞ এবং বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা ব্যক্তিত্ব, যা দলটিকে এক বিশেষ বৈচিত্র্য এনে দিয়েছে। আমরা আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং দেশের ৩০০টি আসনেই প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।
দলের মহাসচিব শওকত মাহমুদ এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবেও কাজ করেছেন। তবে ২০২৩ সালের ২১ মার্চ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি।
প্রসঙ্গত, সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে জনসচেতনতা তৈরিতে সক্রিয় রয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। ১৯৯৩ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনের মৃত্যুতে উদ্বুদ্ধ হয়ে গড়ে তোলেন 'নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)' আন্দোলন। সে সময় থেকেই তার রাজনীতিতে আসার আহ্বান জানানো হলেও এবারই প্রথম সক্রিয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হলেন তিনি।
বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোদের চৌদ্দ গোষ্ঠী খেয়ে ফেলবো: ইনু-শাজাহান

ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নেয়ার সময় পুলিশ সদস্যদের হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান এবং হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে। তারা পুলিশ সদস্যদের ‘রাজাকারের বাচ্চা তোদের চৌদ্দ গোষ্ঠী খেয়ে ফেলবো’, বলে হুমকি দিয়েছেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন দায়িত্ব পালনকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
রোববার (২০ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করার হ্যান্ডকাফ পরানো নিয়ে পুলিশ সদস্যদের এমন হুমকি দেয়া হয় বলে আদালতকে জানিয়েছেন দায়িত্বরতরা। এছাড়া ট্রাইব্যুনালে হাজির করার সময় শাজাহান খান মেজাজ হারিয়ে হেলমেট ফেলে দেন, এমন দৃশ্যও দেখা যায়।
এ ঘটনার জেরে বিচারকাজ শুরুর আগে, ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার সময় শাহজাহান খান তার হাতে হ্যান্ডকাফ দেখিয়ে বিচারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, আমাকে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়েছে। এটা আমার জন্য অমর্যাদাকর।’ তার আইনজীবীও এই বিষয়টি আদালতের কাছে তুলে ধরেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালের বিচারক কী হয়েছে তা জানতে পুলিশ সদস্যদের ডেকে পাঠান।
পুলিশ সদস্য নুরুন্নবী ট্রাইব্যুনালকে জানান, পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী আসামিদের এভাবে হাজির করা হয়। তখন আরেক পুলিশ সদস্য শহীদুল বলেন, ‘প্রিজন ভ্যান থেকে নামানোর সময় তাদের রাজাকারের বাচ্চা বলা হয় এবং বলা হয় তোদের দেখে নেবো’।
শহীদুল বলেন আরও বলেন, ‘হাসানুল হক ইনু পুলিশ সদস্যদের বলেন তোদের চৌদ্দগোষ্ঠী খেয়ে ফেলবো। হাজতখানায় এসে মিটিং করে তারা ফের পুলিশ সদস্যদের হুমকি দেয়’।
তবে এ সময় কাঠগড়ায় থাকা হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, শাহজাহান খান, কামরুল ইসলাম এমন কথা বলেননি বলে দাবি করেন।
জবাবে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, যদি কোনো আসামি উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেন, তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। আর পুলিশও যাতে বাড়াবাড়ি না করে সেদিকেও খেয়াল রাখার নির্দেশনা দেন আদালত।
মন্তব্য