The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪

আজ ঐতিহাসিক মুজিব নগর দিবস

আজ ১৭ ই এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাসের এক চির-ভাস্বর ও অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুষ্টিয়া জেলার তদানীন্তন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। এ অনুষ্ঠানে ঘোষিত হয় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিলে গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। এইদিন থেকে এই স্থানটি মুজিবনগর নামে পরিচিতি লাভ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা ও স্বদেশ ভূমি থেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ও নির্দেশিত পথে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের লক্ষে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়।

ঐ দিন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মানের শপথে যে সুর বেঁজে উঠেছিল বাংলার আকাশে বাতাসে সোনার বাংলা নামক সম্মিলিত একতার সংগীতে যা ছিল পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মানের অলিখিত স্বাধীনতার চুক্তি। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের অঙ্গুলির দৈবিক নির্দেশে স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মানে তাজউদ্দীন আহমদ এর সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বে মুজিব নগর সরকার গঠিত হয়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদ কে প্রধানমন্ত্রী করে বাংলাদেশের পতাকা উৎলন করা হয়। ঐ দিন যে পতাকা উৎলন করা হয়েছিল বাংলার আকাশে সে পতাকা আজও চির অম্লান হয়ে বাংলার আকাশে উড়ে চলছে স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে। সে দিন শুধুমাত্র একটি লাল – সবুজের রং মিশ্রিত পতাকাই উড়ানো হয়নি তার সাথে জড়িয়ে ছিল বাংলার মানুষের প্রতি পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর করা নিমর্ম অত্যাচারের বিরুদ্ধে ৭ কোটি বাঙালির প্রচন্ড প্রতিঘাতের প্রতীক, সেদিন ঐ পতাকার উৎলনের সাথে উৎলিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মানের সকল আশার বাতিঘর যা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাজউদ্দীন আহমদ তার হৃদয়ের সবটুকু উজাড় করে সেই স্বপ্ন পূরণে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন সমগ্র বাংলার মানুষকে। ঐ দিন মুজিব নগরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যে শপথ তাজউদ্দীন আহমদ নিয়েছিলেন সে শথপের অভন্তরীন গভীরে যে নির্যাশ লুকায়িত ছিল তা ছিল মূলত বাংলাদেশের উপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম অযাচিত শাসন ও শোষণ থেকে মুক্তির চেতনা স্বরূপ। ঐ শপথের সাথে আরো লুকায়িত ছিল হাজার হাজার মা বোনের ইজ্জত ও অধিকার ফিরিয়ে আনার দ্বায়িত্ব। যা তাজউদ্দীন আহমদ পরবর্তীতে তার কর্মের ভেতর দিয়ে পূরণ করেছিলেন।

তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন ব্যক্তিত্ব। তাজউদ্দীন আহমদ নিজেকে সব সময় বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের অংশ বলে মনে করতেন কারণ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও তাজউদ্দীন আহমদ এর আদর্শের জাগয়ায় কোন বিশেষ ভিন্নতা ছিল না। তাদের জন্মই যেন বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্য হয়েছিল যেটা তারা তাদের জীবন দিয়ে প্রমান করেছেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ দিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে এই বৈদ্যনাথতলাকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়।এর আগে ১০ এপ্রিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলায় অস্থায়ী সরকার শপথ নেয়।

১১ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বেতার ভাষণ দেন। তার ভাষণ আকাশবাণী থেকে একাধিকবার প্রচারিত হয়। ভাষণে তিনি দেশব্যাপী পরিচালিত প্রতিরোধযুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন।

সেদিনের সেই ভাষণের মাধ্যমে তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে বাংলার জনগণকে উজ্জীবিত করে তাদের মাঝে যুদ্ধের তেজ প্রবাহিত করেছিল। যে আগুন বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে বাংলা মানুষের মাঝে জ্বালিয়ে ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ সেই আগুনে প্রেট্রোল ঢেলে দিয়ে যুদ্ধের জন্য সামগ্রিক ভাবে প্রস্তুত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে যা ছিল একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
তাজউদ্দিনের ভাষণের মধ্য দিয়েই দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারেন বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম পরিচালনার লক্ষ্যে আইনানুগ সরকার গঠিত হয়েছে। এরই পথপরিক্রমায় ১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেওয়ার মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

যখন কোন মানুষের সাথে মানুষের আদর্শিক মিলনের জায়গা এক হয়ে যায় তখন তা একত্মায় পরিনত হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানের জেলে বন্দী তার সেই বন্দীত্বের বেদনায় সবচেয়ে বেশি যাকে পুড়িয়েছে সেই মানুষটা তাজউদ্দীন আহমেদ। সেদিন আগুনের ফুলকির মত জ্বলে উঠেছিল সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ এর হৃদয় এবং পুড়ে ছাড় -খার হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর মুক্তির নিমিত্তে। তারা এতটুকু বুঝতে পেরেছিল যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ব্যতীত বঙ্গবন্ধুর মুক্তি নেই। তাইতো তারা মুজিব নগরে সেদিন শপথের মাধ্যমে সারা বাংলায় ছড়িয়েছে দিয়েছিলো সংগ্রামের অগ্নিশিখা।

যার ফলশ্রুতিতে আমরা পেয়েছি আজকের এই স্বাধীনতা আজকের এই বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধকে যদি বাংলার আকাশে সূর্য হিসেবে কল্পনা করি তাহলে ঘৃণিত মোস্তাক বাদে তাজউদ্দীন আহমদ সহ মুজিব নগর সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই ছিল সেই সূর্যের আলো স্বরূপ। যে আলোর তীব্রতায় পথ হারাতে বাধ্য হয়েছিলো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ।

কাজী বনফুল- লেখক ও কলামিস্ট।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.