পিনাকী দাদা প্রমাণ করলেন ‘কাটা দিয়ে কাটা তুলতে হয়’: রাশেদ খান

সম্প্রতি দেশের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে অনুষ্ঠিত টকশো-তে দেওয়া গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের আংশিক বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা করায় অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যের একহাত নিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
প্রথম আলো ও কালের কণ্ঠের লিঙ্ক শেয়ার করায় তিনি বলেন, ‘পিনাকী ভট্টাচার্য দাদা প্রমাণ করে দিলেন কাটা দিয়ে কাটা তুলতে হয় (শত্রুকে শত্রু দিয়ে ঘায়েল করতে হয়)।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।
পাঠকদের জন্য রাশেদ খানের পোস্টটি তুলে ধরা হলো-
‘প্রিয়, পিনাকী ভট্টাচার্য দাদা...,
আজকাল ফটোকার্ড ও গণমাধ্যমের শিরোনাম এমন হচ্ছে যে, পুরো বক্তব্যের প্রতিনিধিত্ব করে না। এতে পাঠক বিভ্রান্ত হয় এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ঘায়েল করার সুযোগ পায়। ঠিক গ্লোবাল টেলিভিশনে নুরুল হক নুরের টকশোর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কয়েকটি গণমাধ্যমের হেডলাইন এমন যে, মনে হচ্ছে নুরুল হক নুর আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার পক্ষে মতামত দিচ্ছেন। অথচ পুরো বক্তব্য শুনলে বোঝা যাবে, নুরুল হক নুর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বলছেন। এ বিষয়ে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য দাদাও দেখলাম নুরুল হক নুরকে নিয়ে কালের কণ্ঠের করা একটি সংবাদ প্রচার করেছেন। কমেন্টে আবার প্রথম আলোর আরেকটা নিউজ যোগ করে দিয়েছেন। অথচ তারা প্রথম আলোর বিপক্ষের মানুষ। কিন্তু নুরুল হক নুরকে ঘায়েল করতে প্রথম আলোর করা নিউজ লিংক শেয়ার করলেন। আবার বসুন্ধরার বিরুদ্ধে তারা সব সময় সোচ্চার। তবে নুরুল হক নুরকে ঘায়েল করতে বসুন্ধরার মালিকানাধীন কালের কণ্ঠের সংবাদ প্রচার করলেন। পিনাকী ভট্টাচার্য দাদা প্রমাণ করে দিলেন কাটা দিয়ে কাটা তুলতে হয় (শত্রুকে শত্রু দিয়ে ঘায়েল করতে হয়)।
একটা ঘটনা বলি, কিছুদিন আগে জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে ৪টি সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলন করার বিষয়ে একটা পোস্টারিং করে আয়োজকরা। সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন সেটা শেয়ার করেন। কিন্তু গণঅধিকার পরিষদের নাম থাকায় পিনাকী দাদা সেটা শেয়ার করতে রাজি হননি। পরবর্তীতে গণঅধিকার পরিষদের নাম কেটে তিনি প্রচার করেন।
পিনাকী ভট্টাচার্য দাদার বিরুদ্ধে আমার কখনোই বক্তব্য দেওয়ার ইচ্ছে নেই, ছিলও না। কিন্তু তিনি যখন আমাদের ঘায়েল করতে আসেন, তখন আমাদের জবাবটা দেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
দেখেন তিনি নুরুল হক নুর বা গণঅধিকার পরিষদকে নিয়ে কয়েকটা ভিডিও করেছিলেন। আমি লাইন ধরে ধরে দেখিয়ে দিয়েছিলাম যে, তিনি কিভাবে সত্যের সঙ্গে মিথ্যা বা মিথ্যার সঙ্গে সত্যের আশ্রয় নিয়েছিলেন। এরপরে তিনিও আর কিছু বলেননি, আমিও তাকে নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করিনি।
পরিশেষে বলি, ইলিয়াস হোসাইন ভাইয়ের বাংলা এডিশনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমি ইলিয়াস হোসাইন ভাইয়ের আমন্ত্রণে উপস্থিত হয়ে বক্তব্যে বলেছিলাম, পিনাকী দাদা, ইলিয়াস হোসাইন ভাই ও কনক সরোয়ার ভাইয়েরা দেশের জন্য অনেক ভূমিকা রেখেছেন। তারা দেশে আসুক আমরা বিমানবন্দরে তাদের ওয়েলকাম জানাতে অপেক্ষা করব। তাদের সংগ্রাম আমরা শিকার করি।
পিনাকী ভট্টাচার্য দাদা একজন জ্ঞানী মানুষ, তার প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, হেডলাইন বা ফটোকার্ড দেখেই সিদ্ধান্ত নেবেন না। পুরো সংবাদ বা বক্তব্য পড়ে মন্তব্য করবেন। আপনি বিদেশ থেকে লড়াই করেছেন। মনে রাখবেন নুরুল হক নুর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অ্যারেস্ট হন এবং ১০ দিন রিমান্ডের পর কোর্টে তুললে ২ আগস্ট তিনি ঘোষণা দেন ৯০% সরকারের পতন হয়ে গেছে, ১০% ধাক্কা দেন।
দাদা, আপনার মনে রাখা উচিত, সরকার পতন না হলে নুরুল হক নুরের কিন্তু ফাঁসি হতো। আপনি গণঅভ্যুত্থানের পরেও দেশে আসেননি, ভবিষ্যতেও আসবেন কি জানি না। তবে শুধু এতটুকু অনুরোধ করব, রাজপথে যারা রক্ত বিসর্জন দিয়ে নেতা হয়েছে, তাদের ক্যারিয়ার ধ্বংস করতে একের পর এক ভিডিও বানিয়েন না। আপনি সারাক্ষণ ভারত বিরোধিতা করেও কিন্তু ঠিকই ভারত হয়ে ফ্রান্সে যেতে পেরেছেন। আমরা কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হলে কখনো ভারতে ঢুকতে পারব না, ঢোকার মানসিকতাও নাই। যে আপনি ভারত বিরোধিতা করেও ভারতে নিরাপদ আশ্রয় পান, সেই আপনাকে নিয়ে কিন্তু বহু রহস্য থেকে যায়। আবার যে আপনি অনেক ইসলামিক মূল্যবোধের বক্তব্য প্রচার করেন, সেই আপনি কেনো আজও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেননি? এই দেশের মানুষকে সহজে ধর্মের বয়ান শুনিয়ে বিভ্রান্ত করা যায়। আর সেই পথের একজন সফল ব্যক্তি আপনি...।’
প্রথম বিদেশ সফরে মালয়েশিয়া যাচ্ছেন নাহিদ ইসলাম

আগামী ২২-২৪ আগস্ট মালয়েশিয়া সফরে যাচ্ছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম। এনসিপির প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর তার প্রথম বিদেশ সফর এটি। দলটির ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্স –মালয়েশিয়া চ্যাপ্টারের আমন্ত্রণে এ সফর করছেন নাহিদ ইসলাম।
তিন দিনের এ সফরে নাহিদ ইসলাম প্রবাসী বাংলাদেশি, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী এবং বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে মতবিনিময় ও নৈশভোজে অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়াও বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
সফরের অংশ হিসেবে একটি পাবলিক ইভেন্টে যোগ দিবেন নাহিদ ইসলাম। যেখানে মালয়েশিয়া প্রবাসী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী, ছাত্রছাত্রী এবং প্রবাসী জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
এই সফরে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের রাষ্ট্রগঠনে প্রবাসীদেরকে আরও কিভাবে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত করা যায় এবং জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে প্রবাসীদের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করবেন নাহিদ ইসলাম। আগামী ২৫ আগস্ট তাঁর দেশের ফেরার কথা রয়েছে।
বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা

আগামী ১লা সেপ্টেম্বর দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
বুধবার (২০ আগস্ট) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আগামী ৩১ আগস্ট রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশনে কেন্দ্রীয় বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভা, ১ সেপ্টেম্বর সকালে দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ১১টায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং সকল মহানগর জেলায় আলোচনা সভা ও শোভাযাত্রা। ২ সেপ্টেম্বর বেলা ২টায় নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শোভাযাত্রা, ৩ সেপ্টেম্বর উপজেলা ও পৌর এলাকায় শোভাযাত্রা, ৪ সেপ্টেম্বর মহানগর, জেলা উপজেলায় মৎস্য অবমুক্তকরণ, একই দিন সারা দেশে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং ৫ সেপ্টেম্বর গোলটেবিল বৈঠক।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আব্দুস সালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক জিকে গউছসহ উদযাপন কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এনসিপির ১৫ নেতার একযোগে পদত্যাগ

শেরপুরের নকলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উপজেলা সমন্বয় কমিটি থেকে পাঁচজন যুগ্ম সমন্বয়কারী ও ১০ জন সদস্যসহ মোট ১৫ জন পদত্যাগ করেছেন।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) রাতে নকলা সরকারি হাজি জালমামুদ কলেজ রোডের স্থানীয় একটি বাড়ির কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তারা।
পদত্যাগী যুগ্ম সমন্বয়কারীরা হলেন—মো. মমিনুল ইসলাম আরব, মনিরুল ইসলাম মনির, সিরাজুল ইসলাম সোহাগ, রাশিদুল জামান রাসেল ও জসীম উদ্দীন।
আর পদত্যাগী সদস্যরা হলেন—মো. দেলোয়ার হোসেন, সোহেল রানা, জাহাঙ্গীর আলম, সোহাগ মোল্লা, আল আমিন মিয়া, রতন মিয়া, নাজমুল হাসান, সুমন মিয়া, আরিফ মিয়া ও সাদেকুল ইসলাম শান্ত।
পদত্যাগপত্রে নেতারা লেখেন সম্প্রতি ঘোষিত নকলা উপজেলা সমন্বয় কমিটি অযোগ্য, অনাদর্শিক ও সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য প্রধান সমন্বয়কারীর নেতৃত্বে গঠিত হওয়ায় আমরা কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছি। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব বরাবর লিখিত পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছি।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী একজন অযোগ্য, অনাদর্শিক ও সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য লোক। এ প্রেক্ষাপটে আত্মবিশ্লেষণমূলক চিন্তাভাবনার পর আমরা সম্মিলিতভাবে জাতীয় নাগরিক পার্টির উপজেলা সমন্বয় কমিটির স্ব স্ব পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছি এবং পুরো কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করছি।
পদত্যাগের বিষয়ে যুগ্ম সমন্বয়কারী মো. মমিনুল ইসলাম আরব বলেন, আমরা পাঁচজন যুগ্ম সমন্বয়কারী ও ১০ জন সদস্য পদত্যাগ করেছি। পদত্যাগের মূল কারণ প্রধান সমন্বয়কারী একজন অযোগ্য ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে শহীদ পরিবারের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতাও ভালো নয়। এসব গুরুতর অভিযোগের কারণেই আমরা পদত্যাগ করেছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির শেরপুর জেলা কমিটির ১ নম্বর সমন্বয়কারী আলমগীর কবির বলেন, ‘পদত্যাগের বিষয়টি ফেসবুকে দেখেছি। বিভাগীয় কমিটির সঙ্গেও কথা হয়েছে। জেলা কমিটি বসে বিষয়টি মূল্যায়ন করবে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, গত ১০ আগস্ট কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের স্বাক্ষরে নকলা উপজেলা সমন্বয় কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে হুমায়ুন কবির আকাশকে প্রধান সমন্বয়কারী, ১০ জনকে যুগ্ম সমন্বয়কারী ও ২১ জনকে সদস্য করে মোট ৩২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়।
টাক মাথায় চুল লাগানো ও জিমে সময় কাটছে পলাতক আ.লীগ নেতাদের

স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের বহু শীর্ষ নেতা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে তারা টাক মাথায় চুল লাগানো, জিমে ব্যায়াম করাসহ বিভিন্ন ভাবে সময় পার করছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওইসব নেতাদের অনেকেই এখন কলকাতার নিউ টাউন এলাকায় অবস্থান করছেন। সেখানে তারা বাসা ভাড়া করে বসবাস করছেন, কেউ কেউ আবার আশ্রয় নিয়েছেন স্বজনদের বাড়িতে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পলাতক নেতারা সাধারণ মানুষের চোখে না পড়ার চেষ্টা করছেন। খুব একটা বাইরে বের হন না। বাসায় থেকেই তারা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করেন। কেউ কেউ সময় দিচ্ছেন শরীর চর্চায়, আবার কেউ স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ব্যস্ত। রান্নার কাজটিও মাঝে মাঝে নিজেদেরই করতে হচ্ছে।
নিরাপত্তার স্বার্থে অনেকেই তাদের অবস্থান গোপন রাখছেন। তবে বেশিরভাগই থাকছেন পশ্চিমবঙ্গের নিউ টাউন এলাকায়। এলাকাটি বেছে নেয়ার পেছনে আছে কয়েকটি কারণ- প্রশস্ত রাস্তাঘাট, তুলনামূলক সাশ্রয়ী বাসাভাড়া, আধুনিক ফিটনেস সেন্টার, ভালো চিকিৎসা সুবিধা এবং নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছাকাছি অবস্থান।
দ্য প্রিন্ট দাবি করেছে, তারা শেখ হাসিনার সরকারের একাধিক সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের মধ্যে আছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত।
মোহাম্মদ এ আরাফাত দ্য প্রিন্টকে বলেছেন, এখন তার জীবনে কোনো নির্দিষ্ট ঘুম বা বিশ্রামের সময় নেই। প্রতিটি দিন শুধু কাজেই কেটে যাচ্ছে। তার ভাষায়, মাঝে মাঝে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের পার্থক্য বুঝে উঠতে পারি না।
২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে প্রথমবার প্রকাশ্যে দেখা যায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালকে। সেই সময় কলকাতার নিক্কো পার্কে তাকে দেখা গেলে মুহূর্তেই খবরটি ভাইরাল হয়। সাধারণ মানুষ বিস্মিত হয়ে পড়ে, কীভাবে তিনি দেশ ত্যাগ করলেন, অথচ কেউ জানলো না।
এ নিয়ে দেশীয় প্রশাসন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে। পুলিশের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শাহ আলম জানান, ইমিগ্রেশন রেকর্ডে কামালের বিদেশযাত্রার কোনো প্রমাণ নেই।
নিউ টাউনে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের এক সাবেক এমপি দ্য প্রিন্ট–কে জানান, কামাল এখন সেখানকার একটি অ্যাপার্টমেন্টে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে থাকছেন। তার দলীয় সহকর্মীরা নিয়মিত তার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি দিল্লিতেও যান বৈঠকে অংশ নিতে এবং ভারতের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে। কামালের ছেলে সাফি মুদ্দাসসির খান জ্যোতি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় গ্রেপ্তার হন।
ওই সাবেক এমপি আরও বলেন, কামাল এখন দলের নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখার দায়িত্বে আছেন। নেতাদের বারবার বলছেন- তারা এখানে বিশ্রাম নিতে আসেননি, এসেছেন টিকে থাকতে ও ভবিষ্যতের রাজনীতির জন্য প্রস্তুত হতে।
দ্য প্রিন্ট আরও জানিয়েছে, পলাতক আওয়ামী নেতাদের কেউ কেউ এখন একটি ‘গোপন পার্টি অফিস’ চালাচ্ছেন বলে গুজব ছড়ালেও, নিউ টাউনে অবস্থানরত এক সাবেক এমপি বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, তারা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বসেন বটে, কিন্তু সেটিকে অফিস বলা ঠিক হবে না। ওই জায়গাটিকে তারা শুধু ‘দলীয় মিলনকেন্দ্র’ হিসেবে ব্যবহার করেন।
কক্সবাজারের এক সাবেক এমপি দ্য প্রিন্টকে জানান, তার প্রতিদিনের রুটিন এখন অনেকটা নির্দিষ্ট ছন্দে বাঁধা। তিনি সকাল বেলা উঠে ফজরের নামাজ পড়েন, এরপর রুমমেটের সঙ্গে স্থানীয় জিমে যান। একজন ভারোত্তোলন করেন, আরেকজন পিলাটেস ক্লাসে ভর্তি হয়েছেন।
তারা দুজন ১৫০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। ভাড়া মাসে ৩০ হাজার টাকা। রাঁধুনি না থাকলে নিজেরাই রান্না করেন। সেই এমপি বলেন, রান্নায় আমি খুব একটা পারদর্শী নই। আমার ফ্ল্যাটমেটও না। তবে যেদিন রান্না করতে হয়, সেদিন ভিডিও কলে ঢাকায় আমার স্ত্রীর সাহায্য নেই। দুপুরে কিছুটা বিশ্রামের পর সন্ধ্যায় তারা ভার্চুয়াল মিটিংয়ে অংশ নেন। মিটিং হয় কলকাতা, দিল্লি, বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশের আওয়ামীপন্থি কর্মীদের সঙ্গে।
প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে যুক্ত কিছু সাবেক কূটনীতিকও দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের একজন হারুন আল রশিদ। আগে তিনি ছিলেন মরক্কোয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। সরকার পতনের পর তার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়।
বর্তমানে তিনি কানাডার অটোয়ায় বসবাস করছেন। সেখানে তিনি লেখালেখিতে সময় কাটাচ্ছেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন একটি ডিসটোপিয়ান উপন্যাস। তিনি জানান, বাড়িতে নিয়মিত বই পড়েন, সীমিত বাজেট মেনে চলেন এবং বেশি দূরের কোনো কাজ নিতে চান না।
আরেক সাবেক এমপি দ্য প্রিন্টকে জানান, তিনি এখন একা থাকেন কলকাতার একটি ২-বেডরুমের ফ্ল্যাটে। এই সময়টাকে নিজের জন্য কাজে লাগাচ্ছেন। চুল পাতলা হয়ে যাওয়ায় সম্প্রতি তিনি দিল্লির একটি ক্লিনিকে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করিয়েছেন। তার ভাষায়, চুল উঠে যাচ্ছিল। এখন নতুন করে মাথায় চুল উঠছে দেখে মনে হচ্ছে, অন্তত কিছু একটা তো ভালো হলো।
শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের এই জীবনযাপন এখন প্রশ্নের মুখে। কেউ এখনও আশা ছাড়েননি ফেরার। আবার কেউ এই সময়কে দেখছেন ব্যক্তিগত পুনর্গঠনের সুযোগ হিসেবে। তবে আপাতত, তারা কেউই দেশে ফেরার মতো পরিবেশ দেখছেন না- এটিই স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদনে।
মন্তব্য