আনসারদের অতর্কিত হামলায় ৬ সেনাসদস্য আহত

সচিবালয়ের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীর টহলের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ লাঠি দিয়ে আঘাত করে উত্তেজিত আনসার সদস্যরা। এসময় ছয় সেনাসদস্য আহত হন এবং এর মধ্যে একজন সেনাসদস্যের অবস্থা গুরুতর।
সোমবার (২৬ আগস্ট) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আইএসপিআর জানায়, ২৫ আগস্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েনরত সেনাসদস্যরা বাংলাদেশ সচিবালয় এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এবং সচিবালয়ের সব গেটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে।
এদিন বিভিন্ন সময়ে আনুমানিক ১০ হাজার আনসার সদস্য একত্রিত হয়ে বাংলাদেশ সচিবালয় ঘেরাও করে অন্তর্বর্তী সরকারের সাতজন উপদেষ্টাসহ সচিবালয়ের অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জিম্মি করে রাখে।
উত্তেজিত আনসার সদস্যদের শান্ত করার জন্য বিকেলে মহাপরিচালক, আনসার ও ভিডিপি সচিবালয়ে আগমন করেন এবং আনসার সদস্যদের সব দাবি মেনে নেন। এরপরও উত্তেজিত আনসার সদস্যরা সচিবালয় এলাকা ত্যাগ না করে আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালককে অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং কিছু আনসার সদস্য সচিবালয়ের ৩ নম্বর গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন।
আইএসপিআর আরও জানায়, এসময় উত্তেজিত আনসার সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্রদের ওপর অতর্কিত হামলা করে এবং সচিবালয়ের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীর টহলের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ লাঠি দ্বারা আঘাত করে। এসময় ছয়জন সেনাসদস্য আহত হয় এবং এর মধ্যে একজন সেনাসদস্যের অবস্থা গুরুতর।
এমন অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য মোতায়েনরত সেনাসদস্যরা বারংবার ধৈর্য সহকারে আনসার সদস্যদের সঙ্গে এনগেজমেন্ট করা সত্ত্বেও উত্তেজিত আনসাররা নিবৃত্ত না হলে আকাশের দিকে ২৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরে বাংলাদেশ সচিবালয় এলাকায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে আনসারদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
আইএসপিআর জানায়, এরপর সচিবালয়ে অবরুদ্ধ অন্তর্বর্তী সরকারের সাত উপদেষ্টা, ডিজি আনসার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সচিবালয়ের সব কর্মকর্তারা সেনাবাহিনীর সহায়তায় সচিবালয় এলাকা নিরাপদে ত্যাগ করেন।
মোতায়নরত সেনাসদস্যরা সচিবালয়ে অনুপ্রবেশকারী এবং পরবর্তীতে জীবনরক্ষায় নিরাপদ আশ্রয় প্রার্থনাকারী কিছু সংখ্যক আনসার সদস্যকে নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এরা পুরোনো শকুন, দেখি কতবড় কলিজা ওদের : সারজিস

রাজধানীর সচিবালয় এলাকায় আনসার সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থী-জনতার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কড়া হুঁশিয়ার দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
পোস্টে সারজিস আলম বলেন, ‘এরা পুরোনো শকুন। এটি তাদের বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ। তাদের সব পরিকল্পনা ছাত্র-জনতা ধুলোয় মিশিয়ে দেবে। আপনারা কেউ রাজপথ ছাড়বেন না। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই নেমে আসুন। দেখি কত বড় কলিজা ওদের।’
চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে রোববার সকাল থেকে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন হাজার-হাজার আনসার সদস্য। একপর্যায়ে দুপুর ১২টা থেকে তারা সচিবালয়কে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এতে সবগুলো গেট বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল ৫টায় অফিস ছুটি হলেও রাত সাড়ে ১০টার আগে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বের হতে পারেননি। পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছাত্র জনতার ধাওয়া খেয়ে আনসার সদস্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। পরে যে যেখান থেকে পারছেন পালিয়ে যান। আবার আনসারদের অনেককে সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেন।
আনসার বাহিনীর অপ্রত্যাশিত হামলা নিয়ে যা বললেন তারকারা

সচিবালয় ঘেরাওকে কেন্দ্র করে আনসার সদস্য ও শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
রোববার রাতে ঘটে যাওয়া আনসার বাহিনীর অপ্রত্যাশিত হামলা নিয়ে সরব রয়েছে দেশের শোবিজ অঙ্গন। সামাজিক মাধ্যমে রীতিমতো আনসারদের প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন তারা। এক ফেসবুক পোস্টে গীতিকার ও সংগীত পরিচালক প্রিন্স মাহমুদ লিখেছেন, ‘দেশের এই ভয়াবহ দুর্যোগেও পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি ফিরে আসছে কখনও ডাকাত হয়ে, কখনও বা আনসার হয়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর সময় নাই। সরকারকে এদের শক্তভাবে এখনি রুখতে হবে। এরা ভুলে যাচ্ছে প্রয়োজনে আগস্ট ৫ এর মত এই ঘেরাও কর্মসূচিকে ছাত্র জনতাই আবার ঘেরাও করবে যে কোনো মুহূর্তে। এবার আর পালাবার পথ পাবে না।’
আনসার বাহিনীর অপ্রত্যাশিত হামলায় নিন্দা জানালেন নির্মাতা আশফাক নিপুনও। ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘জাতীয় দুর্যোগে মানুষের পাশে না থেকে যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দাবি আদায় করতে চায় তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকার। এদের প্রতিহত করুন।’
সমন্বয়কসহ উপদেষ্টাগণের উপর আনসার বাহিনীর অপ্রত্যাশিত হামলায় গর্জে উঠেছেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সামাজিক মাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘হোয়াটস আপ, আনসারস? দেশের এই অবস্থায় মানুষ একে অন্যের পাশে দাঁড়াচ্ছে, আর এরা অন্য কারও হয়ে খেলছে?’
দাবি মেনে নেওয়ার পর এমন অতর্কিত হামলা মেনে নেওয়া যায়না বলেও উল্লেখ করেন এই নির্মাতা। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘দাবি মেনে নেওয়ার পরও এই নৈরাজ্যটা এখন আর স্রেফ নেওয়া যাচ্ছে না।পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি কতো রূপে যে ফিরে আসার চেষ্টা করল! কখনও ডাকাত হয়ে, কখনও বা আনসার হয়ে নবান্নের এই দেশে। সময় এসেছে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার।’
প্রসঙ্গত, রোববার রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে সচিবালয়ের সামনে আনসার সদস্য ও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে আটকে রাখার খবরে সচিবালয়ের উদ্দেশে রওনা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় আনসার সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে; কয়েকজনকে লাঠিপেটা করে। পরে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে আনসার সদস্যরাও পিছু হটে।
প্রথমদিকে দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হলেও একপর্যায়ে সেনাবাহিনী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
বন্যাকবলিত এলাকায় ৬০০ পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দিল চীনা প্রতিষ্ঠান সিসিইসিসি

দেশের বন্যাকবলিত ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলার ৬০০ পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন লিমিটেড (সিসিইসিসি)।
রোববার (২৫ আগস্ট) এই সহায়তা দেয় চীনা প্রতিষ্ঠানটি।
করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ‘ফ্লাড রিলিফ প্রোগ্রাম- আ জার্নি টুওয়ার্ডস শেয়ার্ড ফিউচার ফর ম্যানকাইন্ড’ প্রতিপাদ্যে এই ত্রাণ সহায়তা দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটির সূত্র জানায়, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বন্যাক্রান্ত মানুষের দোরগোড়ায় ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে পেরে তারা গর্বিত।
সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে এই বন্ধুত্ব চিরকাল অটুট থাকবে এমন প্রত্যাশার কথা জানায় সিসিইসিসি।
বাংলাদেশের ১১টি জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যায় লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দূতাবাসসহ চীনের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বন্যা আক্রান্তদের ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রেখেছে।
সাড়ে ১০ ঘণ্টা পর অবরুদ্ধ থেকে মুক্ত সচিবালয়ের কর্মকর্তারা

আনসার সদস্যদের আন্দোলনের কারণে টানা সাড়ে ১০ ঘণ্টা পর অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হয়েছেন প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে কর্মরত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আনসার সদস্যরা ছত্রভঙ্গ হওয়ার পর রোববার (২৫ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টায় সচিবালয়ের ৩ নম্বর গেট খুলে দেওয়া হয়। এরপর বের হতে থাকেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাজার-হাজার আনসার সদস্য সকাল থেকে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। একপর্যায়ে দুপুর ১২টা থেকে তারা সচিবালয়কে অবরুদ্ধ করে রাখে। এতে সবগুলো গেট বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল ৫টায় অফিস ছুটি হলেও রাত সাড়ে ১০টার আগে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বের হতে পারেননি।
সচিবালয়ে আনসারের এক দল সদস্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহসহ অনেককে আটকে রেখেছেন— এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। আনসার সদস্যদের প্রতিহত করতে তারা মিছিল নিয়ে সচিবালয় এলাকায় আসেন। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে রাত পৌনে ১০টার দিকে আনসার সদস্যরা পিছু হটেন। এসময় শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের পাশে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন। পরে গেট খুলে দিলে বের হতে থাকেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
প্রসঙ্গত, চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আজ সকাল থেকে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করছিলেন আনসার সদস্যরা। একপর্যায়ে দুপুরে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারী আনসারদের একাংশ। তারা সচিবালয়ে তিন নম্বর গেট দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে ঢুকে পড়েন।
পরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তাদের প্রতিনিধিদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে কিছুক্ষণ পরেই আবারও আন্দোলন শুরু করেন আনসার সদস্যরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
মন্তব্য