স্বচ্ছতার মাধ্যমে কাজ করলে বিশ্ববিদ্যালয় দাঁড়াবেই দাঁড়াবে: চাঁবিপ্রবি উপাচার্য

২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু করে এবং পরের বছর ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পান অধ্যাপক ড. মো. নাছিম আখতার। নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে উপাচার্যের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ক্যাম্পাস প্রতিনিধি এস এম মানজুরুল ইসলাম সাজিদ।
রাইজিং ক্যাম্পাস: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
ড. মো. নাছিম আখতার: মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিতে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টা আনন্দের ছিল। এই সুযোগটা আমার জন্য একটা পরীক্ষা। সুযোগ তখনই আসে যখন কারও উপরে আস্থা রাখা হয়। আমার উপর বিশ্বাস করে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা আমার লক্ষ্য ।
রাইজিং ক্যাম্পাস: অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা কতটা চ্যালেঞ্জিং?
ড. মো. নাছিম আখতার: অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস পাওয়াটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। চাঁদপুরের চারতলা-পাঁচতলা বিল্ডিংগুলোর রুম ছোট হওয়ায় ক্লাসরুম,কমনরুম,অফিসরুম করার উপযুক্ত ছিলো না।আবার অনেকেই বাসা ভাড়া দিতে রাজি হয়নি,এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করেই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছি। আমি মনে করেছিলাম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু না হলে আমাদের যে ৯০টা আসন রয়েছে তা ফাঁকা থাকবে এবং ৯০ জন শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পড়া থেকে বঞ্চিত হবে ফলে তারা বিশ্বজনিন শিক্ষার সাথে যুক্ত হতে পারবে না।তাই আমি খুব দ্রুতই এই অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছি।
রাইজিং ক্যাম্পাস: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নে আপনি কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?রাইজিং ক্যাম্পাস: বর্তমান প্রশাসনের হাত ধরে গবেষণা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রমে কতটা অগ্রগতি হয়েছে?ড. মো. নাছিম আখতার: শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রথম শর্ত হল নিরবচ্ছিন্ন একাডেমিক পরিবেশ। যেখানে কোনো ক্লাস বাদ যাবে না,যেখানে কোনো পরীক্ষা বাদ যাবে না।এই নিরবচ্ছিন্ন পরিবেশটা আমি নিশ্চিত করতে পেরেছি। যা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এখানকার শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা যথেষ্ট কাজ করেছে। আমি বলেছি সেমিষ্টারের প্রত্যেক কোর্সে যেনো ৩৯ টা ক্লাস হয় এবং শিক্ষকবৃন্দ তা বাস্তবায়ন করছে। আমরা চাই প্রতিটি শিক্ষার্থীর ভিত্তি ভাল হোক যাতে সে নিজেই অনেক কিছু করতে পারে। নিরবচ্ছিন্ন ক্লাস চালমান রাখতে আমরা একাডেমিক ভবন-১ এর পাশাপাশি আরও একটি ভবন ভাড়া নিয়েছি, একাডেমিক ভবন-২ হিসেবে ভবনটিতে শিক্ষা কার্যক্রম কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ক্যাম্পাসে লাইব্রেরি আছে যেখানে পর্যাপ্ত বই রাখা হয়েছে।সকল বিভাগের জন্য কম্পিউটার ল্যাব আছে। আইসিটি, সিএসই পাশাপাশি ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার ল্যাব ব্যবহার করছে। ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জন্য কম্পিউটার ল্যাবের পাশাপাশি রয়েছে রসায়ন ল্যাব, পদার্থবিজ্ঞান ল্যাব , ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব। আমাদের শিক্ষার্থীরা কোনো আন্তর্জাতিক সেমিনার, প্রতিযোগিতায় যেতে চাইলে আমি তাদের কে যাওয়ার সহযোগিতা করি এবং নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীরা আইডিয়া কন্টেস্টে সাফল্য এনেছে। শিক্ষার্থীদের দক্ষ মানব সম্পদে পরিনত করতে প্রয়োজনীয় সকল শিক্ষা উপকরণের সরবরাহ নিশ্চিতের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
ড. মো. নাছিম আখতার: আমি নিজে গবেষণায় আছি এবং থাকবো। গবেষণায় সাধারণত তিনটি ধাপ রয়েছে। আমাদের একদম নতুন বিশ্ববিদ্যালয় সেজন্য গবেষণা কার্যক্রমের প্রথম ধাপ রয়েছি অর্থাৎ সাহিত্য পর্যালোচনা ধাপে রয়েছি। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বই পড়ানো মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করছে এবং তথ্যের মাধ্যমে জানাকে সমৃদ্ধ করছে। দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয় তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষে , তখন তারা গবেষনার কার্যক্রম সম্পর্কে বোঝে ফলে শিক্ষার্থীরা গবেষণার আইডিয়া তৈরি করতে সক্ষম হয়, সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে গবেষণা পত্র প্রকাশ করা। বর্তমানে আমাদের কোনো শিক্ষক গবেষণা পত্র প্রকাশ করতে ইচ্ছুক হলে এবং পেপার রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রণোদনা চাইলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদেরকে দিয়ে থাকি এবং অলরেডি চাঁবিপ্রবি শিক্ষকরা গবেষণা পত্র লিখছে ও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে প্রকাশ করছে।
রাইজিং ক্যাম্পাস: আপনার বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নে কতটা ভূমিকা রাখবে?
ড. মো. নাছিম আখতার: আমাদের যেহেতু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এখানে তিনটি বিভাগ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্র্যাকটিক্যালের জন্য ল্যাবের সুবিধা দিয়েছি। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। ভবিষ্যতে এগুলো চলমান থাকবে। আমার টার্গেট বড় বড় কোম্পানির সাথে আমার বিশ্ববিদ্যালয় একটা যোগাযোগ স্থাপন করা, তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করানো যাতে শিক্ষার্থীরা পাশ করার সাথে সাথেই সেসকল প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকুরী পেয়ে যায়।
রাইজিং ক্যাম্পাস: আপনার বিশ্ববিদ্যালয় স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে কেমন ভূমিকা রাখবে বলে আপনি মনে করেন?
ড. মো. নাছিম আখতার: স্মার্ট বাংলাদেশ যে চারটি স্তম্ভ হচ্ছে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভার্নমেন্ট,স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনোমি। । আমাদের যে তিনটা বিভাগ রয়েছে সবগুলোই স্মার্ট বাংলাদেশের সাথে জড়িত কারন স্মার্ট সিটিজেন মানে দক্ষ মানব সম্পদ, আর এই দক্ষ মানব সম্পদ নেতৃত্ব দেবে স্মার্ট গভার্নমেন্ট, এই দুটোর সমন্বয়ে তৈরি হবে স্মার্ট ইকোনমি এবং স্মার্ট সোসাইটি। ফলে বলতে পারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্মার্ট বাংলাদেশের একটি পার্ট কারন স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর উচ্চশিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক রয়েছে তারা গবেষণার মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখবে। স্মার্ট বাংলাদেশ হলো চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে সম্পর্কিত এবং ই-কমার্স কিন্তু চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বাস্তবায়নের সাথে সিএসই এবং আইসিটি বিভাগ জড়িত এবং ই-কর্মাসের সাথে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ সম্পর্কিত ।
রাইজিং ক্যাম্পাস: শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে?ড. মো. নাছিম আখতার: দক্ষতা উন্নয়নে আমরা বিভিন্ন সেমিনার এবং সিম্পোজিয়াম সহ প্রশিক্ষণের আয়োজন করছি। পাশাপাশি বিভিন্ন ক্লাব গঠনের প্রক্রিয়া চলমান আছে। আমাদের সীমাবদ্ধতার ভিতরে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
রাইজিং ক্যাম্পাস: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপদস্থ প্রশাসক হয়েও কেনো সাদামাটা জীবনযাপন বেছে নিয়েছেন?
ড. মো. নাছিম আখতার: বিলাসিতার মধ্যে তো কোন সৃষ্টি নেই, যে দেশগুলো বিলাসী বেশি সেই দেশগুলো পিছিয়ে যাচ্ছে । আমি জমিতে কৃষি কাজ করে কায়িক পরিশ্রম করি , ফলে আমি মাটির সাথে মিশে যেতে পারছি।কায়িক পরিশ্রম করলে মানসিক অবসাদ দূর হয়, শরীর রোগমুক্ত থাকে এজন্য আমি নিজে কৃষি কাজ করি। আর আমি বিলাসিতা পছন্দ করি না।মানুষের শরীরটা তৈরি হয়েছে পরিশ্রমের জন্য ।
রাইজিং ক্যাম্পাস: চাঁবিপ্রবির একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে কিভাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করছেন?
ড. মো. নাছিম আখতার: একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে কাজ করে যাচ্ছি বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে। আমার বেশির ভাগ জিনিস G2G অর্থাৎ গভার্নমেন্ট টু গভার্নমেন্ট মাধ্যমে ক্রয় করে থাকি ফলে এখানে অনিয়মের কোন সুযোগ থাকে না।আর নিয়োগের ক্ষেত্রে আমার দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করেছি কারন অনিয়মের মাধ্যমে অদক্ষ জনশক্তি নিলে কখনো দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা সম্ভব না। শিক্ষকতা হলো একটি মহান পেশা আমি এই পেশাকে কুলশিত করতে চাই না। আর চাঁদপুর হলো আমার মাতৃভূমির একটা অংশ তাই এই অংশটার সমস্যা হোক তা আমি মানুষ হিসাবে মেনে নিতে পারি না। স্বচ্ছতার মাধ্যমে কাজ করলে বিশ্ববিদ্যালয় দাঁড়াবেই দাঁড়াবেই।
রাইজিং ক্যাম্পাস: নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করা চাঁবিপ্রবিকে অদূর ভবিষ্যতে আপনি কী অবস্থায় দেখতে চান?রাইজিং ক্যাম্পাস: তরুণ প্রজন্মের প্রতি আপনার কী পরামর্শ থাকবে?ড. মো. নাছিম আখতার: মানুষ স্বপ্ন নিয়েই বাঁচে।প্রথম উপচার্য হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয় কে নিয়ে আমার স্বপ্ন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমার যা করণীয় তা আমি সর্বোচ্চ দিয়ে করবো। আমার বিশ্বাস পরবর্তীতে যে প্রশাসন আসবে সঠিকভাবে কাজ করলে বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাবে । আমার প্রত্যাশা একদিন এই বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে।
ড. মো. নাছিম আখতার: আমাদের বাংলাদেশের একটি বড় অংশ হচ্ছে তরুণ। এই তরুণ প্রজন্মই কিন্তু আগামীতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিবে । তরুণ প্রজন্মকে মুঠোফোন বন্দি না হয়ে মাঠে যেতে হবে, খেলাধুলা করে শারিরীকভাবে কার্যক্ষম হতে হবে। শারিরীকভাবে সুস্থ থাকলে মানসিক শক্তি আসবে, হতাশা কমবে এবং পড়াশোনায় মনযোগ বৃদ্ধি পাবে।
আমার উপাচার্য হওয়ার পিছনে আমার পরিবারের ভূমিকা অসীম - অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার

আজ ৮ মার্চ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো-
"নারীর সম-অধিকার,সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ।"
আন্তর্জাতিক নারী দিবস নিয়ে কথা বলেছেন রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার। একজন নারী হিসেবে তিনি জানিয়েছেন নারীদের নিয়ে তার চিন্তা, ভাবনা ও তার জীবনের গল্প। নারী দিবসের বিশেষ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দ্যা রাইজিং ক্যাম্পাসের রাবিপ্রবি প্রতিনিধি মোঃ আয়নুল ইসলাম।রাইজিং ক্যাম্পাসঃ একজন নারীর সফলতার মূলে কোন অনুষঙ্গগুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করে? সেক্ষেত্রে পরিবারের সহযোগিতা কতখানি দরকার বলে আপনি মনে করেন?
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতারঃ নারী কখনো একা সফলতা অর্জন করতে পারেনা। নারীর সফলতার পিছনে তার মা-বাব ভাই বোন,আত্মীয় স্বজন এমনকি তার স্বামী-সন্তানদেরও ভূমিকা রাখতে হয়। সব কিছু মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। একজন মানুষের সফলতার পিছনে তার একক কোন শক্তি নয় বরং অনেকগুলো শক্তিমিলিয়েই সে শক্তির অনন্যাতে পৌঁছে যায়। তাই আমি মনে করি সফলতার পিছনে সবার দোয়া,আশীর্বাদ ও সহযোগিতা দরকার।
রাইজিং ক্যাম্পাসঃ আপনার জন্মস্থান, বেড়ে ওঠা, লেখাপড়া (শিক্ষাগত বিষয়), কর্মজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতারঃ আমি রাঙ্গামাটি জেলাম চন্দ্রঘোনা নামক স্থানে, চন্দ্রঘোনা মিশন হাসপাতালে ১৯৭২ সালে জন্মগ্রহণ করি। পড়াশোনা শুরু করি খ্রিষ্টান মিশনারীতে। সেখানে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করি। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে কর্ণফুলি পেপারস মিলস হাই-স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেছি। সেখান থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার উদ্দেশ্যে ঢাকা বদ্দরুন্নেসা মহিলা মহাবিদ্যালয়ে পড়তে যাই। সেখান থেকে ১৯৮২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্নাস (ম্যানেজমেন্টে বিভাগে ভর্তি হই)। ১৯৮৪ সালে সেখান থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে ১৯৮৫ সালে একই বিভাগে মাস্টার্স করি। এরপর কিছু দিন ঢাকায় আইএফআইসি ব্যাংকে কাজ করেছি। সেখান থেকে ১৯৮৮ সালের পহেলা নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছি। সেই থেকে শিক্ষকতা জীবন এখনো চলমান। অবশেষে ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বরে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেছি ও এখনো দ্বায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।
রাইজিং ক্যাম্পাসঃ আপনার আজকের সফলতার পেছনে কার-কার ভূমিকা রয়েছে। তাদের সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতারঃ আজকে এই অবস্থানে আসার পথে অবশ্যই আমার বাবা-মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। আমি যখন পড়ালেখা করেছি তখনতো মেয়েরা সর্বোচ্চ ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করতে পারতো। এরপরে তাঁদের বাবা-মা তাদের বিয়ে দেয়ার জন্য হন্যে হয়ে পাত্র খুঁজতো। সাধারণ শিক্ষিত মানুষ হয়েও আমার বাবা শুধু স্কুল পড়িয়েই সীমাবদ্ধ রাখেননি বরং আরো শিক্ষিত হতে ঢাকায় পড়াশুনো করতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তার পরে বিয়ে। কোন দিন তারা এটা চিন্তা করেননি যে আমার বয়স বেড়ে যাচ্ছে এর জন্য আমাকে দ্রুত বিয়ে দিতে হবে। আমরা ৮ ভাই-বোন এক সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। একটা সাধারণ পরিবার থেকে ৮ ভাই-বোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে। আমার মনে হয় তখনকার সময়ে অন্যান্য পরিবারে তা সম্ভব ছিল না । এক ভাই ডাক্তার তিনি ব্যতীত আমরা ৭ ভাই-বোন সকলেই চবিতে পড়েছি। আমার মা অত্যন্ত বিদ্যানুরাগী একজন ব্যক্তি। তাকে আমি হাজার সালাম জানাই। আমার শিক্ষক, পিএইচডি ডিগ্রি, উপাচার্য হওয়ার পিছনে আমার পরিবারের ভূমিকা অসীম। যদি আমি এই পরিবারে জন্মগ্রহণ না করতাম তাহলে হয়ত আমি এসব কিছুই হতে পারতাম না। আমার মাকে আমি স্যালুট জানাই।
রাইজিং ক্যাম্পাসঃ আপনার অবসর কীভাবে কাটে, আপনার শখ ইত্যাদি সম্পর্কে যদি বলেন?
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতারঃ অবসর জিনিসটা এখন আমার জীবনে নেই। আগে প্রচুর অবসর পেতাম। তখন এখনকার মতো ব্যস্ত ছিলাম না। অবসরে আমি প্রচুর বই পড়ি। পছন্দের তালিকায় রাজনৈতিক বই, ভ্রমণ কাহিনি, বিভিন্ন মনীষীদের জীবন কাহিনি মূলক বইগুলো। গল্পের বই খুব একটা পড়া হয়না। বড় বড় লেখকের বই গুলো পড়তে ভীষণ পছন্দ করি। পড়াশুনো ছাড়া আসলে আমার ভালো লাগে। এখন একটা আক্ষেপ খুব কাজ করে, কেন আমি আগে থেকে লিখলাম না? আমার লেখা আমার শিক্ষার্থীরা খুব পছন্দ করে। আসলে এক জীবনে হয়ত সবকিছু একসাথে পাওয়া যায় না।
রাইজিং ক্যাম্পাসঃ আপনার রাজনীতি ,রাজনৈতিক জীবন ও নানা অর্জন বিষয়ে জানতে চাই।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতারঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটা কাজে আমি জড়িত থাকতাম। অনেকে অনেক চেষ্টা করেও আমাকে থামাতে পারেনি। আমি আলোর পূজারি। আলোর দিকে ছুটে চলি। আমার প্রাণে আলো আছে। এসব রাজনীতির হাতেখড়ি আমি ঢাকায় পড়ার সময় শিখেছি। ঢাকা এমন এক জায়গায় যেখানে নিজেকে তুলে ধরা যায়। ঐ দুই বছরই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় যা আমি ঢাকায় থাকতে অর্জন করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে ছাত্রলীগের আলাউদ্দীন-শফি পরিষদ শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলাম। পাশাপাশি শামসুন নাহার হলের ও সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলাম। ঐখান থেকেই রাজনীতি (১৯৮৩-১৯৮৬) পর্যন্ত। ১৯৮৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করে ফেলি। শিক্ষক রাজনীতিতে আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত ( মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত শিক্ষক সমাজ (হলুদ দল) এর আমি একজন সক্রিয় সিনিয়র নেতা ও সদস্য। সেখান থেকে নমিনেশন পেয়ে ২০০৮ সালে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করি। এর পর আবারো ২০২২ সালে সভাপতি পদে একই গ্রুপ থেকে নির্বাচন করি। ওখানে ১১০০ শিক্ষকের মাঝে নির্বাচন করে প্রতিপক্ষের থেকে প্রায় ১০০ ভোট বেশি পেয়ে জয় লাভ করে সভাপতি হই। আমার মনে হয় শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নয় বরং বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ এত ভোটে জয় পেয়েছে কিনা আমি জানি না। শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে বাংলাদেশে ও চবির প্রথম নারী সভাপতি হিসেবে আমিই প্রথম নির্বাচিত সভাপতি। এটা আমার অপূর্ব বিজয়। এই বিজয় আমি উপভোগ করি। চবিতে নারী শিক্ষক বড়জোড় দুই শত হবে। বাকী ৯০০ শিক্ষক ছিল পুরুষ। বাকী ভোটগুলো কিন্তু পুরুষ শিক্ষক থেকেই পেয়েছি।
রাইজিং ক্যাম্পাসঃ বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি রাজনৈতিক ভাবে এত পথ পাড়ি দিয়েছেন সেক্ষেত্রে কোন বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন কি?
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতারঃ কোন মানুষের জীবন কাঁটাবিহীন নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে সমান ভাবে যাইচ-বাছাই করেই নেয়া হয়। আমি তেমন কোন বাঁধা পাইনি। তবে আমাদের যে রাজনৈতিক ভাবে যে ঈর্ষা, বৈষম্য এগুলো পেয়েছি। শিক্ষকতার ক্ষেত্রে আমি কোন অনিয়ম পাইনি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, মেয়েরা শিক্ষক রাজনীতি বা দেশের বড় বড় ক্ষেত্রে খুব বেশিদূর যেতে পারেনা কারণ তাদের ডাউনকরে রাখার যত রকম ষড়যন্ত্র আছে তা সব প্রয়োগ করে হয়। আমার উপরেও প্রয়োগ করা হয়েছিলো। আমি মূলত ছাত্রলীগ করা একজন মেয়ে। আমার পরিবারের অনেক অবদান আছে এই দেশের জন্য, এই রাজনীতির জন্য এই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য।
রাইজিং ক্যাম্পাসঃ রাজনৈতিক ভাবে এই অবস্থায় আসতে আপনার পরিবার কোন ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কিনা?
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতারঃ আমার ছোট ভাই আবুল কালাম আজাদ ছিলেন চবি ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ও শাহ্জালাল হলের প্রেসিডেন্ট। আমার ভাই টিউটোরিয়াল পরীক্ষা হচ্ছে সেখান থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে। প্রায় মৃত ভেবে ফেলে দিয়ে গিয়েছিলো। ড্রিল মেশিন থেকে শুরু করে বুকের উপরে ইট ও মাথায় আঘাত করা হয় তাকে। শুধু আল্লাহর দয়ায় ও মায়ের দোয়ায় সে বেঁচে যায়। আমার ভাইয়ের উপরে এত নির্যাতন গেছে যে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না । তার কারণ একটাই সে চবির একছত্র নেতা ও শিবিরের ত্রাস। এতকিছুর পরেও সে শুধু কষ্ট পেয়ে গেছে। বিপদে আসলে তখন কাউকে পাশে পায়নি সে, কেউ এগিয়েও আসেনি। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে বার্তা পৌঁছানোর পরেই তিনি তার ভাই বাহাউদ্দীন নাসির কর্তৃক আজাদ ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য এক লক্ষ টাকা অনুদান দেন। সেজন্য আমি ও আমার পরিবার বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছে চির কৃতজ্ঞ।
রাইজিং ক্যাম্পাসঃ নারী দিবস নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতারঃ ৮ ই মার্চের ভাবনার তুলনাই হয় না। শিকাগো শহরের সেই সুতার কারখানার মধ্যে যে মহিলা শ্রমিকরা তাদের ১৬ ঘন্টাকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টায় আনার যে প্রাণান্তকর চেষ্টা, মাঠে নামা নিয়ে গুলি করে হত্যার মাধ্যমেই কিন্তু এই নারী দিবস জাতিসংঘ কতৃক স্বীকৃতি পেল। আশ্চর্য বিষয় হলো জাতির পিতা ১৯৭০ সাল থেকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে আসছেন। ১৯৭১,১৯৭২ সালেও তিনি এই দিবস পালন করেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা সব সময় বলেন ছেলে-মেয়ে সমান অধিকার। এখন জনসংখ্যার অর্ধেক মেয়েরা। মেয়েরা পিছিয়ে থাকবে কেন? একজন চবির শিক্ষার্থী হিসেবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি, চবির মেয়েরা অনেক কষ্ট করে রাজনীতি করে। তাদের সাথে পদ-পদবীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে বৈষম্য করা হয়। প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে সমান চেষ্টা করলেও মেয়েরা উপযুক্ত পদ-পদবি পায়না। যেমন আমি পাইনি। আমি দুই-তিনবার নমিনেশন চেয়েও আমার দল আমাকে দেয়নি। আমি চাই মেয়েরা এগিয়ে যাক, তারা এগিয়ে গেলেই দেশ এগিয়ে যাবে।
'বিচার বিভাগেই নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চাই'

হেদায়েতুল ইসলাম নাবিদ: পুরো নাম রাকিব মাহমুদ। জন্ম বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল এরিয়ায়। মা-বাবা আর ছোট এক বোন নিয়ে রাকিবের ছোট পরিবার। তিনি স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-২০১৭ বর্ষের শিক্ষার্থী। বাবা পেশায় একজন ব্যবসায়ী এবং মা গৃহিণী। ছোট বোন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে কখনো জজ হওয়ার স্বপ্ন ছিল না আমার। ক্যাম্পাস জীবনের প্রথমদিকে পড়ালেখা নিয়ে কিছুটা বেগ পেতে হয়। বিভাগে আট সেমিস্টারের মধ্যে ছয় সেমিস্টারে রেজাল্ট ছিল সেকেন্ড ক্লাস। পরবর্তীতে যখন নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম তখন বিজেএস এক্সামের দিকে নজর পড়ল এবং ঠিক করে ফেললাম যে জজ হওয়াটাই আমার জন্য বেস্ট অপশন হবে। কথাগুলো এইভাবেই বলেছিলেন উদ্যমী রাকিব।
রাকিবের জীবনের টার্নিং পয়েন্ট:
একদিন বিজেএস নিয়েই কথা বলতে গিয়ে খুব কাছের একজন আমাকে বলেছিলো আমি প্রিলিতেও টিকতে পারবো না। সেদিন আমার নিজেকে খুব নিচু মনে হয়েছিল এবং একটা জিদ কাজ করেছিল। সেইদিন সেই মানুষটাকে বলেছিলাম আমি জজ হবই। এই মানুষটার কাছে আমি কৃতজ্ঞ কারণ তাঁর ঐ কথাটা আমার মধ্যে জিদ তৈরি করে দিয়েছিল।
এরপর আমি প্রস্তুতি শুরু করি। যেহেতু অ্যাকাডেমিকালি প্রথম ছয় সেমিস্টার অনেক ফাঁকি দিয়েছিলাম সেহেতু আমাকে প্রথমে বেসিক ঠিক করার জন্য পড়াশোনা করতে হয়েছে। ২১ সাল থেকে আমি নিজেকে একপ্রকার সবকিছু থেকে আইসোলেটেড করে ফেলেছিলাম প্রস্তুতির জন্য। ১৫শ বিজেএস এক্সাম আমার জন্য প্রথম ছিল। সদ্য এলএলবি শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ করে প্রিলি এক্সাম দিয়েছিলাম। ভাইভা ফেইল করে ব্যর্থ হই। চূড়ান্ত ফলাফলের পরে ভেঙে পড়েছিলাম, মানসিক অবসাদে ভুগতাম।
পরবর্তীতে প্রফেশনাল হেল্প, মেডিকেশন নিয়ে একটু স্বাভাবিক হয়ে আবার পড়াশোনা শুরু করি। ১৫শ বিজেএসের চূড়ান্ত ফলাফলের দুই মাসের মধ্যে ১৬শ বিজেএসের প্রিলি এক্সাম হয়। প্রিলিমিনারি ও পরবর্তীতে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ভাইবার জন্য মনোনীত হয়। সেইবার প্রস্তুতি নিয়ে ভাইবা বোর্ডে আমার সর্বোচ্চটা দেই। চূড়ান্ত ফলাফলের পর ১৬শ বিজেএস এক্সামে আমি সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়।
জজ হয়ে রাকিবের অভিব্যক্তি:
আমি আমার বাবা-মায়ের কাছে অনেক বেশি কৃতজ্ঞ। তারা আমাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন আমি উপভোগ করেছি। আড্ডা দিয়েছি, বন্ধুদের সাথে ঘুরেছি, সাহিত্যের বই পড়েছি আবার সময়মত নিজের ক্যারিয়ারেও ফোকাস করেছি। বিভাগের শিক্ষকদের কাছেও কৃতজ্ঞ। প্রস্তুতি এবং এক্সামের সময় উনারা অনেক নির্দেশনা দিয়েছিলেন, সাহস যুগিয়েছিলেন। বিভাগে আমার কিছু বন্ধু এবং জুনিয়র ছিল যারা আমাকে সবসময় সাপোর্ট দিয়ে গেছে।
ফলাফল প্রকাশের পরে আমি একটা ঘোরে ছিলাম। ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না। বাবা-মাসহ দাদাবাড়ি এবং নানাবাড়ির প্রতিটা মানুষ অনেকবেশি খুশি। নিজের হাইস্কুল থেকেও আমি প্রথম সুপারিশপ্রাপ্ত জজ। এজন্য হাইস্কুলের বন্ধুরাও অনেকবেশি খুশি। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের বিভাগ থেকে ১৬শ বিজেএস আমি একমাত্র সুপারিশপ্রাপ্ত। এজন্য বিভাগের সকলেও আমার উপরে সন্তুষ্ট।
জুনিয়রদের জন্য রাকিবের পরামর্শ ও উপদেশ:
জীবনে পরিশ্রম আর সাথে একটু ভাগ্য থাকলে নিজের লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব। আমাদের কাজে কনসিসটেন্সি থাকলে লক্ষ্য একসময় পূরণ হয়। মাঝপথে হাল ছেড়ে দিলে লক্ষ্য থেকে যোজন যোজন দূরে চলে যেতে হয়।
জীবনে আসলে চূড়ান্ত ফলাফল বলে কিছু নেই। দুই একটা একাডেমিক ফলাফল আমাদের জীবনকে থামিয়ে দিতে পারে না। আবারও ঘুরে দাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে দিয়ে দেন। আমাদের করণীয় হলো সেই সুযোগটা কাজে লাগানো। আমাদের যেকোন ব্যর্থতার পরে আমরা অনেক ধরনের কথা শুনে থাকি, অন্যের কাছে অপমানিত হই। এ ধরণের কথা কাজে মন দিলে চলবে না। নিজের কাজ, নিজের জীবন নিজেকেই গুছিয়ে নিতে হবে।
ক্যারিয়ার নিয়ে রাকিবের ভাবনা:
বিচার বিভাগেই নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চাই। নিম্ন আদালতে ভবিষ্যতে যদি নিজেকে প্রমাণ করতে পারি তবে উচ্চ আদালতের বিচারক হওয়ার স্বপ্ন আছে। সবসময় ন্যায়ের সাথে, ন্যায়ের পথে থাকতে চাই।
অন্য কোন ক্যারিয়ারের প্রতি আমার কোন আকর্ষণ নেই।
তবে আমি স্ট্রিট অ্যানিম্যালদের (স্ট্রিট ডগ, ক্যাট) কষ্টটা অনেক অনুভব করি। আমার অনেক দিনের স্বপ্ন জব পাওয়ার পরে এদের জন্য ছোট পরিসরে ব্যক্তিগত পর্যায়ে হলেও কিছু করার।
শিক্ষক হিসেবে আমি প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনে একটি সুস্থায়ী পরিবর্তন আনার স্বপ্ন দেখি

১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর বিশ্ব ব্যাপী পালিত হয়ে থাকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এই দিবসটি শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য পালন করা হয়। বাংলাদেশে এবারেই প্রথম রাষ্ট্রীয়ভাবে 'শিক্ষক দিবস' পালিত হতে যাচ্ছে। শিক্ষক দিবসে শিক্ষকবৃন্দের চাওয়া-পাওয়া, নানা অর্জন ও চিন্তা ভাবনার বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মোঃ মাঈনুদ্দিন (সি এস ই বিভাগ) সাক্ষাতকারে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন রাবিপ্রবি প্রতিনিধি আহ্সান হাবীব।
আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস নিয়ে আপনার ভাবনা…
দিবস নিয়ে আমার ধারণাটা বরাবরের মত ভিন্ন। কোনো বিশেষ সম্পর্ককে আমি দিবসের মাধ্যমে উদ্যাপিত করতে চাইনা। কিছু বিষয়, সম্পর্ক, পেশা, কিংবা মতাদর্শ সর্বজনীন। যখন এই ধরনের বিশেষ বিষয়টাকে বিশেষ দিবসের সাথে বিশেষায়িত করা হয়, তখন আমার মনে হয় সেখানে ঐ পেশা বা সম্পর্কটা যথাযোগ্য মর্যাদায় আর নেই। তাতে যান্ত্রিকতার ছোঁয়া লেগে গেছে। যে মর্যাদাটা প্রাপ্য ছিল কিংবা ঐ বিশেষ পেশা বা সম্পর্ক থেকে যা পাওয়ার কথা ছিল তা আর পাওয়া যাচ্ছে না। এখানে অধিকার আদায়ের জন্য লড়তে হবে লড়াকু হয়ে। হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি কে ফিরিয়ে আনতে হবে। অথবা দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, অথবা তাকে যান্ত্রিক বানিয়ে নিতে হবে। তাই আমি অপ্রতুল শিক্ষকের ঘাটতি পূরণ করা, শিক্ষকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা কিংবা শিক্ষকতার সঠিক দায়িত্ব পালন করবে এটা নিশ্চিত করার বিষয়ে নির্দিষ্ট কোন দিবসে সীমাবদ্ধ না থেকে ৩৬৫ দিনই কাজ করায় বিশ্বাসী।শিক্ষকদের মানুষ গড়ার কারিগর বলা হয়—আমাদের শিক্ষকরা সেই বহুল কাঙ্ক্ষিত আলোকিত মানুষ তৈরি করতে পারছেন?
হ্যাঁ, মানুষ গড়ার কারিগর - শিক্ষক। এখন আপনাকে বলতে হবে শিক্ষক বলতে আপনি কাকে বুঝাতে চেয়েছেন, শুধু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব প্রাপ্ত পাঠদান কারী শিক্ষককেই। শিক্ষক বলতে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষকদেরকেই বুঝালে হবে না। এ প্রসঙ্গে সুনির্মল বসুর সবার আমি ছাত্র কবিতার কথা বলতে হয়, আমরা প্রতিনিয়ত শিক্ষা লাভ করি আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সকল উপাদান থেকে, তা হতে পারে কোন ব্যক্তি, কোন বস্তু বা পার্থিব কিংবা অপার্থিব চিন্তা চেতনা থেকে। আর এই শিক্ষাই একজন শিক্ষার্থীর মনকে করতে পারে প্রস্ফুটিত , আলোকিত। আর আলোকিত মানুষ তৈরি না হলে দেশ ও জাতি রসাতলে ডুবে যেত, হারিয়ে যেত, দেশ পরিণত হত ধ্বংসস্থুপে। তবে আমরা যদি বলি যোগ্য, কর্মদক্ষ জন বল তৈরির কথা তাহলে বলতে হয় আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে। সেখানে প্রশিক্ষকের যেমন দায় থাকে, আছে শিক্ষার্থীর ও দায়, আছে প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহের ঘাটতি, আছে অনুকূল পরিবেশের অভাব।শিক্ষক জীবনের প্রত্যাশা-প্রাপ্তি মেলবন্ধন আসলে কতদূর?
শিক্ষা হচ্ছে একটি উপকরণ, যা কাউকে তার স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করে। একজন শিক্ষক হিসেবে, আমি শিক্ষার্থীদের জীবনে একটি পরিবর্তনের উৎস হতে পারি, তাদের আত্ম বিশ্বাস বাড়ানোর জন্য এবং তাদের সামর্থ্য ও সৃজনশীলতার দিকে প্রেরণ করতে পারি।এছাড়া, আমি বিশ্বাস করি শিক্ষা হচ্ছে প্রতিটি জীবনের সাথে যোগাযোগ করার মাধ্যম। একটি শ্রেণীকক্ষে, আমি বিভিন্ন সংস্কৃতির, বয়সের এবং সামাজিক পরিস্থিতির শিক্ষার্থীর সাথে মেলবন্ধন তৈরি করতে পারি এবং তাদের কাছে জ্ঞান ও জীবনের সম্পর্কে জানতে পারি, জানাতে পারি।
শিক্ষক হিসেবে ব্যক্তিগত ভাবে আপনার স্বপ্ন কী, প্রাপ্তি কত খানি?
ইরেজিতে একটি কথা আছে By choice or by chance. আমি শিক্ষকতায় By Choice এসেছি। শিক্ষক হিসেবে আমার স্বপ্ন হচ্ছে প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনে একটি সুস্থায়ী পরিবর্তন আনা। আমি চাই তারা তাদের নিজেদের স্বপ্নকে চিনতে পারুক, সেই স্বপ্ন অনুসরণ করে জীবনের সমস্ত সমস্যার মোকাবেলা করুক, গড়ে তুলুক একটা সুন্দর নির্মল আবাসযোগ্য পৃথিবী। আমার প্রাপ্তির দিক দিয়ে বলতে গেলে, আমি অনেক শিক্ষার্থীর জীবনে পজিটিভ প্রভাব ফেলতে পেরেছি। যখন দেখি যে একজন শিক্ষার্থী যান্ত্রিক না হয়ে মানবিক হচ্ছে তখন বেশ ভালো লাগা কাজ করে। একজন শিক্ষার্থীর চেহারায় যখন জ্ঞানের জন্য উৎসাহ ও সন্তোষ দেখি তা হয়ে উঠে এক প্রশান্তির কারণ। আমার স্বল্প সময়ের শিক্ষকতার জীবনে ছোট খাট যা কিছুই পেয়েছি, তন্মধ্যে আমার জন্য সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মনে হয় যখন দেখি আমার শিক্ষার্থীরা সফলতার পথে হাঁটছে, তারা অনুপ্রাণিত হয়ে উঠছে।এমনিতে সমাজ ব্যবস্থার কিছু অসুবিধা তো থেকেই যায়, তাতে কখনও কখনও হয়তো বা ভিন্নধর্মী সমস্যার সম্মুখীন তো হতেই হয়। সমস্যা গুলি সমাধান হয়ে গেলে হয়ত দুঃখ-কষ্টগুলি ভুলে যাই। সমস্যাগুলি কাটিয়ে আবারও স্বপ্নদেখি, স্বপ্নদেখাই।
তবে, আমি মনে করি আমার যাত্রা এখনো সমাপ্ত হয়নি। আমি প্রতিদিন নতুন জিনিস শিখছি এবং আমার শিক্ষার কৌশল উন্নত করার জন্য চেষ্টা করি। আমার স্বপ্ন হচ্ছে যত টুকু সম্ভব অধিক শিক্ষার্থীর জীবনে পজিটিভ প্রভাব ফেলা।
শিক্ষক হিসেবে আপনার মতে কোন দক্ষতা বা গুণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ?
শিক্ষক হিসেবে, আমি মনে করি একাধিক দক্ষতা ও গুণ থাকা প্রয়োজন। তবে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো শ্রদ্ধা এবং সহৃদয়তা। শিক্ষার্থীরা যখন উদ্ভাসিত হয় বা কোনো সমস্যায় পরে যায়, তাদের বোঝা, তাদের পাশে থাকা এবং তাদের উত্তরণে সাহায্য করার জন্য একটি সহমর্মিতা ও সহৃদয়তা থাকতে হবে। এই গুণ তাদের বিশ্বাস, উত্তেজনা এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এছাড়া, শিক্ষক হিসেবে আমার জানতে হবে প্রতিটি শিক্ষার্থীর ভিন্নভিন্ন প্রয়োজনীয়তা, শেখার শৈলী ও স্বভাব। এর মানে হল, আমি প্রতিটি শিক্ষার্থীর সাথে মিথস্ক্রিয়ার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারি।
এবারের বিশ্বশিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘The teachers we need for the education we want: The global imperative to reverse the teacher shortage’ অর্থাৎ, ‘কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা পেতে যেমন শিক্ষক চাই : শিক্ষক সংকট ঠেকাতে বৈশ্বিক উদ্যোগ।’ প্রতিপাদ্যটি কি সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক? আপনার মন্তব্য কি?
এ প্রতিপাদ্যটিকে বিভিন্ন আঙ্গিকে দেখা যায়। দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাব, নাকি সময়ের পরিবর্তন, না কি শুধু রুটিন কাজ করার জন্য শিক্ষক নাকি অন্য কিছু। এ প্রতিপাদ্যটিতে খুবই গভীর বার্তা রয়ে গেছে। সময়ের সাথে পরিবর্তন হচ্ছে সামাজিক ব্যবস্থা । শিল্প বিল্পবের এ সময়টা কে আমরা বলছি ৪র্থ ধাপ। সব কিছুই প্রযুক্তি নির্ভর। পরিবর্তনের হার অনেক বেশি। প্রতি নিয়ত পরিবর্তনের এ সময়ে দেখা দিচ্ছে দক্ষ জনশক্তির অভাব, সময়ের সাথে আমরা মানুষ থেকে যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি। শিক্ষকতা টা নেশা থেকে পেশা হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টা হয়ে যাচ্ছে আগে উদর পূর্তিতার পর বাকি সব। যত গবেষণা তত উন্নয়ন, তবে তার জন্য যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। তাছাড়া শিক্ষকতায় আসতে চাওয়ার অনীহা কিংবা শিক্ষক নিয়োগে স্টেক হোল্ডারদের অনীহা যার ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত বজায় থাকছেনা। কেউ বা শুধু চাকরি করতে শিক্ষকতায় আসতেছেন। এ সমস্যাগুলি প্রকট হচ্ছে। তা থেকে উত্তরণ প্রয়োজন। তাই বলব প্রতিপাদ্যটি সময়ের সঙ্গে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
সমাজের উন্নতি ও সুস্থ প্রশাসনের জন্য শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যদি প্রয়োজনীয় শিক্ষকের সংখ্যা কম হয়, তাহলে তা সমগ্র সমাজের উন্নতি ও বিকেন্দ্রীভূত শিক্ষা প্রণালীর জন্য একটি বড় সমস্যা হতে পারে।
বর্তমানে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের প্রয়াস চলছে, তবে শিক্ষকের সাথে সরাসরি যে মানুষিক সম্পর্ক, যোগাযোগ ও নির্দেশনা তা কখনোই প্রযুক্তি প্রদান করতে পারে না, কিংবা প্রতিস্থাপিত করতে পারেনা, এটা অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা আমাদের শিক্ষা প্রণালীর কাঙ্ক্ষিত মান অর্জন করতে চাইলে যথেষ্ট সংখ্যক দক্ষ ও উৎসাহী শিক্ষক নিয়োগ করা এবং তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি।
দেশের শিক্ষকরা বেতন-মর্যাদায় পিছিয়ে আছে বলে শোনা যায়-সেটা কতটুকু প্রাসঙ্গিক? এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
পৃথিবীতে যে কোন ধরনের পেশার সাথে যদি শিক্ষকতার তুলনা করা হয় তা হলে বলতে হবে শিক্ষক তা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং কেননা অভিনেতা মঞ্চে কিংবা তার কাজের দৃশ্য পটে বুলি আওড়িয়ে অভিনয় করে যায় আর সেখানে শিক্ষককে প্রতিনিয়ত সকল বাস্তবতার সাথে যুদ্ধ করে শিখতে হয়, শেখাতে হয়। জাগ্রত করতে হয় সুপ্ত প্রতিভাকে, মেধায়-মননে হতে হয় অনন্য। আর সেখানে যদি একজন শিক্ষককে তার তিন বেলা খাবারের চিন্তায় বিভোর হইতে হয়, তখন কি আর সে তার মর্যাদায় আছে বলে মনে হয়। যে গবেষক কিংবা প্রশাসক কে গড়ে তুলতে একজন শিক্ষক তার জীবনটাকে যখন অকাতরে বিলিয়ে দেয়, তখনই আবার ঐ শিক্ষক কে ধরনা দিতে হয় ঐ প্রশাসকের কাছে তার বেতনের গ্রেডটা যদি মহাশয় একটু বাড়িয়ে দিতেন। এ বিষয়টা খুবই স্পর্শকাতর। প্রশাসনের উচিত শিক্ষকদের বেতন-ভাতাদির ব্যবস্থা এমন ভাবে সমন্বয় করা যাতে করে শিক্ষকতার শ্রেণি কক্ষে গিয়ে তার পরিবার চালানোর চিন্তা না করতে হয়, তার সন্তানের পড়াশুনার খরচের কথা চিন্তা না করতে হয়, কিংবা শ্রেণী কক্ষে না গিয়ে প্রাইভেট টিউশনে যাওয়ার চিন্তা না করতে হয়।‘নিজের ওপর বিশ্বাস রাখাটা জরুরী’

আমান উল্লাহ, বাকৃবি: আনোয়ার সাদাতের জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাজশাহীতে। শৈশব-কৈশোর কেটেছে চারঘাট উপজেলার স্নিগ্ধ গ্রাম শলুয়াতে। ২০১০ সালে সরদহ সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ২০১২ সালে রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ থেকে স্নাতক ও ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। বর্তমানে তিনি ৪০ তম বিসিএস থেকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে কুড়িগ্রামে কর্মরত আছেন। সম্প্রতি ৪১ তম বিসিএসে তিনি প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
তার এই সাফল্যগাথা, অনুভূতি, নবীনদের জন্য পরামর্শ সহ বিভিন্ন বিষয়ে সাক্ষাৎকার নিয়ে লিখেছেন মো. আমান উল্লাহ।
বিসিএস প্রস্তুতি শুরু
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই অনার্সের পড়াশোনার পাশাপাশি বিসিএস দেওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পরিবেশ, হলের সুযোগ-সুবিধা, সিনিয়রদের বিসিএস সাফল্য আমাকে ক্যারিয়ারের সিদ্ধান্ত নিতে অনুপ্রাণিত করেছিল। মূল পড়াশোনাটা শুরু হয়েছিল অনার্স শেষে, তবে এর আগে সিলেবাস বুঝে বেসিক সাবজেক্টগুলোতে (ইংলিশ,ম্যাথ,বাংলা) নিজের দূর্বল দিকগুলো বের করে সেগুলো মেকআপ করার চেষ্টা করেছি। এক্ষেত্রে আমার মনে হয়, অনার্স লাইফে একজন ছাত্রের একাডেমিক পড়াশোনা ফার্স্ট প্রায়োরিটি হওয়া উচিত, এর পাশাপশি সময় পেলে বিসিএস বা অন্যান্য সরকারী চাকুরীর জন্য প্রয়োজনীয় পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
প্রিলি, রিটেন ও ভাইভা অভিজ্ঞতা
আমার মতে, বিসিএসের মূল চ্যালেন্জ হলো প্রিলিমিনারি পর্ব। যেখানে ১২০ মিনিটে আপনার জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা, পড়াশোনার গভীরতা ও কৌশলের সর্বোচ্চটুকু দিতে হয়। লিখিত পরীক্ষায় একজন প্রার্থীর শিক্ষাজীবনের সকল অর্জিত জ্ঞান, সৃজনশীলতা ও দক্ষতার প্রয়োগ ঘটে, এক্ষেত্রে আপনি কতটুকু জানেন, তার থেকে অধিক গুরত্বপূর্ণ হলো আপনি কতটা যৌক্তিকভাবে সময়, মানবন্টন বুঝে পরিষ্কার ও মানসম্মতভাবে আপনার ভাবনা গুলো পরীক্ষার খাতায় তুলে ধরতে পারছেন। আর ভাইভার বিষয়ে বলতে গেলে, আপনি হবু ক্যাডার অফিসার হিসেবে নিজেকে ঠিক কীভাবে প্রস্তুত করেছেন, আপনি কতটা পরিশ্রমী, সাথে আপনার ভাগ্য কতটা সহায়, এর সবটুকুর প্রতিফলন ঘটে ভাইভাতে।
সফলতার প্রেরণা
স্কুলে পড়ার সময় ক্লাস নাইনে একবার প্রচন্ড খারাপ রেজাল্ট করেছিলাম। প্রায় অনেক দিন কৈশোরের অসহায়ত্বে দিন পার করেছি, যদিও বরাবরের মত ঐ সময়টাতে আমার বাবা-মা আমাকে সর্বোচ্চ সাপোর্ট দিয়েছিলেন। আমি সেসময় প্রথম বুঝেছিলাম, পরিশ্রমহীন মেধার কোন মূল্য নেই। এর পরে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ঐ স্মৃতি মাথায় রেখে সবসময় সামনে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করেছি, মহান আল্লাহ নিরাশ করেননি কখনো।জীবনের লক্ষ্য
আমার বাবা-মা আমার অনুপ্রেরণার আরেক নাম। এছাড়া আমার বোন, দুলাভাই, বন্ধুমহল, সিনিয়র- জুনিয়রসহ সকল শুভকাঙ্ক্ষী সাহস জুগিয়েছে, আস্হা রেখেছে সবটা সময়, এজন্য আমি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। ছোটবেলাতে এক স্কুলশিক্ষকের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলাম, ‘আমি বড় হয়ে ক্রিকেটার হতে চাই’, খেলাধুলার প্রতি প্রচন্ড ঝোঁক থাকলেও বাড়ির একমাত্র ছেলে হিসাবে বাবাকে ব্যাবসায়িক কাজে সাহায্য করতে হতো বলে ওই ইচ্ছাকে আর এগিয়ে নিতে পারিনি। পরবর্তীতে মনে হয়েছে, এমন কিছু করবো যেন, আমার পরিবার সর্বোচ্চ সম্মানিত হয়, এই মন্ত্র থেকেই উচ্চশিক্ষা ও বিসিএসে পথচলা।
স্কুল জীবনের স্মৃতি
স্কুলজীবনের অনেক স্মৃতি আমাকে আজও রোমন্থিত করে, বিশেষ করে বন্ধুদের সাথে কাটানো অগণিত মুহূর্ত আজও অমলিন। কলেজ জীবনের সময়টা খুবই সংক্ষিপ্ত ছিল, বুঝে ওঠার আগেই শেষ, তবুও কলেজের প্রতি বিশেষ টান কাজ করে। আর বিশ্ববিদ্যালয় আমার আরেকটি পরিবার, যে পরিবার আমায় পরিচয় দিয়েছে, সম্মান দিয়েছে। ১২৫০ একরের আলো বাতাস মেখে বড় হয়েছি, ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখেছি, যে স্বপ্ন আজ বাস্তব। তাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি এই আবেগ অটুট থাকবে আজীবন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
২০১২ সালে ইন্জিনিয়ারিং কোচিং করার সময়ও জানতাম না যে আমি একজন কৃষিবিদ হতে চলেছি, কিন্তু আজ আমি একজন গর্বিত কৃষিবিদ। তাই মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, রিযিকের ফয়সালা আসমানে হয়। উপজেলা মৎস্য অফিসার হিসেবে কাজ করে আমার মনে হয়েছে, জনগণের সাথে তাদের উন্নয়নের জন্য কাজ করার মত আনন্দের কিছু আর হতে পারে না। সকলের সাথে মিশে কাজ করার একটা তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল, আজ সেটি পূরণ হয়েছে। সামনে যে মহৎ দায়িত্ব আসছে, সেখানে কার্যক্ষেত্র ও পরিসর বিবেচনায় আরও ভালো ভাবে দেশমাতৃকার সেবা করার সুযোগ রয়েছে। একজন সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ রুপে পালন ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যেতে চাই।
বিসিএস দিতে ইচ্ছুকদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ....
সর্বপ্রথম নিজের ওপর বিশ্বাস রাখাটা জরুরী এইভেবে যে, জীবনকে আপনি একগুণ দিলে জীবন সেটা কয়েকগুণ করে ফেরত দিতে দৃঢ়প্রত্যয়ী। পজিটিভ পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। এটা জানা কথা, তবে এক্ষেত্রে সেটা হতে হবে কৌশলগত। সঠিক ও কার্যকর বই নির্বাচনের পাশাপাশি কোন বিষয়ের কোন অংশটুকু পড়বেন তার চেয়ে কোন অংশটুকু পড়বেন না, সেটা জানাই বেশী গুরত্বপূর্ণ। বিপিএসসি এখন মেধাবী, ধৈর্যশীল, পরিশ্রমীদের পাশাপাশি সৃজনশীল ও বিচক্ষণ প্রার্থী বাছাইয়ে বেশী মনোযোগী। অনার্সের শুরু থেকেই একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন এক্সট্রা-কারিকুলার এ্যাক্টিভিটিসে যুক্ত থাকতে পারেন, নিজের ইংলিশ স্পিকিং এ্যাবিলিটিকে আরও শাণিত করতে পারেন, ভালো ক্যাডার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এটা আবশ্যক। এখন আধুনিক সময়, নিজের মুঠোফোনটাকে বিসিএস প্রস্তুতিতে কাজে লাগান, ফেসবুক ,ইউটিউবের পাশাপাশি আপনার স্কিল ডেপলপমেন্টের জন্য বিভিন্ন সাইট, ফেসবুক পেজ, এ্যাপস ব্যাবহার করতে পারেন। নিজের দূর্বল দিকগুলো নিয়ে কাজ করুন, সিলেবাস বুঝে কার্যকর গ্রুপস্টাডি করুন, সিনিয়রদের পরামর্শ নিন, নিজের প্রাত্যাহিক পড়াশোনাটুকু ডেডিকেটেডলি নিজস্ব রুটিন মাফিক শেষ করুন এবং প্রচুর পরীক্ষা দিন, ভালো করতে হলে পরীক্ষার কোন বিকল্প নেই সত্যিই। নিজেকে গড়ে তোলার জন্য যতটুকু সময় পেয়েছেন তার সদ্ব্যবহার করুন, সময় তার উত্তম প্রতিদান দিতে দ্বিধাবোধ করবে না।
আপনার সম্ভাব্য পরিশ্রম শেষে ফলাফলের জন্য একটা কথায় বিশ্বাস রাখবেন, “মানুষ সবকিছু বদলাতে পারে, শুধু বদলাতে পারে না তার নিয়তি”, দিনশেষে নিয়তিতে বিশ্বাস রাখবেন, ওটা একান্তই সৃষ্টিকর্তার হাতে।
সকল বিসিএস স্বপ্নবাজদের যাত্রা শুভ হোক, এই কামনা।
মন্তব্য