ঢাকা, সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫ ৩ ভাদ্র ১৪৩২
 
শিরোনাম

চবির স্বাস্থ্যসেবা ‘নামমাত্র’, ২টি অ্যাম্বুলেন্সে চলে ২৯ হাজার

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
৬ আগস্ট, ২০২৫ ২২:২০
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
চবির স্বাস্থ্যসেবা ‘নামমাত্র’, ২টি অ্যাম্বুলেন্সে চলে ২৯ হাজার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষার্থী এবং তিন হাজার শিক্ষক-কর্মকর্তার স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্ব রয়েছে মাত্র দুটি অ্যাম্বুলেন্সের ওপর। ক্যাম্পাসে জরুরি চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। 


বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দুটি অ্যাম্বুলেন্স সচল অবস্থায় রয়েছে এবং সেগুলো দিয়ে সার্বক্ষণিক সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে ক্যাম্পাসের পরিধি এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় এই সংখ্যাটি অত্যন্ত অপ্রতুল হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পেতে অনেক সময়ই ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।


নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব বলেন, “গুরুতর অসুস্থ হয় কেউ যখন অ্যাম্বুলেন্সের জন্য কল দেয় তখন সেখান থেকে বলা হয় একটি শহরে আছে এবং আরেকটি ডাক্তার আনতে চলে গেছে। এসব হয়রানিমূলক পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে অতি দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা বাড়াতে হবে।"


মোহাম্মদ আল আমিন নামে এক শিক্ষার্থী তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন,"সকাল ৬টার দিকে পেটব্যথায় অসুস্থ রুমমেটকে মেডিকেলে নিতে অ্যাম্বুলেন্সে কল দেই। জানানো হয়, দুটি অ্যাম্বুলেন্সই শহরে। বাধ্য হয়ে রুমমেটকে হেঁটে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত নিয়ে যাই, সেখান থেকে রিকশায় করে মেডিকেলে পৌঁছাই ৬:২৫ মিনিটে।"


এ এফ রহমান হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র দুটি অ্যাম্বুলেন্স, তাও সব সময় পাওয়া যায় না। কল দিলেই বলে এম্বুলেন্স দুটোই শহরে আছে। কিছুদিন আগে আমার হলে একজন আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাকে দ্রুত মেডিকেল নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স কল দেওয়া হয়। এই এম্বুলেন্স আসতে দেরি করায় পরবর্তীতে আমরা তাকে মোটরসাইকেলে করে মেডিকেল নিয়ে যেতে বাধ্য হই।"


নাট্যকলা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বলেন," প্রথমত অ্যাম্বুলেন্স হচ্ছে অপর্যাপ্ত, তার উপর অ্যাম্বুলেন্স এর ভেতরের যে অবস্থা সেখানে অসুস্থ রোগী আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে"।


বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, হঠাৎ দুর্ঘটনা, সাপের কামড় কিংবা অসুস্থতার সময় অনেকেই মেডিকেলে পৌঁছাতেই দেরি করেন। অনেক সময় রিক্সা বা মোটরসাইকেলে করে রোগীকে নিয়ে যাওয়া লাগে। তাও আবার সব সময় পাওয়া যায় না। 


বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. আবু তৈয়ব বলেন, দুটি অ্যাম্বুলেন্স সচল রয়েছে। তবে শিক্ষার্থীসংখ্যা বিবেচনায় আরও একটি অ্যাম্বুলেন্স জরুরি। আমরা সে অনুযায়ী প্রশাসনকে প্রস্তাব দিয়েছি।


বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য(প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, " আমাদের মেডিকেল সেন্টারের মৌলিক সমস্যা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সের সমস্যা। এটি আমাদের দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই সমস্যা আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমরা এখনও এই সমস্যাটির সমাধান করতে পারিনি। আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের টাকা ছাড় হবে এবং একটি অ্যাম্বুলেন্স কিনতে পারবো। আমাদের সাথে যেসব ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম রয়েছে আমরা তাদেরকেও অ্যাম্বুলেন্সের জন্য চিঠি দিয়েছি এবং অনুরোধ করেছি। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের এই সমস্যাটির সমাধান করার জন্য। 


দেশের অন্যতম বৃহৎ এই আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য এই সংখ্যা একেবারেই অপ্রতুল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাসেবা আরও আধুনিক ও দ্রুতগামী করতে মেডিকেল সেন্টারকে সম্প্রসারণ এবং অ্যাম্বুলেন্স সেবাকে শক্তিশালী করার দাবি জানাচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

প্রাসঙ্গিক
    মন্তব্য

    জাবিপ্রবিতে ফল বিপণন উৎসব: হাতে-কলমে শিখছে ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা

    ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
    ৬ আগস্ট, ২০২৫ ২২:১১
    ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
    জাবিপ্রবিতে ফল বিপণন উৎসব: হাতে-কলমে শিখছে ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা

    ‘সঠিক বিপণন, উন্নত ব্যবস্থাপনা—ফল চাষে আসুক নতুন প্রভা’ এই স্লোগান নিয়ে জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবিপ্রবি) অনুষ্ঠিত হলো ব্যতিক্রমী এক ফল বিপণন ও ব্যবস্থাপনা উৎসব।


    বুধবার (৬ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সবুজ চত্বর মুখরিত হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের এই ব্যতিক্রমী বিপণন প্রয়াসে। দিনব্যাপী এই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোশাররফ হোসেন, রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ নূর হোসেন চৌধুরী এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক।


    ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক আতিকুর রহমানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় বিভাগের চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তাদের ‘মার্কেটিং ম্যানেজমেন্ট’ কোর্সের অংশ হিসেবে এই উৎসবের আয়োজন করে। তত্ত্বীয় জ্ঞানের সঙ্গে ব্যবহারিক শিক্ষার সংযোগ ঘটানোর লক্ষ্যে আয়োজিত এই উৎসবে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। এর আগেও প্রভাষক আতিকুর রহমান শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৃক্ষরোপণসহ বিভিন্ন বাস্তবমুখী শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রশংসিত হয়েছেন।


    উৎসবে ‘ফ্রুটি ফ্যাশন’, ‘ফলের বারান্দা’ এবং ‘বিজনেস থটস’ নামের তিনটি স্টল সাজিয়ে বসেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিটি স্টলেই ছিল ড্রাগন ফল, স্ট্রবেরি, বারি মাল্টা, ক্যারামবোলা, কাঁঠাল, আম ও পেয়ারার মতো ২০ থেকে ৪০ প্রকারের দেশি-বিদেশি ফলের সমাহার। শুধু তা-ই নয়, ফলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে তুলে ধরতে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই তৈরি করে এনেছিল নানা পদের আচার, জ্যাম, জেলি এবং স্বাস্থ্যকর পানীয়। ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে প্রতিটি স্টলেই ছিল বিশেষ ছাড় এবং আকর্ষণীয় অফার।


    বিভাগের শিক্ষার্থী ও ফলের বারান্দা স্টলের সদস্য দৌলাতুন নেছা বলেন, ‘কনজুমারের সাথে স্মার্টলি কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ। বিক্রির সময় হাসিমুখে যোগাযোগ করা, পণ্যের ভালো দিকগুলো তুলে ধরা – এগুলো বিক্রয় বাড়াতে সাহায্য করেছে। টিমওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ ভাগ করে নেওয়াটা খুব কার্যকর ছিল। আজ বুঝেছি মার্কেটিং ম্যানেজমেন্ট শুধু পণ্য বিক্রি নয়, বরং ক্রেতার আস্থা অর্জন করাও জরুরি। গ্রাহকের চাহিদা বুঝে সঠিকভাবে সেবা দেওয়া এবং সুন্দরভাবে প্রেজেন্টেশন করা বিক্রয়ের মূল চাবিকাঠি। ভবিষ্যতে এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে 

    পারবো।’ এই গ্রুপের আরেক সদস্য সাজ্জাদ হোসেন জানান, ‘এই ফল বিপণন অনুষ্ঠান থেকে আমরা বইয়ের বাইরের অনেক কিছু শিখেছি। এখানে হাতে-কলমে শিখেছি কিভাবে উদ্যোক্তা হওয়া যায় এবং সীমিত সম্পদ দিয়ে বাজার তৈরি করা যায়। শিক্ষকরা শুধু পড়াননি, বাস্তব জীবন বুঝিয়েছেন। বুঝতে পেরেছি দেশীয় ফল বাজারজাত ও রপ্তানির মাধ্যমে কৃষক আর দেশের অর্থনীতি—দুটোতেই অবদান রাখা যায়।’


    আয়োজনের সভাপতি ও প্রভাষক আতিকুর রহমান বলেন, “এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে ব্যবসা ও বিপণনের শিক্ষা দেওয়া। শ্রেনী কক্ষে যা শেখানো হয়, তার বাস্তব প্রয়োগ তারা এখানে করতে পারছে। ভবিষ্যতে তারা যখন কর্মজীবনে প্রবেশ করবে বা নিজেরাই উদ্যোক্তা হবে, তখন এই অভিজ্ঞতা তাদের জন্য পাথেয় হয়ে থাকবে।”


    শিক্ষার্থীদের এমন সৃষ্টিশীল ও বাস্তবধর্মী উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করেন অতিথিরা। দিনভর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিপুল উৎসাহে স্টলগুলো পরিদর্শন করেন এবং ফল ও ফলের তৈরি বিভিন্ন পণ্য কিনে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করেন।

    প্রাসঙ্গিক
      মন্তব্য

      ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ভর্তি বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে রিট

      ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
      ৬ আগস্ট, ২০২৫ ১৯:৪০
      ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
      ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ভর্তি বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে রিট

      ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির (প্রস্তাবিত) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তির জন্য জন্য জারি করা বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়েছে। পাশাপাশি ভর্তি বিজ্ঞপ্তিটি কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।


      বুধবার (৬ আগস্ট) সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী আরিয়ান জামান ও সাগর কুমার ঘোষের পক্ষে আইনজীবী শাহ আলম অভি সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট করেন। এতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মুঞ্জরী কমিশনের চেয়ারম্যান, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির (প্রস্তাবিত) প্রশাসক ও সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষকে বিবাদী করা হয়েছে।


      আগামী রোববার (১০ আগস্ট) বিচারপতি ফাতেমা নজীবের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন রিটকারীদের আইনজীবী শাহ আলম অভি।


      আইনজীবী বলেন, বিদ্যমান অবকাঠামো অনুযায়ী সরকারি তিতুমীর কলেজে গত শিক্ষা বর্ষে স্নাতক (অনার্স) প্রথম বর্ষে ৫৪২৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধীন ২০২৪-২৫ শিক্ষা বর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী তিতুমীর কলেজের জন্য মাত্র ১৫১০টি আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। একই অবকাঠামোতে আগে যেখানে ৫৪২৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতো; বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর এখন সেই অবকাঠামোতে মাত্র ১৫১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রাখাটা বৈষম্যমূলক। এ কারণে তিতুমীর কলেজের দুজন শিক্ষার্থী এই ভর্তি বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে রিট করেছেন। বিচারপতি ফাতেমা নজীবের নের্তৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে আবেদনটির ওপর শুনানি করার জন্য অনুমতি নেওয়া হয়েছে। আগামী রোববার (১০ আগস্ট) এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।


      উল্লেখ্য, গত ২৮ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি (বিদ্যমান একাডেমিক কাঠামোতে) প্রকাশ করা হয়েছে। ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির (প্রস্তাবিত) অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রশাসক অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস স্বাক্ষরে এ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।


      এস এম মঈন, সরকারি বাঙলা কলেজ প্রতিনিধি

      প্রাসঙ্গিক
        মন্তব্য

        খোদ প্রশাসনই কুবিতে ফিরিয়ে আনছে নিষিদ্ধ রাজনীতি

        ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
        ৫ আগস্ট, ২০২৫ ১৬:২
        ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
        খোদ প্রশাসনই কুবিতে ফিরিয়ে আনছে নিষিদ্ধ রাজনীতি

        শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলেও সম্প্রতি প্রশাসনের কিছু পদক্ষেপ ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অমান্য করে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।


        বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এ আহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভার আয়োজন করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই অনুষ্ঠান বাস্তবায়নে ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, বাগছাসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে প্রশাসন।


        খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ আগস্টের অনুষ্ঠানে আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল। তার তত্ত্বাবধানে পরপর দুই বার রাজনৈতিক দলের সাথে মিটিং হয়েছে। সভায় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদল ও বাগসাসের নেতাকর্মীরা। সভায় উপস্থিত হতে ছাত্রশিবিরকে দাওয়াত দিলেও তারা অংশগ্রহণ করেননি। জানা যায়, আগামীকালের অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলগুলোও বক্তব্য দিবেন। 


        এদিকে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পূর্বে ক্যাম্পাসকে ‘রাজনীতি মুক্ত’ রাখার কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়, সেখানে এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সরব অংশগ্রহণে প্রোগ্রাম আয়োজন করা নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা আরো বলছেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু সেটি বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা যেত। সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের আনয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক ধরনের অশনি সংকেত।


        বুদ্ধিভিত্তিক সংগঠন পাটাতনের সভাপতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, এই ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির নামে অস্ত্রবাজি, দখলদারি, ছাত্র নিপীড়ন, এমনকি যৌন হয়রানির মতো ঘটনাও ঘটেছে। সেই অভিশপ্ত ইতিহাস ফিরিয়ে আনার পাঁয়তারা চলছে এখন প্রশাসনের হাত ধরে। জুলাইয়ের অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি স্পষ্টভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক ও স্বেচ্ছাচারী আচরণ। 


        বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্বিমুখী নীতিতে চলছে। একদিকে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, অন্যদিকে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। এটা ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছু নয়। যদি প্রশাসন সত্যিই রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস চায়, তাহলে তাদের নিজেদের স্ববিরোধী ভূমিকা ত্যাগ করে অবিলম্বে রাজনীতিকরণ বন্ধ করতে হবে। 


        শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বর্তমান প্রক্টর কেবল নামমাত্র পদে আছেন। দায়িত্ব পালনে তার নিষ্ক্রিয়তা হতাশাজনক। এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় যে রাজনৈতিক দলগুলো প্রকাশ্যে শোডাউন দিলেও তিনি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। বরং বারবার নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন। প্রক্টরের দায়িত্ব সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা। তা যদি না পারেন, তবে তার নৈতিকভাবে পদত্যাগ করা উচিত।


        খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৭ সাল থেকে ভর্তির সময় রাজনীতি করা যাবে না বলে মুছলেকা নিয়ে ভর্তি করা হয় এবং ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত ১০০তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় ক্যাম্পাসে সকল রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রম থেকে মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ক্যাম্পাসে কোনো রাজনৈতিক দলের অঙ্গ/সহযোগী/ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন প্রকাশ্যে বা গোপনে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারবে না।


        এছাড়া, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ৪৩ (ঘ) ধারা অনুযায়ী, কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবে না। কেউ এই নীতিমালা ভঙ্গ করলে, শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে।


        তবে বাস্তবে পরিস্থিতি ভিন্ন। সম্প্রতি ছাত্রদল ক্যাম্পাসে শোডাউন করেছে, ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে গোপনে কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ উঠেছে, এবং বাগছাস প্রকাশ্যেই বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।


        প্রশাসনের অধীনে রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামালকে কল দেওয়া হলে মিটিং এ আছেন বলে কল কেটে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায় নি।


        এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

        প্রাসঙ্গিক
          মন্তব্য

          জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে রাজশাহী কলেজের র‌্যালি ও পুষ্পস্তবক অর্পণ

          ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
          ৫ আগস্ট, ২০২৫ ১৩:৯
          ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
          জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে রাজশাহী কলেজের র‌্যালি ও পুষ্পস্তবক অর্পণ

          জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজশাহী কলেজের উদ্যোগে র‌্যালি ও জুলাই শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছে। 


          মঙ্গলবার (০৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯ টায় কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মু. যহুর আলীর নেতৃত্বে কলেজ চত্বর থেকে র‌্যালি বের করা হয় এবং নগরীর সিএন্ডবি মোড়ে নবনির্মিত জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।


          এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. ইব্রাহিম আলী, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. সেরাজ উদ্দীন, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. শিখা সরকার। এছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষকবৃন্দ ও কলেজের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।


          উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪-এর জুলাই-আগস্টের ছাত্রজনতা আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট সাবেক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। যার ধারাবাহিকতায় আজ ৫ আগস্ট সারাদেশে ব্যাপি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপিত হচ্ছে এবং রাজশাহী কলেজেও সেই উপলক্ষে নানান আয়োজনে দিনটি পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

          প্রাসঙ্গিক
            মন্তব্য
            সর্বশেষ সংবাদ
              সর্বাধিক পঠিত