যৌন হয়রানির অভিযোগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারসহ অন্যান্য শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।

যৌন হয়রানির অভিযোগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ৭ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারসহ অন্যান্য শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।
বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২৬তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। পরে বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বহিষ্কৃতরা হলেন— লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৬২৩৭০৩৩ রেজিস্ট্রেশনের শিক্ষার্থী সুমন দাস (১ বছর), মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৯৩৩৯০২৬ রেজিস্ট্রেশনের শিক্ষার্থী সৈয়দ মুস্তাকিম সাকিব (১ বছর), বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬৬৩১০০৯ রেজিস্ট্রেশনের শিক্ষার্থী মো. আরিফুল ইসলাম (২ বছর), ২০১৬৬৩১০৩৫ রেজিস্ট্রেশনের শিক্ষার্থী মো. জায়েদ ইকবাল তানিন (২ বছর), ২০১৬৬৩১০৪৬ রেজিস্ট্রেশনের শিক্ষার্থী মো. ইমাম হোসেন ইমরান (১ বছর), ২০১৬৬৩১০৩১ রেজিস্ট্রেশনের শিক্ষার্থী মো. রিফাত হোসেন (১ বছর) এবং ২০১৬৬৩১০৫৩ রেজিস্ট্রেশনের শিক্ষার্থী মো. বিশাল আলী (১ বছর)।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলের সিট বাতিল করা হয়েছে এবং তাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশও নিষিদ্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার ও শাস্তির এ সিদ্ধান্ত আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে কার্যকর হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন জানান, হয়রানির তিনটি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে ওই শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
বাবুল আক্তার ও সাংবাদিক ইলিয়াসের বিরুদ্ধে মামলা বনজ কুমারের

মিথ্যা’ তথ্য প্রচারের অভিযোগে স্ত্রী হত্যার অভিযোগে কারাবন্দী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারসহ চার জনকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মিতু হত্যা মামলা নিয়ে ‘মিথ্যা’ তথ্য প্রচারের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদারের পক্ষে কলাবাগান থানায় এ মামলা করেছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডি থানায় পিবিআই প্রধানের পক্ষে পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রো উত্তরের পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলমের মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় বাবুল আক্তার ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন, হাবিবুর রহমান লাবু ও তার বাবা আব্দুল ওয়াদুদ মিয়াকে আসামি করা হয়।
সম্প্রতি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত সেই ভিডিওতে বনজ কুমার মজুমদারের বিরুদ্ধে বাবুলকে রিমান্ডে নির্যাতনসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ আনেন তিনি।
ইলিয়াস হোসাইনের পোস্ট করা ভিডিওতে বলা হয়েছে, এই মামলায় বাবুল আক্তারকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ফাঁসিয়েছেন বনজ কুমার। এছাড়া স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তাকে রিমান্ডে নির্যাতনও করা হয়েছে। মিথ্যা সাক্ষী সাজানোর অভিযোগও রয়েছে।
ইলিয়াসের ভিডিওটি প্রকাশের পরই বনজ কুমার মজুমদারসহ ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেন বাবুল আক্তার। এই মামলার পর কারাগারে বাবুল আক্তারের সেলে পুলিশ তল্লাশি করে বলেও অভিযোগ করা হয়। তবে দুটি আবেদনই খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
রূপ-যৌবনই পুঁজি, ৮ বিয়ে করে কারাগারে

বিয়ের নামে ফাঁদে ফেলে একাধিক পুরুষকে নিঃস্ব করা খুলনার বহুল আলোচিত সুলতানা পারভীন নীলা ওরফে বৃষ্টিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। সোমবার ঢাকার ১৪ নং আদালতে নীলা হাজির হয়েছে প্রতারণার মামলায় জামিনের জন্য আবেদন দাখিল করেন। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মাইনুল হোসেন তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। অপর এক আসামি তার বড় ভাই শফিকুল আলম বিপ্লবেরও জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।
নীলার সাবেক ৭ম স্বামী এম রহমানের দায়েরকৃত মামলার আইনজীবী ঢাকা জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট ওয়াদুদ শাহীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সিআইডি ঢাকার এসআই রফিকুল ইসলাম বলেন, বহুবিয়েতে আসক্ত সুলতানা পারভীন নীলা প্রতারণার ফাঁদে ফেলে এ পর্যন্ত ৮ এর অধিক পুরুষকে বিয়ে করেন। তার ৭ম স্বামী এম রহমান তার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে প্রতারণার মামলা করেন। সেই মামলার দায়িত্ব পান ঢাকার সিআইডি। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। আদালত গত ১৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়োনা জারি করেন।
তিনি বলেন, নীলার বাসার ঠিকানা ঠিক নয়। একেক সময় একেকজনকে একেক পরিচয়ে প্রতারণা করে বিয়ে করে। আমাকে নিঃস্ব করে আবার অন্য একজনকে বিয়ে করে। এভাবে মোট ৮টি বিয়ে করেছে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে।
নীলার একাধিক সাবেক স্বামী বলেন, শারীরিক গঠন ও রূপ-যৌবনই মূল সম্পদ নীলার। এটিকে পুঁজি করে সে বিয়ের নামে ধনাঢ্য ও পদস্থ কর্মকর্তা, চাকরিজীবীদের ফাঁদে ফেলেছেন। আর হাতিয়ে নিয়েছে বহু অর্থ-সম্পদ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুলতানা পারভীন নিলা এ পর্যন্ত ৮ এর অধিক বিয়ে করেছেন। বিয়ে করে কিছুদিন পর সেই স্বামীকে ছেড়ে দেওয়া এবং তার কাছ থেকে দেনমোহরের টাকাসহ নানা কৌশলে বাড়ি-গাড়ি হাতিয়ে নেয়াই তার ব্যবসা। তার মূল টার্গেট সম্পদশালী, ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ চাকরিজীবী ও প্রবাসী পুরুষ। প্রথমে টার্গেট নিশ্চিত করে তিনি ধীরে ধীরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে নিজ দেহের সৌন্দর্য ও কথা মালার মারপ্যাঁচে আটকে ফেলেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে সুলতানা পারভীনের প্রথম বিয়ে হয় মাদারীপুর জেলার হরিকুমারিয়া গ্রামের আব্দুল হাকিম শিকদারের জাপান প্রবাসী ছেলে শাহাবউদ্দিন সিকদারের সঙ্গে। নিলার বয়স ছিল তখন ১৫ বছরেরও কম। কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামীর ঘর থেকে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার নিয়ে বেরিয়ে যায় সে। তার উশৃঙ্খল জীবনযাপন ও মালামাল চুরির ঘটনায় শাহাবুদ্দিন শিকদার মাদারীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। যদিও ২০০১ সালে তার সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে নীলার।
নীলার দ্বিতীয় বিয়ে হয় ২০০৫ সালের ৬ মে খুলনা মহানগরীর শেরেবাংলা রোডের মো. মকবুল হোসেনের ছেলে এসএম মুনির হোসেনের সঙ্গে। তখন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নিজেকে ‘কুমারী’ দাবি করে মুনির হোসেনের সঙ্গে এক লাখ টাকার কাবিননামায় বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয় সে। কিন্তু বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে নীলার উশৃঙ্খল জীবনযাপন এবং ও উগ্র আচরণের শিকার হন স্বামী মুনির। এক পর্যায়ে স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থ নিয়ে এ বাড়ি থেকেও বেরিয়ে যান নীলা। এ ঘটনায় একই বছরের ১০ ডিসেম্বর মুনির হোসেন তাকে তালাক দেন। যদিও পরবর্তীতে তার কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে সুলতানা পারভীন নীলা ২০০৬ সালে মনির হোসেনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পারিবারিক আদালতে মামলা করেন।
ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সুলতানা পারভীন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আবারো নিজেকে ‘কুমারী’ দাবি করে ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে নগরীর খালিশপুর ওয়ারলেস ক্রস রোডের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে ঠিকাদার মইনুল আরেফিন বনিকে বিয়ে করেন। তবে, শর্ত থাকে বিয়ের পর নীলা তার আত্মীয়ের মাধ্যমে বনিকে ইতালি নিয়ে যাবে। শর্ত মোতাবেক বিয়ের পর তার কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে কিছুদিন যেতে না যেতেই নীলার প্রতারণা প্রকাশ পেতে থাকে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যেও বিচ্ছেদ ঘটে।
নীলা নিজেকে কুমারী দাবি করে শেখ মঈনুল আরেফিন বনিকে ২০১০ সালে বিয়ে করেন। তারপর তাদের বিচ্ছেদ হয় এবং নীলা বনির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন। সেই মামলা চলমান থাকা অবস্থায় তিনি ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জের ইফতিখার নামে একজনকে বিয়ে করেন।
নীলার এক সাবেক স্বামী মো. আব্দুল বাকী ঢাকার আদালতে তার বিরুদ্ধে চেক ও টাকা-পয়সা চুরির অভিযোগে একটি মামলা করেন, এছাড়া সিরাজগঞ্জে অবস্থানকালীন ঢাকার একটি ফ্ল্যাট তার নামে লিখে না দেওয়ায় আরো এক স্বামীকে নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসানো এবং জীবন নাশের হুমকি দেন নীলা। ঐ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২ মে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়রি করা হয়।
তার প্রতারণা ও জালিয়াতিসহ অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে তাকে গ্রেফতার এবং কঠোর শাস্তির দাবিতে ২০২১ সালের সোমবার (২২ মার্চ) দুপুরে খুলনা প্রে সক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন মহানগরীর নাজিরঘাট এলাকার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে মো. আব্দুল বাকী।
সেই মরিয়ম, এই মরিয়ম

গেল কয়েকদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হইচই মরিয়ম মান্নানের মায়ের ‘নিখোঁজ’ হওয়া নিয়ে। মরিয়ম নিজেই দিয়ে আসছিলেন নানা আপডেট। একপর্যায়ে মায়ের মৃত্যুর খবর জানিয়ে তার ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট দেয়া হয়। এবার সেই আইডি থেকেই দেয়া হয়েছে মায়ের বেঁচে থাকার খবর।
এর আগে মাসখানেক ধরেই মায়ের নিখোঁজের খবর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হইচই ফেলে দিয়েছিল মরিয়ম। শুরু থেকেই সে তার ফেসবুকে নানারকম আপডেট দিচ্ছিলেন। একপর্যায়ে মায়ের মৃত্যুর খবর জানিয়ে তার ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। তবে মাকে নিয়ে আলোচনায় থাকা মরিয়ম এর আগেও ব্যাপকভাবে আলোচনায় ছিলেন।
চার বছর আগে কোটা আন্দোলন হয়েছিল। তখন মরিয়ম পুলিশি হেফাজতে নিজের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছিলেন। ওই সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে ভাইরাল হয়েছিল এই শিক্ষার্থী। মরিয়ম মান্নান ওই সময় রাতভর শাহবাগ থানায় তাকে আটকে রেখে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করেছিলেন পুলিশের বিরুদ্ধে। যদিও পরে পুলিশ মরিয়মের কথা মিথ্যা বলে দাবি করে। কারণ, ওই সময় মরিয়ম সঠিক কোনো যুক্তি দেখাতে পারেনি পুলিশের বিরুদ্ধে।
সে সময় তেজগাঁও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন মরিয়ম মান্নান। একটি ভিডিওতে দেখা যায়- কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহীদ মিনারে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। কয়েকজন সাংবাদিক তার সঙ্গে কথা বলতে আসেন।
উত্তেজিত অবস্থায় তখন সাংবাদিকদের বলেন, আপনার জানতে চান ওই দিন তারা আমার কোথায় কোথায় হাত দিয়েছিল? কি বলেছিল? আপনাদের শুনতে ইচ্ছে করছে, আমার কোথায় কোথায় ধরেছে? আমাকে কীভাবে কী করেছে? সবাই আমাকে ফোন দিচ্ছে, তোমাকে কী করেছে? এখন কী আমি লাইভে যাব? লাইভে গিয়ে বলব আমাকে কী করেছে? কেমন করে ধরেছে? আমি কান্না করব আর সবাই আমাকে সহানুভূতি দেখাবে?
এবার মরিয়ম তার মাকে নিয়ে রহস্য তৈরি করেছে বলে সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। চলছে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা। মাকে ফিরে পাওয়ার পর নিজেও বেশ কয়েকটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন মরিয়ম। যেখানে তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশের পাশাপাশি সরকারকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন যারা এতদিন তার পাশে থেকে সাহস যুগিয়েছেন।
কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে তার ভিন্ন চিত্র। মাকে এতদিন পর ফিরে পাওয়ায় যেখানে সবাই সাধুবাদ জানানোর কথা, সেখানে তার পেজে দেয়া স্ট্যাটাসগুলোতে হাসির প্রতিক্রিয়ার ছড়াছড়ি। এমনকি মন্তব্যের ঘরেও চলছে তীব্র সমালোচনা। এছাড়া অনেকেই যারা মরিয়মের দুঃসময়ে তার পাশে থেকে সহানুভূতি জানিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তারাও তার ব্যাপক সমালোচনা করছেন।
১৬ ঘণ্টা পর মুখ খুললেন রহিমা বেগম

বহুল আলোচিত ‘নিখোঁজ’ থাকা রহিমা বেগম অবশেষে মুখ খুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, নিজ বাসার নিচ থেকে ৪/৫ জন দুর্বৃত্ত মুখে কাপড় বেঁধে তাকে অপহরণ করেছিল।
উদ্ধার হওয়ার প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার দিকে সন্তানের মুখোমুখি করার পর তিনি মুখ খোলেন।
পুলিশ ইনভেস্টিগেশন অব বাংলাদেশ (পিবিআই) খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান দুপুর আড়াইটার দিকে এ তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার বলেন, শনিবার ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রাম থেকে উদ্ধারের পর থেকে কোনো কথাই বলছিলেন না রহিমা বেগম। বেলা ১টার দিকে মেয়ে মরিয়ম মান্নানসহ তাকে চার মেয়ের মুখোমুখি আনা হয়। এসময় মেয়েরা মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে তিনি অপহৃত হয়েছিলেন বলে দাবি করেন।
কান্নারত অবস্থায় মেয়েরা মাকে বলতে থাকেন, আমাদের ছেড়ে আর কোনোদিন কোথাও যাবে না! আমাদের জমি দরকার নেই। মাকে দরকার, তোমাকে দরকার!
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, রহিমা বেগমকে অপহরণের পর অজ্ঞাতস্থানে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে দাবি করেন। জমি-জমার বিরোধ থাকা কিবরিয়া, মহিউদ্দিনসহ কয়েক ব্যক্তি তার কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন ও বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দেন। এক পর্যায়ে তাকে একহাজার টাকা দিয়ে ছেড়ে দেন।
রহিমা বেগমের দাবি, তিনি কিছুই চিনতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে গোপালগঞ্জের মুকছেদপুর হয়ে পূর্ব পরিচিত ভাড়াটিয়ার ফরিদপুরের বোয়ালখালী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে যান। কিন্তু তার কাছে কোনো মোবাইল নম্বর না থাকায় কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারেননি।
পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, আমরা রহিমা বেগমের বক্তব্য খতিয়ে দেখছি। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আইন অনুযায়ী সবকিছু করা হবে।
এর আগে ফরিদপুরের বোয়ালমারি থেকে শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে উদ্ধারের পর রহিমা বেগম (৫৫) ও আরও দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি ফরিদপুরের বোয়ালমারির কুদ্দুসের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। কুদ্দুস এক সময় খুলনার জুট মিলে চাকরি করতেন ও রহিমা বেগমের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে ছিলেন।
রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে সোনাডাঙ্গা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে রহিমা বেগমকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কার্যালয়ে আনা হয়।
উল্লেখ্য, খুলনার দৌলতপুর মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। সেসময় রহিমার দ্বিতীয় স্বামী বিল্লাল হাওলাদার ওই বাড়িতে ছিলেন। পানি আনতে বাসা থেকে নিচে নেমেছিলেন রহিমা। দীর্ঘসময় পরও তার খোঁজ না পাওয়ায় ঘটনার দিন রাত সোয়া ২টায় দৌলতপুর থানায় অপহরণ মামলা করেন তার মেয়ে আদুরী।
এরপর পুলিশ ও র্যাব ছয়জনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ১৭ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর থানা থেকে মামলাটি পিবিআইকে তদন্তভার দেওয়া হয়।
এদিকে, গত শুক্রবার দুপুরে রহিমা বেগমের মেয়েরা ময়মনসিংহের ফুলপুরে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত মহিলার লাশকে ‘নিজেদের মায়ের লাশ’ দাবি করলে চাঞ্চল্য তৈরি হয়। উদ্ধার হওয়া লাশের পরনের কাপড় দেখে প্রাথমিকভাবে নিজের মায়ের লাশ বলে জানায় রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নান। তবে ময়মনসিংহের ফুলপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন উদ্ধার হওয়া নারীর লাশ অর্ধগলিত ছিল দাবি করে লাশের ডিএনএ টেস্ট করার প্রক্রিয়া শুরু করেন।
মন্তব্য