ভর্তি পরীক্ষার আয়ের সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় হয়। যার বড় অংশই ভর্তি পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটে যায়। ফির এই টাকা নিয়ে নয়ছয়েরও অভিযোগ আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রির আয় থেকে উদ্বৃত্ত আট কোটি টাকা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে ভাগ-ভাঁটোয়ারা করার অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।
শুধু ভর্তি পরীক্ষার আয়ের অনিয়ম নয়, আর্থিক প্রশাসনে শৃঙ্খলা আনতে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিগগির ৪১ দফা সংবলিত সতর্কপত্র পাঠানো হচ্ছে। গতকাল সোমবার ইউজিসির পূর্ণ কমিশনের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মূলত জুন মাসে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক বছরের বাজেট তৈরি হয়। এটিকে সামনে রেখেই এই পরিপত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় কমিশনের বৈঠকে।
সতর্কপত্রে আগামী ১০ জুনের মধ্যে ৫০ বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের চলতি অর্থবছরের সংশোধিত ও নতুন বছরের প্রাথমিক বাজেট পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরিপত্রে উল্লেখযোগ্য নির্দেশনার মধ্যে আছে-প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার আয়ের সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। বাকি ৪০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা করতে হবে। আর এই আয় নিজস্ব আয়ের মধ্যে অবশ্যই দেখাতে হবে। এছাড়া ভর্তি, টিউশন, পরীক্ষা, ল্যাব টেস্ট, বিশেষ কোর্স, বেতন থেকে কর্তনাদি, সম্পত্তি থেকে লব্ধ অর্থ ইত্যাদি অবশ্য নিজস্ব আয় হিসাবে বাজেটে দেখাতে হবে।
এ বিষয়ে ইউজিসির সদস্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, গত কয়েক বছর থেকে বাজেট পাশের আগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একটি গাইডলাইন দেওয়া হচ্ছে। কোন কোন খাতে বাজেটের অর্থ ব্যয় করা যাবে সেসব বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। তার আলোকে এবারো সেটি দেওয়া হবে। আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে এ সংক্রন্ত পরিপত্র জারি করা হবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ওপর ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফির বোঝা কমছে না। বরং ইউজিসির সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আসন্ন শিক্ষাবর্ষেও আবেদন ফি আগের চেয়ে ২০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আগেই বাড়িয়েছিল, এবারও সেটি বহাল রাখছে।
ভর্তি ফি বেড়েছে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার সব ইউনিটে আবেদন ফি ৩৫০ টাকা বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করা হয়েছে। গত শিক্ষাবর্ষে আবেদন ফি ছিল ৬৫০ টাকা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার আবেদন ফি ৩০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ, বি, সি এবং ই ইউনিটের আবেদন ফরমের ফি করা হয়েছে ৯০০ টাকা। গতবার ছিল ৬০০ টাকা। তবে ডি ইউনিটের ফি ৬০০ টাকাই রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার ২০০ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আবেদন ফি করা হয়েছে ৭৫০ টাকা। এর সঙ্গে আরও ১০০ টাকা ‘প্রসেসিং ফি’ যুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ একজন ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকে আবেদনের সময় মোট ৮৫০ টাকা দিতে হবে। গতবার সব মিলিয়ে এই ফি ছিল ৬৫০ টাকা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফি আগে থেকেই বেশি। গতবার চূড়ান্ত প্রার্থীদের মোট আবেদন ফি ছিল ১ হাজার ১০০ টাকা (সার্ভিস চার্জসহ)। এবারও ফি একই রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবদুস সালাম।
কৃষি এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও ২২টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। গতবার জিএসটিভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদাভাবে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত আবেদন ফি নিয়েছিল।
তবে এবার শিক্ষার্থীদের মেধাক্রম এবং পছন্দের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়, বিষয় নির্ধারণসহ কয়েকটি সুপারিশ করেছে ইউজিসি। আগামী সেপ্টেম্বরে ভর্তি পরীক্ষা। যদিও এখনো আবেদন ফির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি।
বাতিল হতে পারে মাউশির নিয়োগ পরীক্ষা

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে প্রতিষ্ঠানটির আরও অনেকের নাম বেরিয়ে এসেছে। এর মধ্যে একজন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তার নামও রয়েছে।
গত শুক্রবার মাউশির অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে ঢাকার ৬১টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়। ৫১৩টি পদের জন্য পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ৮৩ হাজার।
এদিকে, এই পরীক্ষা বাতিলের চিন্তা করছে মাউশি। দু-একদিনের মধ্যে এই ঘোষণা আসতে পারে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে মাউশি মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, পুলিশের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেব। আমরা পুলিশকে বলেছি, যেন এর শিকড় সন্ধান করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিবি) সূত্র বলছে, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বণ্টনে কর্তৃপক্ষ পাঁচটি কমিটি গঠন করেছিল। তার মধ্যে দুটি কমিটির সদস্যরা প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত ছিল- এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া মাউশির দু'জন উচ্চমান সহকারীকেও খোঁজা হচ্ছে। তারা হলেন আহসান হাবিব ও নওশাদ। জালিয়াতির ঘটনায় তাদের বড় ধরনের ভূমিকা ছিল।
তদন্তে উঠে এসেছে, পরীক্ষার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে প্রশ্নফাঁস হয়। অনেকের প্রবেশপত্রে ৭০ নম্বরের উত্তর লেখা ছিল। এরই মধ্যে সুমন জোয়াদ্দার নামে যাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি, তার প্রবেশপত্রেও প্রশ্নের উত্তর লেখা ছিল।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, প্রশ্নফাঁস হয়েছে- এর সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত আমরা পেয়েছি। যারা প্রশ্নপত্র বিতরণ কমিটিতেও ছিলেন, তাদের কয়েকজন এর সঙ্গে জড়িত। মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাতে বঞ্চিত না হন, এটা নিশ্চিত করতে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো জরুরি।
প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষক আবদুল খালেক বাদী হয়ে মামলা করেন। এজাহারে তিনি বলেন, বিকেল ৩টায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে পরীক্ষা শুরু হয়।
তবে পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সুমন জোয়াদ্দার স্বীকার করেন, তার হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দুপুর ২টা ১৮ মিনিটে তার কাছে উত্তরপত্র আসে। এটি পাঠিয়েছেন পটুয়াখালীর সাইফুল ইসলাম ও টাঙ্গাইলের খোকন। অভিযুক্ত সাইফুল পটুয়াখালীর কলাপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক।
বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির ফল ঘোষণা করবেন শিক্ষামন্ত্রী

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজারের অধিক শিক্ষক নিয়োগের বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির ফল ঘোষণা করবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। একই সাথে সেকেন্ড মেরিটলিস্টও প্রকাশের বিষয়ে জানাবেন তিনি। এজন্য নতুন করে দুটি চিঠি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
সোমবার (১৬ মে) এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নির্বাহী কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভা সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের মধ্যে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির ফল ও সেকেন্ড মেরিটলিস্ট প্রকাশের বিষয়ে নির্বাহী কমিটির সদস্যরা একমত পোষণ করেছেন। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া এটি প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সেকেন্ড মেরিটলিস্ট প্রকাশের বিষয়ে যে রেজ্যুলেশন পাঠানো হয়েছিল সেটিতে কিছু পরিবর্তন করে আবারও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ওই সূত্র আরও জানায়, বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি ও সেকেন্ড মেরিটলিস্ট মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। এটি অনেক বড় বিষয়। সেজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হবে। ওই সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ফল ঘোষণা করবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থিত এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আজকের সভায় সকল সদস্যই চলতি মাসের মধ্যে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির ফল এবং সেকেন্ড মেরিটলিস্ট প্রকাশের বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। প্রায় ২০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। এটি সরকারের জন্য অনেক বড় অর্জন। সেজন্য শিক্ষামন্ত্রীর মাধ্যমে ফল ঘোষণা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা শিক্ষামন্ত্রীর মাধ্যমে ফল ঘোষণার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠাবো। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেওয়া হলে মন্ত্রী মহোদয় ফল ঘোষণা করবেন। তিনি এই মুহূর্তে দেশের বাহিরে আছেন। দেশে ফেরার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে ফল ঘোষণা করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (১২ মে) নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সেদিন এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান শিক্ষামন্ত্রীর সাথে একটি প্রোগ্রামে থাকায় সভা পেছানো হয়। আজ সোমবার সকাল ১০টায় সভা শুরু হয়।
সভায় এনটিআরসিএ'র চেয়ারম্যান ছাড়াও সদস্য এ বি এম শওকত ইকবাল শাহীন, এ এস এম জাকির হোসেন, এনটিআরসিএ সচিব মো. ওবায়দুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির ১২ কর্মকর্তার অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ বাতিল

বিদেশ সফরে সরকারের লাগাম টানার খাঁড়ায় আটকে গেল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ১২ কর্মকর্তার অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ।
অর্থ বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী তাদের সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে আজ সোমবার জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।
গত ১২ মে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি কর্মকর্তাদের সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ বন্ধ করে পরিপত্র জারি করে অর্থ বিভাগ।
পরিপত্রে বলা হয়েছিল, কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং বর্তমান বৈশ্বিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে পুনরায় আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের এক্সপোজার ভিজিট, স্টাডি ট্যুর, এপিএ ও ইনোভেশনের আওতাভুক্ত ভ্রমণ এবং ওয়ার্কশপ, সেমিনারে অংশগ্রহণসহ সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ বন্ধ থাকবে।
এদিকে, আজ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ সংক্রান্ত ২৮ এপ্রিলের পত্র বাতিল করার নির্দেশনা জানানো হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিব ও ইউজিসির সচিব, দুইজন সদস্যসহ ইউজিসির ১১ জন কর্মকর্তার ২৮ মে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা ছিল।
গত ১১ মে সরকারি কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
ব্যয় সঙ্কোচনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়ে সেদিন তিনি বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, এখন থেকে কোনো প্রয়োজন না থাকলে বিদেশ সফর আর নয়। যদি কোনো বিশেষ প্রয়োজন হয়, তাহলে তারা যাবেন; অন্যথায় কেউ যাবেন না।
টেলিভিশন উন্মুক্ত করে দিয়েছি, সবাই কথা বলতে পারেন: প্রধানমন্ত্রী

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে সমালোচনাকারীদের কড়া জবাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি টেলিভিশন উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এখন সবাই কথা বলতে পারেন। টকশো করতে পারেন। আমি জানি, সারাদিন টেলিভিশন টকশোতে কথা বলেও বলবে, ‘আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না’। অথচ কারও তো মুখ চেপে ধরা হয়নি। কারও তো গলা টিপেও ধরা হয়নি!
সোমবার (১৬ মে) ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)-এর বাস্তবায়ন পর্যালোচনার জন্য দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলন’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, অনেকে সমালোচনা করেন, আমাদের বিভিন্ন প্রকল্পে অনেক ব্যয় হচ্ছে। তারা খরচের দিকটা দেখেন। ব্যয় হলেও এটা আমাদের কতটা সুফল বয়ে আনবে, মানুষ কতটা উপকৃত হবে, এটা দেখেন না। আমার অনুরোধ থাকবে- রাজধানীতে বসে সমালোচনা না করে গ্রামে যান। গ্রামাঞ্চলের বাস্তব চিত্র দেখেন; পরিবর্তনটা কোথায় হয়েছে, কতটুকু হয়েছে বুঝবেন। মানুষ যে আমাদের বিভিন্ন উদ্যোগের সুফল ভোগ করছে, সেটা দেখতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনই আমাদের লক্ষ্য। আমরা তাদের উন্নত জীবন দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এ প্রকল্পগুলো শেষ হলে আমরা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো। তবে আমাদের সম্পদ ও অর্থের কার্যকর ব্যবহার ও অপচয়রোধ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, আমরা জানি, কোভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটা ধাক্কা লেগেছে।
সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতার সরাসরি তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় প্রণীত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সাংবিধানে প্রতিটি নাগরিকের জন্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে অঙ্গীকার করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে আমাদের সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সচেষ্ট আছি। এরইমধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়নে আমাদের সাফল্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে জাতিসংঘ ঘোষিত ‘এজেন্ডা-২০৩০’ তথা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নে আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, এসডিজি একটি বৈশ্বিক উন্নয়ন ধারণা হলেও বাংলাদেশের উন্নয়নের পথ পরিক্রমার সঙ্গে এটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। এসডিজি প্রণয়নের প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো। আমাদের দেশের সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মতামত নিয়ে ২০১৩ সালে আমরা জাতিসংঘের কাছে মোট ১১টি অভীষ্টের প্রস্তাব করেছিলাম। এর মধ্যে ১০টি অভীষ্টই জাতিসংঘ হুবহু অনুসরণ করে, অবশিষ্ট অভীষ্টটিও অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়। ফলে এসডিজি প্রণয়নকালের শুরু থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন নীতি-কৌশল এসডিজির আদলে প্রণয়ন করা সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০২২ সালের এপ্রিলের মধ্যে সারাদেশে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩টি গৃহহীন পরিবারকে বাড়ি বানিয়ে দিয়েছি। এছাড়াও কক্সবাজারে ৬৪০টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে নতুন বাড়ি করে দিয়েছি; ২০২৩ সালের মধ্যে মোট ৪ হাজার ৪০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার নতুন বাড়ি পাবে।
তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের পথে আমরা সাত বছর অতিক্রম করছি। গত দুই বছর কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণে এসডিজি বাস্তবায়নের গতি কিছুটা মন্থর হয়েছে। তবে আমরা আমাদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছি, এবং যাবো। অর্জনও করতে পারবো বিশ্বাস করি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, সরকারের পক্ষ হতে সময়োচিত প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদান ও যথাযথ নীতি অনুসরণের কারণে করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি আবারও ইতিবাচক ধারায় ফিরছে। নির্দিষ্ট সময়ে এসডিজি’র পথ পরিক্রমা নিশ্চিত করা কঠিন। তবে আমি বিশ্বাস করি সঠিক ও উদ্ভাবনী কর্মপরিকল্পনা এবং কার্যকর পরিবীক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। এ প্রেক্ষাপটে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি ) এর বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা বিষয়ক দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলন-২০২২ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
তিনি বলেন, আমি আশা করি, এ সম্মেলনের মাধ্যমে এসডিজি বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করা এবং বাস্তবায়ন সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের পন্থা খুঁজে বের করতে সমর্থ হবে। আমাদের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহ, এনজিও এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিবর্গও সমানভাবে অংশীদার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি আমরা সকলে মিলে একসঙ্গে কাজ করলে ২০৩০ সালের আগেই নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন এবং ২০৪১ সালের আগে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত এবং উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সমর্থ হবো।
মন্তব্য