বাড়তে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি

করোনা সংক্রমণ বাড়ায় বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সশরীরে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আগের মতো এবারও ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়তে পারে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকার করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। পরিস্থিতি উন্নতি না হলে আগের মতো এবারও ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়বে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে নির্ধারণ করা হবে ছুটি। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, করোনা সংক্রমণের হার ২৮ শতাংশ ছাড়ানোর সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গতকালও এই হার ছিলো ২৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ। সংক্রমণের হার গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে। তবে করোনা সংক্রমণের হার এখনো নিরাপদ জায়গায় না আসায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা কম। আরও ৭-১৪দিন ছুটি বাড়তে পারে।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সমালোচনা করছেন। তারা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সবই স্বাভাবিকভাবে চলছে। কোনো কিছুই বন্ধ হচ্ছে না। দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে গেছে। অনলাইন পাঠে সে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব না। অচিরেই তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানান।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, গত দুইদিন ধরে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সরকারের ওপর চাপ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচিও প্রায় শেষের দিকে। করোনা সংক্রমণ আরও কিছুটা কমলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হতে পারে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও বলেছেন, করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে কবে নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হবে। পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চান না বলে জানান তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সংক্রমণ বেড়েই যাচ্ছে। এখনো এ সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখি। একইসঙ্গে দেশে মৃত্যুর সংখ্যাটাও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা আমাদের জানিয়েছেন, এ ঊর্ধ্বগতিটা আরও কিছুদিন থাকবে। তাদের পক্ষ থেকে আরও দুই সপ্তাহ এ ঊর্ধ্বগতি থাকবে বলে জানানো হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সরকার এ গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে। করোনা পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে পাঠদান কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেবো।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনিক আইডি দ্রুত বাস্তবায়নে ইউজিসির নির্দেশনা

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ইউনিক আইডি’দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসি আয়োজিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি তৈরি সংক্রান্ত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ আজ (মঙ্গলবার) এ নির্দেশনা দেন।
কর্মশালায় তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি তৈরি একটি সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ইউনিক আইডিকে শিক্ষার্থীবান্ধব উদ্যোগ হিসেবে আখ্যায়িত করে ইউজিসি চেয়ারম্যান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তা দ্রুত বাস্তবয়নের আহবান জানান।
প্রফেসর কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ইউনিক আইডি তৈরির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটি পরিচিতি নম্বর পাবেন। এতে শিক্ষার্থীদের ভর্তিসহ যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। ফলে দেশ-বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও চাকরি ক্ষেত্রে সনদ যাচাইয়ে শিক্ষার্থীদের কোন ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে না।
ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ- এর সভাপতিত্বে কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মোঃ ওমর ফারুখ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সহকারী পরিচালক শাহনাজ সুলতানার সঞ্চালনায় কর্মশালায় দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, হেড অব আইটি ও ইউনিক পরিচিতি নম্বরের ফোকাল পার্সনরা অংশ নেন। কর্মশালায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম ইউনিক আইডির বিস্তারিত বিষয় তুলে ধরেন।
সভাপতির বক্তব্যে ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, ১৬ ডিজিটের ইউনিক আইডিতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীর সব তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। প্রতারণার হাত থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করা এবং সনদ যাচাই নিশ্চিত করতে ইউজিসি এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর ফলে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদিত আসনের বিপরীতে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা জানার পাশাপাশি জাল সনদধারীদের চিহ্নিত করা সহজ হবে। এ উদ্যোগের ফলে শিক্ষার্থীরা সহজে ক্রেডিট ট্রান্সফার করতে পারবে এবং সনদের আন্তর্জাতিকীকরণ ও গ্রহণযোগ্যতা বৃ্দ্ধি পাবে এবং অন্য কোন দেশ কর্তৃক বাংলাদেশের কোন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে কালো তালিকাভুক্ত করা বন্ধ হবে।
তিনি আরও বলেন, ইউনিক আইডির ফলে শিক্ষার্থীদের সকল তথ্য মূল সার্ভারের পাশাপাশি ইউজিসি সার্ভারে এবং ব্যাকআপ সার্ভারে সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। ফলে কোন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে কিংবা দুর্যোগের কারণে কোন একটি সার্ভারে ক্রুটি দেখা দিলেও তথ্য সুরক্ষিত থাকবে এবং শিক্ষার্থীদের সনদ যাচাইয়ে কোন সমস্যা হবে না।
৪০তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু রোববার, আনতে হবে টিকা সনদ

করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ৪০তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত করেছিল বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। স্থগিত হওয়া পরীক্ষা আগামী রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) আবার নেওয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছে পিএসসি। আজ মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় পিএসসি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৪০তম বিসিএস পরীক্ষার লিখিত পরীক্ষায় সাধারণ ও কারিগরি/পেশাগত ক্যাডারের পদসমূহের জন্য সাময়িকভাবে উত্তীর্ণ রেজিস্ট্রেশন নম্বরধারী ৭৫১ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা সংশোধিত তারিখ ও সময়সূচি অনুযায়ী ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে।
গত বছরের ২৭ জানুয়ারি ৪০তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে পিএসসি। ৪০তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় আবেদন করেছিলেন ৪ লাখ ১২ হাজার ৫৩২ প্রার্থী। এর মধ্যে পরীক্ষা দিয়েছেন ৩ লাখ ২৭ হাজার পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন ২০ হাজার ২৭৭ জন। ৪০তম বিসিএসে মোট ১ হাজার ৯০৩ জন ক্যাডার নেওয়া হবে।
‘অবস্থা স্থাতিশীল হলেও সুস্থ নন খালেদা জিয়া’

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও তিনি সুস্থ নন বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসায়গঠিত মেডিকেল বোর্ড।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার এই কথা জানান।
তিনি বলেন, উনার দুইটা কন্ডিশন। এক নাম্বার, উনি ক্লিনিক্যালি স্টেবল, বাট নট কিউর। বাট সি ইজ নট ফ্রি অব ডিজিস।
দুই নম্বর হচ্ছে, আমাদের কোভিড পরিস্থিতির জন্য, সেকেন্ডারি ইনফেকশনের জন্য এবং সি ইজ ভেরি মার্চ বারগানেবল। সেজন্য আপাতত উনাকে বাসায় পাঠাচ্ছি। এরপরে যদি কোনো রকম ক্রাইসিস হয় উই আর রেডি টু রিসিভিং হার এগেইন ইন হসপিটাল।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ৮১ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় গুলশানের বাসায় (ফিরোজা) ফিরেছেন।
খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা জানান, তার রোগের চিকিৎসা হয়নি। তবে রোগের জটিলতা কিছু কমনো হয়েছে। যে কারণে খালেদা জিয়া আশঙ্কামুক্ত নন।
বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালের ১১ তলার মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী, অধ্যাপক এম এস আরেফিন, অধ্যাপক একিউএম মহসেন, অধ্যাপক শেখ মুহাম্মদ আবু জাফর, অধ্যাপক নুর উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক লুতফুল আজিজ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক এজেডএস জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক জাফর ইকবাল, মুহাম্মদ আল মামুন, ডা. রফিকুল ইসলাম, ডা. শাহরিয়ার সাইদ,ডা. আরমান রেজা চৌধুরী প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৩ নভেম্বর লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। লিভারে রক্তক্ষরণের কারণে তাকে দুই মাস সিসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। কেবিনে আনা হয় ১০ জানুয়ারি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের সুচিকিৎসার জন্য অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে এভারকেয়ার হাসতাল কর্তৃপক্ষ। এই মেডিকেল টিমে আরো দুটি বেসরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের যুক্ত করা হয়।
খালেদা জিয়া তিন দফায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এবারই প্রথম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের থেকে মেডিকেল বোর্ড সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমকে বিএনপি চেয়ারপারসনের অবস্থা জানালো।
খালেদা জিয়া বর্তমানে সুস্থ না হলেও মেডিকেল বোর্ড কেন ছাড়পত্র দিচ্ছে জানতে চাইলে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী বলেন, উনার ব্লিডিং আপাতত বন্ধ হলেও অসুখের ট্রিটমেন্ট সেভাবে হচ্ছে না। এখন উনার অবস্থা স্থিতিশীল। এখন আমরা দেখতে পারছি যে, সারাদেশে ও হাসপাতালে (এভারকেয়ার হাসপাতালে) করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শুধুমাত্র জানুয়ারি মাসে এই হাসপাতালের প্রায় ৩৮০ জনের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এবং তারা বিভিন্নভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উনার স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই মুহূর্তে তার কন্ডিশন যেহেতু স্টেবল আছে, আমাদের তত্ত্বাবধানে বাসায় রেখে উনার চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
এফএম সিদ্দিকী বলেন, মূল অসুখ লিভার সিরোসিসে যে চিকিতসা, সেটা কিন্তু আমরা করতে পারিনি এখনো। যে ভ্যাসেল দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেই রক্তের প্রবাহটা বাইপাস করে টিপসের মাধ্যমে যে প্রক্রিয়া তা আমাদের দেশে নেই। উন্নত চিকিৎসা সেজন্য প্রয়োজন।
লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার আগে গত ৯ এপ্রিল খালেদা জিয়া করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই সময়ে ফিরোজার বাসায় চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তিনি চিকিৎসা নিয়ে সরে ওঠেন। পরে শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত রোগে আক্রান্ত হলে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই সময়ে তিনি দুই মাস এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।
৭৭ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় ২০০৮ সালে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যান খালেদা জিয়া। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মানবিক বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। ছয় মাস পর পর সেই বাড়ানো হয়।
কওমি মাদ্রাসায় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ: যাদের নিয়ে উদ্যোগ তারাই জানেন না

আবারও কওমি মাদ্রাসাকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনার আলোচনা উঠেছে। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে সরকারের দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, দেশের সবগুলো মাদ্রাসাকে এক বোর্ডের অধীনে আনার বিষয়টি পর্যালোচনাধীন। তবে, যাদের ঘিরে এই পর্যালোচনা, তারাই এ বিষয়ে অন্ধকারে রয়েছেন।
বিভিন্ন বোর্ডের কর্তাব্যক্তিরা জানিয়েছেন, সরকারের এ উদ্যোগ সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না।
গত ২৩ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসাগুলোকে একটি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালনা করা প্রয়োজন। কওমি মাদ্রাসাসহ ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর করা এবং সরকারি নিবন্ধনের আওতায় আনার প্রয়োজন রয়েছে। এ লক্ষ্যে সমন্বিত একটি নীতিমালা এবং কওমি মাদ্রাসা সংক্রান্ত বর্তমানে আলাদাভাবে পরিচালিত ছয়টি বোর্ডকে সমন্বিত করে একটি কমিটি গঠনের বিষয়টি সরকারের পর্যালোচনাধীন।’
শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্য ধরে সঙ্গে কথা বলেন কওমি মাদ্রাসার কয়েকজন দায়িত্বশীল আলেম। তারা বলেন, সরকার কওমি মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দিয়েছে চার বছরেরও বেশি হলো। এখন নতুন করে আবার নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন কেন? উপরন্তু এক বোর্ডের অধীনেই দেশের সব মাদ্রাসা পরীক্ষা দিচ্ছে দাওরায়ে হাদিস স্তরে। সেক্ষেত্রে নতুন কোনও উদ্যোগ নেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে (‘আল-হাইআতুল উলয়া লি-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ) জানানো রাষ্ট্রীয় নীতির মধ্যে পড়ে।
আলেমরা জানান, ‘আল-হাইআতুল উলয়া লি-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’-তে ছয়টি বোর্ড সক্রিয়। এরমধ্যে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বা বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড সবচেয়ে বড়। বাকিগুলো আঞ্চলিক প্রধান বোর্ড।
জানতে চাইলে আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে কোনও কিছুই জানানো হয়নি। ফলে এ বিষয়ে বলার মতো কিছু নেই। যদি কখনও প্রস্তাব আসে, তখন আমাদের ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে। এই মুহূর্তে আর বলার কিছু নেই।
এ বিষয়ে সরকারি স্বীকৃত কওমি মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ ‘আল-হাইআতুল উলয়া লি-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’-এর সদস্য মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিয়েছেন। আমাদের মাদ্রাসাগুলো আগে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে ছিল না। এখন চিত্র পাল্টেছে। ইতোমধ্যে আইনের মাধ্যমে বোর্ড হয়েছে। একটি বোর্ডের অধীনে দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। হঠাৎ করে আবার নিয়ন্ত্রণের আলোচনা কেন?’
বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সহ-সভাপতি মুসলেহ উদ্দিন রাজু আরও বলেন, ‘আমাদের কিছু জানানো হয়নি। কোনও চিঠিও পাইনি। এমনও হতে পারে, সরকারের সঙ্গে কওমি মাদ্রাসার সম্পর্ক আবার বাজিয়ে দেখার জন্য এমন কথাবার্তা সামনে আনা হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী যে কথা বলেছেন, তিনি হয়তো পুরোপুরি না জানার কারণে বলেছেন। আমরা নিজেরাও এ বিষয়ে কোনও আলোচনা করিনি।’
তিনি জানান, শিক্ষা আইন ২০২১-এর পঞ্চম অধ্যায়ে কওমি শিক্ষা সম্পর্কে বলা হয়েছে। সেখানে সরকারের সহযোগিতার বাইরে তেমন কিছু নেই।
কওমি মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ আলেমরা বলছেন, ২০১৭ সালে সরকার যে আইনের ভিত্তিতে কওমি মাদ্রাসাগুলোকে স্বীকৃতি দিয়েছে, নতুন করে নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ তার বিপরীতে যায়।
জানতে চাইলে সোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব ও আল হাইআতুল উলয়া’র সদস্য আল্লামা ফরীদউদ্দীন মাসঊদ বলেন, ‘সরকার তো মাদ্রাসার সঙ্গে চুক্তি করেছে দেওবন্দের ছয় নীতির ভিত্তিকে সামনে রেখে। এখন যদি নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়, তাহলে সেটা আইনের ও চুক্তির বরখেলাপ হবে। বিষয়টি সামনের আনার কী কারণ থাকতে পারে জানি না।’
মাওলানা মাসঊদ আরও বলেন, ‘সরকার এমন কোনও উদ্যোগ নিতে একবার আল হাইয়াকে আমন্ত্রণ করেছিল। কিন্তু হাইয়ার পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, কী ভিত্তিতে চুক্তি হয়েছে। একইসঙ্গে যে আইনের ভিত্তিতে স্বীকৃতি দিয়েছে, সেই আইনেই সরকার আবার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আনতে পারে না। পরে সরকারের পক্ষ থেকেও কোনও কিছু বলা হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত বছরের রমজানে কওমি মাদ্রাসাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় সংক্রান্ত বিষয়ে একটি বৈঠকে অংশ নিতে আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। যদিও আল হাইআ ওই বৈঠকে যোগ দেয়নি।
মন্তব্য