চীন গেল বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রথম ফ্লাইট

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রথম চার্টার্ড ফ্লাইট ঢাকা থেকে চীনের কুমিংয়ের উদ্দেশে যাত্রা করেছে।সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় চীনের মিশন উপপ্রধান হুয়ালং ইয়ান তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন।
গত শনিবার চীনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত লি জিমিং জানান, মহামারি চলাকালে আটকেপড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে নিতে আমরা ভিসা দেওয়া পুনরায় শুরু করেছি। তাদের জন্য নির্ধারিত ছয়টি চার্টার্ড ফ্লাইট চালু হবে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, ২৬ সেপ্টেম্বর চার্টার্ড ফ্লাইটে শিক্ষার্থীদের প্রথম ফ্লাইট ঢাকা থেকে কুনমিংয়ের উদ্দেশে রওনা করবে। দ্বিতীয় ফ্লাইটটি তার দুদিন পর শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঢাকা থেকে চীনের গুয়াংজুতে যাবে। পরের মাসে দুটি ফ্লাইট (১০ ও ২৪ অক্টোবর) ঢাকা থেকে কুনমিং যাবে। একই মাসে দুটি ফ্লাইট (১২ ও ২৬ অক্টোবর) ঢাকা থেকে চীনের গুয়াংজুতে যাবে।
প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী চার্টার্ড ফ্লাইটে চীনে ফিরে যাবে বলে আশা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রয়োজনে আরও চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছিল মন্ত্রণালয়।
গুচ্ছভুক্ত যবিপ্রবিতে ভর্তির বিভাগভিত্তিক যোগ্যতা প্রকাশ

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছভুক্ত ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে অনেক আগেই। পরীক্ষা শেষে ফলাফলও প্রকাশিত হয়েছে। দীর্ঘবিরতিতে এবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা শর্ত প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সদস্য-সচিব প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গুচ্ছভুক্ত ভর্তি পরীক্ষা ২০২১-এ ফলাফলপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের যশোর বিজ্ঞান ও প্রযক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্নবর্ণিত বিভাগে আবেদন করতে পারবেন। তবে, ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগ গুচ্ছভুক্ত নয় বিধায় এ বিভাগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদন ও ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক প্রোগ্রামের মেয়াদ
(ক) ৪ বছর মেয়াদি স্নাতক (ইঞ্জিনিয়ারিং/সম্মান) (খ) ৫ বছর মেয়াদি বি.ফা্ম (প্রফেশনাল) ও ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন (প্রফেশনাল)
আবেদন করার সাধারণ যোগ্যতা ও শর্তাবলী
ক) প্রার্থীকে বাংলাদেশের ভাগ্য নাগরিক হতে হবে। তবে বিদেশি নাগরিকদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস সেন্টারে (ISC) মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
(খ) গুচ্ছভুক্ত ভর্তি পরীক্ষা ২০২১-এর ‘এ’ ইউনিটে ফলাফলপ্রাপ্তরা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, জীববিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বিজ্ঞান অনুষদ এবং স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগসমূহে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে যেকোনো ইউনিটে ফলাফলপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত বিভাগসমূহে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
(গ) আবেদনকারীদের গুচ্ছভুক্ত ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত মোট জিপিএ এবং বিভাগসমূহের নির্ধারিত শর্তসমূহের ভিত্তিতে চূড়ান্ত মেধাতালিকা প্রস্তুত করা হবে।
অনুষদসমূহে ভর্তির অত্যাবশ্যকীয় শর্তাবলী
সর্বমোট ৯২০টি আসন ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা (FFQ) কোটায় ৫%, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী (EMQ) কোটায় ১%, প্রতিবন্ধী (DQ) কোটায় ১% ও পোষ্য ((WQ) (যবিপ্রবিতে কর্মরত শিক্ষক/কর্মকর্তা/কর্মচারীর সন্তানদের জন্য) কোটায় ১% সংরক্ষিত থাকবে।
যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজে ফুল-ফ্রি স্কলারশিপ, বছরে বৃত্তি ২৫ লাখ

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের তিন বছর মেয়াদী পিএইচডি প্রোগ্রামে ফুল-ফ্রি স্কলারশিপ দিচ্ছে যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজে। ‘‘ইম্পেরিয়াল কলেজ প্রেসিডেন্ট স্কলারশিপ’’-এর আওতায় এই স্কলারশিপ প্রদান করা হবে। বাংলাদেশসহ যে কোনো দেশের শিক্ষার্থীরা এ স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের শেষ সময় আগামী ৪ নভেম্বর, ২০২২।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় (আনুষ্ঠানিকভাবে দ্য ইম্পেরিয়াল কলেজ অব সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড মেডিসিন)। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হিসেবে গণ্য করা হয়। ইম্পেরিয়ালের প্রধান ক্যাম্পাস সেন্ট্রাল লন্ডনের দক্ষিণ কেনসিংটনে অবস্থিত। এর মূলত চারটি অনুষদ যার অধীনে ৪০টির বেশি বিভাগ, ইন্সটিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে।
সুযোগ-সুবিধাসমূহ
• সম্পূর্ণ টিউশন ফি প্রদান করবে। • আবাসন ব্যয় হিসেবে £22,900 (বাংলাদেশী টাকায় পঁচিশ লাখ টাকা) বাৎসরিক উপবৃত্তি প্রদান করবে। • জীবনযাত্রার ব্যয় মেটানোর জন্য প্রতি বছর £2000 (বাংলাদেশী টাকায় দুই লাখ টাকা) প্রদান করবে। • আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ‘ইংরেজি ভাষার কোর্স’ এবং কলেজের বিভিন্ন ক্লাব এবং সম্প্রদায়গুলিতে অ্যাক্সেসসের সুবিধা প্রদান করবে।
যোগ্যতাসমূহ
• স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী হতে হবে এবং একাডেমিক সিজিপিএ ৩.০/৪.০ স্কেলে থাকতে হবে। • আবেদনকারীকে প্রোগ্রামের প্রয়োজনীয় সকল রিকয়ারমেনট পূরণ করতে হবে। • ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হতে হবে। আইএলটিএস একাডেমিক ওভারঅল ব্যান্ডস্কোর ৬.৫ থাকতে হবে, সাথে প্রতিটি সেকশনে অন্তত ৬.০ থাকতে হবে।
প্রয়োজনীয় নথিপত্র
• আবেদনকারীর পাসপোর্ট এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি । • একাডেমিক সার্টিফিকেট বা ডিগ্রি। • দুইটি রেফারেন্স লেটার (রেফারেন্স লেটারের নমুনা/প্রয়োজনীয়তার জন্য পিডিএফ)। • রিসার্চ প্রপোজাল।
• আবেদনকারীর সিভি। • ইংরেজী ভাষা দক্ষতার সনদ। • পার্সোনাল স্টেটমেন্ট।
আবেদন প্রক্রিয়া: ইম্পেরিয়াল কলেজ প্রেসিডেন্ট স্কলারশিপে আবেদন করতে এবং স্কলারশিপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
আবেদন শেষ তারিখ: ৪ নভেম্বর, ২০২২।
প্রাথমিকের শিক্ষকদের লাইক-কমেন্ট-শেয়ারে মানতে হবে নির্দেশনা

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা’ অনুসরণের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সকল পরিচালক/প্রকল্প পরিচালক, সকল উপপরিচালক/বিভাগীয় উপপরিচালক, সকল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার/সুপারিনটেনডেন্ট, পিটিআই, সকল উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার/ইন্সট্রাক্টর, ইউআরসিকে সম্প্রতি এ চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯’ পরিমার্জিত সংস্করণ জারি করা হয়েছে। এ নির্দেশিকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও কর্মচারীদের করণীয় নির্ধারণ এবং এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, নির্দেশিকায় সামাজিক মাধ্যমে দাপ্তরিক ও ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট তৈরি ও এতে পরিহারযোগ্য বিষয়াদি উল্লেখ করা হয়েছে। নির্দেশনার আলোকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরাধীন কর্মচারীদেরকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো অনুসরণের অনুরোধ করা হলো-
>> সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে সরকার বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও আপলোড, কমেন্ট, লাইক, শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
>> জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থি তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
>> কোনো সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এমন বা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির পরিপন্থি কোনো তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে এমন কোনো পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও আপলোড, কমেন্ট, লাইক, শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
>> সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কোনো ‘কন্টেন্ট’ বা ‘ফ্রেন্ড’ সিলেকশনে সকলকে সর্তকতা অবলম্বন এবং অপ্রয়োজনীয় ট্যাগ, রেফারেন্স বা শেয়ার করা পরিহার করতে হবে।
>> এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার বা নিজ অ্যাকাউন্টে ক্ষতিকারক কন্টেন্টের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মচারী ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হবেন এবং সেজন্য প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
>> জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো সার্ভিস বা পেশাকে হেয় প্রতিপন্ন করে এমন কোনো পোস্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
>> লিঙ্গ বৈষম্য বা এ সংক্রান্ত বিতর্কমূলক কোনো তথ্য প্রকাশ করা যাবে না।
>> জনমনে অসন্তোষ বা অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো বিষয়ে লেখা, অডিও বা ভিডিও প্রকাশ বা শেয়ার করা যাবে না।
>> ভিত্তিহীন, অসত্য ও অশ্লীল তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে।
>> কোনো রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য সম্বলিত কোনো পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও আপলোড, কমেন্ট, লাইক, শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
ঢাকা বোর্ডের তদন্তেও মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষের নিয়োগ অবৈধ

পৌনে দুই বছর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তদন্তে রাজধানীর মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ পদে মো. ফরহাদ হোসেনের নিয়োগ অবৈধ প্রমাণিত হয়েছিল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এবার ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত কমিটিও বলল, অধ্যক্ষ পদে ফরহাদ হোসেনের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি বিধিসম্মত হয়নি। অর্থাৎ তাঁর নিয়োগটি অবৈধ।
এখন প্রতিষ্ঠানটির একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নিতে মাউশির কাছে চিঠিটি দেওয়া হবে বলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, নতুন অধ্যক্ষ আসার পরপরই এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ‘জোরপূর্বক’ এমপিও (বেতন বাবদ মাসিক সরকারি অনুদান) প্রত্যাহারের কথা বলা হলেও সেটি কার্যকর হয়নি। শিক্ষকেরা এমপিওভুক্তির টাকা না পেলেও সরকারি কোষাগার থেকে ঠিকই প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ পাঠানো হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরেই নানা রকমের অভিযোগ নিয়ে মিরপুর এলাকায় অবস্থিত রাজধানীর মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ নিয়ে আলোচনা চলছে। অভিযোগ রয়েছে, স্কুল পরিচালনায় সম্পৃক্ত একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী রাজধানীর অন্যতম বড় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘ইচ্ছেমতো’ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এ অবস্থায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এসব অভিযোগ তদন্ত করার জন্য মাউশির ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেনকে দায়িত্ব দেয়। কমিটি তদন্তকাজ শেষ করে কয়েক দিন আগে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার কথা জানিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, এখন এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাউশির কাছে চিঠি দেবেন তাঁরা।
১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মনিপুর উচ্চবিদ্যালয়। এখন উচ্চমাধ্যমিকও চালু হয়েছে। মূল ক্যাম্পাসসহ চারটি শাখায় এর কার্যক্রম চলে। শিক্ষার্থী প্রায় ৩৭ হাজার। শিক্ষক আছেন আট শতাধিক। আর কর্মচারী আছেন পৌনে দুই শর মতো। প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয় ১৯৮৩ সালে। তবে সব শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্ত নন। বর্তমানে ৬৯ জন এমপিওভুক্ত। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সরকার মূল বেতনসহ কিছু ভাতা দেয়।
যা বলা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত কমিটি মূলত তিনটি অভিযোগ তদন্ত করেছে। প্রথম অভিযোগটি ছিল, পরিচালনা কমিটি নিয়ম ভঙ্গ করে ৬০ বছর বয়স হওয়ার পরও ফরহাদ হোসেনের (অধ্যক্ষ) চাকরির মেয়াদ বাড়িয়েছে। এ নিয়োগ সঠিক কি না, তা যাচাই করে দেখেছে কমিটি। এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এসএসসি পাসের সনদ অনুসারে ২০২০ সালের ২ জুলাই ফরহাদ হোসেনের বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হয়েছে। কাজেই তাঁর ক্ষেত্রে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ প্রযোজ্য হবে না। তাঁর নিয়োগের (চুক্তিতে) ক্ষেত্রে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ প্রযোজ্য হবে। যাতে কোনো প্রতিষ্ঠানপ্রধান, সহকারী প্রধান ও শিক্ষক-কর্মচারীকে পুনর্নিয়োগ অথবা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ জন্য ফরহাদ হোসেনের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি সঠিক ও বিধিসম্মত হয়নি।
এর আগে অধ্যক্ষ (প্রধান শিক্ষক থেকে অধ্যক্ষ) মো. ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম তদন্ত করে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল মাউশির একটি তদন্ত কমিটি। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ও সরেজমিন তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি মনে করে, ফরহাদ হোসেনের প্রধান শিক্ষক থেকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ বিধিসম্মত নয়। কারণ, তাঁর বয়স ৬০ বছর অতিবাহিত হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল-কলেজ) জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী, বয়স ৬০ বছর হওয়ার পর কোনো প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে কোনো অবস্থাতেই পুনর্নিয়োগ বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এ জন্য নীতিমালা মেনে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগের সুপারিশ করলেও তা মানেনি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।
প্রতিষ্ঠানটির এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ ছিল, তাঁদের ‘জোরপূর্বক’ এমপিও প্রত্যাহারে সই নেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ২০১৬ সালে এমপিও প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিলেও সরকার তা গ্রহণ করেনি। সরকারের খাতায় প্রতিষ্ঠানটি এখনো এমপিওভুক্ত। এ জন্য এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বাবদ প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ টাকা দিচ্ছে সরকার। মাউশি গত এপ্রিল মাসেও এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য বেতন বাবদ ১৪ লাখ ৩৯ হাজারের বেশি টাকা দিয়েছে। এর বাইরে ‘বৈশাখী উৎসব ভাতা’ বাবদ দেওয়া হয়েছে আরও প্রায় তিন লাখ টাকা। কিন্তু এ টাকা পান না শিক্ষক-কর্মচারীরা। কারণ, বেতন বিলে সই করছে না প্রতিষ্ঠানের বর্তমান কর্তৃপক্ষ।
এমপিও প্রত্যাহারের বিষয়টি কার্যকর হয়েছে কি না সেটি তদন্ত করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকদের এমপিও প্রত্যাহার সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হয়নি। প্রতিষ্ঠানের এমপিও কোড (একটি নির্দিষ্ট হিসাব) তদন্তকাল পর্যন্তও চালু ছিল। এ ছাড়া তদন্তকালে উপস্থিত এমপিওভুক্ত সব শিক্ষক-কর্মচারী তাঁদের এমপিও ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন।
এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টিও তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
মন্তব্য