The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়েই পূর্ণতা পায় স্বাধীনতা

আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষনা আসে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে। স্বাধীনতা ঘোষণার কিছুক্ষণ পরেই পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দি হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দীর্ঘ নয় মাস জেলখানার অন্ধকার কুটুরিতে থাকতে হয় স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে। সেখানে তাকে হত্যা করারও চক্রান্ত করা হয়।

কিন্তু সব চক্রান্ত ব্যর্থ করে যুদ্ধজয়ী বীরের বেশেই স্বাধীন স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন তিনি। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে জানুয়ারির ৮ তারিখে (১৯৭২) বঙ্গবন্ধু লন্ডনের উদ্দেশে রওয়ানা হন। রাওয়ালপিন্ডি বিমানবন্দর থেকে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারওয়েজের ৬৩৫নং ফ্লাইটটি লন্ডনে পৌঁছালে ব্রিটেনের পররাষ্ট্র এবং কমনওয়েলথ অফিসের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় ব্রিটেন-প্রবাসী বাঙালিদের গগনবিদারী ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে বিমানবন্দরের আকাশ-বাতাস।

লন্ডনে অবতরণ করে বঙ্গবন্ধু হোটেল ‘ক্ল্যারিজস’এ ওঠেন। হোটেলে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি কথা বলেন। তার প্রতি সাংবাদিকদের প্রথম প্রশ্ন ছিল- তিনি কেন ঢাকা না গিয়ে প্রথমে ব্রিটেনে এসেছেন? জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি স্বেচ্ছায় আসিনি। আমাকে লন্ডন পাঠানোর সিদ্ধান্ত পাকিস্তান সরকারের। আমি তাদের বন্দি ছিলাম।

লন্ডনে পৌছে বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ইচ্ছা পোষণ করেন। বঙ্গবন্ধুর এ কথা প্রচারের কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্রিটেনের সরকারি কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে তার সৌজন্য সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঐদিন সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে ১০নং ডাউনিং স্ট্রিট-এ সাক্ষাৎ করেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ তখন সদ্যস্বাধীন একটি শিশু দেশ। মহাপরাক্রমশালী ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী সে সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য তার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর গাড়ির দরজা মি. হিথ নিজেই খুলে দেন। হিথ-মুজিব’ সৌজন্য সাক্ষাৎকালে শেখ মুজিবুর রহমান ব্রিটেন কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের বিষয়টি উত্থাপন করেন। এডওয়ার্ড হিথ যথাসম্ভব স্বল্পতম সময়ে স্বীকৃতিদানের আশ্বাস দেন।

প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের পর কমনওয়েলথের সেক্রেটারি জেনারেল আর্নল্ড স্মিথ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার হোটেল কক্ষে গিয়ে একান্তে সাক্ষাৎ করেন।
পরদিন ৯ জানুয়ারি ভোরে বঙ্গবন্ধু দিল্লির উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগ করেন। ১০ জানুয়ারি দিল্লি পৌঁছান বঙ্গবন্ধু। ব্রিটেনের রয়াল এয়ার ফোর্সের বিশেষ বিমানটি দিল্লির বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

বঙ্গবন্ধু বিমান থেকে নামার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ বিমানে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি তীব্র আবেগে জড়িয়ে ধরেন বাংলার প্রিয় নেতাকে। ২১ বার তোপধ্বনি দিয়ে ভারত অভিবাদন জানায় বাংলাদেশের মহান নেতাকে। ভারতীয় রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্বাগত জানান বঙ্গবন্ধুকে।
সেদিন দিল্লির বিমানবন্দরে বিশ্বের ২০টির বেশি রাষ্ট্রের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। পুরো এলাকা বাংলাদেশ এবং ভারতের পতাকায় সজ্জিত ছিল। তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন।
দিল্লিতে মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হন শেখ মুজিব। দিল্লিতে বাংলায় ভাষণ দিয়ে দিল্লির মানুষের মন জয় করেন বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

১০ জানুয়ারি সকাল থেকেই বাংলাদেশের মানুষ ঢাকা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিল। অবশেষে এলো সেই বহু প্রতীক্ষিত ক্ষণ। বাংলার মহান নেতা এসে দাঁড়ালেন তার প্রিয় জনগণের মধ্যে। বাংলার মানুষ আনন্দাশ্রু আর ফুলেল ভালোবাসায় বরণ করে নিলেন তাদের প্রাণের নেতাকে।

৩১ বার তোপধ্বনি হয় তেজগাঁও বিমানবন্দরে। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা স্বাগত জানান বঙ্গবন্ধুকে। তাকে বহনকারী গাড়িটি জনতার ভিড় ঠেলে অত্যন্ত ধীর গতিতে এগুতে থাকে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের দিকে। তেজগাঁও পুরানো বিমানবন্দর থেকে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীদের বহনকারী ট্রাকটি লাখো জনতার মধ্য দিয়ে পিঁপড়ার মতো ধীরে ধীরে চলে প্রায় দু’ঘণ্টায় ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পৌঁছায়।

পাকিস্তানের বন্দিশালার দুর্বিষহ নিঃসঙ্গতা আর দেশমাতৃকার চিন্তায় শুকিয়ে যাওয়া দীর্ঘদেহী বঙ্গবন্ধু লাখো জনতার সামনে দাঁড়ান আবার। বঙ্গবন্ধু চোখ মুছতে মুছতে যখন বলেন, ‘আমি আবার আপনাদের কাছে এসেছি। লাখ লাখ ভাই, মা আর বোন নিজেদের জীবনের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন, আমাকে মুক্ত করেছেন। আমার প্রতি ভালোবাসার কোনো পরিমাপ নেই। এর কোনো প্রতিদান আমি দিতে পারিনে…।’ তখন এমন কোনো বাঙালি ছিল না, যার নিজের চোখেও পানি জমেনি এবং আবেগে গলাটা রুদ্ধ হয়ে ওঠেনি।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। স্বাধীন বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর অভাব প্রতি মুহূর্তে অনুভব করেছে। তিনি যখন মুক্ত হয়ে পাকিস্তান থেকে বাংলার মাটিতে আসেন, সেদিনই সূচিত হয় বাংলাদেশের প্রকৃত বিজয়।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.