তিস্তার সমস্যা সমাধানে সরকার গণশুনানির আয়োজন করবে : আসিফ মাহমুদ

তিস্তার পানি সমস্যা সমাধানে আগামী বছরের শুরুতে গণশুনানির আয়োজন করবে সরকার। জনগণের কাছে সমস্যা শুনে সেই অনুযায়ী সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে নীলফামারীর জলঢাকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ মাহমুদ বলেন, শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব আর বর্ষা মৌসুমে তলিয়ে যাওয়া এটা উত্তরবঙ্গের মানুষের দীর্ঘদিনের সমস্যা। এই সমস্যা নিরসনে আপনাদের একটি সুখবর দিয়ে যাই। পানিসম্পদ উপদেষ্টা এবং আমরা সকলে মিলে আগামী বছরের শুরুর দিকে উত্তরবঙ্গে আসব এবং তিস্তার যে পানির সমস্যা এর দীর্ঘমেয়াদি সমাধান কীভাবে হতে পারে তার জন্য গণশুনানির আয়োজন করা হবে। আমরা উত্তরবঙ্গের মানুষের কথা শুনব। তিস্তা নিয়ে আপনাদের কথা শুনে তার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহৎ পরিসরে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। আমি আশাবাদী আপনাদের এই দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার একটি সমাধান হবে।
তিনি আরও বলেন, আপনার জানেন যে এবার ঢাকার পাশাপাশি সিলেট ও চট্টগ্রামে বিপিএল আয়োজন করা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের বগুড়ায় একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম ছিল। কিন্তু সংস্কার কার্যক্রমসহ নানা জটিলতার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে, যা এখন ব্যবহার উপযোগী নয়। সেটি অতিদ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে এবং যে তিনটি স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক মানের খেলা হয় এবং বিপিএলের ভেন্যু হিসেবে ধরা হয় সেই স্টেডিয়ামগুলোর সঙ্গে এই উত্তরবঙ্গের বগুড়া স্টেডিয়াম আগামী বছর থেকে এই তালিকায় যুক্ত হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, উন্নয়ন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক বৈষম্য আর থাকবে না। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের যে চলমান প্রকল্পগুলো আছে সেই প্রকল্পগুলোতে আমরা লক্ষ করেছি যে নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলের জন্য অতিরিক্ত মাত্রায় প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিছু অঞ্চল বৈষম্যের শিকার হয়েছে। আমরা সেগুলোকে পুর্ণবণ্টন করছি এবং উন্নয়ন যেন সারা বাংলাদেশে সুষমভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায় এজন্য যে অঞ্চলগুলো বৈষম্যের শিকার হয়েছে সেই অঞ্চলগুলোর জন্য বিশেষভাবে নজর দেওয়া হবে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। খুব দ্রুতই আপনারা দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখতে পারবেন।
উত্তরাঞ্চলকে কৃষি উৎপাদনের উর্বর ভূমি হিসেবে উল্লেখ করা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ অঞ্চলের স্থলবন্দর কৃষিভিত্তিক শিল্পায়নের ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কথা বলব।
এ সময় সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের তথ্য-প্রমাণ মিললে কঠোর আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেন আসিফ মাহমুদ। এ সফরে উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি উপজেলায় দুই হাজার করে শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন নীলফামারীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তফা মঞ্জুর, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সংগঠক আবু সাইদ লিওন, জলঢাকা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ময়নুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের শুরা সদস্য ওবায়দুল্লা সালাফি ও জলঢাকা উপজেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
ভবিষ্যতে এলাকাভিত্তিক আর কোনো বৈষম্য থাকবে না : আসিফ মাহমুদ

অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এলাকাভিত্তিক আর কোনো বৈষম্য থাকবে না। আমরা ইতিপূর্বে দেখেছি যে এলাকা থেকে নেতা হয়, সেখানেই উন্নয়ন হয়। যে এলাকা থেকে প্রধানমন্ত্রী হয় সে এলাকায় উন্নয়ন হয়। আর বাকি এলাকা বৈষম্যের শিকার হয়।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ ও স্থানীয় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বিগত দিনে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো অবহেলিত ছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে আমরা উত্তরবঙ্গের অবহেলিত ও অনুন্নত এলাকাগুলোর জন্য উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলো গ্রহণ করব, যাতে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় শেষ হয়ে গেলেও আপনারা উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত না হন।
আসিফ মাহমুদ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আন্দোলনের সময় আমাদের স্লোগানে থাকতো টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। পুরো বাংলাদেশ এই টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া হওয়ার কারণে এই তেঁতুলিয়াকে সবাই চিনে। আজকে আসার সুযোগ হলো, দেখার সুযোগ হলো। নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। বিজয়ের মাসে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও জুলাই অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন তাদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। নতুন স্বপ্ন দেখতে পাচ্ছি। আমরা ফ্যাসিবাদী সরকার থেকে মুক্তি পেয়েছি। তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
তিনি আরও বলেন, আমি উত্তরবঙ্গের প্রায় ১২টি জেলা ও ৫টি উপজেলা পরিদর্শন করব। শুধু একটি বিশেষ কারণে। আপনারা জানেন বিগত সময়ে উন্নয়ন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গ অবহেলিত হয়েছে, বঞ্চিত হয়ে আসছে। আমি সরেজমিনে ঘুরে পরিদর্শন করতে চেয়েছি, আপনাদের কথা শুনতে চেয়েছি, আপনাদের দাবিগুলো জানতে চেয়েছি। উত্তরবঙ্গে যে বঞ্চনা এবং বৈষম্য হয়েছে সেটা নিরসনের জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কাজ করবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, এই অনুষ্ঠানে তেঁতুলিয়া উপজেলা ও পঞ্চগড় জেলার সরকারি কর্মকর্তারা যারা রয়েছেন, আপনাদের প্রতি আহ্বান থাকবে নাগরিক সেবাকে প্রায়োরিটি দিয়ে কাজ করবেন। জনগণকে কোনো প্রকার হেনস্তা কিংবা কালক্ষেপণ, ঘুষ ও দুর্নীতি- এ ধরনের কোনো কিছুর সঙ্গে জড়াবেন না। আর তেঁতুলিয়াবাসীর প্রতি আহ্বান থাকবে কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি এ ধরনের আবদার করে ঘুষ খায়, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত আছে বলে মনে হয় তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে জানাবেন। আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ করার বিষয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা একটি সাধারণ সিদ্ধান্ত হিসেবে উত্তরবঙ্গের উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং আমাদের বিদ্যমান যে প্রকল্পগুলো আছে সেগুলো থেকে উত্তরবঙ্গে বরাদ্দ বৃদ্ধির করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এবং ইতোমধ্যে প্রতিটি মিটিংয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বিগত সময়ে যেসব এলাকা বৈষম্যের শিকার হয়েছে সেখানে আমরা উন্নয়ন কার্যক্রম বৃদ্ধি করবো।
তিনি আরও বলেন, উত্তরবঙ্গ বাংলাদেশের ফসল উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকে। আমি যতগুলো উপজেলা ভিজিট করেছি আমি সেখানে দেখলাম যে, ৬০-৭০ শতাংশ বেশি ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। সুতরাং এখানে কৃষি ও শিল্পের বিকাশের সুযোগ রয়েছে। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উত্তরবঙ্গের কৃষিভিত্তিক শিল্প বিকাশে কাজ করবে। এর প্রথম উদ্যোগ হিসেবে সুগার মিলগুলো চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সব বাস্তবায়ন করা হবে। এর বাইরেও সরকারের অন্যতম অ্যাজেন্ডা হিসেবে উত্তরবঙ্গের কৃষি ভিত্তিক শিল্পের বিকাশ এবং উৎপাদনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের যে সমস্যা তিস্তা নদীর শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট এবং বন্যার মৌসুমে ভাসিয়ে দেওয়া, সেই সমস্যা সমাধানে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এই জানুয়ারি মাসেই আমাদের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও আমি আবারও উত্তরবঙ্গে আসব।
এ সময় খেলাধুলার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমি যেহেতু যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছি তাই খেলাধুলাকে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে যুব মন্ত্রণালয় অনেকগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সঠিক ও দায়িত্বশীল স্টেকহোল্ডার দিয়ে উপজেলা ও জেলা ক্রীড়া সংস্থাগুলোকে পুনর্গঠন করা হবে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত খেলাধুলাকে বিশেষভাবে প্রণোদনা দেওয়া হবে। আমি তেঁতুলিয়া উপজেলার সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও খেলাধুলাকে আগামী তারুণ্যের উৎসবে আয়োজন করার জন্য উপজেলা পরিষদে ৫০ লাখ টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার ঘোষণা করছি। আপনাদের প্রতি আহ্বান থাকবে, তরুণদের প্রতি আহ্বান থাকবে কোনো প্রকার বাজে সঙ্গ, মাদক এড়িয়ে চলবেন। খেলাধুলাসহ রাষ্ট্র সংস্কার কাজে এগিয়ে আসবেন। তারই অংশ হিসেবে জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া তারুণ্য উৎসবে কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হবেন।
বেতন-ভাতা নিয়ে ক্ষোভ থেকেই জাহাজে ৭ জনকে হত্যা

বেতন-ভাতা ও ছুটি নিয়ে মাস্টারের প্রতি ক্ষোভের জের ধরে ৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এমভি আল বাখেরা জাহাজের লস্কর আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফান এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জানিয়েছে র্যাব।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে র্যাব-১১ সিপিসি-২ কুমিল্লা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-১১ এর উপ অধিনায়ক মেজর সাকিব হোসেন।
এর আগে চাঁদপুরের জাহাজে সাতজন খুনের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় অভিযুক্ত ইরফানকে মঙ্গলবার রাতে বাগেরহাটের চিতলমারি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় ইরফানের ব্যবহৃত মোবাইল, ঘুমের ওষুধ, নিহতদের ব্যবহৃত মোবাইল, ব্যাগ, রক্তমাখা জিন্সের প্যান্ট ও গ্লাভস জব্দ করেছে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইরফান জানিয়েছেন, জাহাজের মাস্টারের প্রতি তার খুব ক্ষোভ ছিল। আর সেই ক্ষোভ থেকেই এ হত্যাকাণ্ড। তার ভাষ্যমতে, তিনি প্রায় ৮ মাস ধরে এমভি-আল বাখেরা জাহাজে চাকরি করে আসছিলেন। সেই জাহাজের কর্মচারীরা ছুটি ও বেতন-বোনাস সময় মতো পেতেন না এবং বিভিন্ন ধরনের বিল কর্মচারীদের না দিয়ে জাহাজের মাস্টার একাই ভোগ করতেন। এ নিয়ে গ্রেপ্তারকৃত ইরফানের ক্ষোভ ছিল।
শুধু তাই নয়, জাহাজের মাস্টার সব কর্মচারীর ওপর বিনা কারণে রাগারাগি করতেন এবং কারোর ওপর নাখোশ হলে তাকে কোনো বিচার বিবেচনা ছাড়াই জাহাজ থেকে নামিয়ে দিতেন। এমনকি তাদের বকেয়া বেতনও দিতেন না। এ ব্যাপারে ইরফান জাহাজের সবাইকে প্রতিবাদ করতে বললে কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করত না। ফলে ইরফানের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং এই ক্ষোভ থেকে তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন ইরফান। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৮ ডিসেম্বর তিন পাতা ঘুমের ওষুধ কেনেন।
ইরফান জানান, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি ঘটনার দিন সন্ধ্যায় জাহাজে রাতের খাবারের তরকারির মধ্যে তিন পাতা ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন। শুধুমাত্র সুকানি জুয়েল এবং আকাশ ছাড়া সবাই রাতের খাবার খেয়ে তাদের নিজ নিজ কেবিনে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ২টার দিকে সাহারা বিকন এলাকায় আরও ৮-১০টি জাহাজের সঙ্গে সুকানি জুয়েল এবং গ্রেপ্তারকৃত আকাশ তাদের জাহাজটি নোঙর করে। পরে সুকানি জুয়েল রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে আকাশ তার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাড়ে ৩টায় প্রথমে মাস্টারকে জাহাজে থাকা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। এরপর তিনি ভেবে দেখেন, জাহাজে থাকা বাকিরা জেনে গেলে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়তে পারেন। ফলে একে একে সবাইকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সব জাহাজ তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেলে তিনি নিজে জাহাজ চালাতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে মাঝিরচর নামের এলাকায় জাহাজটি আটকা পড়ে। পরে পাশ দিয়ে যাওয়া একটি ট্রলারে বাজার করার কথা বলে উঠে পালিয়ে যান। শেষে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে বাগেরহাটে চিতলমারি এলাকায় আত্মগোপনে চলে যান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঘটনার পর ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব। হত্যায় জড়িত ইরফানকে শনাক্ত করে মঙ্গলবার রাতে চিতলমারী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাকে চাঁদপুর আদালতে তোলার প্রক্রিয়া চলছে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার দুপুরে চাঁদপুরের হাইমচরে মেঘনা নদীতে এমভি আল বাখেরা জাহাজ থেকে সাতজনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় গতকাল রাতে হাইমচর থানায় হত্যা ও ডাকাতির অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে জাহাজটির মালিক মাহবুব মোর্শেদ মামলা করেন। নিহতরা হলেন- মাস্টার গোলাম কিবরিয়া, গ্রিজার সজিবুল ইসলাম, লস্কর মাজেদুল ইসলাম, শেখ সবুজ, আমিনুর মুন্সী, ইঞ্জিন চালক সালাউদ্দিন ও বাবুর্চি রানা কাজী।
সাদগ্রুপ আওয়ামী ও ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গভীর চক্রান্ত করে আসছে

মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি : গত ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে সন্ত্রাসী সাদপন্থীদের বর্বরোচিত হামলার বিচার ও তাদের নিষিদ্ধের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বুধবার দুপুরে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নিচতলায় সাধারণ শির্ক্ষাথীদের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসী সাদগ্রুপ ও ঈস্কনসহ দেশের অনান্য সকল অরাজকতা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী আওয়ামী ও ভারতীয় দুসররা তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ও অন্তবর্তীকালিন সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে গভীর চক্রান্ত করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় সন্ত্রাসী সাদ গ্রুপ গত ১৭ ডিসেম্বর টঙ্গী ইজতেমার মাঠে রাতের আঁধারে ঘুমন্ত ও নামাজরত মুসল্লীদের উপর পরিকল্পিত নির্মম হামলা চালায়। এই ঘটনায় তিনজন শহীদ ও অসংখ্য মুসল্লী গুরুতর আহত হয়। আমরা এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
এতে উপস্থিত ছিলেন- মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাইমুর রহমান দূর্জয়, মো. হাসিবুল হাসান, ইএসআরএম বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মনিরুজ্জামান সুরুজ, শিক্ষার্থী মো. মশিউর রহমান প্রমুখ।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
চাঁদপুরে জাহাজে ৭ খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন ইরফান গ্রেপ্তার

চাঁদপুরের মেঘনায় বহুল আলোচিত সার বোঝাই কার্গো জাহাজে সাত খুনের ঘটনায় আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানকে বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে কুমিল্লা জেলার র্যাব-১১ এর পাঠানো এক খুদে বার্তা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে মামলার বাদী এজাহারে জাহাজে থাকা সাত জন খুন ও একজন আহতের কথা উল্লেখ করেন। খুন হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- মাস্টার গোলাম কিবরিয়া, গ্রিজার সজিবুল ইসলাম, লস্কর মাজেদুল ইসলাম, শেখ সবুজ, আমিনুর মুন্সী, ইঞ্জিন চালক সালাউদ্দিন ও বাবুর্চি রানা কাজী। এ ছাড়া আহত ব্যক্তি হলেন- সুকানি জুয়েল (২৮)। তিনি ফরিদপুর সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের সেকান্দর প্রকাশ সেকেন্ড খালাসীর ছেলে।
মামলার বাদী মাহবুব মোর্শেদ এজাহারে উল্লেখ করেন, আহত জুয়েল গলায় কাটা রক্তাক্ত জখমপ্রাপ্ত হয়ে কথা বলতে না পারায় ডাকাত দলের বিস্তারিত বিবরণ দিতে পারেনি। সে সুস্থ হলে ডাকাতদল দেখলে চিনবে বলে ইশারায় জানায়। তবে জুয়েল লিখে জানায়, জাহাজে তাদের সঙ্গে ৯ জন ছিল। ৯ নম্বর ব্যক্তির নাম ইরফান। তবে তার ঠিকানা দিতে পারেনি।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে জেলার হাইমচর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছেন এমভি আল বাখেরা নামক কার্গো জাহাজের মালিক মাহবুব মোর্শেদ। মামলায় সংবাদদাতা অপর জাহাজ এমভি মুগনির মাস্টার বাচ্চু মিয়াসহ ৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
এদিকে জাহাজে খুন হওয়া সাত জনের লাশ মঙ্গলবার বিকালে হস্তান্তর করেছেন জেলা প্রশাসক মহসীন উদ্দিন ও নৌপুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান। ওই সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত পরিবারের স্বজনদের ২০ হাজার টাকার চেক ও নৌপুলিশের পক্ষ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
মন্তব্য