উচ্চশিক্ষায় এআইইউবির ২৮ বছর

আফিফ আইমানঃ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি) প্রতিষ্ঠার ২৮ বছর পূর্ণ করেছে চলতি নভেম্বরে। এই দীর্ঘ যাত্রায় এআইইউবি থেকে ৩২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তাঁরা চাকরি, ব্যবসা, ক্রীড়াসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছেন।
‘প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট, ১৯৯২’-এর অধীনে ১৯৯৪ সালে ড. আনোয়ারুল আবেদীন এআইইউবি প্রতিষ্ঠা করেন। রাজধানী ঢাকার কুড়িলে প্রায় আট একর জমিতে এআইইউবির স্থায়ী ক্যাম্পাস অবস্থিত।
বর্তমানে এআইইউবিতে চারটি অনুষদ রয়েছে। এগুলো হলো—প্রকৌশল অনুষদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ, বাণিজ্য অনুষদ, কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদ। এসব অনুষদের অধীনে বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে। বিভাগগুলো থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হয়। এ ছাড়া ভাষাশিক্ষা, এন্টারপ্রাইজ নেটওয়ার্কিং, সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ডিজাইনিং, অ্যানিমেশন, প্রোগ্রামিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ইমার্জিং টেকনোলজির ওপর এআইইউবি সংক্ষিপ্ত কোর্স করায়।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে দেশি-বিদেশি প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক আছেন প্রায় পাঁচ শ। এআইইউবিতে এখন পর্যন্ত ২০টি সমাবর্তন হয়েছে। সমাবর্তনে মেধাবী শিক্ষার্থীদের চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড, ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড ও ড. আনোয়ারুল আবেদীন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। আছে একাধিক অ্যাকাডেমিক পুরস্কারের ব্যবস্থা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, ইতালি, স্পেন, মেক্সিকো, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এআইইউবির অ্যাকাডেমিক অংশীদারত্ব রয়েছে। প্রায় প্রতি সেমিস্টারেই এআইইউবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিদেশে উচ্চশিক্ষা বিনিময় কার্যক্রমে অংশ নেন।
উচ্চশিক্ষায় অবদানের জন্য ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিজ উইথ রিয়েল ইমপ্যাক্ট র্যাঙ্কিং ২০২২-এর তালিকায় এআইইউবি স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং, টাইমস হায়ার এডুকেশন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং, সিমাগো ইনস্টিটিউশন র্যাঙ্কিংয়ে এআইইউবির নাম রয়েছে। মানসম্মত উচ্চশিক্ষায় অবদানের জন্য আইএসও ৯০০১: ২০০৮-সহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে এআইইউবি।
এআইইউবি নিয়মিত আন্তর্জাতিক মানের ‘এআইইউবি জার্নাল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকস’ ও ‘এআইইউবি জার্নাল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং’ প্রকাশ করে আসছে। এআইইউবিতে রয়েছে সেন্টার ফর সাসটেইনেবল এনার্জি রিসার্স, সেন্টার ফর ন্যানো টেকনোলজি রিসার্চ, সেন্টার ফর বায়োমেডিকেল রিসার্চ, সেন্টার ফর রোবোটিকস অ্যান্ড অটোমেশন, বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার।
বিজনেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, কম্পিউটিং অ্যাডভান্সমেন্ট, সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট, রোবোটিকস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড সিগনাল প্রসেসিং টেকনিকসহ বিভিন্ন বিষয়ে এআইইউবি নিয়মিত আন্তর্জাতিক কনফারেন্স-সেমিনার আয়োজন করে আসছে।
সিসকো নেটওয়ার্ক একাডেমি, ওরাকল একাডেমি, মাইক্রোসফট, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনসহ এআইইউবির অনেক অংশীদার রয়েছে।
এআইইউবির ক্যাম্পাসটি সবুজে ঘেরা। এখানে আছে মাল্টিমিডিয়াসহ আধুনিক শেণিকক্ষ। রয়েছে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক গ্রন্থাগার। এই গ্রন্থাগারে একত্রে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী পড়তে পারেন। গ্রন্থাগারে প্রায় ৪৪ হাজার বই আছে। আছে ৬৯ হাজার অনলাইন জার্নাল, লাখো ই-বুকসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সহশিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ১৬টি ক্লাব রয়েছে। আছে কম্পিউটার ল্যাব, ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাব, ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব, ফিজিক্স ল্যাব, কেমিস্ট্রি ল্যাব, থ্রি–ডি অ্যানিমেশন ল্যাব, আইপি ল্যাব। মুট কোর্ট, স্থাপত্য স্টুডিও, মিডিয়া স্টুডিও। অত্যাধুনিক মাল্টিপারপাস হল, অডিটরিয়াম, ক্যাফেটেরিয়া ও ফুড কোর্ট আছে। আছে একটি বিশ্বমানের মেডিকেল সেন্টার। একটি অত্যাধুনিক জিমনেসিয়াম। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্য পৃথক প্রার্থনার স্থান। ২৪ ঘণ্টা ইন্টারনেট ওয়াই–ফাই সার্ভিস। ফুটবল-ক্রিকেট মাঠ, বাস্কেট বল কোর্ট, টেনিস কোর্ট, ভলিবল কোর্ট, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, ইনডোর গেমসের স্থান।
এআইইউবির বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন খেলাধুলায় সুনাম কুড়িয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় লিটন কুমার দাস, তাসকিন আহমেদ, সাব্বির রহমান, মমিনুল হক, আফিফ হোসেন, আবু হায়দার রনি, এনামুল হক বিজয়, আকবর আলী প্রমুখ। এ ছাড়া আছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সানজিদা আক্তার, মণিকা চাকমা, কৃষ্ণা রানী সরকার, মিশরাত জাহান মৌসুমী।
এআইইউবির সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের জাহেদ পারভেজ, ফয়সাল মাহমুদ, গুগলের প্রথম বাংলাদেশি প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার (পরিচালক) জাহেদ সবুর। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানিতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বপালন করছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা।
একবিংশ শতাব্দীর বাজার–চাহিদার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রযুক্তিভিত্তিক সর্বোচ্চ গুণগত মানের উচ্চশিক্ষার প্রসারে এআইইউবি অঙ্গীকারবদ্ধ। এআইইউবির ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইশতিয়াক আবেদীন বলেন, ‘২৮ বছর ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয় আগামীর নেতৃত্ব গড়তে নিরলসভাবে কাজ করছে।
দেশের ঐতিহ্যকে ধারণ করে কালের সাক্ষী হয়ে আছে রাবির যেসব নান্দনিক স্থাপনা

মারুফ হোসেন মিশন, রাবি: ৭৫৩ একর মতিহারের সবুজ চত্বরে বেষ্টিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত আন্দোলন, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক এই বিশ্ববিদ্যালয়। চল্লিশ সহস্রাধিক প্রাণের চাঞ্চল্যে গমগম করে ওঠা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেবল পঠনে সীমাবদ্ধ থাকেনি, দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সংগ্রামে বুক পেতে দিয়ে এগিয়ে চলছে। ছায়াশীতল এই ক্যাম্পাস তাই আমাদের মাতৃতুল্য।
বিভিন্ন সময়ে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে রাবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। '৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, '৬৬-এর ছয় দফা, '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, '৭০-এর সাধারণ নির্বাচন, '৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং '৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনে রাবির শিক্ষক ও ছাত্রসমাজ সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্র-শিক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়েছে অত্যাচার আর শোষণের বিরুদ্ধে। ষাটের দশকের শেষ দিকে এই ভূখণ্ড যখন গণআন্দোলনে উত্তাল, তখন রাবির শিক্ষার্থীরাও স্বাধিকার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় রয়েছে দেশের ঐতিহাসিক কিছু নান্দনিক স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, প্রথম জাদুঘরখ্যাত বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, শহীদ মিনার, রয়েছে শিল্পী নিতুন কুণ্ডের অমর কীর্তি মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য 'সাবাশ বাংলাদেশ'। বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা নামক একটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী সুউচ্চ মেটালিক টাওয়ার, বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য বিদ্যার্ঘ্য, ড. জোহার প্রতিকৃতি ও বিজয় সাগর। এসব নান্দনিক স্থাপনা দৃষ্টিকারী দেশের ভ্রমণ পিপাসু মানুষ ও এখানে ঘুরতে আসা শিক্ষার্থীদের। রাবির ঐতিহাসিক স্থাপনা গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
শহীদ মিনার কমপ্লেক্স: এখানে আছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও দেশের ইতিহাসে মুক্তিযোদ্ধাভিত্তিক প্রথম শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা, দুটি মুরাল ও উন্মুক্ত মঞ্চ। এটি একটি ওয়াই ফাই জোন। শহীদ মিনারের দক্ষিণ পার্শ্বেই অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ। মোঘল স্থাপত্যশিল্পে নির্মিত হয়েছে এই দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি।
সাবাশ বাংলাদেশ: মুক্তিযুদ্ধের স্মারক এই ভাস্কর্যটি সিনেট ভবনের দক্ষিণ চত্বরে অবস্থিত। শিল্পী নিতুন কুন্ডুর শৈল্পিক হাতের ছোঁয়ায় লাল বেলে মাটি দিয়ে ১৯৯১ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সংগ্রামী বাঙালির ইতিহাস ও অসাম্প্রদায়িক বাংলার চূড়ান্ত বিজয়ের প্রতিফলন এ ভাস্কর্য। এই ভাস্কর্যের পাদদেশে একটি মুক্ত মঞ্চ আছে। ৬ ফুট বেদীর উপর স্থাপিত মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া দুজন তরুণের ছবি দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে তরুণদের অবদানের কথা। ভাস্কর্যটির দু'পাশে আয়তাকার দুইটি দেয়ালের একটিতে কয়েকজন বাউল একতারা বাজিয়ে গান করছে। যা বাঙালী জাতির গ্রামীণ সংস্কৃতির পরিচয় বহন করছে। অন্যটিতে মায়ের কোলে শিশু ও দুইজন তরুণী, একজনের হাতে রয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। তার দিকে অবাক তাকিয়ে আছে এক কিশোর।
সুবর্ণ জয়ন্তী টাওয়ার: বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্তিকে স্মৃতির মণিকোঠায় ধরে রাখার জন্য ২০০৩ সালে নির্মাণ করা হয় নান্দনিক এই স্থাপনাটি। প্রধান ফটক পেরিয়ে সড়ক দ্বীপের ডানে, প্রশাসন ভবনের সামনে জোহা চত্বরের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। রাজশাহীর সন্তান প্রথিতযশা ভাস্কর মৃণাল হকের সুনিপুণ কারুকার্যে তৈরি হয় এই নান্দনিক স্থাপনাটি। স্টিলের তৈরি ৩৫ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট পৃথিবীর অন্যতম অত্যাধুনিক এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা। তবে অবহেলা আর অযত্নে নষ্ট হতে বসেছে অপরূপ সৌন্দর্যের এই স্থাপনাটি।
বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ: বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে এই স্মৃতিস্তম্ভটি অবস্থিত। ১৯৭২ সালের ২৩ এপ্রিল আবিষ্কৃত হয় এখানকার গণকবরগুলো। প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করা জায়গাটি ছোট হলেও এখানে ৮-১০টি গণকবর আবিষ্কৃত হয়েছে এবং ধারণা করা হয় এই গণকবরগুলোতে প্রায় ৩-৪ হাজার নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ৬ স্তরবিশিষ্ট এ স্মৃতি স্তম্ভটি সমতল ভূমি হতে ৪২ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। স্তম্ভটির চারপাশ ঘিরে আছে গোলাকার একটি কংক্রিটের বেদি এবং বেদির মাঝখানে আছে বড় একটি কূপ। কূপটিকে 'মৃত্যুকূপ' এর সঙ্গে তুলনা করা হয়। স্তম্ভের গায়ের কালো কালো ছাপ যা দেশের স্বাধীনতায় অবদান রাখা শহীদদের রক্ত শুকানো দাগের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। স্তম্ভের ভাঙা ইট দ্বারা মুক্তিযোদ্ধাদের গায়ের ক্ষত বোঝানো হয়েছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক: মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের কাছে ৬১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই ফলকটি নির্মাণ করা হয়। ২৬ ফুট দৈর্ঘ্য এবং সাত ফুট প্রস্থের কালো মার্বেল পাথরের বেদির উপরে স্থাপিত স্মৃতিফলকের প্রধান অংশ সাদা দেয়াল। সাদা দেয়ালের পেছনের অংশের দেয়ালে খোদাই করা হয়েছে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ’৬২-এর ছয় দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আসাদের মৃত্যু, দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. শামসুজ্জোহার মৃত্যু, এগারো দফা ও ’৭০-এর নির্বাচনের বিভিন্ন চিত্র। সামনের দেয়ালের বাম পাশের উপরের দিকে ফুটিয়ে তোলা হয় মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তিন শিক্ষক ড. সুখরঞ্জন সমাদ্দার, শহীদ ড. হবিবুর রহমান ও মীর আব্দুল কাইয়ূমের প্রতিকৃতি। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সাত মার্চের ভাষণের প্রতিকৃতি স্মৃতিফলকের সামনের দেয়ালের নিচের দিকে স্থাপন করায় আছে অনেক সমালোচনা।
শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা: এটি বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক জাদুঘর। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরের পূর্বপাশে অবস্থিত। এতে স্থান পেয়েছে ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বিভিন্ন চিত্রকর্ম, দলিল-দস্তাবেজ, আলোকচিত্র, জামা, জোব্বা, কোট, ঘড়ি, পোশাক, টুপি, কলমসহ বিভিন্ন দুর্লভ সংগ্রহ। রাজশাহীতে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনারের বাঁধাইকরা আলোকচিত্র, আমতলার সভা, কালো পতাকা উত্তোলন ও মিছিল, ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রস্তুতি, ’৬৯-এর গণবিক্ষোভের মুখে পুলিশ বাহিনী, শহীদ আসাদ, শহীদ মতিউর, শহীদ রফিক, শহীদ বরকত, শহীদ সালাম ও শহীদ শামসুজ্জোহার প্রতিকৃতি, গুলিবিদ্ধ-হাসপাতালে মৃত-কফিনে শায়িত ড. জোহার ছবি। আছে জাতীয় চার নেতা এবং রাবির শহীদ শিক্ষকদের প্রতিকৃতি, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতার ঘোষণা-বাণীর প্রতিলিপি, মুজিবনগরে ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র, ’৭১-এর ছাত্রী নিগ্রহ, গণহত্যা, পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ দলিলের চুক্তিপত্র, মুক্তিযুদ্ধের বিখ্যাত পোস্টার, শহীদদের পোশাক ও ব্যবহৃত জিনিসপত্রসহ আরো অনেক কিছু।
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর: এই জাদুঘরটি রাজশাহী শহরে স্থাপিত বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। এই প্রত্ন সংগ্রহশালাটি ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্থাপিত হয়েছিল। বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এটি পরিচালনা করে থাকে। বরেন্দ্র জাদুঘরে প্রায় ৯ হাজারেরও অধিক নিদর্শন রয়েছে। জাদুঘরের সংগ্রহশালায় রয়েছে সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন, মহেনজোদারো সভ্যতার প্রত্নতত্ত, পাথরের মূর্তি, একাদশ শতকে নির্মিত বুদ্ধ মূর্তি, ভৈরবের মাথা, গঙ্গা মূর্তি, মোঘল আমলের রৌপ্র মুদ্রা, গুপ্ত সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের গোলাকার স্বর্ণমুদ্রা, সম্রাট শাহজাহানের গোলাকার রৌপ্য মুদ্রা বিশেষ ভাবে উল্যেখয়োগ্য। এখানে প্রায় ৫,০০০ পুঁথি রয়েছে যার মধ্যে ৩৬৪৬টি সংস্কৃত আর বাকিগুলো বাংলায় রচিত। পাল যুগ থেকে মুসলিম যুগ পযর্ন্ত সময় পরিধিতে অঙ্কিত চিত্রকর্ম, নূরজাহানের পিতা ইমাদ উদ দৌলার অঙ্কিত চিত্র এখানে রয়েছে।
বিদ্যার্ঘ: মুক্তিযুদ্ধকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক শহীদ হবিবুর রহমানের স্মরনে ২০১১ সালে সৌধটি নির্মিত হয়। এটি শহীদ হবিবুর রহমান হল চত্বরে অবস্থিত। ভাস্কর্যটির স্থপতি শিল্পী শাওন সগীর সাগর। প্রায় ৫ ফিট দৈর্ঘের দু’জন মুক্তিযোদ্ধা সগর্বে দাঁড়িয়ে আছেন। একজনের হাতে বন্দুক এবং অন্যজনের হাতে কলম। বন্দুকের চেয়ে কলম বড় সেটা বোঝাতে কলমটি বন্দুকের চেয়ে উপরে রাখা হয়েছে। ভাস্কর্যটি একটি ষষ্ঠভূজের উপর নির্মিত। কালো রংয়ের ষষ্ঠভূজটিতে বাংলাদেশের ইতিহাসের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গ্রন্থটির ঠিক উপরে রয়েছে একটি সূর্য- যা বাঙালি জাতিকে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি দিয়ে যাচ্ছে। সূর্যের মাঝখানে লেখা বিদ্যার্ঘ শব্দটি জ্ঞানের আলোকে বোঝানো হয়েছে।
স্ফুলিঙ্গ: ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা স্মরণে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়। মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কনক কুমার পাঠক ২০১২ সালে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন। এই ভাস্কর্যে শহীদ শামসুজ্জোহার ৩ ফুট উচ্চ আবক্ষ প্রতিকৃতি রয়েছে। বেদির ঠিক পেছনে রয়েছে বাঁকা লম্বা একটি দেয়াল। দেয়ালটি লাল আর কালো ইটের দ্বারা তৈরি। আর দেয়ালের মাঝখানে রয়েছে গোল বৃত্ত। একপাশ থেকে দেখলে বোঝা যায় বাঁকা দেয়াল দ্বারা উড়ন্ত বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে নির্দেশ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি: দেশের অন্যতম দ্বিতীয় বৃহত্তম লাইব্রেরী এটি। ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ একাডেমিক ভবনের পূর্ব পাশে এটির অবস্থান। লাইব্রেরিতে আছে ৩৫ হাজারের অধিক বই, ৪০ হাজারের বেশি গবেষণা পত্রিকা ও সাময়িকি। প্রতিদিন সকাল ৯টা ১৫ মিনিট থেকে রাত ৮টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকে লাইব্রেরিটি। জার্নাল রুম, রেফারেন্স শাখা ও সাধারণ পাঠকক্ষ এবং বিজ্ঞান পাঠকক্ষ মিলে প্রায় ৭৫০টি আসন আছে লাইব্রেরিতে।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের পশ্চিম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ওয়েবসাইট’ ভাস্কর্য’ (ru.ac.bd), ড. মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা এবং স্যার জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের ঠিক মাঝে একটি ‘কিউব’ ভাস্কর্য, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ‘বইয়ের স্তুপ’ ও শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবনের সামনে একটি ‘বই’ এর ভাস্কর্য রয়েছে, যা উন্নত বিদ্যাপীঠের প্রতীকী রূপ।
ইন্টারন্যাশনাল গ্লোবাল নেটওয়ার্ক এর এ্যাম্বাসেডর হলেন বাউয়েটের শাফায়াত হোসেন

ইন্টারন্যাশনাল গ্লোবাল নেটওয়ার্ক এর অফিসিয়াল এ্যাম্বাসেডর হিসেবে দায়িত্ব পেল বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি (বাউয়েট) এর শিক্ষার্থী মোঃ শাফায়াত হোসেন।
মোঃ শাফায়াত হোসেন বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি (বাউয়েট) এর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
মোঃ শাফায়াত হোসেন দি রাইজিং ক্যাম্পাস এর বাউয়েট প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল গ্লোবাল নেটওয়ার্ক এর অফিসিয়াল এ্যাম্বাসেডর মোঃ শাফায়াত হোসেন বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে সফলতা অর্জন করেছেন।
গেল পাঁচ বারের তুলনায় সর্বোচ্চ পদ নিয়ে আসছে ৪৫তম বিসিএস

চলতি মাসের শেষের দিকে আসছে ৪৫তম সাধারন বিসিএস। ইতোমধ্যে ক্যাডার পদ নির্দিষ্ট করা হলেও নন–ক্যাডারের পদ এখনো নির্দিষ্ট করা হয়নি। গত পাঁচ বারের বিসিএসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্যাডার পদ রেখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) ৪৫তম বিসিএসের চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে। এই বিসিএসের পদ নির্দিষ্ট করার বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ শাখা থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নব নিয়োগ শাখার যুগ্ম সচিব সায়লা ফারজানা বলেন, মন্ত্রণালয় ৪৫তম বিসিএসের ক্যাডার ও নন–ক্যাডারের চাহিদাপত্র পিএসসিতে পাঠিয়েছে। এখন পিএসসি সেটির ওপর কাজ করছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ৪৫তম সাধারণ বিসিএসে ২৩টি ক্যাডারের বিপরীতে জনবল নেওয়া হবে। এতে মোট ক্যাডার পদ থাকছে ২ হাজার ৩০৯টি। এই বিসিএসে গত পাঁচটি বিসিএস থেকে বেশি ক্যাডার নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। সবচেয়ে বেশি নেওয়া হবে স্বাস্থ্য ক্যাডারে। এই ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৫৩৯ জন চিকিৎসক। এর মধ্যে সহকারী সার্জন ৪৫০ জন ও ডেন্টাল সার্জন নেওয়া হবে ৭৯ জন। দ্বিতীয় স্থানে থাকছে শিক্ষা ক্যাডারে ৪৩৭ জন, প্রশাসনে ২৭৪, পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, আনসারে ২৫, কর–এ ৩০ জন ও পররাষ্ট্র, বন, রেল, কৃষি, মৎস্যসহ অন্যান্য ক্যাডারে ৮৭০ জন ক্যাডার নিয়োগ করা হবে। মন্ত্রণালয়ে সূত্রে আরও জানা যায়, ক্যাডারের পদ নির্দিষ্ট হলেও নন–ক্যাডারের পদ নির্দিষ্ট হয়নি এখনো। মন্ত্রণালয় যেসব পদ পাঠিয়েছে সেগুলো নিয়ে কাজ করছে পিএসসি।
পিএসসির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় নন–ক্যাডারের যেসব পদ পাঠিয়েছে সেগুলো আমরা আবার যাচাই-বাছাই করছি। দেখা গেছে মন্ত্রণালয় যেসব পদ পাঠিয়েছে, তা আসলে সৃজন করা হয়নি। এসব পদ বাদ দেওয়া হয়েছে। একটি মন্ত্রণালয় ২৭টি শূন্য পদ পাঠিয়েছে কিন্তু নথি দেখে ২৫টি পদ নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিজ্ঞপ্তির আগে নন–ক্যাডার পদ নির্দিষ্ট করা হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
পিএসসি সূত্র জানায়, ক্যাডারের পাশাপাশি এবারই প্রথম এই বিসিএসে নন–ক্যাডারের পদও উল্লেখ রেখে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ক্যাডারে যেমন পছন্দ নির্দিষ্ট করে দেওয়া যাবে, তেমনি এবার নন–ক্যাডারেও পছন্দ নির্দিষ্ট করে দিতে পারবেন প্রার্থী। সে জন্য পিএসসি এবার ক্যাডার পদ দেওয়ার পাশাপাশি নন–ক্যাডারের পদও নির্দিষ্ট করে দেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। সেই চিঠির পর মন্ত্রণালয় এবার ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন–ক্যাডারের পদও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে।
প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির ৪৩ পেরিয়ে ৪৪ এ পা রাখল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ইবি প্রতিনিধি : বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) যার প্রথম যাত্রা শুরু হয়েছিলো ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর। কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টি ৪৩ বছর পূর্ণ করে আজ ৪৪ বছরে পা রাখতে যাচ্ছে। শিক্ষা-গবেষণায়, সংস্কৃতি-ক্রীড়াঙ্গনে উল্লেখযোগ্য অর্জন এই পথচলাকে গৌরবান্বিত করেছে। সমস্ত প্রতিকূলতা কতটুকু সার্থকভাবে মোকাবেলা করে শিক্ষা-গবেষণায়, সংস্কৃতি-ক্রীড়াঙ্গনে উল্লেখযোগ্য অর্জন এই পথচলাকে গৌরবান্বিত করার মাধ্যমে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করে এগিয়ে চলেছে প্রাণের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় তাই জানবো আজকে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৮টি অনুষদের ৩৬টি বিভাগে ১৩ হাজার ৪৬৮ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন, যাদের মধ্যে ছাত্র ৮ হাজার ৭৬৩ এবং ছাত্রী ৪ হাজার ৭০৫ জন। বর্তমানে ৪০৩ জন শিক্ষক শিক্ষাদানে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়াও ৪৯৪ জন কর্মকর্তা, ১৩২ জন সহায়ক কর্মচারী এবং ১৫৮ জন সাধারণ কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রেখে চলেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টি এ পর্যন্ত ৫৯৯ জনকে পিএইচ.ডি এবং ৭৫৮ জনকে এম.ফিল ডিগ্রি প্রদান করেছে। বর্তমানে ২৫০ জন পিএইচ.ডি এবং ৯৫ জন এম.ফিল গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা সংস্থা এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বিভিন্ন বিভাগের ১৭ জন শিক্ষক স্থান পেয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২জন শিক্ষক ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ বিষয়ে বিশেষ গবেষণা প্রকল্প অনুদানের জন্য মনোনীত হয়েছেন। তাঁরা ৬টি প্রজেক্টের আওতায় কাজ করবেন।
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের যাত্রা শুরু হয়েছে।
এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম সমাবর্তন ২৭ এপ্রিল ১৯৯৩ সালে, দ্বিতীয় সমাবর্তন ৫ ডিসেম্বর ১৯৯৯ সালে, তৃতীয় সমাবর্তন ২৮ মার্চ ২০০২ সালে এবং সর্বশেষ ৪র্থ সমাবর্তন ৭ জানুয়ারি ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়।
শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি ক্রীড়াক্ষেত্রেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ভারোত্তোলন, ফুটবল, ভলিবল, ক্রিকেট ও অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্রী ইসরাত জাহান ইভা দুইবার দেশের দ্রæততম মানবী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ভলিবল প্রতিযোগিতায় এ বিশ্ববিদ্যালয় নয়বার, ফুটবল প্রতিযোগিতায় তিনবার ও অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় চারবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এছাড়াও ভলিবল প্রতিযোগিতায় তিনবার রানার্স আপ এবং ক্রিকেটে তিনবার দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপ-এর ৩য় আসরের হ্যান্ডবল ফাইনালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৩১-২২ গোলে এবং বাস্কেটবল ইভেন্টে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে ৭৪-৬২ পয়েন্টে পরাজিত করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগটি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় ক্রীড়াঙ্গনে বড় ধরণের ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দেশব্যাপী ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞের অংশ হিসাবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও উন্নয়ন কর্মকান্ড চলমান রয়েছে। ৫৩৭ কোটি ৭ লাখ টাকার মেগা প্রকল্পের আওতায় নয়টি দশ তলা ভবনের সবগুলোর নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। নির্মাণাধীন ভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে দুটি ছাত্র ও দুটি ছাত্রী হল, একটি একাডেমিক ভবন, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য একটি, কর্মচারীদের জন্য একটি, নির্মাণাধীন শেখ রাসেল হলের দ্বিতীয় ব্লক এবং নতুন প্রশাসন ভবন নির্মাণ। দশতলা বিশিষ্ট আবাসিক হলগুলো নির্মাণ শেষ হলে আবাসন সুবিধা নিশ্চিত হবে ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর। বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের সংকট দূর হবে এবং নতুন-নতুন বিভাগ খোলার সুযোগ সৃষ্টি হবে একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলে। এছাড়া প্রশাসন ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হলে অফিসসমূহ উন্নত হবে, শিক্ষার্থীদের সেবা প্রদানের মান বাড়বে এবং স্থান সংকট অনেকটাই নিরসন হবে। প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টির মধ্যে ৫টি ভবনের উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে গাড়ি রয়েছে ৪৯টি। এর মধ্যে ৭টি এসি কোস্টার গাড়ি, ডাবল ডেকার বাস ১টি, বড়বাস ১৩টি, নন-এসি মিনিবাস ৫টি। বাকিগুলোর মধ্যে রয়েছে এ্যাম্বুলেন্স, পিক-আপসহ অন্যান্য ছোট গাড়ি। গত ১৮ সেপ্টেম্বর পরিবহন পুলে সর্বশেষ সংযোজিত নতুন ৩ টি বড় বাস ও ২ টি হায়েচ এসি মাইক্রোবাসের শুভ উদ্বোধন করেন ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম।
যৌন হয়রানিমুক্ত শিক্ষাক্ষেত্র ও কর্মপরিবেশ গড়ে তুলতে যৌন নিপীড়ন বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচার অভিযানের অংশ হিসেবে হলে-হলে যৌন নিপীড়ন বিষয়ে সচেতনতামূলক আলোচনাসভা, তথ্য অধিকার বিষয়ে ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে র্যালি, লিফলেট বিতরণ, মনের স্বাস্থ্য বিষয়ে কর্মশালা, র্যাগিং বিরোধী সভা, প্রশিক্ষণ কর্মশালা, আন্তর্জাতিক সেমিনার, বৃক্ষরোপন কর্মসূচি ইত্যাদি কার্যক্রম নিয়মিতভাবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এতোসব প্রাপ্তির মধ্যেও লুকিয়ে আছে অনেক না পাওয়া। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মতামত গ্রহণ করে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টি বাকী সময় থেকে অনেক ধীর গতিতে চলছে। বিশেষ করে করোনা পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকটি বিভাগে নতুন করে সেশনজটের সৃষ্টি হয়েচে এবং আগে থেকে থাকা জট গুলো আরো তীব্র হয়েছে। যার ফলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৭ সালে নতুন আসা বেশ কয়েকটি বিভাগে এখনো পর্যন্ত শিক্ষক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ক্লাশরুম, বেঞ্চের সংকট গুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকে করছে ক্ষুন্ন। যা নাকি বারবার তদবীর দিয়েও কোনো সমাধান আসছেনা। এছাড়া আবাসন ব্যবস্থার ঘাটতিতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বাইরের মেসে অবস্থান করে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে শিক্ষার্থীরা মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থাকা ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত নয় প্রশাসন। শহরে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য বাসের ব্যবস্থা রয়েছে তবে তাও পর্যাপ্ত নয়। সবগুলো বিভাগে ক্লাশ পরীক্ষা একসাথে শুরু হলে বেশীরভাগ বাসেই সিট পাওয়া যায়না। এক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের আলাদা সুবিধা দেয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের বেশীর ভাগ গাড়ীগুলো সিট ফাকা রেখেই চলাচল করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মতে কর্মকর্তাদের সংখ্যার থেকে বাসের সংখ্যা বেশী তাদের। তাছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্য দেয়া বাস গুলোর অধিকাংশেরি ফিটনেস নেই। কিন্তু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসে সেইরকম কোনো ঝামেলা নেই।
৪৪ বছর পরও বিশ্ববিদ্যালয়টির কোনো ডিজিটালাইজেশন নেই। প্রধাণমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজিটালাইজেশন চাওয়া যেনো অপরাধ। এখনো শিক্ষার্থীদের ফর্মফিলাপের টাকা জমা দিতে হয় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে এনালগ স্লিপের মাধ্যমে। যে স্লিপটি হারালে নেই কোনো পাওয়ার সম্ভাবনাও। ফলে পুনরায় টাকা জমা দিয়েই মেলে গ্রহণযোগ্যতা। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটের ইন্টারফেসও যুগোপযোগী নয়। মেগাপ্রেজেক্টের কাজ নিয়েও শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই মেগাপ্রজেক্টের কোনো সুফল ভোগ করতে পারবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়।
প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির এ হিসাব নিকাশ চলতেই থাকবে। তবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার সুদক্ষ কারিগর হিসেবে মানবিক গুণাবলীসমৃদ্ধ মানসম্পন্ন শিক্ষার্থী তৈরির মহান ব্রত নিয়ে বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ মাহবুবুর রহমান এবং ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া’র নেতৃত্বে আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রত্যাশাই থাকবে।
মন্তব্য