আটকে গেল ১০ লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা

করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ১৩২ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার পর আবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চলমান পরীক্ষা স্থগিত করায় বিপাকে পড়েছেন লাখ লাখ শিক্ষার্থী। বেশি সমস্যায় পড়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ধকল কিছুটা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ফের বড় ধরনের সেশনজটের আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, তাদের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে বর্তমানে অনার্স পার্ট-৪-এর আর তিনটি পরীক্ষা বাকি রয়েছে। এতে পরীক্ষার্থী দুই লাখ ৩৬ হাজার। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে অনার্স পার্ট-২-এর পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। এতে পরীক্ষার্থী চার লাখ ৩৫ হাজার। এ ছাড়া আগামী মাসের শুরুতেই এলএলবি পার্ট-২-এর মৌখিক, বিএড ও এমএডের মৌখিক পরীক্ষা, বিবিএ পঞ্চম ও সপ্তম সেমিস্টারের পরীক্ষা, সিএসই দুই বর্ষের পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত করায় বিপাকে পড়েছেন হাজারো শিক্ষার্থী। গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর শুরু হয় ২০১৬-১৭ সেশনের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা। এরই মধ্যে ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে। বাকি তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা ২৩, ২৭ ও ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। অর্থাৎ তিন বছর অপেক্ষা শেষে এই মাসেই শেষ হতো তাঁদের স্নাতক পরীক্ষা। কিন্তু এই পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার প্রহর আরো দীর্ঘ হলো। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালে আমরা সরাসরি পরীক্ষা নিয়েছি। কারণ তখন করোনা সংক্রমণ কম ছিল। এখন ঊর্ধ্বগতি। এ অবস্থায় পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি বাড়বে। তবে আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সংক্রমণ কমে এলে আমরা অন্তত পরীক্ষা শুরুর চেষ্টা করব। এখন আমাদের সুবিধা হলো, শিক্ষকরা শতভাগ ও শিক্ষার্থীদের ৬০ শতাংশ টিকা নেওয়া। ’
গত শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের সিদ্ধান্ত নিজেদেরই নিতে বলা হয়। এরপর থেকে একে একে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে সরাসরি ক্লাস বন্ধের ঘোষণা আসতে থাকে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাত কলেজের ব্যাপারে কোনো ঘোষণা হয়নি। গতকাল সকালে পরীক্ষা দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা স্থগিতের খবর পান। এতে তাঁরা কিছু সময়ের জন্য নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেন।
জানা গেছে, রাজধানীর সাত কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালে। করোনার কারণে দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গত বছরের শেষের দিকে পরীক্ষা শুরু হয়। গতকাল ছিল তাঁদের শেষ পরীক্ষা। কিন্তু এই একটি পরীক্ষা আটকে যাওয়ায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্ন আটকে গেল।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডিগ্রির একটি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি রয়েছে। কিছু বর্ষের কিছু মৌখিক পরীক্ষাও চলছিল। এগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে নেওয়া গেলে শিক্ষার্থীদের আটকে থাকতে হবে না। যেসব পরীক্ষা চলছে, সেগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে নেওয়া যায় কি না, সে ব্যাপারে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব দেব। ’
ফেনী সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহ আলম এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অনুষ্ঠেয় পরীক্ষাগুলো চলমান রাখা প্রয়োজন ছিল। অনার্স চতুর্থ বর্ষের তিনটি, ডিগ্রির একটি পরীক্ষা বাকি ছিল। আর অনার্স প্রথম বর্ষের ব্যাবহারিক পরীক্ষা এ মাসেই হতো। অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে এসব পরীক্ষা শেষ হয়ে যেত।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রায় ৯ মাস পর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেওয়া হয়েছিল গত বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। আর এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও বছরের মাঝামাঝি নেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। সে অনুযায়ী সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হচ্ছিল। কিন্তু নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করায় এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও ফের অনিশ্চয়তায় পড়ল।
আসন কমলেও কিছু বিভাগে বাড়বে

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসনসংখ্যা প্রায় ১ হাজার কমিয়ে ৬ হাজারে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই লক্ষ্যে বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলোর মতামত নিয়ে একটি সুপারিশ প্রণয়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটি। সেখানে ৪৪টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে আসন কমানো এবং ১৫টিতে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ভর্তি কমিটি ও একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনার পর আসন কমানোর বিষয়টি চূড়ান্ত হবে সিন্ডিকেটে। কর্তৃপক্ষ বলছে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনভিত্তিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে বেকারত্ব কমিয়ে আনার জন্য আসন কমানোর উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ছিল ৭ হাজার ১২৫টি। সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে আসনসংখ্যা হবে ৬ হাজার ১১০। অর্থাৎ ১ হাজার ১৫টি আসন কমবে।
সুপারিশ অনুযায়ী, কলা অনুষদে ৫১৫টি কমে আসনসংখ্যা ১ হাজার ৩৬০টি, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ২০০ আসন কমে ১ হাজার ৫০টি, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ১৫৭টি কমে ১ হাজার ৬৫টি, জীববিজ্ঞান অনুষদে ৯০টি কমে ৪৯৫টি, আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষতে ১০টি কমে ২৩৫টি, চারুকলা অনুষদে ৫টি আসন কমে ১৩০টি, আইন অনুষদে ২০টি কমে ১১০টি এবং ১০টি ইনস্টিটিউটে ৪০টি আসন কমিয়ে ৮৭৫ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
অন্যদিকে বিজ্ঞান অনুষদে আসনসংখ্যা ২টি বেড়ে ৪৭০টি, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদে ১০টি আসন বাড়িয়ে ২৪৫টি এবং ফার্মেসি অনুষদে ১০টি বাড়িয়ে ৭৫ আসন করা হতে পারে।
যেসব বিভাগে আসন কমতে পারে সুপারিশ অনুযায়ী, কলা অনুষদের বাংলা বিভাগে ১২টি, ইংরেজিতে ৩০টি, আরবিতে ৫০টি, ফারসি ভাষা ও সাহিত্যে ২৫টি, উর্দুতে ৭০টি, সংস্কৃতে ২৫টি, পালি অ্যান্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজে ৪০টি, ইতিহাসে ২০টি, দর্শনে ৫০টি, ইসলামিক স্টাডিজে ৮৫টি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে ৫০টি, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় ১০টি, ভাষাবিজ্ঞানে ২০টি, সংগীতে ২০টি, বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতিতে ৪০টি আর নৃত্যকলা বিভাগে ৫টি আসন কমতে পারে।
ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের নয়টি বিভাগের মধ্যে আটটিতেই আসন কমানোর সুপারিশ করেছে ডিনস কমিটি। এর মধ্যে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং ও ফিন্যান্সে ৩০টি করে আসন কমিয়ে ১৫০ এবং ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ও ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টে ১৫টি করে আসন কমিয়ে ১০০ করার সুপারিশ করা হয়েছে। ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগে ৫০টি আসন কমিয়ে ১০০ করার কথা বলা হয়েছে।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ৫০টি, আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ২০টি, সমাজবিজ্ঞানে ৩৫টি, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় ৬টি, লোকপ্রশাসনে ২০টি, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়নে ২০টি, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজে ৫টি, অপরাধবিজ্ঞানে ১০টি, যোগাযোগ বৈকল্যে ১০টি আর জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগে ১০টি আসন কমানোর কথা বলা হয়েছে।
জীববিজ্ঞান অনুষদের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগে ২০টি, উদ্ভিদবিজ্ঞানে পাঁচটি, প্রাণিবিদ্যায় ২০টি আর মনোবিজ্ঞানে ৫০টি আসন কমতে পারে। আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে ৪০টি আসন কমিয়ে ৮০ করা হতে পারে। আইন অনুষদের আইন বিভাগে ২০টি আসন কমিয়ে ১১০ করার কথা বলা হয়েছে। চারুকলা অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের আসনসংখ্যা ৫টি কমিয়ে ২৫টি করার সুপারিশ করা হয়েছে।
ইনস্টিটিউটগুলোর মধ্যে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ৪০টি আসন কমিয়ে ১২০টি, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ৫টি কমিয়ে ১০০ এবং আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ২০টি আসন কমিয়ে ১৪০ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
যেসব বিভাগে আসন বাড়তে পারে থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজে সাতটি, অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগে ১৫টি, অর্থনীতি বিভাগে দুটি, পপুলেশন সায়েন্সেসে ১৫টি, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে ১২টি, জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগে ৫টি, পরিসংখ্যান বিভাগে ২টি, সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগে ১৫টি, দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনায় ১০টি, আবহাওয়াবিজ্ঞানে ৫টি, নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৫টি, রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৫টি এবং ফার্মেসি বিভাগে ১০টি আসন বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ৫টি আসন বাড়িয়ে ৪০টি আর তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটে ২০টি বাড়িয়ে ৫০টি করার সুপারিশ করা হয়েছে। বাকি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলোতে আসন অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
যা বলছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসনব্যবস্থা, গ্রন্থাগার-সুবিধা, শ্রেণিকক্ষ ও পরিবহন থেকে শুরু করে সর্বত্র অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর চাপ রয়েছে। গত দুই দশকে অপরিকল্পিতভাবে নতুন নতুন বিভাগ ও ইনস্টিটিউট খোলা এবং একই অনুপাতে অবকাঠামো না বাড়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। অবকাঠামো বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘ভৌত মহাপরিকল্পনা’ প্রস্তুত করেছে। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ভৌত মহাপরিকল্পনার আগে একটি ‘একাডেমিক মহাপরিকল্পনা’ প্রস্তুতের আহ্বান জানান। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আসনসংখ্যা কমানোর উদ্যোগ নেয়।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনভিত্তিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে বেকারত্ব কমিয়ে আনার জন্য আসনসংখ্যা কমানোর উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পৃথিবীর মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ১০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকেন। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক রয়েছেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ২০ জনের বেশি শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষকের ব্যবস্থা আছে। অনুপাতটি ১৬: ১- এ নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থাৎ ১৬ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকবেন।
বন্ধের সময় যে ১১ দফা নির্দেশনা মানতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে

করোনার সংক্রমণের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীর শ্রেণি কার্যক্রম আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হলেও এই সময়ে অনলাইন বা ভার্চ্যুয়ালি প্ল্যাটফর্মে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এই সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ও চালু থাকবে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালিত হবে। জরুরি প্রয়োজনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষক-কর্মচারীদের দায়িত্বে নিয়োজিত রাখতে পারবেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার এক দিন পর আজ শনিবার এ বিষয়ে এসব বিষয়ে মোট ১১ দফা নির্দেশনা জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে প্রায় দেড় বছর বন্ধের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছিল। এরই মধ্যে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে চার মাস পর আবারও বন্ধের ধারায় ফিরল দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আপাতত আগামী দুই সপ্তাহের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে গতকাল শুক্রবার সকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ নতুন বিধিনিষেধের কথা জানায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এখন এই বন্ধের মধ্যে কীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলবে, তার জন্যই ১১ দফা নির্দেশনা দিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নির্দেশনার মধ্যে আরও রয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা কার্যক্রম চলমান থাকবে। এ ক্ষেত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস ও উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস স্থানীয় প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের সঙ্গে সমন্বয় করবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সময় শ্রেণিকক্ষ, গ্রন্থাগার, গবেষণাগারসহ প্রতিষ্ঠানের সব বিদ্যুৎ, টেলিফোন, ইন্টারনেট, পানি ও গ্যাস–সংযোগ নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এই সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও সামগ্রিক নিরাপত্তার বিষয়টির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
এ ছাড়া যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাস বা ছাত্রীনিবাসে বৈধ আবাসিক শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছে, তাদের সুবিধার্থে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেগুলো খোলা থাকবে। তবে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন সব দপ্তর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত সব কর্মকর্তা, শিক্ষক ও কর্মচারীর অবশ্যই টিকা সনদ গ্রহণ করতে হবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান ক্রীড়া প্রতিযোগিতা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকে শাবিপ্রবির আন্দোলন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল। সেই বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে আলোচনা চলবে। চলমান সংকট নিয়ে আরও আলোচনা করতে হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের অনশন ভেঙে আলোচেনায় আসতেও আহ্বান জানান।
আজ শনিবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজধানীর হেয়ার রোডে মন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ধলেশ্বরীতে এ বৈঠক শুরু হয়। প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টা ধরে চলে এ বৈঠক। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে সৃষ্ট উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সব সমস্যার সমাধান আলোচনা। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গেও আরও আলোচনা হবে। সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আজ শিক্ষক প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন। আমি তাদের কথা শুনেছি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও আলোচনা করতে চেয়েছি, তারা আলোচনা করতে রাজিও হয়েছিল। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ করে তারা আলোচনা করতে আর চায়নি।
ডা. দীপু মনি বলেন, প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আবার আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমি এই মুহূর্তে অসুস্থতার কারণে শাবিতে যেতে পারছি না। শিক্ষার্থীরা যদি আলোচনায় রাজি থাকে, তাহলে সেখানে আমি আমার প্রতিনিধি পাঠাব।
শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে কোনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে কি-না, তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ছাত্রীদের অনশনে অসুস্থ হওয়া এবং শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা- কোনোটিই কাম্য নয় আমাদের জন্য।
বৈঠকে শাবিপ্রবি শিক্ষক ছাড়াও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানও উপস্থিত ছিলেন। তবে বৈঠকে কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন না।
স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলেও অনলাইনে ক্লাস চলবে

দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ফের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফের বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম দফায় স্কুল-কলেজ বন্ধের ঘোষণা রয়েছে। তবে এই সময়ে অনলাইনে শ্রেণি কার্যক্রম চালু থাকবে বলে জানিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
শনিবার (২২ জানুয়ারি) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (রুটিন দায়িত্ব) শাহেদুল খবির চৌধুরীর স্বাক্ষর করা ১১ দফা নির্দেশনা থেকে এ তথ্য জানা যায়।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১২-১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া, অধিদপ্তরের অধীন সকল দপ্তর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল কর্মকর্তা, শিক্ষক ও কর্মচারীর অবশ্যই টিকা সনদ গ্রহণ করতে হবে।
১১ দফা নির্দেশনা হলো:
১. আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত সশরীরে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
২. এ সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বাস্তবতার ভিত্তিতে অনলাইন/ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে শিখন-শেখানা কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।
৩. যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১২-১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের কোভিড ১৯ ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চলমান থাকবে।
৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধকালীন শ্রেণি কক্ষ, গ্রন্থাগার, গবেষণাগারসহ প্রতিষ্ঠানের সকল বিদ্যুৎ, টেলিফোন, ইন্টারনেট পানি এবং গ্যাস সংযোগ নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
৫. এ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও সামগ্রিক নিরাপত্তার বিষয়টির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
৬. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান প্রতিষ্ঠানের জরুরি প্রয়োজনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষক ও কর্মচারীদের দায়িত্বে নিয়োজিত রাখতে পারবেন।
৭. যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাস/ছাত্রীনিবাসে বৈধ আবাসিক শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছে তাদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ছাত্রাবাস/ছাত্রীনিবাসসমূহ খোলা থাকবে। তবে সকলকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
৮. অধিদপ্তরের অধীন সকল দপ্তর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল কর্মকর্তা, শিক্ষক ও কর্মচারীর অবশ্যই টিকা সনদ গ্রহণ করতে হবে।
৯. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যালয় যথারীতি চালু থাকবে; সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
১০. জাতীয় স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি ক্রীড়া সমিতির আয়োজনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান ক্রীড়া প্রতিযোগিতা পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।
১১. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।
এর আগে, দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে গতকাল শুক্রবার আগামী ১৪ দিনের জন্য স্কুল-কলেজ এবং সমমনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এদিন এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে।
মন্তব্য