রাজধানীর কুরবানি পশুর হাটগুলো গরু-ছাগল-মহিষসহ বিভিন্ন কুরবানিযোগ্য পশুতে ভরে উঠেছে। স্বল্পপরিসরে বিক্রিও শুরু হয়েছে। তবে পুরোপুরি জমে ওঠেনি।
মঙ্গলবার থেকে বিক্রি পুরোপুরি জমে উঠবে এমনটাই আশা করছেন হাটের ইজারাদার ও বিক্রেতারা। ঢাকা সিটি করপোরেশনের ইজারার নিয়ম অনুযায়ী মঙ্গলবার থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে হাট শুরু হচ্ছে। এসব হাটের সার্বিক তদারকির জন্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। মাঠে থাকবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকার পূর্বাচল ৩০০ ফুট সড়ক নামে পরিচিত এক্সপ্রেসওয়ের পাশে মস্তুল এলাকায় অস্থায়ী কুরবানি পশুর হাট বসেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে পশু নিয়ে আসছেন বিক্রেতারা। স্থানীয় কিছু লোকজন হাটে এসেছেন গরু দেখতে। এর মধ্যে কিছু গরু বিক্রিও হয়েছে।
কুষ্টিয়া সদর থেকে ১৪টি গরু এনেছেন বারেক মো. হেলাল উদ্দিন। তিনি জানান, গত বছরও এ হাটেই এসেছিলেন। এবার এক ট্রাকে ১৫টি গরু এনেছেন। তবে এখনো কোনো গরু বিক্রি হয়নি।
রাজধানীর হাজারীবাগে দেশি গরু উঠেছে অনেক। উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছে মাঝারি থেকে বড় আকারের গরু। তবে লাগাতার বৃষ্টির দাপটে এখনো জমে ওঠেনি বেচাকেনা। হাটে এসেছেন অনেক ব্যাপারী।
সরেজমিন দেখা যায়, লেদার ইনস্টিটিউট কলেজসংলগ্ন সড়ক, বেড়িবাঁধ, বউবাজার, কালুনগর, হাজারীবাগ কাঁচাবাজার, ঢাকা ট্যানারি মোড়, ম্যাটাডোর ফ্যাক্টরি সংলগ্ন এলাকা ও সিকদার মেডিকেল পর্যস্ত বিস্তৃত এলাকায় গরুর অস্থায়ী শেড গড়ে উঠেছে।
রংপুরের পীরগাছা থেকে হাজারীবাগ হাটে আসা হায়দার বলেন, ১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে এই হাটে আসি। এবার ৩৭টি গরু এনেছি, দাম ৭০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা।
ঝিনাইদহের ছন্টু ব্যাপারী বলেন, তিন বছর ধরে লালনপালন করা একটি গরু এনেছি। তিন লাখ টাকা হলে বিক্রি করব। ক্রেতা আসছে না বৃষ্টির কারণে। কেউ কেউ অল্প দাম বলে চলে যাচ্ছে।
আমুলিয়া মডেল টাউন ও সারুলিয়া হাটে স্থল ও নদীপথে প্রচুর গরু আসছে। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা বিক্রেতারা কিছুতেই দাম ছাড়তে রাজি নন। স্থানীয় ক্রেতাসাধারণ বিচ্ছিন্নভাবে ঘুরাফেরা করছেন হাটে। দেখছেন বিভিন্ন প্রজাতির গরু ও ছাগল।
সরেজমিন দেখা যায়, এখানে নজর কাড়ছে দেশি শাহিওয়াল, ব্রাহামা, নেপালিসহ ভারতীয় বৈল জাতের বড় বড় গরু। পাশাপাশি রয়েছে ২ থেকে ৪ দাঁতওয়ালা ছোট-মাঝারি গরু।
ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু-ছাগল নিয়ে ব্যাপারীরা আসছেন রাজধানীর শাহজাহানপুর পশুর হাটে। শুরু হয়েছে বেচাকেনাও। ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি। ছোট গরুতে নজর বেশি ক্রেতার। তবে বড় গরু দেখলে দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। দাম জিজ্ঞাসা করছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, গরু-ছাগলে ভরে গেছে পুরো মাঠ। ব্যস্ত সময় পার করছেন হাসিল ঘরের লোকজন।
রাজধানীর গাবতলী কুরবানির হাটের ছাউনিগুলো পশুতে ভরে উঠেছে। একের পর এক ট্রাকভর্তি পশু গাবতলীতে ঢুকছে। আরও নতুন শেড তৈরির কাজ চলছে। গাবতলী পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে পর্যাপ্ত পশু রয়েছে এখানে। ব্যাপারীরা বৃষ্টি আর কাদাপানির মধ্যে গরু খুঁটিতে বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাটে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। ২ মন ওজনের গরু ৬৫ থেকে ৭০ হাজার এবং ৪ মন ওজনের গরু ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মিরপুর ১ নাম্বারের বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বলেন, কয়েকদিন ধরে হাট ঘুরে দেখছি। আগে দাম একটু বেশি মনে হলেও এখন কমছে।
মুন্না অ্যাগ্রোফার্মের মালিক ইমরান এসেছেন সাভার থেকে। তিনি বলেন, হাটে ৪০টি গরু এনেছি। আরও ৬৫টি গরু আমিনবাজারের পথে। এ বছর গরুর দাম গতবারের চেয়ে একটু বেশি হবে। কারণ আমদানি কম। আর আওয়ামী লীগ সমর্থিত যেসব খামারি (ব্যবসায়ী) ছিল, ৫ আগস্টের পর তারা পালিয়েছে। ওইসব খামারের গরুর কোনো হদিস নেই।
মন্তব্য