ঢাকা, সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫ ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২
 
শিরোনাম

ছাগলকান্ডের পর এনবিআরের পদ হারালেন মতিউর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৩ জুন, ২০২৪ ১৪:২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
ছাগলকান্ডের পর এনবিআরের পদ হারালেন মতিউর রহমান

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমানকে তার পদ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখান থেকে সরিয়ে তাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে।

রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মকিমা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ জারি করা হয়।

চাকরি জীবনের প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে এবারের কুরবানির ঈদে ছাগলকাণ্ডে ফেঁসে গেছেন প্রভাবশালী এই সরকারি কর্মকর্তা। কুরবানির জন্য ১২ লাখ টাকায় ছেলের কেনা ছাগল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে বাবার পরিচয়ে টান পড়ে। ছাগল ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন খামার থেকে ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে উঠে আসে।

এর পর থেকে মতিউর রহমানের ছেলের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন; মতিউর রহমান ও পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলো বাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে সম্পত্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। নির্দিষ্ট বেতনের চাকরি করলেও আয় করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা; যা অনেকটা সিনেমার কাহিনিকেও হার মানায়।

নিজের নামে তেমন সম্পদ না করলেও দুই স্ত্রী, ৫ সন্তান, দুই ভাই, শ্যালক-শ্যালিকাদের দিয়েছেন দুহাত ভরে। বড় স্ত্রী লায়লা কানিজের জন্য নরসিংদীতে করেছেন নজরকাড়া বাড়ি। ছোট স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলীর গ্রামের বাড়ি ফেনীতে তৈরি করে দিয়েছেন বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স। দুই পরিবারের ব্যবহারের জন্য মার্সিডিস, বিএমডব্লিউ, প্রাডো, মিতসুবিশিসহ বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের নয়টি গাড়ি কিনেছেন।

টাকার জোরে মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজকে তিতুমীর কলেজের শিক্ষক থেকে বানিয়েছেন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান। এরপর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সেখানে তিনি জায়গা-জমি দখল করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। সেখানে লায়লা কানিজের জন্য বিশাল বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি বানিয়ে দিয়েছেন। লায়লা কানিজ একেক সময় একেক ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে চলাচল করেন। কম যান না দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতারও। লায়লা কানিজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্বামীর কাছ থেকে সম্পদ বাগিয়ে নিয়েছেন শাম্মী। নিজের বাবার বাড়ি ফেনীতে তৈরি করে নিয়েছেন বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স।

মতিউর রহমান কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সভাপতি। পাশাপাশি সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদে আছেন।

প্রাসঙ্গিক
    মন্তব্য

    ৩১ লাখ টাকা দামের ঘড়ি পরেন মতিউর, তার সম্পদের পরিমান কত?

    নিজস্ব প্রতিবেদক
    ২২ জুন, ২০২৪ ১৪:৩
    নিজস্ব প্রতিবেদক
    ৩১ লাখ টাকা দামের ঘড়ি পরেন মতিউর, তার সম্পদের পরিমান কত?

    কোরবানির ঈদে ১৫ লাখ টাকা দামের ‌`উচ্চ বংশীয়' ছাগল কিনতে গিয়ে ভাইরাল হন মুশফিকুর রহমান ওরফে ইফাত। প্রশ্ন ওঠে ইফাত এত টাকা পান কোথায়? কী তার আয়ের উৎস? অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ইফাতের এই টাকার উৎস তার বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. মতিউর রহমান। গত বছরও ঈদুল আজহার সময় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ছয়টি পশু কিনেছিলেন ইফাত। এই ছয় পশু কিনতে তার খরচ হয়েছিল প্রায় ৩০ লাখ টাকা।

    সময় গড়াচ্ছে আর গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে এনবিআর কর্মকর্তা মতিউরের একের পর এক সম্পদের তথ্য। জানা গেছে ৩১ লাখ টাকার বেশি দামের রোলেক্স ঘড়ি পরেন মতিউর। রাজস্ব আয় বাড়ানোর গুরু দায়িত্বে থেকে সরকারকে রাজস্ববঞ্চিত করে গুছিয়েছেন নিজের আখের।

    কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদের প্রায় সবই গড়েছেন স্ত্রী-সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের নামে। কিনেছেন দামি গাড়ি, বাড়ি। তবে নিজেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখতেই নানা ধরনের কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।

    এদিকে, চাকরি জীবনের প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে অতিসম্প্রতি ছাগলকাণ্ডে ফেঁসে গেছেন প্রভাবশালী এই সরকারি কর্মকর্তা। কুরবানির জন্য ১৫ লাখ টাকায় ছেলের কেনা ছাগল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে বাবার পরিচয় প্রকাশ পায়।

    মিডিয়ার সামনে দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান মুশফিকুর রহমান ইফাতের সঙ্গে তার সম্পর্ক অস্বীকার করেন। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই তার সাজানো নাটক ফাঁস হয়ে যায়। এক পর্যায়ে পরিবারের সম্মিলিত সিদ্ধান্তেই দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলী, ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ও ইরফান দেশত্যাগ করে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। বুধবার চট্টগ্রাম হয়ে কুয়ালালামপুরের উদ্দেশে দেশত্যাগ করেন তারা। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে উল্লিখিত তথ্য জানা গেছে।

    এদিকে, রাজধানীর ধানমন্ডির ৮ নম্বর রোডে ৪১/২ নম্বর ইম্পেরিয়াল সুলতানা ভবনের পাঁচতলায় শুক্রবার (২১ জুন) গিয়ে জানা যায়, ইফাতের পরিবার সেখানে নেই। বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী জানান, মঙ্গলবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আর ফিরে আসেননি। যে বাড়িতে ইফাতের জন্ম, সেই বাড়ি ছেড়ে তিনি কোথায় গেছেন তা জানা নেই। ভবনটির পাঁচ তলার পুরো ফ্লোর মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতারের নামে কিনে দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে জানা যায়।

    একটি সূত্র জানায়, ইফাতের ছাগলকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ধানমন্ডির বাসা ছেড়ে কাকরাইলে নিজেদের আরেকটি ফ্ল্যাটে গিয়ে ওঠেন ইফাত, তার মা শাম্মী আখতার ও ছোট ভাই। গতকাল দুপুরে কাকরাইলে স্কাইভিউ মমতা সেন্টার নামে ওই ভবনে গিয়ে জানা যায়, ভবনের ৭/ডি নম্বর ফ্ল্যাটটি তাদের। ফ্ল্যাটের নিরাপত্তাকর্মী রবিউল ইসলাম জানান, বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত তারা এ বাসায় ছিলেন। এই ফ্ল্যাটে ইফাত, তার মা ও ছোট ভাই মাঝেমধ্যে থাকেন। সেখানে আসেন মতিউর রহমান।

    বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৭/এ নম্বর রোডের ৩৮৪ নম্বর বাড়িতে ৫ কাঠা আয়তনের প্লটে তৈরি করা সাততলা ভবনের এক ফ্লোরে বাস করেন মতিউর রহমান ও তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকি। এই বাড়িতে মতিউর, তার স্ত্রী ও ছেলের ৫টি গাড়ি রাখা।

    ইফাতের মা শাম্মী আখতার ওরফে শিবু মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী। শাম্মীর বাবার বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। শাম্মী ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য (ফেনী-২) নিজাম উদ্দীন হাজারীর আত্মীয়।

    ইফাতের বাবা মতিউর রহমান এনবিআরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালেরও প্রেসিডেন্ট। একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও শেয়ারবাজারে প্লেসমেন্ট শেয়ারের বড় ব্যবসায়ী তিনি। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভিতে (১৯ জুন প্রচারিত) এক সাক্ষাৎকারে মতিউর রহমান বলেছেন, তিনি বিভিন্ন কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ওই কোম্পানির মালিকদের কাছ থেকে কম দামে কিনে নিয়ে পরে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে অনেক মুনাফা করেছেন।

    শুরুতে একাধিকবার গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলেও অবস্থা বেগতিক দেখে এখন মতিউর রহমান নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন। বন্ধ করে রেখেছেন মোবাইল ফোনও। কারণ ইতোমধ্যে বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের নজরেও এসেছে। তারা এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালাবেন বলে জানিয়েছেন।

    প্রাসঙ্গিক
      মন্তব্য

      নামাজ-পড়ালেখা নিয়ে শাসন করায় ফাঁস নিল কিশোরী

      নিজস্ব প্রতিবেদক
      ২১ জুন, ২০২৪ ১৮:৫৫
      নিজস্ব প্রতিবেদক
      নামাজ-পড়ালেখা নিয়ে শাসন করায় ফাঁস নিল কিশোরী

      নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ নোয়াখালীর চাটখিল থেকে কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

      নিহত নুরজাহান আক্তার পিও (১৭) উপজেলার চাটখিল পৌরসভার ৬নম্বর ওয়ার্ডের সেন্টাল হাসপাতাল এলাকার আব্দুল জব্বারের মেয়ে।

      শুক্রবার (২১ জুন) সকালের দিকে মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার চাটখিল পৌরসভার ৬নম্বর ওয়ার্ডের সেন্টাল হাসপাতাল সংলগ্ন তছলিম মিয়ার ভবনে এই ঘটনা ঘটে।

      পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পিও চলতি বছর স্থানীয় ভীমপুর হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার মা তাকে মৌখিক ভাবে নামাজ ও পড়ালেখা না করায় শাসন করে। এরপর সে অভিমান করে পরিবারের সদস্যদের অগোচরে নিজ শয়ন কক্ষে গিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে পরিবারের সদস্যরা তার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়।

      চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা নেওয়া হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

      প্রাসঙ্গিক
        মন্তব্য

        ‘তুমি ঠকিয়েছো আমাকে, শেষ করে দিলে সবকিছু’ লিখে কলেজছাত্রীর আত্মহত্যা

        নিজস্ব প্রতিবেদক
        ১৬ জুন, ২০২৪ ১৫:৫৭
        নিজস্ব প্রতিবেদক
        ‘তুমি ঠকিয়েছো আমাকে, শেষ করে দিলে সবকিছু’ লিখে কলেজছাত্রীর আত্মহত্যা

        সাতক্ষীরার তালা উপজেলার লাউতাড়া গ্রামে চিরকুট লিখে মৃত্যুর জন্য প্রেমিককে দায়ী করে আত্মহত্যা করেছেন প্রিয়াংকা সরকার নামে এক কলেজছাত্রী। ঘটনার পরপরই বাড়ি থেকে পালিয়েছেন প্রেমিক রিপন।

        শনিবার (১৫ জুন) সকালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে, শুক্রবার (১৪ জুন) রাতে প্রিয়াংকার বাবা বাদী হয়ে প্রেমিক রিপন ও তার বাবা বিকাশ সরকারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। বিকেলে প্রিয়াংকার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

        সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার হাতবাস গ্রামের দরিদ্র মিঠুন সরকারের মেয়ে প্রিয়াংকা সরকারের সঙ্গে একই গ্রামের খ্রিস্টন সম্প্রদায়ের হাউজ চার্চ পালক বিকাশ সরকারের ছেলে রিপন সরকারের দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক ছিল। রিপন ও প্রিয়াংকা উভয়ে সাতক্ষীরায় অনার্সে পড়তো। এই প্রেমের বিয়েতে প্রিয়াংকার পরিবার রাজি হলেও প্রেমিক রিপনের বাবা পালক বিকাশ সরকার আপত্তি তোলেন। একপর্যায়ে রিপনও প্রেমের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চান। এরই জেরে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রিয়াংকা সরকার নিজ ঘরের মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর জন্য প্রেমিক রিপনকে দায়ী করে একটি চিরকুট লিখে যান প্রিয়াংকা।

        চিরকুটে লেখা ছিল- ‘তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে ছেড়ে যাবে না, তা যায় হয়ে যাক। তুমি ঠকিয়েছো আমাকে। তুমি শেষ করে দিলে সবকিছু। আমার মৃত্যুর জন্য তুমি দায়ী।’ আরো লেখা ছিল ‘তোমার মতো কেউ ভালোবাসবে না আমাকে। আবার তোমার মতো ক্ষতিও করবে না কেউ। বাই (ভালো থেকো) (রিপন প্রিয়াংকা)।’

        নোটবুকের ওই একই পৃষ্ঠায় চিরকুটের ওপরের অংশে রিপন নিজ হাতে প্রিয়াংকাকে কিছু নির্দেশনা লিখে দেন। যেখানে রিপন প্রিয়াংকার উদ্দেশ্যে লেখেন, ‘১। যারা ব্যাড তাদের সঙ্গে চলাফেরা করা যাবে না, ২। এমন কোনো বান্ধবী থাকবে না যে খারাপ, ৩। ক্লাস টাইম শেষ হলে আমার ডিপার্টমেন্ট এর কাছে আসবা।’ লেখার শেষাংশে রয়েছে রিপনের সই।

        তালা থানার ওসি মো. মমিনুল ইসলাম জানান, আত্মহত্যার ঘটনায় মেয়ের বাবা মিঠুন সরকার বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে তালা থানায় রিপন ও তার বাবা বিকাশ সরকারের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে একটি মামলা করেছেন।

        তিনি আরো বলেন, আত্মহত্যার পরপরই রিপন ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে এজাহারনামীয় আসামিদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত। শনিবার সকালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

        প্রাসঙ্গিক
          মন্তব্য

          ঢাবিতে ভর্তির যোগ্যতাই ছিল না, তবুও ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন বেনজীর!

          নিজস্ব প্রতিবেদক
          ১৬ জুন, ২০২৪ ১৪:৫৯
          নিজস্ব প্রতিবেদক
          ঢাবিতে ভর্তির যোগ্যতাই ছিল না, তবুও ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন বেনজীর!

          পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি নেন। এরপর থেকে নিজের নামের আগে ‘ডক্টর’ শব্দটি যুক্ত করেন। যদিও ডিগ্রিটি নেওয়ার প্রোগ্রামে ভর্তির যোগ্যতাই ছিল না তার। শর্ত শিথিল করে তাকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া তার অভিসন্দর্ভটি ডক্টরেট ডিগ্রির সমমানের ছিল না।

          ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) প্রোগ্রাম থেকে বেনজীর আহমেদ ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েছেন। সেখানে ভর্তির জন্য স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হয়। শিক্ষাজীবনের সব পাবলিক পরীক্ষায় কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হয়। বেনজীরের তা ছিল না।

          বেনজীরের ভর্তির ক্ষেত্রে মৌলিক শর্তগুলো শিথিল করা হয়েছিল ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সুপারিশে। তিনি ছিলেন বেনজীরের ‘ডক্টরেট’ প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক। ২০২০ সালের মে মাসে তিনি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান হন। এখনও সেই পদেই রয়েছেন। আর ভর্তি ও ডিগ্রি পাওয়ার সময় বেনজীর ছিলেন র‍্যাবের মহাপরিচালক। ভর্তির শর্ত শিথিলের ক্ষেত্রে বেনজীরের পদ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল।

          ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ) আগে থেকে ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) প্রোগ্রাম চালু ছিল। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ একই প্রোগ্রাম চালুর অনুমোদন পায় ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে।

          ২০১৪ সালের ২৪ জুন ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সভায় বেনজীরের ডিবিএ ডিগ্রির আবেদন গ্রহণ করা হয়। অনুষদটির ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধীনে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে তিনি ডিবিএ প্রোগ্রামে যোগদান করেন। তিনি ছিলেন ওই প্রোগ্রামের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়া নিয়ে ওই সময় র‍্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, বেনজীর প্রথম ব্যাচের প্রথম শিক্ষার্থী হিসেবে ডিগ্রিটি অর্জন করেন।

          বেনজীরের গবেষণার বিষয় ছিল, ‘আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে বাংলাদেশের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর অবদান’।

          বেনজীর আহমেদের ডিবিএ ডিগ্রির আবেদন অনুযায়ী, ১৯৭৮ সালে তিনি গোপালগঞ্জের এস এম মডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়ে এখনকার এসএসসি সমমানের পরীক্ষায় পাস করেন। ১৯৮০ সালে সরকারি জগন্নাথ কলেজ থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়ে এখনকার এইচএসসি সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

          বেনজীরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া বিএ (পাস) ডিগ্রি আছে (১৯৮২)। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলছেন, তখন এই সনদ পেতেন বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা। নিয়মিত শিক্ষার্থীরা পেতেন স্নাতক ডিগ্রির সনদ। বেনজীর কোন কলেজে পড়েছেন, সেটা নথিপত্রে কোথাও উল্লেখ নেই। তবে তিনি ১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান।

          বিএ (পাস) সনদ অনুযায়ী, বেনজীর মোট ১ হাজার ১০০ নম্বরের মধ্যে ৫১৭ পেয়েছেন (৪৭ শতাংশ)। অর্থাৎ, তিনি ৫০ শতাংশ নম্বর পাননি। কিন্তু ডিবিএ প্রোগ্রামে ভর্তির আবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, তিনি ডিগ্রি বা সমমানের পরীক্ষায় মোট ৫০০ নম্বরের মধ্যে ৩০১ নম্বর (৬০ শতাংশ) পেয়েছেন। তার বিএ (পাস) সনদে সাল উল্লেখ করা হয় ১৯৮২। ডিবিএর আবেদনে সাল বলা হয়েছে ১৯৮৩। এই সালের সঙ্গে মিলিয়ে কোনো সনদ জমা দেননি তিনি।

          ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টির ডিবিএ প্রোগ্রাম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই ডিগ্রিকে ডক্টরেট ডিগ্রি বলা যাবে কি-না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে তা–ও জানতে চাওয়া হয়েছে।

          বিষয়টি স্বীকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বিষয়টি ডিনস কমিটিতে আলোচনার জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট ডিগ্রির মান নিশ্চিতে ডিবিএ ডিগ্রি নিয়ে পুনরায় ভাবব।’

          বেনজীর আহমেদের ডক্টরেট ডিগ্রির থিসিস বা অভিসন্দর্ভটি ৯২ পৃষ্ঠার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, অভিসন্দর্ভটি গ্রহণের ক্ষেত্রে ‘ডিফেন্স বোর্ডে’ আহ্বায়ক ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক ও যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য।

          বেনজীরের অভিসন্দর্ভ ও ডিবিএ প্রোগ্রামের বিষয়ে অধ্যাপক মীজানুর রহমান বলেন, ‘প্রফেশনালদের (পেশাজীবী) জন্য শুরু হওয়া ডিবিএ প্রোগ্রামটি পিএইচডি বা অন্যান্য ডক্টরেট প্রোগ্রামের মতো নয়। মানের দিক থেকে এটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রির চেয়ে কিছুটা বেশি।’ এই প্রোগ্রাম সম্পন্ন করে নামের আগে ‘ডক্টর’ যোগ করা নৈতিক বিবেচনায় সঠিক নয় বলে মনে করেন তিনি।

          অবশ্য ডিগ্রিটি পাওয়ার পর থেকে বেনজীর আহমেদ নামের আগে ‘ডক্টর’ ব্যবহার করা শুরু করেন। পুলিশ ও র‍্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে তার নামের আগে ‘ডক্টর’ ব্যবহার করা হতো। বেনজীরের স্বীকৃত ফেসবুক পেজে সর্বশেষ ১৩ এপ্রিল নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি গ্রাফিক কার্ড দেওয়া হয়। সেখানেও নামের আগে ডক্টর রয়েছে।

          ডিবিএ প্রোগ্রামে জমা দেওয়া বেনজীরের অভিসন্দর্ভটির বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, অভিসন্দর্ভ একেবারেই সাধারণ মানের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ ধরনের অভিসন্দর্ভের বিপরীতে ডক্টরেট ডিগ্রি দেওয়া উচিত নয়।

          ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠগুলোর একটি। শত বছরের পুরোনো এই প্রতিষ্ঠান থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়া মর্যাদার বিষয়। তবে সাধারণ মানের ডক্টরেট প্রোগ্রাম খোলা এবং সেখান থেকে প্রভাবশালীদের ডিগ্রি দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

          জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, প্রভাবশালী কারও জন্য এভাবে ডক্টরেট প্রোগ্রামের শর্ত শিথিল করা ঠিক হয়নি। শর্ত শিথিলের সুযোগই তো থাকার কথা নয়। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে ডিগ্রির বিষয়টি ডিনস কমিটিতে আবার যাচাই-বাছাই করতে পারে।

          দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে এখন অনুসন্ধান হচ্ছে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ ও অর্থ পাচার বিষয়ে। তবে তথ্য-উপাত্ত পেলে ডক্টরেট ডিগ্রির বিষয়টিও কমিশনের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে আসতে পারে। কমিশন প্রতিবেদন গ্রহণ করলে তা এজাহারভুক্ত হবে।’

          প্রাসঙ্গিক
            মন্তব্য
            সর্বশেষ সংবাদ
              সর্বাধিক পঠিত