শিরোনাম
বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান হচ্ছেন ড. ইউনূস
বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান হচ্ছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (২ এপ্রিল) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত ড. খলিলুর রহমান।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান। তাই সব দেশের প্রধানদের সঙ্গে পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা দরকার।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিমসটেকের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্কক যাবেন প্রধান উপদেষ্টা। সম্মেলনের প্রথমদিন ইয়ুথ কনফারেন্সে যোগ দেবেন তিনি। পরদিন সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন।
এতে আরো জানানো হয়, সেখানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হতে পারে।
বেরোবিতে ঈদের দিন উপাচার্যের শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যতিক্রমী উদ্যোগ
বেরোবি প্রতিনিধি: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শওকাত আলীর উদ্যোগে ঈদের দিনে আবাসিক হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। ঈদের ছুটিতে বিভিন্ন বাস্তবতায় যে সকল শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে তাদের জন্য সকালে ও দুপুরে বিশেষ খাবার প্রদান করা হয়।
সোমবার (৩১ মার্চ) দুপুরে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঈদের কুশল বিনিময় করেন ও তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেন। আপনজন ও পরিবার ছেড়ে হলে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ঈদের দিন দুপুরে বিশেষ খাবার দেওয়া হয়। এ সময় উপাচার্য পত্নী মোছাঃ মাহমুদা আখতার, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হারুন-অর রশিদ, প্রক্টর ড. মোঃ ফেরদৌস রহমান, সহকারী প্রক্টর মোঃ আব্দুল্লাহ্-আল-মাহবুবসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে কর্মরত আনসার সদস্য, ফাঁড়ির পুলিশ সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্যও বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের নামাজে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানরত শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকতা ও কর্মচারীগণ অংশগ্রহণ করেন। নামাজ শেষে সকালে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের জন্য সেমাইসহ মিষ্টান্ন জাতীয় খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ঈদ
সংযমের মাস শেষে ভ্রাতৃত্ব আর খুশির মেলবন্ধনে আসছে ইদুল ফিতর। আমাদের পৃথিবীতে কত রকমেরই তো সুখ আছে, তবে ঈদের আনন্দ একসাথে ভাগাভাগী করার মত সুখ বোধহয় দ্বিতীয়টি আর নেই। সারাবছর ক্লাস, সিটি, অ্যাসাইনমেন্ট, ল্যাব নিয়ে ধকল খাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য ঈদ নিয়ে আসে নতুনত্বের অভিজ্ঞতা। হল কিংবা মেসে পরস্পরের সাথে রমজানের ইফতার-তারাবীহ- সেহরীর চমৎকার মুহূর্তগুলা কাটানো শেষে সকলে ফিরে চলে নিজ নীরের দিকে। পরিবার সদস্যরা বসে থাকে চাতক পাখির মতো। এরকম ঈদুল ফিতর নিয়ে কিছু শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম নাঈম।
ক্যাম্পাস জীবনে ঈদের ছুটির আনন্দই আলাদা! রোজার মাসটা মানেই ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট আর সার্ভাইভালের স্ট্রাগল। কিন্তু ছুটির দিন ঘনালে সব ক্লান্তি উধাও—শুধু বাড়ি ফেরার অপেক্ষা! বাসার পথে রওনা হওয়া মানেই মাথা থেকে সব টেনশন উড়ে যাওয়া। আর ঈদের দিন? সালামি সংগ্রহ মিশন! আপুরা হাসিমুখে দিলেও ভাইয়ারা বরাবরই কিপ্টে—তবু কৌশলে কিছু না কিছু বের করা যায়! সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তটা আসে পরিবারের সাথে ঈদ কাটানোর সময়। ক্যাম্পাসের সব ঝামেলা ভুলে গিয়ে আপনজনদের সাথে হাসিখুশি ঈদ করাই আসল আনন্দ!
-আহসান আহমেদ তন্ময়, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে সারাবছরই এক রকম দৌড়ের উপর থাকা লাগে, সিটি, এসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, ল্যাব ইত্যাদি ইত্যাদি, একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এপ্রিলের ৬ তারিখ থেকেই মিডটার্ম পরীক্ষা, আর ঈদের তারিখ সম্ভোব্য পহেলা এপ্রিল। অর্থাৎ ঈদের ৫/৬ দিন পর থেকেই পরীক্ষা। যেহেতু ঈদের পরপরই পরীক্ষা, সারাদিন রোজা রেখে ক্লাস করা ১০টা থেকে ৩.০০টা অবধি, সকালে ভার্সিটি যাওয়ার আগে একটি টিউশন -ভার্সিটি ছুটির পর আরেকাটি। তড়িঘড়ি করে বাসায় এসে ইফতারি করা, ইফতার করে বিশ্রাম নাহয় অপর দিনের সিটির প্রস্তুতি, পরক্ষণেই ইশা ও তারাবিহর উদ্দেশ্যে মাসজিদে গমন। মসজিদ থেকে এসো কোরান তিলাওয়াত করে তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যাওয়ার তাড়া -সব কিছু মিলিয়ে রামাদানের দিনগুলো খুবই টাইট শিডিউলে যাচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ সময়কে কাজে লাগাতে পারছি। ঈদে ইনশাআল্লাহ বাড়ি যাব প্রতি বছরের ন্যায়। আব্বুর কবর জিয়ারত করবো, আত্মীয়স্বজনের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করবো। বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে একসাথে বেড়াতে যাবো কিংবা তাদের বাড়ি যাবো এবং আমাদের বাড়ি নিয়ে আসবো। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরেও এগুলোই আমার ঈদের পরিকল্পনা, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে শরীয়তের সীমারেখায় থেকে ঈদ উদযাপনের তাওফিক দান করুন। আমীন।
-আহমাদ, শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় , চট্টগ্রাম
'ঈদ' সকলের মনে নিদারুণ এক আনন্দের আবহ সৃষ্টি করে।ঠিক তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ঈদের আগমন একটু বিশেষ ই হয়।বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই ব্যস্ততায় কাটে। ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন আর পরীক্ষার চাপের মাঝে ইদ যেন এক স্বস্তির নিঃশ্বাস। দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাস থেকে বাড়ি ফেরা, প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা করা—সব মিলিয়ে ইদের আনন্দ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য একটু আলাদা রকমেরই হয়।বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য ইদ কেবল একদিনের উৎসব নয়, বরং এটি স্মৃতির ঝাঁপি খুলে ফেলার, শৈশবে ফিরে যাওয়ার, পরিবারের ভালোবাসা পাওয়ার, বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার এক অনন্য উপলক্ষ। ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি ভুলে কিছুটা সময় পরিবারের সঙ্গে কাটানোই যেন তাদের ইদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। ইদ মোবারক!
-জিহাদুল ইসলাম রাফি, শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ঈদে বাড়ি ফিরতে না পারা মাভাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা
মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি: ঈদ সবার জন্য পবিত্র ও আনন্দের একটি দিন। এই দিনটি সবাই তার পরিবারের সাথে উপভোগ করতে চায়। কিন্তু জীবনের বেড়াজালে অনেকসময় তা হয়ে উঠে না। থাকতে হয় বাড়ি থেকে দূরে, পরিবার থেকে দূরে। এরকম কিছু শিক্ষার্থী যারা চাকরির পড়াশোনা ও বিভিন্ন কারণে বাসায় ফিরতে পারেন নি তাদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করেছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কুমার সাহা ও এফটিএনএস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আজিজুল হক।
অর্থনীতি বিভাগের হলে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছেন বিভাগীয় চেয়ারম্যান এবং এফটিএনএস বিভাগের চেয়ারম্যান শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে মধ্যাহ্নভোজ করেছেন।
এফটিএনএস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো.আজিজুল হক জানান, "ঈদ বা বড় কোন পার্বণেও কিছু শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই থেকে যায়, তারা নিজের বাসায়/গ্রামেরবাড়ি যায়না! বিষয়টা অভূত লাগলেও আমার দেখা অনেক গুলো ঘটনা বিশ্লেষণে দেখেছি, এই সব শিক্ষার্থীরা পরিবারহীনতার মতো কোন শূন্যতা, ফ্যামিলির প্রতি তীব্র কোন অভিমান কিংবা তাদের নিজস্ব স্বপ্নপূরনের মিশনে এতোটাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে স্বপ্নপূরণের আগে তারা কোন উল্লাসেই মাততে চাননা! আমার নিজের ক্যাম্পাসেও শিক্ষাজীবনে এমন কিছু ব্যতিক্রমী মানুষের সাথে পরিচয় ছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই, ঈদের আগেরদিন যখন জানলাম আমার বিভাগের কিছু শিক্ষার্থীরা এই ঈদে শূন্য ক্যাম্পাসেই থাকছেন, বাড়ি যাচ্ছেনা! তাদের সেই একাকীত্বের শক্তিকেই কাছথেকে দেখতে ঈদের দুপুর তাদের সাথেই কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ওদের জন্য দুপুরের খাবারের ব্যবস্হা করেছি এবং আমিও অংশগ্রহন করেছি ওদের সাথে। এ সুখের নেই কোন সীমানা।"
অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কুমার সাহা বলেন, "ঈদের দিন সবাই পরিবারের ভালো খাবার খেতে পারে কিন্তু হলে থাকা শিক্ষার্থীদের সেই সুযোগ নেই। তাই তাদের জন্য এই ক্ষুদ্র এই ব্যবস্থা।"
এই মহতী উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মনে আনন্দের এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। প্রিয়জনদের থেকে দূরে থাকলেও তাদের এই উষ্ণ আয়োজন ঈদের আনন্দকে আরও গভীর ও হৃদয়গ্রাহী করে তুলেছে।
ঈদ নিয়ে নোবিপ্রবি শিক্ষকদের ভাবনা
নোবিপ্রবি প্রতিনিধি: ক্লাস কিংবা পরীক্ষা নেয়ার ধকল, একাডেমিক বা প্রশাসনিক ভবনের এক ফ্লোর থেকে আরেক ফ্লোরে দৌড়াদৌড়ি, ডরমেটরি কিংবা বাসা থেকে ক্যাম্পাসে ছুটোছুটি, দিনের শেষে প্রশাসনিক কাজে বুদ হয়ে থাকা, অতঃপর শেষ রাতে সেমিস্টার বা সিটি পরীক্ষার খাতা দেখা কিংবা পরবর্তী দিনের কাজের পরিকল্পনা। এভাবেই বছর কাটে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষকদের। দিনের শেষ লগ্নে কলিগদের সাথে চায়ের আড্ডা কিংবা পরিবারের সদস্যের সাথে বসে একটু আড্ডা দেয়ার জন্য মন চাইলেও হয়তো হয়ে ওঠে না সবসময়। এতো হাসফাসের ভিড়ে ছুটে চলা মন প্রহর গোনে কবে ফিরে যাওয়া হবে ক্ষণিকের জন্য নিজের বেড়ে ওঠা নীড়ে।
এক সময় অপেক্ষার পালা শেষ হয়, বছর ঘুরে চলে আসে আরেকটা ঈদ। সময় আসে ব্যস্ততার রুটিন ফেলে কিছু অলস দুপুর কাটানোর, সঙ্গে প্রিয় মানুষগুলোর সঙ্গ। সে আশাতেই আমরা টিকিটের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াই, বিস্তর ধাক্কাধাক্কি হয়। হৃৎপিণ্ড ছলকে ওঠে। যাচ্ছি তাহলে এবার?
তবু আমরা যেতে চাই বাড়ি। একটু বিরতি পেলেই ছুটে যেতে চাই। ক্লান্তক্লিষ্ট শরীরে এলিয়ে পরতে চাই নিজের পুরনো ঘরে, পুরনো বালিশ আর বিছানায়, পুরনো ঘ্রাণের ভেতর। কিছু কল্পনা আর কিছু আধো-অন্ধকার বাস্তবতার ভেতর। মাত্র কয়েকটা দিনের জন্য হলেও মনে হয় শ্বাস নিচ্ছি, মনে হয় বেঁচে আছি, কী বিস্ময়, আজও বেঁচে আছি! এবারের ঈদ নিয়ে কি ভাবছেন নোবিপ্রবির শিক্ষকেরা?
ঈদ মানে আনন্দ, ভালোবাসা ও ত্যাগের চেতনায় পরিপূর্ণ একটি পবিত্র উৎসব
ঈদ মানে আনন্দ, একতা, ভালোবাসা ও ত্যাগের চেতনায় পরিপূর্ণ একটি পবিত্র উৎসব বলে মনে করেন নোবিপ্রবি শিক্ষকগণ। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন কিংবা প্রতিবেশীর সাথে বিশেষ কুশলাদি বিনিময় ও হাসি গল্পে একসঙ্গে সময় কাটানো। ছোটবেলায় ঈদ মানেই ছিল নতুন জামা, সেমাই খাওয়া এবং বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঈদের মানে কিছুটা বদলেছে— এখন পরিবার, স্ত্রী কিংবা সন্তানদের জন্য ঈদটা সুন্দরভাবে উপভোগ্য করে তোলাই মূল আনন্দ।প্রযুক্তির প্রভাবে ঈদ আনন্দ এখন ভার্চুয়াল জগতে ঢুকে গেছে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম (ফার্মেসী বিভাগ, নোবিপ্রবি)
প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাবে বর্তমান প্রজন্ম অনেকটাই ভার্চুয়াল জগতে ঢুকে পড়েছে। আগের মতো ঈদ উদযাপন করে না বলেই মনে হয়। প্রতিবেশীদের বাড়িতে যাওয়া, একসাথে ঈদের নামাজ পড়া, বা খোলা মাঠে খেলাধুলার সেই রঙিন দিনগুলো এখন অনেকটাই ম্লান।ছোটবেলার একটা ঘটনা এখনো খুব বেশি মনে পরে। একবার ছোটবেলায় নৌকায় করে গ্রামের বাজারে গিয়েছিলাম ভাইয়াদের সাথে। বাজারে পৌঁছে ভাইয়েরা আমাকে নৌকায় রেখে গিয়েছিল। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর যখন ওদের ফিরতে দেরি দেখে ভয় পেয়ে যাই, তখন আমি ছোট্ট শিশু মন নিয়ে একাই নৌকা চালিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হই। বয়স কম ছিল বলে ভালভাবে নৌকা চালাতে পারতাম না, তবুও কোনরকমে বৈঠা দিয়ে চালানোর চেষ্টা করছিলাম। পরে আমার ভাইয়েরা নির্ধারিত স্থানে এসে আমাকে না পেয়ে খুব চিন্তায় পড়ে যায় এবং শেষে অন্য একটি নৌকা নিয়ে আমাকে খুঁজে পেয়ে উদ্ধার করে। ঘটনাটা যদিও ঈদের আগের দিনের, তবে ঈদ এলেই সেই ভয়, সাহস আর ভালোবাসায় ভরা মুহূর্তগুলো আজও মনে পড়ে।
ঈদ আনন্দ মাঝে মাঝে বিষাদেও রূপ নেয়ার শঙ্কা থাকে অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল কাইয়ুম মাসুদ (ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, নোবিপ্রবি)
একবার ঈদের পরেরদিন একটা দাওয়াত খেয়ে যাচ্ছিলাম বাইকে করে। আমি ছিলাম বাইকের পিছনে। তখন রাস্তার কাজ চলছিল। আমরা রাস্তা ক্রস করছিলাম। হঠাৎ করে বাইক এবং সিএনজি মুখোমুখি ধাক্কা লাগে। তেমন বড় কোন দুর্ঘটনা না হলেও এখনো ঈদ আসলে এই স্মৃতি মনে পরে।আমি যখন খুব ছোট ছিলাম তখন শীতকাল ছিল। গোসল করার জন্য অনেক সময় গরম পানি থাকতো বা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাজের ব্যস্ততার কারণে গরম পানি থাকতো না তখন গোসল করাটা ছিল খুব বেশি চ্যালেঞ্জিং। ওই স্মৃতিটা এখনো খুব বেশি মনে পরে। এছাড়াও বাবা, চাচাতো ভাইবোন বা কাজিনদের সাথে একসাথে ঈদগাহে যাওয়াটা খুব বেশি মিস করি।
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের ঈদ আনন্দের রীতি ভিন্ন হলেও অনুভূতি এক সহযোগী অধ্যাপক ড. ফাহাদ হুসাইন (ফার্মেসী বিভাগ, নোবিপ্রবি)
এক প্রজন্মের বেড়ে ওঠার সময়কাল আরেক প্রজন্মের থেকে আলাদা। বর্তমান প্রজন্মের ঈদ উদযাপনের ধরন কিছুটা বদলেছে, যুক্ত হয়েছে জৌলুস। সাধারণ পটকা বাজির জায়গা দখল করেছে ব্যয়বহুল আতশবাজি। আগের মতো গ্রামে গিয়ে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতা কমেছে। প্রযুক্তির প্রভাব, সামাজিক পরিবর্তন, এবং ব্যস্ত জীবনধারার কারণে অনেকেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে। তবে আমার কাছে মনে হয় উদযাপনের রীতি কিছুটা বদলে গেলেও আনন্দের অনুভূতি একই রয়েছে।প্রযুক্তির প্রভাবে সরাসরি সাক্ষাতে হৃদ্যতাপূর্ণ মুহূর্তের অপ্রাপ্তি বেড়েছে। অপরদিকে দূর দূরান্তের বন্ধুদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় সহজ হয়েছে। প্রিন্টেড ঈদ কার্ড বা মোবাইল ফোনের বেসিক মেসেজের জায়গা দখল করে নিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুকে ক্যানভা কার্ডে শুভেচ্ছা বিনিময়। পরিবারের সবাই মিলে টিভির সামনে বসে বিনোদন উপভোগ বদলে গেছে ইউটিউব বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সাবস্ক্রিপশনে।
শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকদের এই ঈদে বার্তা হচ্ছে: ঈদ শুধু আনন্দ নয়, এটি আত্মশুদ্ধি ও মানবিক মূল্যবোধের চর্চার সময়। প্রযুক্তির মাঝে হারিয়ে না গিয়ে পরিবার, সমাজ, প্রতিবেশী এবং আত্মীয়দের সাথে সময় কাটানো উচিত। জ্ঞানের পাশাপাশি নৈতিকতা ও সহমর্মিতার চর্চাও একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার পথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পবিত্র ঈদে সকল শিক্ষার্থীর জন্য দোয়া করি—তারা যেন সবাই সুস্থ, নিরাপদ ও আনন্দময়ভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারে। যারা বাড়িতে যাচ্ছে, আল্লাহ যেন তাদের যাত্রা নিরাপদ করেন এবং ঈদের ছুটি শেষে সবাইকে ভালোভাবে ও হাসিমুখে আবার ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনেন। আল্লাহ যেন তাদের জীবনে শান্তি, সফলতা এবং কল্যাণ দান করেন—এই প্রার্থনাই করছি।
ঈদ মোবারক!
সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত


মন্তব্য