হাসিনাকে ফেরত পাঠানো নিয়ে মোদিকে ওয়েইসির প্রশ্ন

ভারতের হায়দরাবাদের এমপি ও অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি মন্তব্য করে বলেছেন, ‘যদি ভারতের সরকার সত্যিই দেশ থেকে “অবৈধ বাংলাদেশিদের” ফেরত পাঠাতে চায়, তাহলে প্রথমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই ফেরত পাঠানো উচিত। যিনি ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ভারতে বসবাস করছেন।’
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) দেশটির ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ‘আইডিয়া এক্সচেঞ্জ’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ভারত থেকে ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের’ ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ওই মন্তব্য করেছেন আসাদউদ্দিন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারকে প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘আমরা কেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে (শেখ হাসিনা) দেশে রাখছি? তাকে ফেরত পাঠানো হোক। তিনিও তো বাংলাদেশি, তাই না?’
তিনি বলেন, ‘ঢাকায় যে জনপ্রিয় গণঅভ্যুত্থান ঘটে গেছে ভারতকে সেটি মেনে নিতে হবে এবং বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।’
‘ভারতে একজন বাংলাদেশিকে রাখা হয়েছে, যিনি বিবৃতি ও বক্তব্য দিয়ে সমস্যা তৈরি করছেন; অথচ মালদা ও মুর্শিদাবাদের দরিদ্র বাংলা ভাষাভাষী ভারতীয়দের পুনে থেকে কলকাতায় বিমানে পাঠিয়ে নো ম্যানস ল্যান্ডে ফেলে দেওয়া হয়েছে।’
অভিযোগ করে আসাদউদ্দিন বলেন, ‘ভারতে যিনিই বাংলা ভাষায় কথা বলবেন, তিনিই বাংলাদেশি হয়ে যাচ্ছেন? এ থেকে বোঝা যায়, এখানে বিদেশাতঙ্ক কাজ করছে।’
তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, পুলিশ কীভাবে এসব মানুষকে আটক কেন্দ্রে রাখছে। এখানে সবাই যেন স্বঘোষিত আইনরক্ষক হয়ে উঠেছেন।
ওয়াইসি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিহারে চলমান ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ায় অনেক প্রকৃত নাগরিক; বিশেষ করে মুসলমানরা বাদ পড়তে পারেন।
তিনি বলেন, ‘যদি এসআইআর হয় এবং প্রকৃত ভোটারদের নাম অন্তর্ভুক্ত না হয়, তাহলে তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এ সময় তিনি বিহারে তার দলের অতীত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।’
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় বলা আছে, যদি কোনো নির্বাচনী রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও) কাউকে সন্দেহজনক মনে করেন বা তিনবার গিয়ে তাকে না পান, তাহলে তিনি নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারেন। তার অভিযোগ, এ প্রক্রিয়ায় মুসলিম ভোটারদের নামই বেশি বাদ পড়ছে।
জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ৭ মে সন্ত্রাসী হামলার পর বিজেপি নেতা বৈজয়ন্ত পান্ডার নেতৃত্বাধীন গঠিত সংসদীয় তদন্ত দলে ওয়াইসিও ছিলেন। সেই ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ভারত সরকার আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ নষ্ট করেছে।
‘আমাদের প্রতিনিধিদলকে ভালোভাবে গ্রহণ করা হলেও বিভিন্ন দেশ আমাদের জিজ্ঞাসা করেছে, কেন আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে কথা বলি না। আমরা বলেছি, বহুবার কথা হয়েছে, কিন্তু কোনো ফল আসেনি। আমরা ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে এবং পাকিস্তানকে ভারত ধ্বংস করতে চাইছে, এমন প্রোপাগান্ডা ভাঙতে পেরেছি।’
দেশটিতে সংখ্যালঘুদের নিয়ে সরকার ও বিরোধী দল উভয়ের নীরবতারও সমালোচনা করে ওয়াইসি বলেন, এই রাজনীতি নতুন নয়। তবে ২০১৪ সালের পর থেকে এটি ভিন্ন রূপ নিয়েছে।
ওয়াইসি বলেন, অনেক তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দল সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কথা বলতেই ভয় পাচ্ছে। ৭/১১ ট্রেন বিস্ফোরণের রায় বা ২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণ; এসব নিয়ে তারা মুখ খোলে না। এটা কেবল সংখ্যালঘুদের বিষয় নয়, বরং অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলার প্রশ্ন।
মধ্যপ্রাচ্যের প্রসঙ্গ টেনে ওয়াইসি গাজায় চলমান যুদ্ধ নিয়ে মোদি সরকারের নীরবতার তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার পরোক্ষভাবে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে সমর্থন করছে।
‘আমরা শুধু চুপ করে আছি। গাজায় যে গণহত্যা চলছে, সে বিষয়ে এই সরকার কিছুই বলছে না। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বর্ণবাদী সরকার এরই মধ্যে ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যার মধ্যে ২০ হাজার শিশু। প্রধানমন্ত্রী মোদি একটি শব্দও বলেননি। এরপর আবার বলেন, আপনি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে। যখন প্রতিদিন ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হচ্ছে, তখন সেই রাষ্ট্র কোথায় দাঁড়াবে? প্রধানমন্ত্রী মোদির সরকার আসলে নীরব থেকে নেতানিয়াহুকে এই গণহত্যায় সমর্থন করছে।’
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের পর প্রথম সামরিক মহড়ায় ইরান

ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর প্রথমবারের মতো বড় ধরনের সামরিক মহড়া শুরু করেছে মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী দেশ ইরান। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) থেকে শুরু হওয়া এই মহড়ার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সাসটেইনেবল পাওয়ার ১৪০৪’। এতে গালফ অব ওমান ও ভারত মহাসাগরে ইরানি নৌবাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলার অনুশীলন করছে। এই খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ইরানে এই সামরিক মহড়া নিয়মিত হলেও এবারের মহড়ার বিশেষ তাৎপর্য আছে। কারণ সাম্প্রতিক যুদ্ধে ইসরায়েল ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনা ও বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই যুদ্ধোত্তর সময়ে নিজেদের শক্তি ও প্রস্তুতি দেখাতেই এই মহড়া আয়োজন করেছে তেহরান। এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইরানি টেলিভিশন জানিয়েছে, মহড়ায় অংশ নেওয়া নৌযানগুলো সমুদ্রে লক্ষ্যভেদে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। পাশাপাশি ড্রোন ব্যবহার করে পানিতে সামরিক সক্ষমতা যাচাই করা হয়েছে। তবে এখনও মহড়ার কোনও আনুষ্ঠানিক ভিডিও প্রচার করেনি রাষ্ট্রীয় টিভি।
মহড়ার প্রাক্কালে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ নাসিরজাদেহ ঘোষণা দিয়েছেন, ইরান তাদের সেনাদের নতুন প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করেছে। তিনি বলেন, কোনো শত্রুপক্ষ যদি অভিযানে নামে, আমাদের বাহিনী এসব নতুন ক্ষেপণাস্ত্র কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে প্রস্তুত।
প্রায় ১৮ হাজার সদস্য নিয়ে ইরানের নৌবাহিনীর প্রধান ঘাঁটি দক্ষিণের বান্দার আব্বাস শহরে অবস্থিত। এই বাহিনী সাধারণত গালফ অব ওমান, ভারত মহাসাগর ও কাস্পিয়ান সাগরে টহল দেয়। তবে পারস্য উপসাগর ও হরমুজ প্রণালির মতো কৌশলগত এলাকা মূলত নিয়ন্ত্রণ করে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড। পশ্চিমা দেশগুলোর জাহাজ আটকানো এবং মার্কিন নৌবাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য এই বাহিনী বিশেষভাবে পরিচিত।
রয়টার্স ও ইপসোসের জরিপে
স্বাধীন ফিলিস্তিনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮ শতাংশ নাগরিক

যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ নাগরিক চান ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স ও জরিপ সংস্থা ইপসোসের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, মার্কিনিদের ৫৮ শতাংশ মনে করেন জাতিসংঘের সব দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন এবং ৯ শতাংশ কোনো মত দেননি।
ছয় দিন ধরে পরিচালিত এই জরিপটি শেষ হয় গত সোমবার। এর কিছুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ—কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরও বেড়েছে। বিশেষ করে গাজায় যখন অনাহার ও মানবিক বিপর্যয় মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ও মানবিক সহায়তা
জরিপ চলাকালেই আশা করা হচ্ছিল, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে পারে। তাতে বন্দী বিনিময় ও গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো সহজ হতো। মঙ্গলবার ইসরায়েলের দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা হামাসের দেওয়া প্রস্তাব পর্যালোচনা করছেন। ওই প্রস্তাবে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি ও গাজায় আটক ইসরায়েলি বন্দিদের অর্ধেক মুক্তির বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়ছে
গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ জানিয়েছে, গাজায় মানবিক সংকট ‘অকল্পনীয় মাত্রায়’ পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে যে, গাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ও অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ ঢুকতে দিচ্ছে না, ফলে সাধারণ মানুষ না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। তবে ইসরায়েল এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, হামাসই ত্রাণ আত্মসাৎ করছে। হামাস অবশ্য এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
মার্কিনিদের সহানুভূতি গাজার মানুষের প্রতি
জরিপে আরও উঠে এসেছে, মার্কিনিদের ৬৫ শতাংশ মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত গাজার ক্ষুধার্ত ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করা। ২৮ শতাংশ এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন। যারা সহায়তার বিরোধিতা করেছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ—প্রায় ৪১ শতাংশ—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান দলের সমর্থক।
রয়টার্স/ইপসোস পরিচালিত অনলাইন জরিপে মোট ৪ হাজার ৪৪৬ জন মার্কিনি প্রাপ্তবয়স্ক অংশ নেন। জরিপের ফলাফলে সর্বোচ্চ ±২ শতাংশ পর্যন্ত ভিন্নতা থাকতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা বললেন
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, পরবর্তী সরকারের কোনো পদে আমি থাকব না

যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেসারাট নিউজে নিবন্ধ লিখেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে গত বছর বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান, অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমটি। এতে প্রফেসর ইউনূস জানিয়েছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। আর নির্বাচন শেষেই তিনি রাষ্ট্রের সব দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন। নির্বাচনে যে সরকার গঠিত হবে সেটির কোনো পদেই থাকবেন না বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি।
ড. ইউনূস লিখেছেন, “আমি স্পষ্ট করেছি : জাতীয় নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতে হবে। এরপর যে সরকার আসবে সেখানে নির্বাচিত বা নিযুক্ত করা কোনো পদে আমি থাকব না।”
তিনি বলেছেন, “আমার সরকারের মূল লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করা। যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের সঙ্গে তাদের পরিকল্পনাগুলো বলতে পারবে। আমাদের মিশন হলো, সব বৈধ ভোটার যেন তাদের ভোট দিতে পারে, যারা প্রবাসে আছেন তারাও। এটি একটি বড় কাজ। কিন্তু আমরা কাজটি সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
প্রফেসর ইউনূসের নিবন্ধটি হুবহু তুলে ধরা হলো—
“এক বছর আগে, এই মাসেই বাংলাদেশের হাজার হাজার সাহসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শিক্ষার্থী, যাদের পেছনে ছিল সমাজের সব স্তরের অগণিত মানুষের সমর্থন, আমাদের জাতির ইতিহাসে একটি অন্ধকার অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়েছিল। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, যা শেষ পর্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হয়েছিল, তার মাধ্যমেই তারা একজন স্বৈরাচারকে ৫ আগস্ট দেশ ছাড়তে বাধ্য করে।
এরপর যে ক্ষমতার শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে ছাত্রনেতারা আমাকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দিতে অনুরোধ জানায়। এই সরকারের দায়িত্ব ছিল দেশকে স্থিতিশীল করা এবং গণতন্ত্রের নতুন পথ তৈরি করা। শুরুতে আমি রাজি হইনি। কিন্তু যখন তারা জোর করল, তখন আমি তরুণদের জীবন উৎস্বর্গের কথা ভাবলাম, আমি তাদের ফিরিয়ে দিতে পারলাম না। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট, সুশীল সমাজের নেতাদের নিয়ে গঠিত একটি উপদেষ্টা পরিষেদের সঙ্গে আমি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করি।
এই গণআন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে ন্যায্যতা নিশ্চিত করা থেকে। এরমাধ্যমে বিশ্বের প্রথম ‘জেনারেশন জেড’ বিপ্লবের সূত্রপাত হয়েছিল। এই বিপ্লব তরুণদের জন্য একটি আদর্শ হয়ে উঠেছে, যা দেখায় কীভাবে তারা মানবজাতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো—যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং বৈষম্য—মোকাবিলার জন্য এগিয়ে আসতে পারে।
আমরা ভাগ্যবান যে তারা ‘তাদের পালা আসার জন্য’ অপেক্ষা করেনি। যখন সভ্যতা অনেক দিক থেকে ভুল পথে চালিত হচ্ছে, তখন তারা বুঝতে পেরেছিল যে এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।
স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রে আমাদের উত্তরণের একটি স্পষ্ট প্রমাণ ছিল যখন দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকী বাংলাদেশকে তাদের ‘২০২৪ সালের সেরা দেশ’ হিসেবে ঘোষণা করে। আমরা তখন অর্থনীতি পুনর্গঠন, নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং চুরি যাওয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সম্পদ উদ্ধারে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে, আমরা তখনো বুঝতে পারিনি বিশ্ব আমাদের এই অগ্রগতিকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ্য করছে। ডেসারেট নিউজ আমাদের এই যাত্রার চমৎকার কাভারেজ দিয়েছে, যা আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করি।
আমাদের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার ছিল গণঅভ্যুত্থানে যারা নির্মমভাবে নিহত হয়েছিল এবং যারা গুরুতর আহত হয়েছিল—সেই হাজার হাজার পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা। এরসঙ্গে আমরা বিগত সরকার ও তার সহযোগীদের লুট করা অর্থ উদ্ধারেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে সাবেক স্বৈরাচারী সরকার বছরে ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছে। এই অর্থ পুনরুদ্ধার করার জন্য যুদ্ধ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যখন আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন অব্যবস্থার মাত্রা দেখে আমি হতবাক হয়ে যাই। পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করছিল না। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছিল। অর্থনীতি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। গণতন্ত্র ভেঙে পড়েছিল।
সরকারি কর্মচারীরা, যারা ক্ষমতাসীন দলের প্রতি যথেষ্ট আনুগত্য না দেখানোর কারণে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন, তারা ন্যায়বিচার চেয়েছিলেন।
ধীরে ধীরে আমরা পুনর্গঠন শুরু করেছি। যেসব রাজনৈতিক দল স্বৈরাচারের প্রতিরোধ করেছিল, তাদের পাশাপাশি নতুন গঠিত দলগুলোও নতুন ধারণা, শক্তি এবং কর্মপ্রচেষ্টা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। সশস্ত্র বাহিনী, যারা ৫ আগস্ট বিক্ষোভকারীদের ওপর গণহত্যা চালাতে দেয়নি, তারা তাদের পেশাদারিত্ব বজায় রেখেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে।
আমি এটি স্পষ্ট করে দিয়েছি : আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমি এরপরের সরকারের কোনো নির্বাচিত বা নিযুক্ত পদে থাকব না।
আমাদের প্রশাসনের মূল লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করা, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের কাছে তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারবে। বিদেশে বসবাসকারী নাগরিকসহ সব যোগ্য নাগরিককে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া একটি বিশাল কাজ। কিন্তু আমরা এটি সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমরা আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতেও পরিবর্তন এনেছি। যেন আমাদের প্রতিবেশী এবং বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক জোরদার করা যায়।
বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে, বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির একটি মূল কেন্দ্র হতে পারে এবং হওয়া উচিতও। আমরা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ।
রুবিওরে সঙ্গে সম্প্রতি আমার একটি ফলপ্রসূ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে, যা আমাদের উভয় দেশের বাণিজ্যের জন্য ইতিবাচক ছিল।
যুক্তরাজ্য, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্বব্যাংক গোষ্ঠী এবং জাতিসংঘও আমাদের সহায়তা করার জন্য এগিয়ে এসেছে। আমরা এই পথে একা নই।
নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল এবং নাগরিকদের নিয়ে একটি ব্যাপক সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছি। সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো একটি সাংবিধানিক সংশোধনী আনা। যা এমন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে যাতে বাংলাদেশ আর কখনো স্বৈরাচারী শাসনে ফিরে না যায়।
বাংলাদেশ যদি শেষ পর্যন্ত এমন একটি দেশে পরিণত হয় যেখানে দেশের সব মানুষ নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে। তবে তা হবে লাখ লাখ বাংলাদেশির দৃঢ়তা, কল্পনা এবং সাহসের ফল।
এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমাদের সঙ্গে যারা আছেন তাদের সকলের দায়িত্ব রয়েছে। তারাই আমাদের সর্বোত্তম আশা—এবং সম্ভবত আমাদের শেষ আশা।”
সূত্র: ডেসারেট
জামিন পেলেন ইমরান খান

সামরিক বাহিনীর অবকাঠামোতে হামলার মামলায় জামিন পেয়েছেন কারারুদ্ধ পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ২০২৩ সালের মে মাসে দেশটির সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরসহ বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালান ইমরানের বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা। এরপর তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) এসব মামলায় তাকে জামিন দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ইয়াহিয়া আফ্রিদির নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ তার জামিন মঞ্জুর করেন। লাহোর হাইকোর্ট জামিন না দেওয়ার পর হাইকোর্টের দারস্থ হন ইমরান। এরপর সুপ্রিম কোর্ট থেকে আজ এ সিদ্ধান্ত এলো।
সুপ্রিম কোর্ট আদেশ দিয়েছেন, যদি অন্য আর কোনো মামলা বা আটকাদেশ না থাকে তাহলে তাকে যেন কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু যেহেতু ইমরান দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত তাই এখনই তিনি বাইরে বের হতে পারবেন না।
২০২২ সালে অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান ৭২ বছর বয়সী ইমরান খান। এরপর ক্ষমতায় বসেন শেহবাজ শরীফ। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করে শেহবাজ সরকার।
ইমরান খান ছাড়াও তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) অনেক নেতাকে এমন মামলায় জর্জরিত করা হয়েছে।
২০২৩ সালের মে মাসে ইমরান খানকে স্বল্পসময়ের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তখন ক্ষোভে ফুঁসে উঠেন তার সমর্থকরা। সেনাবাহিনী এ গ্রেপ্তারের সঙ্গে জড়িত এমন অভিযোগ তুলে তারা রাওয়ালপিন্ডিতে সেনাবাহিনীর সদরদপ্তর ছাড়াও আরও কিছু অবকাঠামোতে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর চালান।
সূত্র: আনাদোলু নিউজ
মন্তব্য