আলাস্কায় হলো না কোনো চুক্তি, তবে ‘বড় দুই জয়’ পেলেন পুতিন

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ থামানো নিয়ে কোনো চুক্তি হয়নি। শনিবার (১৬ আগস্ট) বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
তবে কোনো ধরনের সমঝোতা না হলেও এই বৈঠকে পুতিনের বড় জয় হয়েছে বলে সিএনএনের লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সিএনএন বলছে, ট্রাম্পকে বিচলিত এবং ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, পুতিন অটল ছিলেন এবং তিনি যুদ্ধের মূল কারণগুলোর কথা বলছিলেন।
সিএনএন বলছে, গতকালও হুমকির সুরেই কথা বলেছেন পুতিন। তিনি কিয়েভ ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের সতর্ক করে দিয়েছেন যে তিনি ট্রাম্পকে যে চলমান প্রক্রিয়ায় টেনে এনেছেন এবং এতে যেন তারা হস্তক্ষেপ না করে।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আমরা আশা করছি কিয়েভ ও ইউরোপীয় রাজধানীগুলো এই সমস্তকিছু গঠনমূলকভাবে গ্রহণ করবে। এতে কোনো বাধা তৈরি করবে না, উস্কানি ও পর্দার আড়ালে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে উদীয়মান অগ্রগতি ব্যাহত করার চেষ্টা করবে না।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুতিন এই বৈঠকে দুইটি বড় জয় পেয়েছেন। প্রথমটি হলো, যুক্তরাষ্ট্র তাকে লাল গালিচায় স্বাগত জানিয়েছে এবং তার যাত্রা ছিল ভারী সাজোয়া যানে।
পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০২৩ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তাই পুতিনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপ- একজন অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীর জন্য সুনাম পুনরুদ্ধারের এক অসাধারণ উপস্থাপন।
পুতিনের দ্বিতীয় জয় হলো সময়। তিনি তার বাহিনীর জন্য ফ্রন্টলাইন পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আরও সময় পেলেন। এটা এখনো স্পষ্ট নয় যে ট্রাম্প যথেষ্ট ক্ষুব্ধ কিনা এবং সামনের দিনগুলোতে রাশিয়ার জন্য দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞা দেবেন। কিন্তু পুতিনকে তাড়াহুড়া মনে হয়নি এবং তিনি পরবর্তী বৈঠকের পরামর্শ দিয়েছেন।
অন্যদিকে ট্রাম্প বলেছেন, শুক্রবার আলাস্কায় তাদের বৈঠক ‘খুবই ফলপ্রসূ’ হয়েছে, তবে চূড়ান্ত লক্ষ্যে ‘পৌঁছানো যায়নি’।
রয়টার্স বলেছে, বৈঠক শেষে যুদ্ধবিরতির কোনো ঘোষণা আসেনি। এই আলোচনা আদৌ যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
যুদ্ধ শেষের যে শর্ত জানালেন নেতানিয়াহু

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা যুদ্ধ শেষের জন্য তার নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা নির্ধারিত পাঁচটি শর্ত পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, এসব শর্ত বাস্তবায়নই ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও ‘জয়’ নিশ্চিত করার একমাত্র পথ। খবর শাফাক নিউজের।
নেতানিয়াহুর শর্তগুলো হলো— হামাসের অস্ত্র সমর্পণ। সকল বন্দি, জীবিত ও মৃত, ফিরিয়ে আনা। গাজা সম্পূর্ণভাবে সামরিকহীন করা, যাতে অস্ত্র তৈরি বা পাচার না হয়। গাজায় ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা, নিরাপত্তা সীমান্তসহ। হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বিকল্প বেসামরিক প্রশাসন গঠন।
এ পরিকল্পনা চলমান যুদ্ধের অংশ। ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়ার পর থেকে অন্তত ৬১ হাজার ৭৭৬ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯০৬ জন আহত হয়েছে। গাজার সরকারি গণমাধ্যম জানিয়েছে, বর্তমানে ৪০ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে, ৫ বছরের নিচে ২ লাখ ৫০ হাজার শিশু তীব্র খাদ্যসংকটে এবং ১২ লাখ নাবালক চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছে।
নেতানিয়াহুকে ‘গ্রেফতারের’ ঘোষণা নরওয়ের

গাজায় ইসরাইলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিশ্বের অন্যতম সুখী দেশ নরওয়ে। অসলো জানিয়েছে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাদের দেশে পা রাখলেই গ্রেফতার করা হবে।
বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে মিডল ইস্ট মনিটর।
২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।
গত মঙ্গলবার নরওয়ের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেয়াস ক্রাভিচ জানিয়েছেন, তার দেশ নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আইসিসির জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ।
ক্রাভিচ নিশ্চিত করেন, নেতানিয়াহু নরওয়েতে নামলেই তাকে গ্রেফতার করা হবে।
তিনি জানান, আইসিসির অন্যতম সদস্য হিসেবে ওই আদালতের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে নরওয়ের। এতে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অসলোর অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটবে। এই অবস্থান আইসিসির ম্যান্ডেটের প্রতি ও আন্তর্জাতিক অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের জবাবদিহির আওতায় আনার বিষয়টির প্রতি নরওয়ের পুরো সমর্থন আছে।
আইসিসির রায় প্রকাশের পর নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ এইডে মন্তব্য করেন, গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিতে আইসিসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২০২৪ সালের মে মাসে নেতানিয়াহু, গ্যালান্ট ও হামাসের তিন নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছিলেন আইসিসি প্রধান কৌঁসুলি করিম খান।
তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ নভেম্বরে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি।
আরও গভীর হচ্ছে রাশিয়া-ইরান-চীন-উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক

রাশিয়া, ইরান, চীন ও উত্তর কোরিয়া তাদের কৌশলগত জোট আরও মজবুত করছে। ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের সাম্প্রতিক ১২ দিনের সংঘাতের পর এই জোট দুর্বল হয়ে পড়েছে—পশ্চিমাদের এমন ধারণা নস্যাৎ করে দিয়েছে তাদের সাম্প্রতিক কার্যক্রম। ন্যাশনাল সিকিউরিটি জার্নালের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর শাফাক নিউজের।
জোটের সহযোগিতা এখন সামরিক, প্রযুক্তি ও মহাকাশ খাত পর্যন্ত বিস্তৃত। সম্প্রতি তেহরান রাশিয়ার সোয়ুজ রকেটের মাধ্যমে একটি যোগাযোগ উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছে। ২০২২ সালের কাজাখস্তান থেকে পরিচালিত ‘খাইয়াম’ মিশনের ধারাবাহিকতায় এটি উৎক্ষেপণ করা হয়।
উন্নত অস্ত্র ও প্রযুক্তি বিনিময়ও বাড়ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চীনা ইঞ্জিন ব্যবহার করে রাশিয়া ‘গারবিয়া-এ১’ আক্রমণাত্মক ড্রোন তৈরি করছে। অন্যদিকে ইরান চীনের কাছ থেকে স্টেলথ যুদ্ধবিমান ও আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সংগ্রহের চেষ্টা করছে।
কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও সম্পর্ক বাড়ছে। রাশিয়া উত্তর কোরিয়ায় সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করেছে এবং ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচিতে মস্কো ও বেইজিংয়ের সমর্থন চাইছে।
ন্যাশনাল সিকিউরিটি জার্নাল সতর্ক করে বলেছে, পশ্চিমা দেশগুলো যেন এই সমন্বয়কে অবহেলা না করে। কারণ, এই জোট ড্রোন, মহাকাশ কর্মসূচি ও সামরিক উদ্যোগে এমন গতিতে এগোচ্ছে যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
পুতিন যুদ্ধ বন্ধে রাজি না হলে ‘গুরুতর পরিণতির’ হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাজি না হলে তাকে “অত্যন্ত গুরুতর পরিণতি” ভোগ করতে হবে। এমন হুঁশিয়ারিই উচ্চারণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আলাস্কায় আসন্ন শীর্ষ বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
ওয়াশিংটন ডিসির কেনেডি সেন্টারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “হ্যাঁ, হবে। খুবই গুরুতর পরিণতির মুখে পড়তে হবে।”
এর কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও অন্যান্য ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠককে তিনি “খুব ভালো” এবং “খুবই আন্তরিক” বলে বর্ণনা করেন।
আনাদোলু বলছে, দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের এটিই প্রথম সরাসরি বৈঠক হতে যাচ্ছে। আলাস্কার জনবহুল শহর অ্যাঙ্কোরেজে নির্ধারিত এ বৈঠক থেকে পুতিন, জেলেনস্কি ও ট্রাম্পের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পথ খুলে যেতে পারে বলে তিনি জানান।
ট্রাম্প বলেন, “দ্বিতীয় বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা ভালোই আছে এবং তা প্রথমটির চেয়ে বেশি ফলপ্রসূ হতে পারে। প্রথম বৈঠকে আমি বুঝে নেব আমরা কোথায় আছি, কী করছি। যদি প্রথম বৈঠক ভালো হয়, তাহলে খুব দ্রুতই দ্বিতীয় বৈঠক হবে— যেটি আমি প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই করতে চাই, যদি পুতিন ও জেলেনস্কি রাজি থাকেন।”
তিনি আরও জানান, শুক্রবারের বৈঠকে “কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়” অর্জিত হতে পারে, তবে এটি মূলত সম্ভাব্য ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের ভিত্তি তৈরির জন্য। তবে ট্রাম্প এটাও স্পষ্ট করেছেন, “হয়তো দ্বিতীয় বৈঠক হবে না, যদি আমি মনে করি এটি উপযুক্ত নয় বা প্রয়োজনীয় উত্তর না পাই। সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বৈঠক হবে না।”
মন্তব্য