ইবি প্রতিনিধি: বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেছেন, কোমলমতি শিক্ষার্থী এবং তাদের অবিভাবকদের কষ্ট লাঘবের জন্য গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতির প্রবর্তন করা হয়েছিল। আমি মনে করি গুচ্ছে না যাওয়ার এ ধরনের সিদ্ধান্ত জাতির জন্য শুভকর নয়।
রবিবার (২৪ মার্চ) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির গুচ্ছের বিপক্ষে যাওয়া নিয়ে রাইজিং ক্যাম্পাসের সঙ্গে ফোনালাপে এসব কথা বলেন ইউজিসি সচিব।
তিনি আরও বলেন, তারা শুরু থেকে না যেতো এটা ঠিক ছিলো। কিন্তু পরীক্ষার চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ হয়েছে তারা কার্যক্রমও শুরু করেছে, বিভিন্ন মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেছে এখন গুচ্ছে না যাওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। যেহেতু তারা বিগত বছরগুলোতে অংশগ্রহণ করেছে। এবছরও তাদের অংশগ্রহণ করা উচিত। মূলত এ বিষয়টি নৈতিকতার ব্যাপার।
মহামান্য রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায়ের বিষয়ে ড. ফেরদৌস জামান বলেন, চিঠি এভাবে ওনাদের কাছে দেয় না এটা ইউজিসিকে দেয়া হয়। যা বিভিন্ন সময়ে পত্র- পত্রিকায় এসেছে। গতবছরও মহামান্য গুচ্ছে থাকার বিষয়ে সরাসরি নির্দেশনা দিয়েছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি তো আর ঐভাবে সিন্ধান্ত দিবেন না, যে আমি সিদ্ধান্ত দিলাম আপনারা মেনে নিন। ওনারা শিক্ষক সমাজ ওনাদের অনুরোধ করেই চিঠি দেয়া হয়েছে।
এর আগে, গতকাল শনিবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় গুচ্ছের বিষয়ে এজেন্ডা আকারে মতামত গ্রহণ করা হলে ৭ জন শিক্ষক গুচ্ছের বিপক্ষে এবং সমিতির সহ-সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ আজাদ সহ ৬ জন গুচ্ছে পক্ষে মত দেন। সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ইবিশিস গুচ্ছে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তাৎক্ষণিক দ্বিমত পোষণ করেন ওই ৬ সদস্য শিক্ষক নোট অব ডিসেন্ট প্রদান করেন।
গুচ্ছের পক্ষে থেকে নোট অব ডিসেন্ট দেওয়া শিক্ষকদের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি ও ইবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ আজাদ বলেন,
আমরা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু, ওই সভার পরে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে, ইউজিসি, সরকারের বিভিন্ন মহল ও গুচ্ছের আহবায়ক যশোর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভিসি স্যারের বক্তব্য হতে সুস্পষ্ট হয়েছে যে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় সরকারের অভিপ্রায় রয়েছে। এছাড়াও, এ বছরে ১৫ হাজারেরও অধিক ভর্তিচ্ছু কেন্দ্র হিসেবে আবেদন করেছেন। তাই, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের দুর-দুরান্তের অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা নিরশনে আমি মনে করি এই বছরের মত গুচ্ছের বাইরে যেয়ে নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ভর্তির নামে কালক্ষেপণের আর সুযোগ নেই।
তবে সরাসরি গুচ্ছের পক্ষে কথা না বললেও উক্ত নোট অব ডিসেন্টকে সমর্থন জানিয়েছেন ইবিশিস সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেছেন সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্তের কথা।
এ বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, বিগত বছরগুলোতে আমরা গুচ্ছে অংশগ্রহণ করলেও এবছর আমরা গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্তে ছিলাম। কিন্তু এর পর যখন চিঠিটা আসলো তখন সরকার বললো যে এখন আর গুচ্ছের বাহিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা যে যাচ্ছিনা এর আগেও আমরা তাদের জানিয়েছিলাম। জানানোর পরও কিন্তু গুচ্ছওয়ালারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়সহ ২৪ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম যুক্ত করলো। আমি তখন তাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম আমাদের কেনো যুক্ত করেছেন। তখন তিনি বললেন, আমি আদিষ্ট হয়ে দেয়নি সরকার থেকে আমাকে বলা হয়েছে যুক্ত করার।
উপাচার্য বলেন, ১৫ হাজার ছেলের মেয়ের জীবন নিয়ে জেদ করা কি ভালো হবে! তবে আমি বিশ্বাস করি শিক্ষকদের ছাড়া একটি পরীক্ষার কার্যক্রম চালানো যায়না এবং এটি উচিতও না। আমি শিক্ষকদের আহ্বান জানাবো যে আমরা শিক্ষক হলেও কিন্তু সরকারের লোক। আমাদের এর বাইরে চিন্তাভাবনা করার কোনো সুযোগ নেই।