দিনের বেলা হইহুল্লোড়, বন্ধুদের সাথে কাদাপানিতে খেলাধুলা করেই বেড়ে উঠেছেন। রাতে কেরোসিনের কুপি জ্বালিয়ে করেছেন ক্লাসের পড়া। গ্রামে তখনো বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। এই ছিলো এস এম রকিবুল হাসানের রুটিন। আশপাশে পড়ালেখায় কারো আগ্রহ না থাকলেও খেলার মাঠের সাথে খেলার সাথিও জটে যেত অনায়াসেই।
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার রায়পুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হয়েছে রকিবুলের ছেলেবেলার পড়াশোনা। নামী কোনও স্কুল ছিল না। শিক্ষকের সংখ্যাও হাতে গোনা। সেই রকিবুল এখন যুক্তরাষ্ট্রের মার্সার ইউনিভার্সিটির ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
নতুন ওষুধের মাধ্যমে কীভাবে রক্তনালির ত্রুটি সংশোধন করা যায় এবং উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ঠেকানো যায়, সেই বিষয়ে বিস্তর গবেষণা করছেন তিনি। গত বছর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ থেকে পেয়েছেন ৪ লাখ ২৫ হাজার মার্কিন ডলার বা ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকার অনুদান। এছাড়া আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন থেকে বিশেষ ফেলোশিপ পেয়েছেন।
মাধ্যমিকে ছয় বিষয়ে লেটার মার্কস পেয়ে ১৯৯৯ সালে পাস করেন রায়পুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ শেষ করেন। ভর্তি পরীক্ষায় টিকে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসি বিভাগে।
জাবির ফার্মাসি বিভাগ থেকে স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় ও স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসে বিপণন নির্বাহী হিসেবে কর্মজীবন শুরু। ৯ মাস পর শিক্ষা ও গবেষণার সঙ্গে যুক্ত থাকতে প্রথমে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং পরে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামে শিক্ষাবৃত্তিসহ ভর্তির সুযোগ পান।
বাংলাদেশের বহু মানুষ হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের কারণে মারা যায়, এ নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলেন রকিবুল। ২০১৬ সালে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন তাঁকে গবেষণার জন্য অনুদান দেয়।
বাবা শিক্ষক বলেই শিক্ষকতার সুযোগই খুঁজছিলেন রকিবুল। সে সুযোগ হয় ২০১৮ সালে, জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের মার্সার ইউনিভার্সিটির ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেস বিভাগে যোগ দেন তিনি। গবেষণার জন্য নিজস্ব ল্যাব স্থাপন করেন। মাস্টার্স ও পিএইচডির শিক্ষার্থীদের গবেষণা তত্ত্বাবধান করছেন। পাশাপাশি ডক্টর অব ফার্মাসির শিক্ষার্থীদের পড়ান।
রকিবুলের প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের সংখ্যা ৫২। তাঁর প্রতিবেদনকে সাইটেশন করা হয়েছে দেড় হাজারের বেশি প্রবন্ধে। রকিবুল বলেন, সব সফলতার জন্য আমার বাবার কাছে কৃতজ্ঞ।