খাদ্যে ভেজাল রোধে চাই আইনের সঠিক প্রয়োগ
মানুষের বেঁচে থাকার একটি অপরিহার্য উপাদান হলো খাদ্য। দৈহিক বৃদ্ধি ও বিকাশ নির্ভর করে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের উপর। ভিটামিন, আমিষ, শর্করা, স্নেহ, খনিজ লবণ ইত্যাদি হলো বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। সুস্থ, সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য খাদ্যের বিকল্প নেই।
আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যারা বেঁচে থাকাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। কয়েক দশক ধরে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মিশিয়ে দিচ্ছে বেশি মুনাফা লাভের আশায়। এই অসাধু ব্যবসায়ীদের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এমন একটি খাদ্য উপাদান নেই যাতে তারা ভেজাল মেশাচ্ছেন না। মাছ, মাংস, শাক- সবজি, এমনকি প্যাকেটজাত খাদ্যদ্রব্যেও রয়েছে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ। গরু- ছাগল- মহিষের দুধের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য গবাদী পশুর শরীরে দেওয়া হয় পিটুইটারি ইনজেকশন। শাক- সবজি, ফলমূল দ্রুত বৃদ্ধি ও পচন রোধে অসাধু ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করাচ্ছেন। এসব ক্ষতিকর উপাদানের মধ্যে একটি অন্যতম উপাদান হলো ক্যালসিয়াম কার্বাইড। যা মূলত দ্রুত ফল পাকাতে ব্যবহার হয়। এ ধরনের বিষাক্ত ফল খেলে ক্যানসার, কিডনি বিকল হওয়াসহ জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। শাক – সবজি ও ফলমূল টাটকা ও সতেজ দেখানোর জন্য কপার সালফেট ( তুঁতে) পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। ফল গাছে থাকতেই ছিটানো হয় হরমোন ও কীটনাশক। তরমুজ লাল টকটকে দেখানোর জন্য ইনজেকশন দিয়ে তরমুজের ভেতর দেয়া হয় তরল পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট।
মাছ দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণের জন্য ফরমালিন দেয়া হয়। এছাড়াও প্যাকেটজাত ও প্রস্তুতকৃত খাদ্যে কৃত্রিম রং ও রাসায়নিক ব্যবহারের ফলেও বৃক্ক ও যকৃত অকার্যকর হয়ে যায়। এমনকি ক্যানসারের মতো মরণব্যাধিও হতে পারে। এছাড়াও প্রতিনিয়ত ভেজাল খাদ্য গ্রহণের কারণে দেহের সুষম বিকাশ বাঁধা গ্রস্থ হয়, রোগ – প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধতে থাকে। ফরমালিন খাদ্য পরিপাকে বাধা দেয়, পাকস্থলীর ক্ষতি করে, যকৃতের অ্যানজাইম নষ্ট করে এবং কিডনির কোষ ধ্বংস করে। ফলে গ্যাস্ট্রিক, আলসার বাড়ে, লিভার ও কিডনির নানা রকম জটিল রোগ দেখা দেয়। ফরমালিনের প্রভাবে নারীদের মাসিক ঋতুস্রাবের সমস্যা হয় । গর্ভবতী মায়েদের জন্য ফরমালিন আরও ক্ষতিকর। এর কারণে গর্ভস্থ শিশু বিকলাঙ্গ হয়। হাসপাতাল গুলোতে গেলে দেখা যায়, মানুষের করুণ অবস্থা। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকল বয়সের মানুষ নানাবিধ রোগে ভুগছেন। আর এ সকলের অন্তরালে রয়েছে ভেজাল খাদ্য। যা মানুষকে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
নিত্যনতুন উপায়ে নতুন নতুন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য খাদ্যে মেশানাের ফলে মানুষের শরীরে নতুন ধরনের নতুন নামের রােগের সৃষ্টি হচ্ছে। অসচেতন মানুষ এসব রােগকে হয়তাে দৈবের অভিশাপ হিসেবে চিহ্নিত করছে, কিন্তু এসবের জন্য মূলত খাদ্যে ভেজালের অনুপ্রবেশই দায়ী। বর্তমান বিশ্বকে তথা আমাদের দেশ ও সমাজকে বাঁচাতে হলে খাদ্যে ভেজাল নির্মূল করা একান্ত জরুরি। আর এজন্য রাষ্ট্রের উপর মহল থেকে সমাজের সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সকলকে সচেতন হতে হবে। খাদ্যসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই এর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে। যেমন সল্পসময়ে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনাকারী একাধিক ফলের মজুদ, বড় বড় বাজার ও আড়তের পাশে পরীক্ষাগার স্থাপন, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারী এলাকায় গােয়েন্দা নিয়ােগ, ভোল মিশ্রণকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা ইত্যাদি। এছাড়া মিডিয়া বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ও ডকুমেন্টারি তৈরি করে গণসচেতনতার সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশে যদি প্রত্যেকে ব্যক্তিগতভাবে ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে সােঞ্চার হয় এবং এতে করে তার পাশের মানুষকে সচেতন করে, তবে ভেজাল খাদ্যের মূলোৎপাটন অবশ্যই সম্ভব।
যারা খাদ্যে ভেজাল মেশাচ্ছে তারা যদি তাদের পরিবার,দেশ ও দশের কথা ভাবতেন তাহলে এ ধরণের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতো না। সুস্থ থাকার জন্য সকলকে সচেতন হতে হবে। নিজ স্বার্থ ত্যাগ করে সকলের কল্যাণ কামনা করতে হবে। তবেই দেশের অগ্রগতি সাধিত হবে।
লিখেছেন: আফ্রিয়া অলিন , শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সদস্য, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি ফিচার, কলাম অ্যান্ড কনটেন্ট রাইটার্স।