The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বুধবার, ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪

হেনরি ডুনান্ট এবং একটি মানবতাবাদী প্রতিষ্ঠান ‘রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট ‘

ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে আজকের এই দিনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং আজকের এই দিনটিকে স্মরণ করার জন্য বেশ কিছু ঘটনাও ইতিহাসের পাতায় রয়েছে। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে আজকের এই দিনে অর্থাৎ ৮ই মে পৃথিবীতে এমন এক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেছিল যে কিনা ১৮৫৯ সালের ২৪ জুন ইতালির সলফেরিনো যুদ্ধ থেকে শুরু করে আজকের ইউক্রেন – রাশিয়া যুদ্ধেও এক অশরীরী মহানায়ক। আজকে ৮ই মে সেই হেনরি ডুনান্ট এর জন্মদিনেই বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক রেট ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস।

১৮২৮ সালের ৮ মে রেড ক্রসের প্রতিষ্ঠাতা জীন হেনরী ডুনান্ট সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। মহান এই ব্যক্তিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে প্রতি বছর তার জন্মদিনটিকে বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস হিসেবে সারাবিশ্বে উদযাপন করা হয়।

১৮৫৯ সালের ২৪ জুন ইতালির অখ্যাত এক গ্রাম সলফেরিনো ও তার আশপাশে ১৫ ঘণ্টা ধরে চলে এক মর্মস্পর্শী যুদ্ধ। অখ্যাত সলফেরিনো হয়ে ওঠে বিখ্যাত। দুপক্ষের অংশগ্রহণকারী প্রায় তিন লাখ সৈন্যের মধ্যে ৪০ হাজারের মতো সৈন্য হতাহত হয়। আহত সৈন্যরা কোনো সেবা না পেয়ে সারা রাত ছটফট করে কাটিয়েছে সলফেরিনো গ্রামের পথে-প্রান্তরে। ফলে অনেক আহত সৈন্য যারা একটু পানি ও শুশ্রূষা পেলে বেঁচে উঠতে পারত তারাও মৃত্যুবরণ করে অবহেলায়।

আর তখনই সেখানে পৌঁছায় হেনরি ডুনান্ট। যুদ্ধের ভয়াবহতা আর আহতদের আর্তনাদ দেখে তার মন খারাপ হয়। তিনি নিজেকে সামলিয়ে গ্রামবাসীকে অনুপ্রাণিত করে আহতদের প্রথমেই আশপাশের গ্রাম, চার্চ ও বাড়িঘরে এনে জড়ো করতে থাকেন। পার্শ্ববর্তী ক্যাসটিপ্যালিয়ন ও দূরে ব্রেসিয়া শহরের হাসপাতালে অনেককে পাঠানো হয়। স্থানীয়দের সহায়তায় প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করেন তিনি। এভাবে তার হাত ধরে ১৮৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এক মানবতাবাদী প্রতিষ্ঠান ‘ রেডক্রস ‘ যদিও পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশ এর নাম পরিবর্তন করে রেড ক্রিসেন্ট রাখে।

এটি মূলত বেসরকারি মানবতাবাদী একটি প্রতিষ্ঠান। মানব সেবামূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে থাকে এর সদস্যরা। যুদ্ধ বিগ্রহে আহত সৈন্যদের সেবা,বন্যা, ঘুর্ণিঝড় দুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুঃস্থদের সাহায্যার্থে বহুবিদ সেবামূলক কাজ করে থাকে এর সদস্যরা।
যদিও যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈন্যদের সেবা প্রদানের মধ্য দিয়ে এর জন্ম হয়েছে তথাপি এর কার্যক্রম এখন বহুল বিস্তৃত।

বাংলাদেশেও এর অঙ্গ সংগঠন ‘বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটি’ রয়েছে। ১৯৭৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তেহরানে রেড ক্রসের ২২তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটি আন্তর্জাতিকভাবে পূর্ণ স্বীকৃতি লাভ করে এবং ১৯৮৮ সালে সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।

বাংলাদেশ সহ পুরো পৃথিবী জুড়ে যে যুদ্ধ বিগ্রহ, হানাহানি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মানবতা বিরোধী কাজকর্ম চলছে এতে ভুক্তভোগী মানুষদের সেবা প্রধানের জন্য রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট এর মানবতাবাদী কাজকে সাধুবাদ জানাতেই হবে।
যে হারে কিছু মানুষ অমায়িক হয়ে যাচ্ছে তাদের রোষানল থেকে মানব জাতির সেবায় আমাদের এরকম প্রতিষ্ঠান আরো গড়ে তোলা প্রয়োজন। আর বিশ্ব রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক মানবজাতির অকল্যাণে নয়, কল্যাণে সব সময় নিজেকে নিয়োজিত রাখব।

রিপন আল মামুন, শিক্ষার্থী, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.