The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪

সুন্দর পরিবেশে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখা যাক

জিম আক্তার চৈতিঃ চলুন আজকে আমি আপনাদের ঘুরে দেখাবো এক নতুন দেশ একটি অপরূপ সৌন্দর্যের দেশ। চারদিকে ফুলে, ফলে, শস্যে রঙে ভরা রঙ্গিন একটি দেশ। ভাবতে পারেন? বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য যেখানে শান্তিতে থাকা, যেখানে খাদ্য শস্যের কোন অভাব নেই, স্বচ্ছ, শুভ্র, নির্মল আর ঝকঝকে চারপাশের পরিবেশ। ভালো কি লাগবে না?

আপনাদের কি মনে পড়ে পূর্বে কবি সাহিত্যিকেরা এরকম একটি দেশের কথা বহুবার বর্ণনা করেছেন। আচ্ছা থাক !

এবার আসুন আমার স্বপ্নের দেশটির কেন্দ্রবিন্দু যে শহরটি সেখানে যাই এখানে পানি দূষণ, বায়ু দূষণ তো দূর শব্দ দূষণ ও হয় না । যেমন ধরুন ফুয়েল চালিত যানবাহন আর হর্ণের বদলে অটো ভয়েস সিস্টেম ” দয়া করে আমাকে সামনে যেতে দিন “। এরকম আরও আশ্চর্য কথা আমি বলতে পারি এই স্বপ্নের দেশের স্বপ্নের শহর সম্পর্কে।

এখন বাস্তবে ফেরা যাক আমরা তো ভুলেই গেছি জীবনের উদ্দেশ্য। আমরা কৃত্রিমতায় অনেক বেশি আকৃষ্ট। এই যে কেউ কেউ অপরিকল্পিতভাবে বেশি মুনাফা লাভের আশায় বড় বড় দালান কোঠা তৈরি করছেন, হয়তো আপনারা একদিন থাকবেন না এই পৃথিবীতে কিন্তু এটি হয়ে যাবে আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মৃত্যু কুঠুরি। এই যে কতশত প্লাস্টিক পলিথিন ফেলা হচ্ছে যত্রতত্র – যেহেতু এগুলো অপচনশীল, টিকে থাকবে শত শত বছর। তাহলে কি এগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যাওয়া হচ্ছে গুপ্তধন হিসেবে?

একবার ভাবুন কি অবস্থা করেছি আমাদের চারপাশের পরিবেশের। আমরা যারা এখন পরিবেশের ক্ষতি করছি পরবর্তীতে আমরা মাটিতে মিশে গেলেও আমাদের তৈরি এসব দ্রব্যাদি পরিবেশে মিশবে না । যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক ভয়ানক পরিস্থতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এদেশের বিত্তবানদের কেউ হয়তো এই মুহূর্তে বহুতল ভবনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে বসে আপন মনে ভাবছেন আর কোথায় জায়গা কিনে কয়টা ভবন নির্মাণ করা করা যায়। তাতে গাছপালা নিধন আর জলাভূমি ভরাট হলে হোক। কিন্তু পরিবেশের সুস্থ স্বাভাবিক ভাবমূর্তি নষ্ট করে এইসব নির্মান হলো মানুষের নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার মতো। হয়তো এসব কথা তাদের মস্তিষ্কে নাড়া দেবেনা কিংবা শ্রুতি কটু লাগবে। কারণ এসবের ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ। কিন্তু যারা অদূর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এসব গড়ছেন সেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মেও এই অবস্থা থেকে রেহাই পাবে না।

তাই চলুন আমরা এক নতুন দেশের কথা চিন্তা করি। গাছের পরিচর্যা শিখি, পরিবেশ বাঁচাই। প্লাস্টিক পলিথিন আমাদের নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্য। আমি বলছিনা এসব ব্যবহার করা যাবে না। শুধু এমনভাবে ব্যবহার করুন যাতে- ‘সাপ ও মরে আর লাঠিও না ভাঙ্গে’ অর্থাৎ প্লাস্টিক পলিথিন কে সঠিকভাবে ব্যবহার করুন তাতে পরিবেশের ক্ষতি না হয়। এই কাজটি আমরা আমাদের ঘর থেকেই শুরু করতে পারি। আপনার বাড়ির পচনশীল এবং অপচনশীল দ্রব্যগুলো আলাদা আলাদা ডাস্টবিনে ফেলুন। রাস্তায় যত্রতত্র প্লাস্টিক বোতল, পলিথিন না ফেলে তা নিজের কাছে রেখে দিন এবং নির্দিষ্ট স্থানে অপচনশীল বিনে ফেলুন।

এই রকম সতর্কবার্তা পূর্বে অনেকে অনেকভাবে দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ যে অভ্যাসের দাস। পুরোনো অভ্যাস কি এত সহজে যায় ? এই কথাগুলো শুনবে এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। তবে আমরা কি করতে পারি? মনে হয় উপায় একটা আছে, পরিবারে এবং বিদ্যালয়ে অন্যান্য শিক্ষার পাশাপাশি ছোট্ট সোনামণিদের হাতে কলমে শেখানো হোক গাছের পরিচর্যা আর গড়ে তোলা হোক ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার অভ্যাস। ওদের বোঝানো হোক গাছ আমাদের বন্ধু। দেখবেন ওরাও পরবর্তী প্রজন্মকে এটাই শেখাবে। এমনও হতে পারে, বড়রা তাদের অভ্যাসগত ভুল করে ফেললে ছোটরা তাদের এই ব্যাপারে সাবধান করবে। তাতেও যদি আমাদের অভ্যাসের একটু পরিবর্তন হতো, মন্দ হতো না।

আমাদের বর্তমান অভ্যাসের দাস মানুষদের জন্য অভ্যাস পরিবর্তন করা কঠিন। তবে ‘রিসাইকেল’ ব্যবস্থা চালু হলে এই অভ্যাস কিছুটা হলেও পরিবর্তন করা সম্ভব হবে । তাই সরকারি ঘোষণায় প্রত্যেকটা জায়গায় প্রত্যেকটা দোকানে ‘রিসাইকেল প্লাস্টিক’ ব্যবস্থা চালু করা হোক। এই ব্যবস্থা একদিকে উৎপাদন খরচ কমাবে সেই সাথে পরিবেশ ও রক্ষা পাবে এটা আমাদের বোঝা উচিৎ। এমন কিছু স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করা হোক যারা বিভিন্ন শহরের কিঞ্চিৎ ফাঁকা জায়গাগুলোতেও উপযুক্ত গাছ লাগাবে। প্রত্যেকটা ঘরে সাধ্যমত একটি করে হলেও ইনডোর প্ল্যান্ট থাকুক।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে সহশিক্ষা কার্যক্রম এর মধ্যে গাছের চারা তৈরির কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হোক। প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেমন লাইব্রেরী আবশ্যক তেমনি একটি করে নার্সারি থাকুক । সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের গাছ উপহার দেওয়া হোক এবং কে কত সুন্দর করে গাছের পরিচর্যা করছে তার উপর ভিত্তি করে তাদের পুরষ্কৃত করা হোক। এরকমটা হলে এদেশের সুন্দর ভাবমূর্তি হয়তো ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে। শুরুতে আপনাদের যে দেশের কথা বলেছি তা কল্পনা মাত্র। আমরা কি পারিনা একে বাস্তবে রূপ দিতে?

শিক্ষার্থী, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.