The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শুক্রবার, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪

ব্যতিক্রমী এই ইউপি সদস্যের সংসার চলে রিকশা চালিয়ে!

রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন ৪৪ বছর বয়সী মাইকেল ঢালী। প্রায় ১৬ বছর যাবত তিনি জীবিকার তাগিদে গ্রামের রাস্তায় রিকশা চালাচ্ছেন। রিকশা চালালে কি হবে মানুষের সুখে দুঃখে তাদের পাশা দাড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে জয়ি হয়ে এখন তিনি একজন নির্বাচিত সদস্য।

মাইকেল ঢালীর বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার পোরগাছা নামক গ্রামে। তিনি একই উপজেলার মোক্তারেরচর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য। ইউপির সদস্য হয়েও তিনি তার পেষা ছাড়েননি। জীবিকা অর্জনের তাগিদে তাকে রিকশা চালাতে হয়। এই রিকশা নিয়েই তিনি মানুষের বাড়িতে বাড়িতে যান। শোনেন তাদের চাওয়া ও কষ্টের কথা। গ্রামের দরিদ্র জনসাধরণের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দিতে সাধ্যমত চেষ্ঠা করেন।

পিতা আবদুর রব ঢালী ও মাতা নীলফা বেগমের আট সন্তানের মধ্যে মেজো। কিশোর বয়সে পিতাকে হারিয়ে জীবিকা অনুসন্ধানে চলে আসেন ঢাকায়। ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে তিনি নৌকা চালানোর কাজ শুরু করেন। একটান দশ বছন নৌকা চালানো পেশার সাথে যুক্ত থেকে গ্রামে ফেরেন। গ্রামে ফিরে শুরু করেন রিকশা চালানো। রিকশায় করে মানুষকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌছে দেওয়ার সময় শুনতে থাকেন দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষের সুখ-দুঃখের কথা। নানা ভাবে জড়িয়ে পড়েন তাদের সাথে। তাদের হয়ে কাজ করার বাসনা তৈরি হয় তার মধ্যে। সরকারের দেওয়া সকল সুবিধা গ্রামের দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষের হাতে পৌছে দেওয়ার তাগিদে ২০১৬ সালে প্রথম ইউপি নির্বাচন করেন এবং অল্প ব্যবধানে হেরে যান। সেখানেই থেমে থাকেননি মাইকেল। সাধ্যমত মানুষের পাসে দাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। অবশেষে ২০২২ সালের জানুষারিতে নির্বাচনে জয়ি হয়ে সাধারণ দরিদ্র মানুষের মুখপাত্র হয়ে ইউনিয়ন পরিষদে যান।

আরো পড়ুন: জাবি ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু হয়েছে

জানা যায়, দারিদ্র্যতার কারণে লেখাপড়া করতে পারেননি মাইকেল ঢালী। তবে রিকশা চালিয়ে ঠিকই এক ছেলে ও এক মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। ইউপি সদস্য মাইকেল ঢালীর সংসার  চলে তার দৈনিক আয়ের উপর, যা সর্বসাকুল্যে ৫০০-৬০০ হয়ে থাকে। তার নিজের কোন কৃষিজমি নেই। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত দুই শতাংশ জমিই তার সম্বল।

মাইকেলের স্ত্রী লিপি বেগম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমার স্বামীর শিক্ষা-দীক্ষা ও টাকা নেই। কিন্তু তাঁর মহৎ একটি হৃদয় আছে। আমাদের মতো দরিদ্র মানুষ যারা, তাদের সেবা করার জন্যই ইউপি সদস্য হয়েছেন। সমাজসেবা করতে গিয়ে তাঁকে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়। ওই সময় কাজ করলে আরও আয় হতো, সংসার চালাতে সুবিধা হতো। তাতে আমাদের কোনো আক্ষেপ নেই। মানুষ ভরসা ও বিশ্বাস করে তাদের মূল্যবান ভোট দিয়েছে।

ইউপি সদস্য মাইকেল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি গরিব মানুষ। গরিবদের সঙ্গে মানুষ কীভাবে প্রতারণা করে, তাদের বঞ্চিত করে তা দেখে বড় হয়েছি। আমার মনে হয়েছে আমি মেম্বার হলে বঞ্চিত মানুষের উপকার হবে। যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন বাড়িতে যাই। তাদের দঃখের কথা শুনি। তাই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিই। মানুষও আমাকে বিশ্বাস করেছেন। চেষ্টা করছি সাধ্যমতো তাদের পাশে থাকতে।

তিনি আরো বলেন, মানুষের ভোটে জনপ্রতিনিধি হয়েছি, মানুষের অধিকার আদায়ে পাশে থাকছি। কিন্তু নিজের পরিবারকেও তো বাঁচাতে হবে। তাই আয় করার জন্য রিকশা চালাই।

মোক্তারেরচর ইউপি চেয়ারম্যান বাদশাহ শেখ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ অনুযায়ী ৬ নম্বর ওয়ার্ডে যা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে তা সঠিকভাবে বিতরণ করছেন মাইকেল। মাইকেলের কার্যক্রমে ওই ওয়ার্ডের মানুষ সন্তুষ্ট। সে খুব তৎপর। আমরা তাকে নিয়ে গ্রামের মানুষের সমস্যার সমাধান করতে চেষ্টা করছি। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.