The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪

দেশের অতি বিরল ছোট কালি পেঁচা দেখা মিলেছে রাবি ক্যাম্পাসে

রাবি প্রতিনিধি: ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর দেশের পাখি তালিকায় নতুন সংযোজন ঘটে বিরল এক বন্য পেঁচার প্রজাতি। নাম জঙ্গল আউলেট বা ছোট কালি পেঁচা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্যারিস রোডে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম দেখা মেলে পাখিটির। কেবল রাবি ক্যাম্পাসে ছাড়া এখনো পর্যন্ত দেশের কোথাও দেখা যায়নি ক্ষুদ্রাকৃতির এই পাখিটি। পাখিটি ভারত ও শ্রীলঙ্কার সমভূমি, আর্দ্র অঞ্চল এবং জি রেডিয়াটাম শুষ্ক বনাঞ্চলে পাওয়া যায় বলে জানা যায়।

পাখিটির দৈর্ঘ্য সাধারণত ২০ সে.মি. হয়ে থাকে। কালিপেঁচাটির গোলাকার মাথাটি সর্বত্র সূক্ষ্মভাবে বাঁধাযুক্ত। যার সমস্ত শরীরে ঘন বাদামি ডোরাকাটা রেখা আছে, পাখায় বাদামি রেখাগুলো সুনিপুণ চিত্রকলার মতো মনে হয়। এই বৈশিষ্ট্যগুলো অন্যান্য অনেক প্রজাতির পেঁচা থেকে একে আলাদা করেছে। পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম (Glaucidium radiatum)। এরা ফড়িং, পঙ্গপাল এবং অন্যান্য বড় পোকামাকড়, মোলাস্কস, টিকটিকি, ইঁদুর ইত্যাদি খেয়ে বেঁচে থাকে। পাখি গবেষকরা ১৯৫১ সাল থেকে দেশে এর ডাক শোনার কথা বলে আসলেও পাখি ডাটাবেসে নথিভুক্ত হয় ২০২১ সালে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক, বাংলাদেশের প্রখ্যাত বন্য প্রাণী গবেষক ও লেখক প্রফেসর আনিসুজ্জামান মো. সালেহ রেজার প্রথমে নজরে পড়ে পাখিটি। এরপর খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট কালিপেঁচার ছবি তুলতে রাবিতে আসতে থাকেন পাখিপ্রেমীরা। অধ্যাপক সালেহ রেজার প্রচেষ্টায় ছোট কালিপেঁচা এরই মধ্যে বাংলাদেশের পাখিদের তালিকায় স্থান পেয়েছে।

প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে অধ্যাপক রেজা বলেন, ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর সকালে রাবিতে হাঁটতে গিয়ে পাখিটির দেখা পাই। পাখিটি ছোট কালিপেঁচা বলে মনে হয়েছিল। পরে পাখিটির ছবি তুলে ও ডাক সংগ্রহ করে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব এবং ইন্টারন্যাশনাল বার্ড ক্লাবের ওয়েবসাইটে পোস্ট করি। তারপর এই দুটি ক্লাব ও ভারতীয় বার্ড ক্লাব নিশ্চিত করে যে পাখিটি ছোট কালিপেঁচাই। বাংলাদেশের পাখির তালিকায় প্রথম নাম উঠল পাখিটির, যা গর্বের বিষয়। পাখিটির ডাক পর্যালোচনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান এবং বার্ডস বাংলাদেশের পল থম্পসন ও সায়াম ইউ চৌধুরী।

অধ্যাপক সালেহ রেজা বলেন, সারা বিশ্বে মোট ২৫০ প্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ১৮ প্রজাতির পেঁচা রয়েছে। শুধু রাবি ক্যাম্পাসেই ৬ জাতের পেঁচা তাদের আবাসস্থল তৈরি করেছে, যা নতুন প্রজাতির সংযোজনের ফলে ৭টিতে পৌঁছাল। রাবির প্যারিস রোডের আম ও গগনশিরিশ গাছগুলোতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় এই পেঁচা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। নতুন এই পাখির প্রজাতির আবিষ্কার বাংলাদেশের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের পরিচয় বহন করে এবং দেশের প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় গভীর মনোযোগের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী পাখিপ্রেমী আব্দুল্লাহ আল মামুনের ক্যামেরায় গতকাল আবারো ফ্রেমবন্দী হলো পাখিটি। তিনি বলেন, গতবছর যখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাখিটি দেখতে ক্যাম্পাসে পাখি প্রেমিদের আনাগোনা চলছিল তখন আমি পরীক্ষার জন্য ঘরবন্দী। পরীক্ষা শেষে জানুয়ারি থেকে পাখিটিকে ক্যামেরাবন্দী করতে টুকটাক খোঁজ করতে থাকি। দীর্ঘ একবছর প্রতীক্ষার পর গতকাল দেখতে পেয়েছি। দেরি না করেই চট করে কয়েকটি ছবি ক্যাপচার করলাম। ছবি তোলার থেকে প্রথম চোখে দেখাতেই বেশি আনন্দ পেয়েছি।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.