The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪

ডেঙ্গু প্রতিরোধ: ঘর মশামুক্ত রাখার প্রাকৃতিক উপায়

দেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়লেও সংশ্লিষ্টদের মনে এবার ভয় ধরাচ্ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বছরের প্রথম ছয় মাসে এত মৃত্যু আর দেখেনি বাংলাদেশ। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যথাসময়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা না করা এবং চিকিৎসা শুরু না হওয়ায় রোগীরা শক সিনড্রোমে চলে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় জ্বর-সর্দিসহ ডেঙ্গুর যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুততম সময়ে পরীক্ষার পরামর্শ তাদের।

সাম্প্রতিক ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের মধ্যে গ্রাম ও শহরের মানুষ সমানভাবে আতঙ্কিত। গ্রাম ও শহরের বাসিন্ধারা রাসায়নিক প্রতিরোধে দ্রুত সমাধান মিললেও অনেকেই খুঁজছেন তার নিজ বাড়িকে মশামুক্ত রাখার প্রাকৃতিক উপায়। রোগ-জীবাণু বহনকারী মশা থেকে পরিত্রাণ পেতে কিছু ব্যবহারিক কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। যার ফলে এই আতঙ্কজনক পরিবেশ থেকে আপনি কিছুটা হলেও রিলিফ পেতে পারবেন।

আপনার আশ্রয়স্থলটিকে মশামুক্ত রাখার জন্য এমন কিছু উপায় জেনে নেওয়া যাক, যেখানে আপনার স্বাস্থ্য ও চারপাশের পরিবেশ দুই-ই ভালো থাকবে। বাড়িকে মশামুক্ত রাখার ১০টি প্রাকৃতিক উপায়-

১) পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না:  রোগ-জীবাণু বহনকারী মশা যে কোনো স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় জমে থাকা স্থির পানিতে বংশবিস্তার করে। তাই বাড়ির চারপাশে উন্মুক্তস্থানে জমে থাকা পানির উৎসগুলো নষ্ট করা আবশ্যক। বিশেষ করে ফুলের পাত্র, পোষ্য প্রাণির ঘরে থাকা পাত্রের মতো যাবতীয় পানির পাত্রগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। পুকুর বা ফেলে দেওয়া জিনিসগুলোতে জমে থাকা খুব অল্প পরিমাণ পানিও মশার প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করতে পারে।

জমে থাকা পানি অপসারণের সময় প্রতিরক্ষামূলক পোশাক ও গ্লাভস পরুন। স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় পা পিছলে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই সম্ভাব্য মশার প্রজনন স্থান, বিশেষ করে নর্দমার মতো জায়গাগুলো থেকে পানি সরানোর সময় সতর্ক থাকুন।

২) মশা প্রতিরোধকারী ফ্যান ও আলোর ব্যবহার: মশা তাড়ানোর এক্সস্ট ফ্যানের শক্তিশালী বাতাসে ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বায়ু প্রবাহের এই প্রতিরক্ষামূলক বেষ্টনীটি বাড়ির বাইরে কাছাকাছি এলাকায় কৌশলে স্থাপন করুন। একাই সাথে বাড়ির আঙ্গিনায় ব্যবহৃত আলোতে হলুদ বা এলইডি লাইটের ব্যবহার বাড়াতে পারেন। এক্রস্ট ফ্যানের পাশাপাশি হলুদ বা এলইডির ব্যবহার মশা তাড়ানোর কার্যকারিতা আরও বাড়িয়ে দেবে। এ ধরনের আলো মশার কাছে কম আকর্ষণীয়। বাড়ির আশেপাশে যে জায়গায় মশা বেশি জড়ো হয় সে স্থানগুলোতে এই আলোর ব্যবস্থা করুন।

৩) জানালায় পর্দা টাঙানো: মশা ও অন্যান্য পোকামাকড়কে বাইরে রাখার জন্য নেট সবচেয়ে কার্যকর হতে পারে। তার জন্য অবশ্যই মশাকে বাড়ির বাইরে রাখার জন্য জানালার পর্দা টাঙানো যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে জানালা ও দরজায় যেন কোনো রকম গর্ত বা ফাঁক না থাকে। সন্ধ্যায় ও ভোরে যখন মশার উপদ্রব সবচেয়ে বেশি থাকে, তখন জানালাগুলোর পর্দাগুলো ভালোভাবে টেনে দিতে হবে। এর জন্য আপনাকে নিয়মিত জানালার পর্দাগুলোর যত্ন নিতে হবে। একই সাথে পর্দাগুলো নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে।

৪) জানালা ও দরজায় মশা প্রতিরোধী নেট ব্যবহার: এটি ঘর থেকে মশা দূরে রাখার একটি অন্যতম কার্যকর প্রাকৃতিক পদ্ধতি। নেটের সূক্ষ্ম ছিদ্রগুলো একদিকে যেমন মশার জন্য প্রতিবন্ধকতাই তৈরি করে, অন্যদিকে, ঘরের ভেতর বাতাস ঢুকতে বাধার কারণ হয় না। টেকসই নেটটি সঠিকভাবে স্থাপন করা হলে এর কার্যকারিতা থেকে সর্বোচ্চ উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।

জানালায় নেট ব্যবহার করলে খেয়াল রাখতে হবে নেটের কোন ছিদ্র অতিরিক্ত বড় হয়ে যাচ্ছে কি না বা স্থাপনে কোনো অসঙ্গতি আছে কি না তা ভালোভাবে যাচাই করুন। কোনো গর্ত বা অসঙ্গতি চোখে পড়লে অবিলম্বে তা মেরামত করা আবশ্যক। প্রয়োজনে এই সিজনে পুরােতন নেটটি বদলে নিন।

৫) সন্ধ্যা ও ভোরবেলায় দরজা-জানালা বন্ধ রাখা: বাড়িতে মশার প্রবেশ কমাতে বিশেষ করে সন্ধ্যা ও ভোরবেলা নিয়ম করে দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন। সাধারণত সন্ধ্যায় ও ভোরের দিকে মশাসহ সব পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যায়। এ সময় ঘরের ভেতরের গুমোট পরিবেশ আরামদায়ক রাখতে সিলিং ফ্যান ছেড়ে রাখুন।

নিয়ম করে প্রতিদিন সব দরজা-জানালা বন্ধ করার পাশাপাশি মশা প্রবেশে অতিরিক্ত বাধা হিসেবে জনালা ও দরজায় পর্দা ব্যবহার করতে পারেন।

৬) বাড়িতে মশা প্রতিরোধী গাছ রোপন: আমরা জানি কিছু গাছপালা তাদের মশা প্রতিরোধক বৈশিষ্ট্যের জন্য সুপরিচিত। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে সিট্রোনেলা ও ল্যাভেন্ডারের কথা। এ ছাড়াও আছে বেসিল, পুদিনা, রোজমেরি ও গাঁদা। সেগুলো আপনার বাগানে  অথবা আপনার বারান্দায় টবে লাগাতে পারেন।

এই গাছগুলো আপনার আঙ্গিনায় শুধু মশাই তাড়াবে না, দারুণ উপভোগ্য পরিবেশও তৈরি করবে। তবে এক্ষেত্রে গাছগুলোর বৃদ্ধি এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়মিত পরিচর্যা করা প্রয়োজন। তাছাড়া আপনার পরিবারে কারো যদি অ্যালার্জির সমস্যা থাকে তাহলে এবং তা যদি নির্দিষ্ট কোন গাছের সাথে সম্পর্কিত হয় তাহলে গাছ লাগানোর সময় সেটি এড়িয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

৭) সিট্রোনেলা মোমবাতি বা তেল ব্যবহার:  সিট্রোনেলা লেমনগ্রাস একটি প্রাকৃতিক পোকামাকড় প্রতিরোধক। সিট্রোনেলা মোমবাতি জ্বালালে বা সিট্রোনেলা তেল ব্যবহার করলে তা আপনার বাড়ির ভেতরের ও বাইরের চারপাশের এলাকা মশামুক্ত রাখবে।

এর শক্তিশালী ঘ্রাণ মশাকে আকৃষ্ট করা কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও ল্যাকটিক অ্যাসিডকে ঢেকে দেয়। বাড়ির আঙিনায় কৌশলে মোমবাতি রেখে বা ডিফিউজারে সিট্রোনেলা তেল ব্যবহার করে কার্যকরভাবে মশা তাড়ানো যেতে পারে।

তবে সিট্রোনেলা মোমবাতি বা তেল নিরাপদে ব্যবহারের জন্য সর্বদা মোড়কে দেওয়া প্রস্তুতকারকের নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন। একই সাথে যে কোনো দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মোমবাতি বা তেল শিশু ও পোষা প্রাণীদের নাগালের বাইরে রাখুন।

৮) বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রাখা:  মশার বংশ নির্বংশ করতে বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার করা খুবই জরুরি। শুধু জমে থাকা স্থির পানিই নয়, অন্যান্য ধুলাবালি, ময়লা, আগাছা, পোষা পশু-পাখির মল, অন্যান্য উদ্বৃত্ত নিয়মিত অপসারণ করুন। ঘরের ভেতরে শোকেস, ফার্নিচার ও ফুলদানির মতো লুকানো জায়গায় জমে থাকা পানি ও ময়লা খুঁজে বের করে তা পরিষ্কার করুন।

বাড়ি পরিষ্কারের সময় সম্ভাব্য জীবাণুযুক্ত স্থানগুলোর সঙ্গে আপনার শরীরের উন্মুক্ত অংশগুলোর সরাসরি যোগাযোগ এড়াতে প্রতিরক্ষামূলক গ্লাভস পরুন। পানির পাত্রগুলো কার্যকরীভাবে জীবাণুমুক্ত করার জন্য উপযুক্ত ক্লিনিং এজেন্ট বা দ্রবণ ব্যবহার করুন।

৯) ঘুমানোর সময় বিছানায় মশারি টাঙানো: মশারির মতো প্রতিবন্ধকতাটি আপনার ঘুমানোর সময় সুরক্ষা দিতে পারে। বিছানায় মশারি ঝুলিয়ে রাখলে রাতে মশা ঘরে ঢুকলেও আপনার শরীর পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। যেসব এলাকায় মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বেশি, সেখানে মশারি টাঙানো আবশ্যক।

মশারির ছিদ্রগুলোর মধ্যে বড় গর্ত আছে কি না তা আগেভাগেই দেখে রাখুন। কেননা ঘুমন্ত অবস্থায় মশার রক্ত খাওয়া ঠেকানোর কোনো সুযোগ থাকবে না। তারপর আপনার শরীরে মশাবাহিত রোগ-জীবাণু প্রবেশেও তখন বাধা দেওয়ার অবস্থা থাকবে না।

১০) মশা নিধনের বৈদ্যুতিক ফাঁদ ব্যবহার করাঃ বৈদ্যুতিক ফাঁদ আলো, তাপ ও কখনো কখনো ছোট ফ্যান ব্যবহার করে মশাকে আকর্ষণ করা হয়। মশা বা পোকামাকড় ফাঁদে পড়তেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় বা আটকে যায়। এই ফাঁদগুলো বাড়ির ভেতরে মশার সংখ্যা কমাতে বেশ কার্যকর। এগুলোকে এমন জায়গায় রাখুন যেখানে সাধারণত মশা বেশি দেখা যায়। যেমন, জানালার কাছে বা ঘরের অন্ধকার কোণায়।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.