The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪

করোনার প্রভাবে উচ্চশিক্ষার দ্বারে আটকা ২৭ লাখ শিক্ষার্থী

এপ্রিলে পরীক্ষা, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ভর্তিযুদ্ধ আর জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস—করোনার আগে এই নিয়মেই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় প্রবেশ ঘটত। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এ ধারাকে ওলটপালট করে দিয়েছে। শিক্ষাপঞ্জির এই এলোমেলো অবস্থার কারণে উচ্চশিক্ষার দ্বারে আটকে গেছেন ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের প্রায় ২৭ লাখ শিক্ষার্থী। এ বছর শেষ না হতেই এর সঙ্গে যোগ হবেন ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আরও প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থী। এই প্রায় ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শুরুর আগেই তাঁরা পড়েছেন এক থেকে দেড় বছরের শিক্ষাজটে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধ শেষ করে এখনো ক্লাস শুরুর অপেক্ষায়। অথচ তাঁদের ক্লাস শুরুর কথা ছিল ২০২১ সালের জানুয়ারিতে। এদিকে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় ক্লাস শুরুর কথা ছিল গত জানুয়ারিতে। তাঁদের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে সম্প্রতি। এ ছাড়া ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের এপ্রিলে পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও তা আগামী জুন থেকে আগস্টের মধ্যে হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই শিক্ষার্থীরাও পরীক্ষার ফল প্রকাশ, ভর্তিযুদ্ধ ও ভর্তি প্রক্রিয়া পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সময়মতো ক্লাসে বসতে পারবেন না।

অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলেছে, করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কম সময়ে অধিক ক্লাস নেওয়া, ছুটি কমিয়ে আনাসহ একটি নীতিমালা দেওয়া হয়েছে।

এই নীতিমালা অনুসরণ করলে শিক্ষাজট কমে আসবে।

২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এরপর শুরু হয় করোনার প্রথম ঢেউ। এর ফলে ওই বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন পরীক্ষার্থীর সবাইকে উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়। ওই বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেন। তারপর চার মাস পেরিয়ে গেলেও তাঁদের ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে ক্লাস শুরু হয়নি। অথচ করোনার আগের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী এই শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর কথা ছিল ২০২১ সালের জানুয়ারিতে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখার আগেই ১ বছরের বেশি শিক্ষাজটে পড়েছেন তাঁরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুচ্ছভুক্ত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি এবং কৃষি গুচ্ছের চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি এখনো। একাধিক মেধাতালিকা দিয়েও শিক্ষার্থী পাচ্ছে না এসব বিশ্ববিদ্যালয়, যার ফলে ক্লাসও শুরু করা যাচ্ছে না।

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন রায়হান হোসেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর আগেই আমরা এক বছরের জটে পড়ে গেছি। উচিত ছিল দ্রুত সময়ে আমাদের ক্লাস শুরু করা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে স্বাভাবিক নিয়মের চেয়েও ধীরগতিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।’

একই অবস্থা ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদেরও। স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী গত জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু করার কথা থাকলেও এই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে ১৩ ফেব্রুয়ারি। এতে রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। পাস করেছেন ১৩ লাখ ৬ হাজার ৭১৮ জন। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি। যদিও আগামী ১ এপ্রিল মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, ভর্তি পরীক্ষা ও ভর্তির কার্যক্রম শেষ করে আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরের আগে এই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু সম্ভব হবে না। সে ক্ষেত্রে তাঁরাও উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের আগেই আট মাস বা তার বেশি সময়ের শিক্ষাজটে পড়ে গেছেন।

এ শিক্ষাবর্ষের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ভর্তি পরীক্ষা এবং ভর্তির কার্যক্রম দ্রুত শেষ করলে এই জট থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চাইলেই কম সিলেবাসে দ্রুত ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করতে পারে।

এদিকে শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, করোনার কারণে এ বছরও সময়মতো এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না। শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে আগামী জুন থেকে আগস্টের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নেবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে তাঁরা ভর্তি পরীক্ষা শেষে ক্লাস শুরু করবেন। তবে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে স্বাভাবিকভাবেই এ বছর চলে যাবে। সে ক্ষেত্রে এই শিক্ষার্থীরা কিছুটা হলেও জটে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ শিক্ষাবর্ষের লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী শাহাদাত হোসাইন বলেন, ‘ভালোয় ভালোয় পরীক্ষাটা হলে আপাতত বাঁচি। আগস্টে এইচএসসি পরীক্ষার পর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষা হলে আশা করি সমস্যা হবে না। বিশেষ বিবেচনায় দ্রুত ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করলে আমাদের জটে পড়তে হবে না।’

এ বিষয়ে ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, ‘এই শিক্ষাজট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি হবে। গত বছরে যারা এইচএসসি পাস করেছে, তাদের ভর্তি আগামী মার্চ পর্যন্ত চলবে। এরপর কেউ এপ্রিল বা মে মাসে ক্লাস শুরু করবে। এদিকে কয়েকদিন আগেও আরেকটা ব্যাচের এইচএসসির ফল প্রকাশ হলো। এই দুই শিক্ষাবর্ষ এখনই প্রায় এক হয়ে গেছে। আবার কয়েক মাস পর আরেকটা ব্যাচ আসছে। বিষয়টি আমাদের সময়ের মতো পুরোনো, মিডল এবং নতুন ফার্স্ট ইয়ারের মতো হয়ে যাচ্ছে, যা আসলেই হতাশাজনক।’ তিনি বলেন, এ সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়া দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করতে একটি নীতিমালা দেওয়া হবে। শিগগির ইউজিসিতে এ-সংক্রান্ত বৈঠক হবে।

তবে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান বিভিন্ন শিফটে ক্লাস নিয়ে এ সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুপুরের পর ক্লাস থাকে না। শিক্ষকদের বাড়তি কিছু সুবিধা দিয়ে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া হলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ভর্তি প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে হবে। তাহলেই সংকট অনেকাংশে কেটে যাবে। বড় কয়েকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাগ্রহের কারণে অনেক সময় এটা হয়ে ওঠে না। তাই এ বিষয়ে তাদেরও এগিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন এ শিক্ষাবিদ।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.